নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ফোনের রিংটোন বেজে উঠলো। শান্তর কিছুতেই ঘুম থেকে উঠতে ইচ্ছা করছিল না।
[ঘুমের ঘোরে] হ্যালো! কে বলছেন?
- আপনি মিঃ শান্ত বলছেন?
জী। আপনি কে?
- আমি গুলশান থানার ওসি বলছি। একটা জরুরী খবর দেয়ার জন্য ফোন করেছি। আপনি শিগগির গুলশান হসপিটালে চলে আসুন। আপনার ভাই মিঃ মনির অ্যাকসিডেন্ট করেছেন।
শান্ত কিছু বুঝে উঠার আগেই ওসি সাহেব ফোন রেখে দিলেন। ঠিক এই মুহুর্তে কি করা উচিৎ বুঝে উঠতে পারছিলো না সে। ঘুম পালিয়ে গেছে। গায়ে জামার বোতাম লাগাতে পারছে না সে। সব কেমন যেন পালিয়ে যাচ্ছে হাত থেকে। একটা ঘোরের মধ্যে আছে সে। জুতার ফিতাও কেমন পেঁচিয়ে আসছে। কোনোমতে সে দ্রুত বাসা থেকে বের হলো গাড়ি নিয়ে সোজা রাস্তায়।
এই মুহুর্তে গুগল ম্যাপ ফলো করার মানসিকতা তার নাই। রাস্তায় জ্যাম থাকলে কি করবো? গাড়ি ফেলে দৌড় দিব?
আচ্ছা আমি ভাবীকে ফোন দিচ্ছিনা কেন? ভাবী নিশ্চয় জানবে কী ঘটেছিল। মোবাইল বের করে ঐশী ভাবীকে ফোন দিতে গিয়ে দেখে নট রিচেবল।
চিন্তাটা আরো বেড়ে গেল শান্তর। হাসপাতালে কাউন্টারে গিয়ে হাঁপাতে থাকলো।
শান্তঃ আচ্ছা মনিরুল চৌধুরী কোথায় এডমিট আছেন?
রিসিপসনিস্টঃ উনি এখন আই সি এউ তে।
শান্ত কাচেঁর দেয়াল এ হাত রেখে ভাইয়ের চেহারা দেখছে আর অঝোরে কাদঁছে।
ঐশীঃ তুমি এসে গেছো? এ কি ঘটে গেলো শান্ত আমি মেনে নিতে পারছি না।
বলেই হাউমাউ করে কেদে দিল ঐশী। শান্ত তাকে তুলে ধরে নিজেকে সামলাতে চাইলো। কিন্তু পারছেনা।
শান্তঃ ভাবী! কিভাবে হোলো এসব?
ঐশীঃ আমি সিস্টার সালমার সঙ্গে শপিং এ গিয়েছিলাম সন্ধ্যা ৭ টার দিকে। ১০ টায় ফিরে বুঝতে পারি বাসায় অনেক লোকজন। অনেক ভীড়। শুনলাম ততক্ষনে পুলিশ মনিরকে গ্যারেজের রাস্তা দিয়ে আম্বুলেন্সে নিচ্ছে। সবাই বলছিল ও নাকি ৬ তালা বারান্দা থেকে পড়ে গিয়েছিল।
শান্তঃ এটা কিভাবে সম্ভব? তোমাদের বারান্দার রেলিং তো এত নিচু না। আর ভাইয়া ড্রিকংও করতো না আমি জানি।
ঐশী অন্ধ। তার জন্য মনির সবসময় বাসার সব জায়গায় সাবধানতা অবলম্বন করতো। বিশেষ করে জানালা বা ব্যাল্কোনীর রেলিং বা ওয়াশ্ রুমের টাইলস সব একটু বেশি সেফটি করে রাখতো। হিসেবটা কিছুতেই মিলাতে পারছেনা শান্ত।
[ভোর ৬ টা বেজে ৪০ মিনিট]
ডাক্তারঃ আমরা দুঃখিত। মনির সাহেব কে বাঁচাতে পারলাম না। আমাদের চেষ্টার কোনো ত্রুটি ছিল না। প্লিজ টেক মাই কন্ডলেন্স।
শান্ত স্থবির দাঁড়িয়ে। ঐশীর কান্নার শব্দে ফ্লোর ভারী হয়ে আসছে।
পুলিশ আসছে। ময়না তদন্তের আবেদন নিয়ে।
ঐশীঃ আমার স্বামীকে আমি এক টুকরো কাটা ছেঁড়া করতে দিব না।
বলেই হাউমাউ করে কাদঁতে লাগলো মেয়েটা। শান্ত তার অনুভূতির কথা চিন্তা করে পুলিশ কে বারণ করল। পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সিগ্নেচার নিয়ে চলে গেল।
দাফন শেষে শান্ত একটা সিগারেট জ্বালাল।
- আজ বাবা মা কেউ নাই। বড় ভাই টাও চলে গেল। একা লাগছে খুব।
একটা জিনিষ তার খেয়াল আসছে। ভাইয়ের দাফনের আগে লাশের চোখ ছিল না। এই ব্যাপারটা নিয়ে যারা লাশ ধুচ্ছিলো তারা বলাবলি করছিল। অনেকেই বলছিল এতো উপর থেকে পড়লে অনেক কিছুই নাকি গলে যায়?
[এক্ মাস পর]
শান্ত এবং ঐশী তারা বিয়ে করে ফেলে। যদিও ঐশী তার চেয়ে ৭ বছরের বড়। ঐশী নিজেকে নিয়ে অনেক হীনমন্যতায় ভুগত। সে অন্ধ বলে। ভাইএর রেখে যাওয়া ৩০ কোটি টাকার সম্পদ, এগুলো ম্যানেজ করতেও তো একজন পুরুষ লাগবে। আর শান্ত সে তো খুবি শান্ত স্বভাবের ছেলে। কাজেই বিয়ের সিদ্ধান্ত ঐশী মেনে নিয়েছিল।
শান্ত ঐশীর চোখের চিকিৎসার জন্য সব জায়গায় চেষ্টা করছে। অবশেষে সিস্টার সালমা জানায় একজন ম্যাচ ডোনার পাওয়া গেছে।
অপারেশন সাকসেসফুল হয়। ঐশী এখন পৃথিবীর আলো দেখতে পায়। শান্ত ঐশীর চোখে অপলক তাকিয়ে রয় দিনের পর দিন।
[২ বচ্ছর পর]
অফিসের কাজে শান্ত সিলেটে এক রিসর্টে আছে। রাত ২ টা বাজে।
ফোনের রিংটোন বেজে উঠলো। শান্তর কিছুতেই ঘুম থেকে উঠতে ইচ্ছা করছিল না।
[ঘুমের ঘোরে] হ্যালো! কে বলছেন?
- আপনি মিঃ শান্ত বলছেন?
জী। আপনি কে?
- আপনার স্ত্রী অ্যাকসিডেন্ট করেছেন।
শান্ত ধীরে ফ্রেশ হয়ে গায়ে জামা দিয়ে ইন করে পরিপাটি হয়ে জুতো সুন্দর মত বেঁধে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।
৫ ঘণ্টার রাস্তা। অনেক গল্প জমে আছে এর ভিতর। ফোন বের করে দারোয়ান সেলিমকে ফোন দিল সে।
- সেলিম! সব ঠিকঠাক?
সেলিমঃ যে! স্যার। আপনার নুন খেয়েছি। ঠিক না করে কি যাই?
শান্ত ভাইয়ের চোখটি ঠিকি চিনতে পেরেছিল ঐশীর চোখে। আজ ভাইয়ের রেখে যাওয়া ৩০ কোটি টাকার একটিও নিয়ে যেতে পারেনি ঐশী।
শান্ত জানতো, তারা মনিরকে অজ্ঞান করে আগে তার চোখটি তুলে নিয়েছিলো। সিস্টার সালমা ছিল দক্ষ। তারপর তার নিথর দেহ উপর থেকে ফেলে দেয় তারা।
সিস্টার সালমা এখন ক্যানাডায় স্যাটল। এসব কিছুই ঐশীর অবদান। শান্ত সব খবর রেখেছিল। সব পর্যবেক্ষন করেছিল।
অতঃপর ঢাকায় পৌঁছে…
পুলিশঃ দেখুন, শান্ত সাহেব, উই আর রিয়েলি সরি ফর ইয়র লস। ব্যাপারটা নিছক অ্যাকসিডেন্ট মনে হচ্ছে, তবুও আমরা পোস্ট মর্টেম করতে চাই।
শান্তঃ প্লিজ, ডু ইউর ডিউটি অফিসার।
পরে পুলিশের পোস্টমর্টেম রিপোর্টে আসে লাশের চোখ ছিল না বা গলে গিয়েছিল এই রকম।
শান্ত জানতো যে, সে ঢাকায় এসেছে শুধূ ভাইয়ের চোখটি ভাইয়ের কবরে দাফন দিতে। আর কিছু নয়।
২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ৮:০৯
Rehan বলেছেন: জী, নিছক গল্প মাত্র।
২| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ১০:৫১
রাজীব নুর বলেছেন: ওকে।
©somewhere in net ltd.
১| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:২৯
শায়মা বলেছেন: বাপরে!
পুরাই চোরের উপর বাটপাড়ি!
এমনই হয়।