![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
স্রোতের বিপরীতে একজন । গান শুনতে, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে রাত করে বাসায় ফিরতে, মায়ের বকা খেতে, সারাদিন মোবাইল, ট্যাবলেট আর পিসি নিয়ে পড়ে থাকতে ভালবাসি ।
( এন্ডিংটা মনখারাপ করার জন্য যথেষ্ট-নিজ দায়িত্বে পড়বেন )
সাঁতার জানিনা । তাই দু’বার ডুবে যেতে যেতেও বেঁচে গেলাম। তৃতীয়বারের অপেক্ষায় আছি ।
দ্বিতীয়বারের কথা বলছি। দুজন বন্ধুর সাথে পানিতে নামলাম সাঁতার শিখব বলে। কয়েকপা নামতেই পায়ের নিচের সিঁড়ি বিনানোটিশে শেষ হয়ে গেল। তাল সামলাতে না পেরে পড়ে গেলাম আর পানির নিচে তলিয়ে যেতে লাগলাম। হাতপা ছুঁড়ছি পাগলের মত। চারদিক সবুজ । একবন্ধু ততক্ষনে অনেক দূরে চলে গেছে । সে দেখেনি আমি ডুবে যাচ্ছি । আরেকবন্ধু কাছেই ছিল-সে খপ করে আমার একটা হাত ধরে ফেলল। কিন্তু সে সাইজে আমার অর্ধেক । আমার ভার বইতে না পেরে সেও আমার সাথে ডুবে যেত লাগল। কিন্তু আমার হাত ছাড়লনা। সে চেষ্টা করতে লাগল আমাকে টেনে তুলতে। কিন্তু আমার ওজন ৬৫ কেজি । আমি জানি পানির নিচ থেকে কিছু টেনে তুলা কস্টকর। সে আমাকে একলা টেনে তুলতে পারবে না। কিন্তু সে আমার হাত ছাড়ছেনা। হাত না ছাড়লে সেও ডুববে। বুঝতে পারছি সে অক্সিজেনের জন্য হাঁসফাঁস করছে। তারপরও আমার একটা হাত ধরে আছে। ও চাইলেই আমাকে ছেড়ে দিয়ে সহজেই ওপরে ভেসে উঠতে পারে। কিন্তু ও যেন পন করেছে আমাকে নিয়েই উঠবে। আমি বিস্মিত।
আমার শরীর তখন স্থির। কোন সাড়া নেই। অল্পকিছু পানিও পেটে গেছে ততক্ষণে। কিন্তু মগজটা চালু আছে। এক পলকের জন্য কয়েকটা মুখ চোখের সামনে ভেসে উঠল-মা,বাবা,বোন এবং আরো একজন।
অন্যবন্ধুটি এবং এলাকার একজন ছেলে আমাদের টেনে তুলল। পাড়ে উঠে দুজনেই হাঁপাতে লাগলাম। আমি ওর দিকে কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে তাকালাম। সে আমার জন্য মরতে বসেছিল। তারপরও হাত ছাড়েনি। ধরে না রাখলে হয়তো একেবারে তলায় তলিয়ে যেতাম। এর পরের অংশ ভাবতে ইচ্ছা হলনা।
একটু জিরিয়ে বললাম, “তুই না থাকলে আজকে...”
সে একটু হেসে বলল, “ধুর, আমার ভাই ডুবে গেলে কি আমার ভাইকে ফেলে চলে আসতাম?”
ঘটনাটা দেড়বছর আগের। হটাৎ মনে পড়ল যশোর-দিনাজপুরে হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘরে আগুন, লুটপাট, অত্যাচারের ঘটনায়। আমাদের দোষ আমরা হিন্দু ( আদর করে ডাকা হয় মালাওন), আমরা সংখ্যালঘু। আমাদের পূর্বপুরুষেরা ৪৭ এ এদেশকে ভালবেসে এদেশে রয়ে গেছে বলে এত অত্যাচার সইতে হয়েছে আমার বাপদাদাদের, সইতে হচ্ছে আমাদের, সইতে হবে আমাদের সন্তানদের। ঠিক একই কথা খাটে ভারতে বসবাসকারী মুসলিমদের জন্যও। তাঁদেরও প্রতিনিয়ত অত্যাচার সইতে হচ্ছে।
ও হ্যা-আমাকে মৃত্যুর হাত থেকে যে বাঁচিয়েছিল , যে নিজের জীবন বিপন্ন করেছিল সে একজন মুসলিম। তার কথাটা এখনো মনে আছে-“আমার ভাই ডুবে গেলে কি আমার ভাইকে ফেলে চলে আসতাম?” সে আমাকে বাঁচানোর সময় আমি হিন্দু সে মুসলিম- এই বিভেদটা করেনি। শুধু সে নয় আমার এই ছোট্ট জীবনে এমন অনেক মহান হৃদয়ের মানুষের সাথে পরিচিত হয়েছি যারা মুসলিম। আবার অনেক নিচু মনের মানুষের সাথেও পরিচিত হয়েছি।
শুধু মানুষের আকৃতি হলেই মানুষ হয়না। মানুষ হতে হলে মনুষ্যত্ব লাগে। একরাতেই যারা ঘরছাড়া হল,সহায়সম্বলহীন হল তাঁদের দুঃখ আমরা বুঝবনা। নিজেকে তুমি ওদের জায়গায় কল্পনা করতে পারবেনা। কারণ তুমি যখন দামি বিছানায় শুয়ে এই লেখাটি পড়ছ তখন তাঁদের চোখ থেকে অঝোর ধারায় পানি ঝরছে। ছোটবাচ্চাটি মায়ের কোলে ক্রন্দনরত মায়ের পানে তাকিয়ে খাবারের আশায়। জানেনা এদেশে তাঁদের স্থান নেই। তাঁদের পক্ষে কথা বলবে এমন মানুষের সংখ্যা একেবারেই নগন্য। কেউ ওদের দুঃখ বুঝেনা। ফিলিস্তিনিদের দুঃখ ইসরায়েলীরা বুঝেনা। শোসিতের দুঃখ কখনো শোষণকারী বুঝেনা।
০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৩:৪২
রানাইজম বলেছেন: ধন্যবাদ শুভকামনা করবার জন্য। এখন তো শুভকামনা করবে এমন মানুষও খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।
©somewhere in net ltd.
১|
০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৩:৩৬
স্বপনচারিণী বলেছেন: বন্ধু সবসময়ের জন্যই বন্ধু। সে পাশে থাকলে উঁচু-নিচু, ধর্মীয় ব্যবধান... এই বিষয়গুলো ঠুনকো হয়ে যায়। সত্যিকারের বন্ধু তাই কমই পাওয়া যায়। ঘটনা গুলি খুবই স্পর্শ কাতর। সাবধানে থাকুন। শুভ কামনা রইল।