নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিন্দুর মাঝে সিন্ধু দর্শনের আশায় পথ চলি...

রিদওয়ান হাসান

শুধু একদিন ভালোবাসা, মৃত্যু যে তারপর... যদি তা-ও পাই, আমি তা-ই চাই, চাই না বাঁচতে আমি প্রেমহীন হাজার বছর।

রিদওয়ান হাসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

এপিটাফ টাঙানো অন্ধকার কুঠির

১২ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১০:৫৪


কমার্শিয়াল রাজত্বে এক কথায় আমি সফল। একেবারে সর্বোচ্চ চূড়ায় আমি উন্নীত হয়েছি। আপনাদের কাছে আমি সাফল্যের আইডল হতে পারি, কিন্তু সত্যি বলতে কি, কাজের বাইরে আমার আনন্দ খুব কমই ছিল। সম্পদের পেছনে দৌঁড়েছে জীবনভর। আজ জীবনের অন্তিম মুহূর্তে যখন জীবনটাকে পর‌্যবেক্ষণ করি, তখন মনে হয় আমার সব যশ-খ্যাতি, সম্মান আর অর্জিত সম্পদ মৃত্যুর কাছে কিছুই না। একটা তুচ্ছ আর অর্থহীন জীবন মনে হয় তখন। এ্যাপলের গোটা সাম্রাজ্য আমার নিয়ন্ত্রণে ছিল, কিন্তু মৃত্যু আজ আমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে। পৃথিবীর সবচে’ ধনী ব্যক্তিদের ফিরিস্তিতে ঠাই পাওয়া একলোক এপিটাফ টাঙিয়ে অন্ধকারের কুঠিরে শুয়ে আছে- সেটা আদৌ বড় ব্যাপার না। প্রতি রাতে নিজের বিছানায় শোয়ার আগে আমি কী করলাম- এর হিসাব কষাটাই আসল ব্যাপার। অন্ধকার রাতে জীবন-নিরাপত্তাদায়ক মেশিনের সবুজ বাতিগুলোর দিকে চেয়ে আমার হৃদমরুতে হুহু করে ওঠে। মেশিনের শব্দের ভেতরে আমি আসন্ন মৃত্যু-কব্জাকারের নিঃশ্বাস অনুভব করতে পারি। তখন হৃদয়তন্ত্রিতে বেজে ওঠে- ‘শুধু সম্পদ না, সম্পদের সাথে সম্পর্কহীন জিনিসেরও তলব করা চাই মানুষের।’
বোকার মতো সম্পদ যোগার করাই সবকিছু নয়। এমন অনেক কিছু মানুষের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। যা মানুষের সাথে সুসম্পর্ক তৈরি করে, শিল্পের সৌন্দর্য্য বর্ধন করে আর তারুণ্যে সুন্দর একটি স্বপ্ন অন্তরে প্রতিপালন করে। শুধু সম্পদের পেছনে ছুটলেই মানুষ আমার মতো এক ভ্রান্ত মানুষে পরিণত হতে পারে। ঈশ্বর সবার অন্তরে ভালোবাসা অনুভব করার ক্ষমতা-জ্ঞান দিয়েছেন। কেবল এই নশ্বর পৃথিবীতে সম্পদের সঞ্চয়ের জন্য নয়। এই যে আমি মৃত্যুশয্যায় শুয়ে আছি। কই, সব সম্পদতো এই বিছানায় নিয়ে আসতে পারিনি। যা আছে- তা ভালোবাসা, প্রেম, মায়া, মমতার স্মৃতিগুলো । এগুলোই থেকে থেকে আমাকে সাহস যোগাবে, আলোর পথ দেখাবে। ভালোবাসা পৃথিবীর সর্বত্র ছড়িয়ে আছে- সম্পদ না খুঁজে ভালোবাসাও খুঁজে নেয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ। সম্পদ কখনো শান্তি আনে না। মানুষের প্রতি গভীর হৃদত্যা, সৌহার্দ্যবোধ আর ভালোবাসাই আনে শান্তি। পৃথিবীটাকে দেখো। শুধু সম্পদের পেছনে ছুটে হাহাকার করলে জীবনটাকে উপভোগ করতে পারবে না...

পৃথিবীতে সবচেয়ে দামি বিছানা কি জানেন? তাহলো- হাসপাতালের মৃত্য শয্যা। আপনাকে নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর জন্য আপনি একজন ড্রাইভার রাখতে পারেন। আপনার নিযুক্ত কর্মচারীরা আপনার জন্য অনেক টাকাই আয় করে দিবে। কিন্তু এটাই চিরন্তন সত্য- গোটা পৃথিবী চষে, পৃথিবীর সব সম্পদ দিয়ে হলেও একজন মানুষ পাবেন না যিনি আপনার রোগ বয়ে বেড়াবে।
বৈষয়িক যে কোনো জিনিস হারালে আপনি পাবেন। কিন্তু একটা জিনিসই হারালে আর পাওয়া যায় না- মানুষের জীবন। মানুষ যখন অপারেশন থিয়েটারে যায় তখন সে কেবলই অনুভব করে- কেন জীবনের মূল্যটা আগে বুঝিনি! জীবনের যে স্টেজেই আপনি আজ থাকুন না কেন- মৃত্যু আপনার জীবনের সামনে হাজির হবেই। মৃত্যুর পর্দায় আচ্ছাদিত হতেই হবে আপনাকে। সাঙ্গ হবে আপনার জীবন। তাই এই ঠুনকো জীবনপ্রদীন নিভে যাওয়ার আগেই পরিবার আপনজন ও বন্ধুবান্ধবের জন্য অন্তরে ভালোবাসা রাখুন। নিজের জীবনটাকে ভালোবাসুন। ঠিক নিজের মতো করে অন্যকেও ভালোবাসুন।

মূল : স্টিভ জবস
ভাষান্তর : রিদওয়ান হাসান



------------------------------------
[জন্ম ফেব্রুয়ারি ২৪, ১৯৫৫, মৃত্যু ৫ অক্টোবর ২০১১) যুক্তরাষ্ট্রের একজন উদ্যোক্তা ও প্রযুক্তি উদ্ভাবক। তাকে পার্সোনাল কম্পিউটার বিপ্লবের পথিকৃৎ বলা হয়। বিল গেটস আর ওয়াল্ট ডিজনির নাম বিবেচনায় রেখে বলা যায় বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে প্রগতিশীল,প্রভাবশালি, প্রতিভাবান আর সফল প্রযুক্তিক ভাবনার অধিকারী ছিলেন স্টিভ জবস | তিনি স্টিভ ওজনিয়াক এবং রোনাল্ড ওয়েন-এর সাথে ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে অ্যাপল কম্পিউটার প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি অ্যাপল ইনকর্পোরেশনের প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম ও সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। তিনি পিক্সার এ্যানিমেশন স্টুডিওস-এরও প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম ও সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। ১৯৮৫ সালে অ্যাপল ইনকর্পোরেশনের বোর্ড অব ডিরেক্টর্সের সদস্যদের সাথে বিরোধে জড়িয়ে তিনি অ্যাপল ইনকর্পোরেশনের থেকে পদত্যাগ করেন এবং নেক্সট কম্পিউটার প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯৬ সালে অ্যাপল কম্পিউটার নেক্সট কম্পিউটারকে কিনে নিলে তিনি অ্যাপলে ফিরে আসেন।

জবস অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী হিসেবে বছরে মাত্র ১ মার্কিন ডলার বেতন গ্রহন করতেন। অবশ্য তার কাছে অ্যাপলের ৫.৪২৬ মিলিয়ন শেয়ার ছিল, যার মূল্য ২.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এছাড়াও ছিল ডিজনির ১৩৮ মিলিয়ন শেয়ার, যার মূল্য ৪.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। জবস ঠাট্টস্বরূপ বলেন যে অ্যাপল থেকে তিনি বছরে যে ১ মার্কিন ডলার পান, তার ৫০ সেন্ট পান বার্ষিক সম্মেলনে উপস্থিত হওয়ার জন্য এবং বাঁকি ৫০ সেন্ট পান নিজের কাজের জন্য। ২০১০ সালে ফোর্বসের হিসাব অনুসারে, তার সম্পত্তির পরিমাণ ৮.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা তাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৪২তম ধনী ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে। স্টিভ জবস অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সারে ভুগে ২০১১ সালের ৫ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন। স্টিভ জবস যখন মারা যান তখন এ্যাপলের ব্যাংক একাউন্টে জমা ছিলো ৫০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। টেকনোলজির এই প্রফেট বা রাজপূত্র মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে একেবারে অন্তিম মুহুর্তে জীবন সম্পর্কে কিছু অসাধারণ কথা বলেছিলেন- যা জাপানি, চায়নিজ, হিন্দি, উর্দু, আরবি, স্প্যানিশ, পর্তুগিজ, রুশসহ প্রায় আঠারোটি ভাষায় অনুদিত হয়েছে। উপরোক্ত অনুবাদটি সেসব কথাগুলোর ভাষান্তর মাত্র।]

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ১১:১০

আবু মুছা আল আজাদ বলেছেন: ভাই স্টিভ সাহেবের আপেল বাট একপাশে খাওয়া এর কি কোন বিশেষ রহস্য আছে?

২৬ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ১১:৩১

রিদওয়ান হাসান বলেছেন: হা হা হা। সুন্দর প্রশ্ন করেছেন। তবে উত্তর জানতে হলে পড়ুন : অ্যাপল : নাম, লোগো, হেডকোয়াটার : ময়নাতদন্ত

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.