নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আম জনতার একজন।

ইছামতির তী্রে

I have a dream.

ইছামতির তী্রে › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রধানতম কিছু সংখ্যক সাহাবীদের (রাঃ) সম্মানসূচক উপাধি এবং তার শানে নুযূলঃ পর্ব- ০১

১১ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৪৮

সাহাবী শব্দের আভিধানিক অর্থ সংগী, সাথী, সহচর, একসাথে জীবন যাপনকারী অথবা সাহচর্যে অবস্থানকারী। ইসলামী পরিভাষায় ‘সাহাবা’ শব্দটি দ্বারা রাসূলুল্লাহর (সা.) মহান সংগী-সাথীদের বুঝায়। সাহাবীদের পরস্পরের মধ্যে মর্যাদা হিসেবে স্তরভেদ থাকতে পারে, কিন্তু পরবর্তী যুগের কোন মুসলমানই, তা তিনি যত বড় জ্ঞানী, গুণী ও সাধক হোন না কেন কেউই একজন সাধারণ সাহাবীর মর্যাদাও লাভ করতে পারেন না। এ ব্যাপারে কুরআন, সুন্নাহ্ এবং ইজমা একমত। যেমন হযরত আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেনঃ

‘‘আমার উম্মাতের মধ্যে সর্বোত্তম লোক হচ্ছে আমার যুগের লোকেরা। তারপর তার পরের যুগের লোকেরা, তারপর তার পরের যুগের লোকেরা। তারপর এমন একদল লোকের আবির্ভাব হবে যাদের কসম হবে তাদের সাক্ষ্যের অগ্রগামী। তাদের কাছে সাক্ষী চাওয়ার আগেই তারা সাক্ষ্য দেবে।’’

রাসূল সা. তাঁর সাহাবীদের গালি দেওয়া বা হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে সমালোচনা করতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেনঃ ‘‘আল্লাহ, আল্লাহ! আমার পরে তোমরা তাদেরকে সমালোচনার লক্ষ্যে পরিণত করো না। তাদেরকে যারা ভালোবাসে, আমার মুহাব্বতের খাতিরেই তারা ভালোবাসে, আর যারা তাদেরকে হিংসা করে, আমার প্রতি হিংসার কারণেই তারা তা করে।’’

সম্মানিত সাহাবাদের মধ্যে কেউ কেউ ইসলামের জন্য অসামান্য অবদানের কারণে, কেউ কেউ স্বভাবগত কারণে, কেউবা আঞ্চলিক কারণে নানা গুণবাচক উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন। কারো কারো ক্ষেত্রে উপাধির আড়ালে আসল নামটাই ঢাকা পড়ে গিয়েছিল। আমি মূলত সেই সকল সম্মানিত সাহাবাগণের অর্জিত উপাধিসমূহ এবং এর ‘শানে নুযূল’ বা কারণসমূহ উদ্ঘাটন করার প্রয়াস চালাব। আশা করি আপনারা সবাই সাথেই থাকবেন। আজকে ইসলামের প্রথম চার খলিফাগণকে নিয়ে আলোচনা করা হলো।

হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ)
হযরত আবু বকর রা. ছিলেন হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর একজন প্রধানতম সাহাবি, ইসলামের প্রথম খলিফা এবং প্রথম মুসলিমদের মধ্যে অন্যতম। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে প্রথম ইসলাম গ্রহণের সম্মান তাকে দেয়া হয়। এছাড়া তিনি রাসুল মুহাম্মদ (সা.) এর শ্বশুর ছিলেন। রাসুল মুহাম্মদ (সা) এর মৃত্যুর পর তিনি খলিফা হন এবং মুসলিমদের নেতৃত্ব দেন। তিনি আশারায়ে মুবাশ্শারা'র একজন।

উপাধি এবং শানে নুযূলঃ
হযরত মুহাম্মদ (সা) এর প্রতি অতুলনীয় বিশ্বাসের জন্য তাকে “সিদ্দিক” বা বিশ্বস্ত উপাধি প্রদান করা হয়েছে। তাই তাকে আবু বকর সিদ্দিক নামেও সম্বোধন করা হয়। তিনি মিরাজের ঘটনা শোনামাত্র বিশ্বাস করেছিলেন বলে তাকে হযরত মুহাম্মদ (সা) ‘সিদ্দিক’ উপাধিতে ভূষিত করেছেন। কুরআনে আবু বকরকে “গুহার দ্বিতীয় ব্যক্তি” হিসেবে সম্বোধন করা হয়েছে। হিজরতের সময় মুহাম্মদ (সা) এর সাথে আত্মরক্ষার্থে সাওর পর্বতের গুহায় আশ্রয় নেয়ার কারণে এভাবে সম্বোধন করা হয়েছে।

হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)
উমর ইবনুল খাত্তাব রাঃ ছিলেন ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা এবং প্রধান সাহাবীদের অন্যতম। আবু বকরের রাঃ মৃত্যুর পর তিনি দ্বিতীয় খলিফা হিসেবে দায়িত্ব নেন। তিনি ইসলামি আইনের একজন অভিজ্ঞ আইনজ্ঞ ছিলেন। উমরের শাসনামলে খিলাফতের সীমানা অকল্পনীয়ভাবে বৃদ্ধি পায়। তিনি আশারায়ে মুবাশ্শারা'র একজন

উপাধি এবং শানে নুযূলঃ
উমরের ইসলাম গ্রহণের পর প্রকাশ্যে কাবার সামনে নামাজ আদায় করাতে মুসলিমরা বাধার সম্মুখীন হয়নি। ইসলাম গ্রহণের পর গোপনীয়তা পরিহার করে প্রকাশ্যে তিনি মুসলিমদের নিয়ে বাইরে আসেন এবং কাবা প্রাঙ্গণে উপস্থিত হন। তিনি ছাড়াও হামজা ইবনে আবদুল মুত্তালিব এই দলের নেতৃত্বে ছিলেন। সেদিন মুহাম্মদ (সা) তাকে "আল ফারুক “ (সত্য মিথ্যার পার্থক্যকারী) উপাধি দেয়া হয়। কারণ, তাঁরই কারণে ইসলাম ও কুফরের মধ্যে প্রকাশ্য বিভেদ সৃষ্টি হয়েছিল। রাসূল সা. বলেছেনঃ ’উমারের জিহ্বা ও অন্তঃকরণে আল্লাহ তাআলা সত্যকে স্থায়ী করে দিয়েছেন। তাই সে ‘ফারুক’। আল্লাহ তাঁর দ্বারা সত্য ও মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য করে দিয়েছেন। আমিরুল মুমিনিন উপাধিটি সর্বপ্রথম তার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়েছে।

হযরত উসমান ইবন আফ্‌ফান (রাঃ)
উসমান ইবন আফ্ফান ছিলেন ইসলামের তৃতীয় খলীফা। তিনি প্রথম পর্বে ইসলাম গ্রহণকারীদের অন্তর্ভুক্ত। এছাড়াও তিনি আশারায়ে মুবাশ্শারা'র একজন এবং সেই ৬ জন সাহাবীর মধ্যে অন্যতম যাদের উপর মুহাম্মদ (সা) আমরণ সন্তুষ্ট ছিলেন।

উপাধি এবং শানে নুযূলঃ
ইসলাম গ্রহণের পর মুহাম্মদ (সা) তাঁর কন্যা রুকাইয়্যার সাথে তাঁর বিয়ে দেন। হিজরী দ্বিতীয় সনে তাবুক যুদ্ধের পরপর মদিনায় রুকাইয়্যা মারা যায়। এরপর নবী তাঁর দ্বিতীয় কন্যা উম্মু কুলসুমের সাথে তাঁর বিয়ে দেন। এ কারণেই তিনি মুসলিমদের কাছে ‘যুন-নূরাইন’ বা ‘দুই জ্যোতির অধিকারী’ হিসেবে খ্যাত।

কোরআন সঙ্কলনের বিশেষ অবদানের জন্য তাহাকে ‘জা’মেউল কোরআন’ উপাধি দেয়া হয়। হাদিসে আছে রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলিয়াছেন “বেহেশতে প্রত্যেক নবীরই সঙ্গী থাকিবে। আমার সঙ্গী হইবে উসমান।” মক্কার সমাজে একজন ধনী ব্যবসায়ী ছিলেন বলেই তাঁর উপাধি হয়েছিল ‘গনী’ যার অর্ধ ‘ধনী’।

হযরত আলী ইবন আবি তালিব (রাঃ)
হযরত আলী রাঃ ইসলামের চতুর্থ ও শেষ খলিফা। তিনি বালকদের মধ্যে তিনি সর্বপ্রথম বালক যিনি নবুয়তের ডাকে সাড়া দিয়ে মাত্র ১০ বছর বয়সে ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি আশারায়ে মুবাশ্শারা'র একজন

উপাধি এবং শানে নুযূলঃ
তিনি ছিলেন একজন অকুতোভয় যোদ্ধা। বদর যুদ্ধে বিশেষ বীরত্তের জন্য আল্লাহর রাসুল সাঃ তাঁকে "জুলফিকার" নামক তরবারি উপহার দিয়েছিলেন। এই তরবারি সম্মন্ধে যে বাক্য প্রচলিত রয়েছে তা মধ্যযুগের বহু আরবীয় রতবারিতেই খোদাই করা থাকত। কথাটি এররকম, ‘লা সাইফা ইল্লা যূ-আল-ফাকারি অ-লা ফাতা ইল্লা আলী’-‘কোন তরবারিই যুলফিকারের সমতূল্য নয়। কোন যোদ্ধাই আলীর সমকক্ষ নয়”। খাইবারের সুরক্ষিত কামূস দুর্গ জয় করলে মহানবী তাঁকে "আসাদুল্লাহ" বা আল্লাহর সিংহ উপাধি দেন।

তিনি ছিলেন জ্ঞানের দরজা। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ জ্ঞানার্জনের জন্য তাঁর কাছে এসে দেখতে পেত তিনি উটের রাখালী করছেন, ভূমি কুপিয়ে ক্ষেত তৈরী করছেন। তিনি এতই অনাড়ম্বর ছিলেন যে, সময় সময় শুধু মাটির ওপর শুয়ে যেতেন। একবার তাঁকে রাসূল সা. এ অবস্থায় দেখে সম্বোধন করেছিলেন, ‘ইয়া আবা তুরাব’- ওহে মাটির অধিবাসী প্রাকৃতজন। তাই তিনি পেয়েছিলেন, ‘আবু তুরাব’ লকবটি। খলীফা হওয়ার পরও তাঁর এ সরল জীবন অব্যাহত থাকে।

আরো কিছু তথ্যঃ
হযরত আলীর রা. খেলাফতের পুরো সময়টা ছিল নানা বিশৃঙ্খলায় পরিপূর্ণ। শেষ পর্যন্ত এই মহান সাহাবীকে শাহাদাতের পেয়ালা পান করতে হয়। শাহাদাতের পর কুফার যে জনবিরল স্থানে তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়, পরবর্তীতে আল-নাজাফের মাশহাদ আলী নামে সুপরিচিত সেই জায়গাটি ইসলামের অন্যতম তীর্থস্থান হিসেবে উন্নীত হয়। খলিফা আলী রা. ধীরে ধীরে তাঁর অনুসারী শিয়া জনগণের কাছে মুসলিম মহাপুরুষ হিসেবে বিখ্যাত ‘ওয়ালি’ (আল্লাহর বন্ধু) হয়ে ওঠেন। জীবনে যে সম্মান তিনি হারান মরণে তার দিগুণ পান। মধ্যযুগের ইউরোপীয় শিভালরি এবং আধুনিক স্কাউট আন্দোলন ফিতয়ান-পন্থীদের আদর্শপুরুষ এবং প্রথম ফাতা (তরুণ) হলে আলী। তিনি পরিচিত ছিলেন আদর্শবাদী এবং অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব। তাঁর পক্ষভুক্ত লোকেরা তাঁকে মনে করতেন, আল্লাহর অবতার। লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, বিশ্বজুড়ে যার কৃতিত্ব শেষপর্যন্ত ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয় সেই আলী রা. মৃত্যুর পর যে সম্মান ইসলামি দুনিয়া থেকে পান তা নবী মুহাম্মদ সা. এর পর আর কেউ পাননি।

বিঃ দ্রঃ বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর নাম উচ্চারিত হলে দরুদ পড়া মুসলমানদের জন্য অবশ্য কর্তব্য। এই লেখাতে (সাঃ) থাক বা না-থাক, পাঠকগণ এ বিষয়ে খেয়াল রাখবেন।

যেকোন প্রকার ভুল ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আর ভুল ধরিয়ে দিলে বাধিত থাকব।

আপনাদের অনেক অনেক ধন্যবাদ।

কৃতজ্ঞতায়ঃ
1. ‘আসহাবে রাসূলের জীবনকথা', লেখক হাম্মাদ আব্দুল মা'বুদ
2. পি কে হিট্টি'র ক্লাসিক গ্রন্থ 'হিস্ট্রি অব আরবস'
3. উইকিপিডিয়া

মন্তব্য ২ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:১২

মোঃ-আনারুল ইসলাম বলেছেন: অনেক সুন্দর লিখা, জাযাকাল্লাহ

১১ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৭

ইছামতির তী্রে বলেছেন: মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.