সুইসাইড নোট(পর্ব-২)

১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:০৩

আজকে মামুনদের বাসায় উৎসবের আমেজ।সবাই ব্যস্ত।সবাই ব্যস্ত ভঙ্গিতে চলাচল করছে।বাসার ছোটদের ব্যস্ততা চোখে পড়ার মত।তারাই সবচেয়ে বেশি ব্যস্ত।ভাবখানা এমন যে সকল দায়িত্ব তাদের ঘাড়েই।ঠিকভাবে করতে না পারলে সমস্যা হয়ে যাবে।বিয়ে ভেঙ্গে যাবে।ও হ্যাঁ।মামুনদের বাসায় বিয়ের আয়োজন চলছে।বিয়ে যেমন তেমন ব্যাপার না।খুব ই সিরিয়াস ব্যাপার।মানুষের জিবনের ব্যাপার।হুম।

ডেকোরেটরের লোকজন এসে গেছে।বাঁশ,সামিয়ানার কাপড়,বড় বড় পাতিল।বড় বড় পাতিলে গরু রান্না হবে,খাসি রান্না হবে।গরু,খাসি রেডি।বাড়ির বাইরে বেঁধে রাখা হয়েছে।একটা ছেলে ধারালো ছুড়ি দিয়ে ছাগলটাকে ভয় দেখাচ্ছে।ভয়ে ছাগলটা পালাতে চাচ্ছে।কিন্তু করার কিচ্ছু নেই।গলায় দড়ি বাঁধা।চাইলেও পালাতে পারবে না।দুইজন অবলা প্রাণি দড়ি দিয়ে বাঁধা।তাদের সামনে একজন ধারালো ছুরি ঘোরাচ্ছে।দুজনের চোখে ভয়।মৃত্যুভয়।দুজন ই জানে তাদের মৃত্যু সন্নিকটে।কিন্তু তাদের কিচ্ছু করার নেই।আহারে।

যে ছেলেটি ছুরি দিয়ে ভয় দেখাচ্ছিলো তার একটু বড় একজন এসে তার গালে থাপ্পড় দিয়ে ছুরি কেড়ে নিল।

"বেয়াদব।যাও এখান থেকে।পড়াশুনা নাই?বিবাহ কি তোমার?এত আনন্দের কি আছে?"

ছেলেটি গালে হাত দিয়ে চলে গেল।এরপর যিনি তাকে এইরূপ শাসন করিলো সেই বান্দা ছুরি দিয়ে ভয় দেখাতে লাগলো।ভয় দেখিয়ে সে মজা পাচ্ছে।মানুষ ভয় দেখিয়ে মজা পায়।

মামুনের কোন কাজ নেই।সে সবকিছু চেয়ে চেয়ে দেখছে।যার বিয়ে তার কোন কাজ থাকে না।আজ মামুনের বিয়ে।পাত্রীর নাম সাদিয়া ইসলাম।অতি উচ্চবংশ।ইসলামের ইতিহাস নিয়ে অনার্স পড়ছে।রেজাল্ট ও ভালো।মামুনের সাথে একদিন দেখা হয়েছে।কথা হয় নি।কথা বলার প্রয়োজন ও নেই।কারন কথা বলায় কিছু যায় আসবে না।আরমান সাহেব যা করবেন তাই হবে।একচুল ও এদিক ওদিক হবে না।

মামুনের মোবাইলে কল আসছে।নিতু কল দিয়েছে।কল ধরা ঠিক হবে কি না সে বুঝতে পারছে না।মামুন মোবাইল স্ক্রিনের দিকে চেয়ে আছে।একটা মানুষের নাম এত সুন্দর হবে কেনো?একটু কম সুন্দর হলে এমন কি ক্ষতি হত?আসলে নিতুর নাম নিতু না হয়ে যদি ফিতু হত তাও মামুনের ভালো লাগতো।কারন প্রিয়মানুষদের নাম এমন ই সুন্দর হয়।হোক সেটা যেমন তেমন নাম।

কল কেটে গেছে।মামুন একটা চাপা দির্ঘশ্বাস ছাড়লো।

প্রতিটা জায়গায় একজন কর্তা থাকে।কর্তাদের মূলত কোন কাজ থাকে না।তাদের কাজ সবাইকে ধমকা ধমকি করা।মামুনদের বাসার কর্তা হচ্ছে আরমান সাহেব।ইউনিয়ন চেয়ারম্যান।টানা তিনবার ধরে চেয়ারম্যান আছেন।সহজ কথা না।দিনকাল খারাপ।ঘোর কলিযুগ।

আরমান সাহেবের মেজাজ ঠিক নেই।কোন কাজ ঠিকমত হচ্ছে না।বাসাভর্তি গাধার দল।

"শুনলাম গরুর গায়ের রঙ কালো"
"জ্বী।কালো হলেও ভালো।গায়ে গোশত আছে।"
"কালো অশুভ জিনিস।এই গরু অফ।নতুন গরু কিনে আনো।টাকা তো কম দেই নাই।তাইলে কালো গরু কেনো?"
"জ্বে আচ্ছা"


গরুর একটা চোখ দিয়ে রক্ত পড়ছে।কে যেন ছুরি দিয়ে গরুর চোখে আঘাত করেছে।আমরা মানুষ হয়েছি।কিন্তু আমাদের স্বভাব গরু,ছাগলের মতই থেকে গেছে।বিরাট আফসোসের ব্যাপার।ছুরি চালানো বান্দাকে খোঁজা হচ্ছে।গুজব উঠেছে গরুর বদলে তাকে জবাই দেয়া হবে।চেয়ারম্যান সাব নিজে জবাই দিবেন।মাংস রান্না হবে কি না জানা যায় নি।তবে রান্না হতে পারে।চেয়ারম্যান সাহেব সহজ চিজ না।কঠিন চিজ।এখন বাবুর্চি ঠিকমত রান্না করতে পারলেই হয়।মানুষের মাংস রান্না করা এত সহজ না।


গুজব বাতাসের আগে ছড়ায়।এই গুজব ও ছড়ায় গেছে।চেয়ারম্যান বাড়িতে মানুষ জবাই হবে।সাংঘাতিক ব্যাপার।বাপুল উৎসাহে খবর প্রচার হল।তার চেয়েও দ্বিগুন উৎসাহে মানুষ জরো হওয়া শুরু হল।মানুষ জবাই হওয়া হ্যালির ধূমকেতু অপেক্ষা বিরল ঘটনা।সচারাচর পল্লিগ্রামে দেখা যায় না।


বিকাল চারটা বাজে।চেয়ারম্যান বাড়ি লোকে লোকারণ্য।পুলিশ এসেছে।ঘটনা মারাত্মক।দশ বছরের একটি ছেলে খুন হয়েছে।জবাই করে হত্যা।সবাই বলছে চেয়ারম্যান সাহেব খুন করেছে।কিন্তু চেয়ারম্যান সাহেব এইসবের কিছুই জানেন না।কে ই বা গুজব ছড়ালো,কে ই বা খুন করলো।

মামুন,আরমান সাহেব এবং আরমান সাহেবের ছোট ভাই তিনজনকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেল।এলাকার মানুষজন খুশি।সম্মানি একজন মানুষ অপদস্ত হয়েছে তাতেই সবাই খুশি।সবাই সমাজের রুই কাতলাদের অপমান দেখে আনন্দ পায়।

০ টি +০/-০