নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ট্র্যাভেল করতে ভালো লাগে আর ভালো লাগে ট্যুর থেকে এসে রিভিউ করতে আর মাঝে মাঝে টুকটাক লেখালেখি করি ।

রিংকু সি বিশ্বাস

রিংকু সি বিশ্বাস › বিস্তারিত পোস্টঃ

অন্য চোখে কুয়াকাটা ( ৯/০৭/২০১৬ ) , পর্ব-১

২৮ শে জুলাই, ২০১৬ বিকাল ৫:১৩

ঈদের ছুটির প্রায় একমাস আগে থেকে প্ল্যান করছিলাম যে, কুয়াকাটা যাবো । আমি গিয়েছিলাম ,প্রায় বারো বছর আগে । তখন শুধুমাত্র ফেরিই পার হতে হতো , সাত/আটটা । তবে এখন যেহুতু যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক উন্নত হয়েছে, তাই বউকে বললাম , যাবে নাকি ? যথারীতি , তার হ্যাঁ বলতে একমুহূর্তও দেরি হয়নি ।
এরপর , প্ল্যান করলাম এবং বন্ধু-বান্ধব অনেককে নক করলাম , কিন্তু কেউ পাত্তা দিলো না । ঠিক করলাম,এবার আমরাই যাবো । খোজ নিয়ে হোটেল বুক করে ফেললাম । আর যাবার টিকিটটাও জোগাড় হয়ে গেল । ৮জুলাই যাবো , ফিরবো ১১জুলাই রাতে ।
৮তারিখ , সন্ধ্যায় বাসে উঠলাম , সাভার থেকে । বাস আমাদের উড়িয়ে নিয়ে গেল , বাসের গতির জন্য ভয়ে তো আমি ঘুমাতেই পারলাম না । ৯তারিখ ভোর চারটায় পৌঁছলাম , কুয়াকাটায় ।
এতো ভোরে পৌঁছানোর দরুন , হোটেলে রুম পেতে বেশ দেরি হল । সকালে আমরা , লবিতে রেস্ট নিলাম , বাইরে নাস্তা খেলাম , তারপর গেলাম , সি-বিচে । সকালটা ওখানে কাটিয়ে আবার দুপুরে সমুদ্রে দাপাদাপি । আমাদের ছেলেটা দেখলাম , সমুদ্র খুব পছন্দ করে । বালু নিয়ে খেলা , সমুদ্রের ঢেউয়ের সাথে লাফানো , এগুলো ওর খুব পছন্দ । সমুদ্রে নামলে আর উঠতেই চায় না ।
সমুদ্রস্নান শেষে , দুপুরে খাওয়া , অতঃপর ঘুম । সারারাত না ঘুমানোর ক্লান্তিটা কেটে গেল । সন্ধ্যায় আবার গেলাম ,বিচে । যাবার আগে সমুদ্রপারে কাঁকড়া ফ্রাই খেলাম । আর ছুরিমাছ ভাজা + তেলে ভাজা পরোটা নিয়ে গেলাম বিচের পারে । খাটিয়াতে শুয়ে সমুদ্রের গর্জন / মাঝে মাঝে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি আর মাছভাজা/ পরোটা দিয়ে ডিনার । ব্যাপারটা কিন্তু বেশ রোম্যান্টিক ছিল কিন্তু । যদিও আমার ছেলের দুষ্টুমি ছিল অনেক । বসে আছি , তখন দেখলাম , এক চাচা হাতে একতারা নিয়ে ঘুরছে । ডেকে বসালাম । গান গাইল দুটো । সব মিলিয়ে মনে হল যে , এলাহি কারবার । রাতে বেশ ভালো ঘুম হল । ক্লান্ত ছিলাম , তাই বোধ হয় ।
পরেরদিন সকালে উঠে , নাস্তা খেতে গেলাম । বলে রাখি , কুয়াকাটায় গিয়ে কিন্তু কক্সবাজারের সুবিধা খোজা যাবে না । কুয়াকাটার এখনো অনেক লিমিটেশন আছে । রেস্টুরেন্টগুলো মোটামুটি মানের , সেই সাথে খাবারও । নাস্তা খেয়ে , বের হতেই , বাইকওয়ালারা ঘিরে ধরল । আমি আগেই জানতাম যে , কিছু কিছু স্পট আছে , যেখানে ভ্যান নিয়ে যাওয়া যায় । কিন্তু বৃষ্টি হবার কারনে রাস্তায় অনেক কাদা , তাই বাইকই ভরসা । বেশ কয়েকটি বাইক দেখে একজনের চেহারা মোটামুটি বিশ্বস্ত মনে হল ।
দরদাম শুরু করলাম , লেবুবাগান , সুন্দরবনের এপাশের একাংশ , ঝাউবন আর কাঁকড়া / শুটকি পল্লী । এই স্পটগুলো ঘুরিয়ে দেখাবে , ৫০০টাকা চাইলো । সময় লাগবে , প্রায় তিনঘণ্টা । আমি তিনশ টাকায় ঠিক করলাম । বউকে পেছনে বসিয়ে , মাঝখানে আমি । আমার ছেলের আমার কোলে , জানতাম ব্যাপারটা একটু রিস্কি কিন্তু এই এলাকায় যে , সবাই এভাবেই যাতায়াত করে , এটাও জানতাম । শুরু হল আমাদের কুয়াকাটা ভ্রমন ।
ভ্রমণটা পানশে হতে পারত , হতে পারত একঘেয়ে কিন্তু শুধুমাত্র বাইকে চরার কারনে , পুরো ব্যাপারটা এক্সসাইটিং হয়ে উঠলো । বাইক আমাদের নিয়ে ছুটল , কখনো , কাচাপাকা রাস্তায় , আবার কখনো সমুদ্রের ঢেউ কেটে কেটে । চাকার নিচে দিয়ে , পা ভিজিয়ে পানি চলে যায় , আবার কখনো , যাবার রাস্তা পানিতে খুজে পাওয়া যায় না । বাইক থামিয়ে অপেক্ষা করতে হয় , কখন ঢেউটা এক মুহূর্তের জন্য চলে যাবে , আর আমাদের পাইলট সাথে সাথে স্পীড বাড়িয়ে বের হয়ে যায় । এক কথায়, জাস্ট থ্রিলিং ।
বাইক আমাদের নিয়ে গেল , প্রথমে , ঝাউবন+সুন্দরবন। আমরা অবশ্য ঝাউবনের ভিতরে যাইনি । আমাদের যে জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো , ওখান থেকে খেয়া পার হয়ে , সুন্দরবনের একাংশে যাওয়া যায় । আমরা এপার থেকেই সুন্দরবনের সবুজ দেখছিলাম । ঢেউয়ে পা ডুবিয়ে দাড়িয়ে থাকা , পেছনে বিস্তীর্ণ ঝাউবন- গাঢ় সবুজের ক্যানভাস , সামনে ফেনিল সমুদ্র , দূরে সবুজ সুন্দরবন আর মাথায় গুরি গুরি বৃষ্টি । প্রকৃতকে দুচোখ ভরে দেখার জন্য আর কি চাই ।
এরপর ফেরার পালা । ফেরার পথে থামবো , লেবুবাগান আর শুটকি পল্লী । লেবুবাগান বলতে কিন্তু লেবু গাছ নেই । সমুদ্রের পাশে হিজলগাছের বন । বাইক কিন্তু এই গাছগুলোর বনের ভিতর দিয়ে পাশ কাটিয়ে একে বেকে চলে যায় । বাইক রাইডটাই সবথেকে মজার ।
তারপর , শুটকি পল্লী । এখানে শুটকি মুলত পাওয়া যায় , শীতকালে । আমরা পেলাম কাঁকড়া । তাজা কাঁকড়া , ১০ মিনিটের মধ্যেই ভেজে দেয় খাবার জন্য । সমুদ্রের পাড়ে বসে , গরম গরম কাঁকড়া খাওয়াটা কিন্তু বেশ মজার । এখানে , বেশ কয়েকটি দোকান আছে কিন্তু বেষ্ট হল , একটা খালার দোকান , দামেও একটু কম আবার খেতেও ভালো । আপনি চাইলে , বিচের পাশ থেকে , জেলেদের কাছ থেকে ইলিশ কিনে , খালাকে দিলে , উনি আপনাদের জন্য রান্না করে দিবে । চাইলে ভাতও পাবেন , অগ্রিম অর্ডার দিলে । গুছিয়ে বলি , কুয়াকাটা থেকে বাইকে উঠে এখানে আসার সময় , জেলেদের কাছেই , তাজা ইলিশ পাবেন । একটু দামাদামি করে কিনতে হবে । যাবার সময় , খালার কাছে ইলিশ দিয়ে চলে যাবেন ঝাউবন+ সুন্দরবন দেখতে । ফেরার পথে চাইলে , এখানেই লাঞ্চ করে নিতে পারবেন । জানি , অনেকেই হয়ত নাক সিটকাবেন , এমন পরিবেশে হয়ত খেয়ে অভ্যস্ত না কিন্তু কোন ট্যুরে গেলে , স্থানীয় কারো এমন রান্না খাবার সুযোগ হাতছাড়া না করাই ভালো ।
কাঁকড়া খেয়ে , ব্যাক করলাম হোটেলে । তারপর রেগুলার রুটিন , সমুদ্রস্নান , দুপুরে রোদের কল্যাণে হালকা ঘুম ( আমি কিন্তু বই পরে সময় কাটিয়েছি ) , তারপর সন্ধ্যায় আবার সমুদ্র । ও হ্যাঁ , এদিন আমি একটা রেস্টুরেন্ট খুজে পেয়েছি , সি-গার্ল , বিচের কাছেই , মাছের আড়ত পার করে । এখানে বসার পরিবেশ বেশ ভালো , কুয়াকাটার অন্য যেকোন বাজেট রেস্টুরেন্টের চেয়ে ।
প্রথমদিনের সময়টা বেশ ভালো কাটলো । সমুদ্রের তাজা হাওয়ায় , মন ও শরীর ভালো করার এক অদ্ভুত ক্ষমতা আছে ।

এই হল , প্রথমদিনের রিভিউ । দ্বিতীয় দিনের রিভিউ যখন দিবো , ওখানেই দিয়ে দিবো , ট্যুরের খুঁটিনাটি , অর্থাৎ কিভাবে যাবেন , কোথায় থাকবেন , কি খাবেন , খরচ কেমন হবে , এসব ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.