নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভাবনার রেলগাড়ী

ভাবনার কোন নির্দিষ্ট ঠিকানা নেই। কোন শুরু নেই কোনো শেষ নেই। ভাবনা ঠিকানাহীন, ভাবনা লক্ষ্যহীন। ভাবনা চলছে.।.। ভাবনা চলবে.।.। ইচ্ছে মতন। নিজের মতন।

রাকিবুল৯০

আমার ফেইসবুকঃ http://www.facebook.com/mohammad.rakibul আমি ছন্নছাড়া মানুষ। একটা লক্ষ আছে জীবনে। ভ্যাগাবন্ড হওয়া। মা-বাবা আর ভাইদের জন্য এখনো হতে পারিনি। তবে আর বেশীদিন মনে হয় বাকি নেই।

রাকিবুল৯০ › বিস্তারিত পোস্টঃ

শিং মাছ আর হারিয়ে ফেলা ছোট্ট বেলার গল্প

০২ রা নভেম্বর, ২০১৩ রাত ২:১৩

বালতির পানিতে ২০-২৫ টা শিং মাছ। নিচে খানিকটা মাটি দেয়া। মাটি পেলে নাকি শিং মাছ অনেকদিন বাচে। আমার আম্মার মতে এই মাছ খুবই উপকারী, অতীব বলবর্ধক, আর শিং মাছের ঝোল বেশিরভাগ রোগের পথ্য। আর জন্ডিস রোগীদের জন্য তো তিনবেলাই। হলুদ, মরিচ ছাড়া সাদা সাদা বিস্বাদ শিং মাছের ঝোল। অন্য সব খাবার বন্ধ /:)। সাথে প্রতিদিন ভোরে খালি পেটে তেলেকুচি পাতা। এই পাতা গরুর মতো চাবায়া খেলে হবে না। ছেইচা রস করে খেতে হবে। প্রতিদিন হাফ কাপ। তাহলেই রোগ থেকে নিশ্চিত মুক্তি।



আসল ঘটনা টা খুলেই বলি।



ঈদের দিন। সারাদিন গরু কাটাকাটি আর ভাগ বাটোয়ারা করে যখন ফ্রি হলাম তখন বিকাল। এখনো ঠিকমতো খাওয়া হয়নি। খেতে ইচ্ছেও করছে না। শরীর কেমন ম্যাজ ম্যাজ করছে। ভাবলাম, সারাদিন খাটাখাটনির জন্য বোধহয়। পাত্তা দিলাম না। জ্বরটা আসলো ঠিক সন্ধ্যায়। মাগরিবের আজানের পর পর। একেবারে শরীর কাপিয়ে জ্বর। তাও ভালো ঈদের কাজ কর্ম সব শেষ। ঈদের আগে হলে বিপদের সীমা থাকতো না। প্রথমদিন জ্বর মাপলাম ১০১। পরেরদিন ১০২। একেবারে যোগ অংক মেনে ঈদের তৃতীয় দিন আমার তাপমাত্রা ১০৩ ডিগ্রি। চারদিকে দৌড়াদৌড়ি শুরু হলো, বাসায় ডাক্তার আসলো, হাসিমুখে প্রেসক্রিপশনে নাপা সাপোসিটরি'র নাম লিখলো, বললো, বাবা, ১০১ ডিগ্রির পর আর নাপা কাজ করে না। তখন জ্বর নামাতে হলে এই সাপোসিটরি পেছন দিয়ে দিতে হয়। আমি কাষ্ঠ হাসি হাসলাম। ব্যাটা আমারে শেষ পর্যন্ত এই কাজ দিলো। নিজের পেছনে নিজেই.......... /:)



চতুর্থ দিন জ্বর কমে গেলো। আর পঞ্চম দিন পুরোপুরি নেমে গেলো। কিন্তু এখন নতুন সমস্যা, সব কিছু হলুদ দেখি। চোখে সর্ষে ফুল দেখার মতো অবস্থা। বাথরুমে গিয়ে হিসু করলেই দেখি সব হলুদ। বুঝলাম খাইছে আমারে। চতুর্থ বারের মতো জন্ডিস টা বোধহয় ধরেই ফেললো। নগদে এলাকার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে দৌড় দিলাম, পরিচিত রিসেপশনিস্ট মুচকি হাসি দিয়া জিজ্ঞাস করলো, জন্ডিস? সবেগে মাথা নাড়াইয়া বললাম, হুম। ব্রাদারের স্মৃতই শক্তি ভালো। গত ২ বছরে এইখানে তো আর কমবার বিলিরুবিন টেস্ট করলাম না। :(( ব্রাদারের সব ইয়াদ আছে। আসার সময় ফোন নাম্বার টাও দিয়ে আসলাম। যাতে সাথে সাথেই জানতে পারি।



৩ ঘন্টা পরেই ফোন। বিলিরুবিন ১.৮। খুব বেশি না। কিন্তু, আমি এই সুবর্ণ সুযোগ ছাড়লাম না। সরাসরি বিছানা নিলাম। এর পরের দুই দিন হলুদ আরো বাড়লো পরীক্ষা করালাম, এইবার ৪। বিছানার সাথে সুপার গ্লু লাগিয়ে পড়ে থাকলাম, দুইদিন পর আবার টেস্ট। এইবার বিলিরুবিন ৮। SGTP 540. :-/ মেডিক্যালে পড়া দোস্তরে ফোন দিলাম। সে সব শুনে বললো, তোর তো সময় শেষ। নামাজ কালাম ভালো মতো পড়। সময় আর বেশি নাই :((। আমি দীর্ঘ নিশ্বাস ফেললাম। কিন্তু, দাওয়াত দিতে ভুললাম না। বললাম, আমার চল্লিশায় আসিস। ফোনের ওই পারে তখন কার্যসিদ্ধির হাসি X(



নাহ... আমি মরি নি। মানুষ এতো সহজে মরেও না। এটা আরো ৮-১০ দিন আগের কথা। এখন আমি অনেকটাই সুস্থ। ভার্সিটি খুলে গেছে। ইতিমধ্যে ২ টা মিডটার্ম হয়ে গেছে, সাথে ৩ টা অ্যাসাইনমেন্ট ও। সবগুলাই মিস। আরো বোধহয় ১০-১২ দিন রেস্ট এ থাকতে হবে। আরো কিছু পরীক্ষা আর অ্যাসাইনমেন্ট মিস হবে। কিন্তু আমার কোনো দুঃখ নেই। এতোটুকুও না।



কারন টা ফ্যামিলি। ভার্সিটি আর বন্ধু বান্ধবের চক্করেই সবটা সময় কেটে যায়। বাসায় থাকি কতক্ষন? এখন অখন্ড অবসর। সারাদিনই বাসায় থাকি। নতুন করে পরিবার কি উপলব্ধি করি। রাতে যখন সবাই ঘুমিয়ে পড়ে আম্মা এসে মাথায় হাত রেখে বসে থাকেন। হয়তো দেখেন ঠিকমতো ঘুমাচ্ছি কিনা? কিংবা ভাবেন সেইদিন জন্ম নেয়া তার সবচেয়ে ছোট ছেলেটা কিভাবে এতো বড় হয়ে গেলো।



ভোরবেলা এখন বাবার সাথে হাটতে যাই। ফজরের পরে তিনি আমাকে নিয়ে হাটতে যান। ঠিক ছোটবেলার মতো। বাবা হাটতো আর আমি তার আঙ্গুল ধরে রাখতাম। এখন আর আঙ্গুল ধরা হয় না। বড় হয়ে গেছি। কিছুক্ষন হাটার পর যখন হাপিয়ে যাই তখন বাবা নিজে থেকেই আমার হাত টা ধরেন যাতে পড়ে না যাই। সেই অনুভূতি কি কখনো লিখে বোঝানো সম্ভব???



সময় খুব দ্রুত যায়। দেখতে দেখতে আমি বড় হয়ে গেছি। বাবা রিটায়ার্ড করেছেন আজ ৪ বছর। হয়তো খুব বেশিদিন আর বাবার সাথে হাটা হবে না। সকালে একসাথে বাজার করা হবে না। খুব লোভ হয়। খুব। শুধু সকাল বেলা একটু হাটার জন্য, বাবার হাতটা একবার ধরার জন্য। গভীর রাতে মায়ের মমতা মাখা হাতের স্পর্শ পাবার জন্য। তার জন্য না হয় আমি অসুস্থই থাকলাম। আর কটা দিন। কয়েকটা মাত্র দিন।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৩ রাত ২:৫৮

তারিকুল ঐক্য বলেছেন: আমার ২০০৯ এ জন্ডিস হইছিল - SGPT ছিল 2180 :)

০২ রা নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:০৮

রাকিবুল৯০ বলেছেন: তারিকুল ভাই, আপনি বাইচা আছেন কিভাবে? :||

২| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৯:৩২

তারিকুল ঐক্য বলেছেন: আল্লাহ জানে কিভাবে বেচে আছি ভাই। বিলিরুবিন ছিল মনে হয় ২১ র মত।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.