নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আম জনতার একজন।

ইছামতির তী্রে

I have a dream.

ইছামতির তী্রে › বিস্তারিত পোস্টঃ

বর্ষবরণের এক অবিস্মরণীয় রাতের গল্প।

০১ লা জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ২:১৫

বিদায় নিল আরও একটি বছর। জীবনের হিসেবে অতীত হলো ২০১৮। আজ নতুন বছরের প্রথম দিন। স্বাগত ২০১৯। আরেকটি নতুন বছর মানে নতুন করে শুরুর সম্ভাবনা। সেই সম্ভাবনাকে অব্যাহত রাখার প্রত্যয় নিয়ে যেন এসেছে ২০১৯। নববর্ষ মানে নতুন স্বপ্ন বোনা। নতুন বছর সবার স্বপ্নপূরণের বছর হোক-এই কামনা করি।



তবে নববর্ষ পালন করতে গিয়ে কিছু মানুষ যে পরিমাণ উন্মাদনা দেখায় তা আমার ভীষণ অপছন্দ। অবশ্য সবার পছন্দ এক না। সবাই নিজের রুচিমাফিক চলে। গতরাতে ‘থার্টি ফার্স্ট নাইট’ পালন করতে গিয়ে কেউ কেউ আতশবাজি, পটকাবাজী করে গোটা পাড়া মাথায় তুলেছিল। অসহ্য! কিন্তু কি আর করা! তবে আমিও কিন্তু একবার বেশ ঘটা করেই ‘থার্টি ফার্স্ট নাইট’ উদযাপন করেছিলাম। সেই গল্পই আজ বলব।

তখনো আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। ছুটিতে বাড়ি গেছি। বাড়িতে অলস বসে না থেকে ‘কিছু একটা করা’র পোকা মাথায় ঢুকল। সৌভাগ্যক্রমে সেবার ছুটির মধ্যেই ইংরেজী নববর্ষ পড়েছিল। তাই একেই টার্গেট করে একটা মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করলাম। পরিকল্পনাটা হলো, আব্বা-মাসহ বাড়ির সবাইকে নিয়ে ভোজের মাধ্যমে নতুন বছরকে বরণ করে নেব। পরিকল্পনা জানার পর ছেলে-বুড়ো সবাই সোৎসাহে রাজী হয়ে গেল। কেউ কেউ সামান্য আমতা আমতা করলেও ধোপে টিকল না। এবার ভোজের ব্যবস্থা। এর জন্য আলাদ পরিকল্পনা করলাম। সেটা হল, বাড়ির সকলের ঘর থেকে সমপরিমাণ চাল নেয়া হবে। মা-সহ অনেকই এককভাবে সব চাল দিতে চাইলেও আমি চাইছিলাম সবারই অংশগ্রহণ থাকুক, যাতে করে সবার মধ্যে একটা দায়িত্ববোধ কাজ করে। এবার মাংশ। মেঝো দুলাভাই মাংশ দিতে রাজী হওয়ায় মুশকিল আসান হল। ভোজের ব্যবস্থা সম্পন্ন। সবাই মিলে খিচুরি-মাংশ খেয়ে নববর্ষ উদযাপন। বাহ! চমৎকার!! সবার মাঝে প্রবল উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখে দারুণ লাগল। আমরা অধীর আগ্রহে থার্টি ফার্স্ট নাইটের অপেক্ষায় থাকলাম।

থার্টি ফার্স্ট নাইটে সন্ধ্যার পরপরই চাল সংগ্রহ শুরু করলাম। বোন-কাজিন-ভাগ্নে-ভাগ্নীদের এক বিরাট দঙ্গল নিয়ে ঘরে ঘরে গিয়ে চাল সংগ্রহ করতে লাগলাম। দলবল দেখে কেউ কেউ কিঞ্চিত হাসাহাসি করলেও আমাদের উৎসাহে মোটেও ভাটা পড়ল না। চাল সংগ্রহ শেষ হল। কিছুক্ষণের মধ্যে মাংশও এসে গেল। মশলাপাতি আমার মা সরবরাহ করলেন। এখন শুধু রান্নাটাই বাকী। রান্না হবে আমাদের চুলায়। সব রেডি হলে সব চাচা-চাচীদের রান্না ঘরের সামনে জড়ো করা হল। আব্বা অবশ্য রুমেই ছিলেন। মা আমাদের বাড়ির বড় বউ। তাই সর্বসম্মতিক্রমে তিনিই ‘বিসমিল্লাহ’ বলে চুলা ধরালেন। আমরা হালকা করতালি দিয়ে বিষয়টা উদযাপন করলাম। এরপর চাচীরা এসে মাকে ছুটি দিয়ে বাকী রান্নার কাজ শেষ করতে লাগলেন। চাচারা আপাতত বিদায় নিলেন। তবু উঠোনে তখন অনেক মানুষ। সবার মাঝে একটা উৎসব উৎসব ভাব। কিছুক্ষণ আগেও যারা ‘বিজাতীয় সংস্কৃতি’ বলে কটাক্ষ্য করছিলেন তাদেরকেও বেশ উৎফুল্ল লাগছিল। আসলে সংস্কৃতি যারই হোক এর ব্যবহারবিধিই মূখ্য। যাইহোক, চুলার পিঠটা ততক্ষণে হয়ে উঠেছে এক জম্পেশ আড্ডাখানা। মা-চাচীরা প্রাণখুলে হাসছে আর গল্পে মেতে আছে। আমি প্রাণভরে সেই মধুর দৃশ্য অবলোকন করতে লাগলাম। এদিকে গল্পে গল্পে রান্না এগিয়ে চলছে। কেননা ‘যে রাধে সে চুলও বাঁধে’।

এদিকে ছোটরাও বসে নেই। তারাও আমার রুমে গল্প-গুজবে মত্ত। আমি ওদের সাথে যোগ দিলাম। শুরুতেই সবাইকে কথা বলার পুরো স্বাধীনতা দিলাম। আজ কোন রাখঢাক নেই। ফলে সবাই খোলা আকাশে মুক্ত বিহঙ্গের মত উড়ছিল যেন। ওরা নিজেদের জীবনের গল্প বলছিল। ওদের কথার বহর দেখে আমি থ। আমার জানাই ছিল না ওরা এত সুন্দর করে কথা বলতে পারে। এদিকে সময় এগিয়ে চলছে দ্রুত। এক সময় রান্না শেষ হল। কিন্তু পরিকল্পনামাফিক সাথে সাথে খাওয়া শুরু করলাম না। আসলে আমরা রাত বারটার অপেক্ষা করছিলাম। অবশেষে এসে গেল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। আমরা সবাই দাঁড়িয়ে একে অপরকে ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’ বলে উইশ করলাম। নতুন বছরটা যেন সবার জন্য মঙ্গলময় হয় সেজন্য আবেগঘন একটা মোনাজাতও হল। গ্রামে রাত বারটা মানে গভীর রজনী। কিন্তু আমার এই ছোট ছোট ভাই-বোন-ভাগ্নে-ভাগ্নীদের কারো মাঝেই ক্লান্তির চিহ্নও নেই। সেদিন সবাইকে ভিন্নভাবে, ভিন্ন চেহারায়, ভিন্ন মেজাজে আবিস্কার করে অভিভূত হয়ে গেলাম। একতার শক্তি ও সৌন্দর্য সত্যিই অতুলনীয়।

এবার খাবার পালা। আবার সবাইকে ডেকে সবার প্লেটে খাবার দেয়া হল। যারা আসতে পারেনি তাদের ঘরে খাবার পাঠানো হল। বাকীরা সেখানেই খাওয়া-দাওয়া শুরু করলাম। আমি খাচ্ছি আর ভাবছি এমন স্বাদের খিচুরি কি আগে খেয়েছি? আসলে এতে মিশে ছিল অনেক ভালবাসা, অনেক আবেগ। যাইহোক, খাওয়া শেষ হলে চাচা-চাচীরা সবাই ধন্যবাদসহ বিদায় নিলেন। বিদায়ের মুহূর্তে সবার চোখে-মুখে আনন্দের ঝিলিক যেন উপচে পড়ছিল। যেটা কদাচিৎ দেখা যায়। সত্যি কথা বলতে কি, শুধু এই মুহূর্তটার জন্যই এতকিছু! এদিকে কাজিনরা যেতে চাইছিল না। ওরা সারারাত গল্প করবে বলে বায়না ধরল। আমিও রাজী হয়ে গেলাম। অবশেষে ফজর পর্যন্ত গল্প করে সবাই বিদায় নিল। আমি নামাজ পড়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।

সত্যি বড়ই অদ্ভুত সুন্দর ছিল সেই নববর্ষ উদযাপনটা। এই অনুষ্ঠানটা করার মূল উদ্দেশ্য ছিল আমাদের পরিবারের মধ্যে মিল-মোহাব্বত ও পারস্পারিক শ্রদ্ধাবোধকে বাড়িয়ে তোলা; পারিবারিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করা। বলাই বাহুল্য, ঐক্য প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে আয়োজিত আমার সেই মহতী প্রচেষ্টা বহুলাংশে সফল হয়েছিল। এই অনুষ্ঠানের পর পারিবারিক বন্ধন আরও সুদৃঢ় হয়েছিল। ছোটছোট ভাই-বোন, ভাগ্নে-ভাগ্নী যারা আজ যথেষ্ট বড় হয়ে গেছে, তারা আজও শ্রদ্ধাভরে সেই রাতের কথা স্মরণ করে।

সময়ের প্রয়োজনে আমার দাদার বাবা মুন্সি কছির উদ্দীন নামের একজন মানুষ, একটা ঘর, এক পাতিল থেকে আজ শত মানুষ, বহুসংখ্যক ঘর এবং বহুসংখ্যক পাতিলের সৃষ্টি হয়েছে। ভবিষ্যতেও এই ধারা অব্যহত থাকবে। একতাই শক্তি, একতাই বল। কিন্তু সময়ের ধারাকে রোধ করার সাধ্য আমাদের নেই।

বিভেদ-বিভাজনের মধ্যে আছে অপমান আর অনৈক্য; আর ঐক্যের মধ্যে আছে রহমত, বরকত ও ক্ষমা। তবু মানুষ ক্রমে ক্রমে বিচ্ছিন্নতার দিকেই অগ্রসর হয়। জীবনে বিভাজন আসবেই। একে মেনে নেয়ার মত পরিপক্কতা আমার আছে। বিভাজন আসে আসুক, কিন্তু সম্পর্কের বন্ধন, রক্তের টান, পারস্পারিক শ্রদ্ধাবোধ, ভালবাসা, স্নেহ-মায়া-মমতা ও দায়িত্ববোধ ইত্যাদি সদগুণগুলো যেন আমাদের মাঝ থেকে হারিয়ে না যায় সেদিকে সবার সবিশেষ দৃষ্টি দেয়া একান্ত প্রয়োজন। ২০১৯ সালের যাত্রার প্রাক্কালে এটাই হোক আমাদের দীপ্ত অঙ্গীকার।



সবাইকে নববর্ষের আন্তরিক শুভেচ্ছা।

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা জানুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৩:১৯

ব্লগার_প্রান্ত বলেছেন: ভালো লাগলো আপনার অভিজ্ঞতা! নতুন বছরের শুভেচ্ছা

০১ লা জানুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৪:২৯

ইছামতির তী্রে বলেছেন: পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ভাই। নতুন বছরের শুভেচ্ছা

২| ০১ লা জানুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৩:৫০

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
কালপরিক্রমায় নতুন বছর ফুলের সৌরভ নিয়ে আসুক ........
নতুন বছরে আপনাকে সহ সবাইকে শুভেচ্ছা।

০১ লা জানুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৪:৩১

ইছামতির তী্রে বলেছেন: আপনাকেও নতুন বছরে অনেক অনেক শুভেচ্ছা।

৩| ০১ লা জানুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৩:৫৭

রাজীব নুর বলেছেন: Happy New Year 2019

০১ লা জানুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৪:৩১

ইছামতির তী্রে বলেছেন: Happy New Year 2019

৪| ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:১৭

সৈয়দ তাজুল ইসলাম বলেছেন:

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.