নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ট্র্যাভেল করতে ভালো লাগে আর ভালো লাগে ট্যুর থেকে এসে রিভিউ করতে আর মাঝে মাঝে টুকটাক লেখালেখি করি ।

রিংকু সি বিশ্বাস

রিংকু সি বিশ্বাস › বিস্তারিত পোস্টঃ

অন্যচোখে কুয়াকাটা ( ১১/০৭/২০১৬) পর্ব-২

২৮ শে জুলাই, ২০১৬ বিকাল ৫:২১

শেষের দিন , তৃতীয় দিন ।
ঘুম থেকে উঠে গেলাম , নাস্তা খেতে । এখানে সকালের নাস্তা খাবার ব্যাপারটা বেশ আয়োজনের । আপনি চাইলে , পরোটা দিয়ে , সবজি/ আলু ভাজি / ডিম খেতে পারেন আবার গরম গরম চালডালের প্লেন খিচুড়ি পাবেন , অমলেট দিয়ে খাবার জন্য । পাবেন , ধোয়া ওঠা গরম ভাতের সাথে , আলু ভর্তা বা চিংড়ী ভর্তা অথবা মাছ-মাংসের তরকারি । একটু আলাদা কিছু ট্রাই করতে চান ? পাবেন মাটির হাড়ির তলাটা উল্টো করে চুলোয় বসিয়ে তাতে সাদা হাত রুটি , সাথে পাবেন সবজি + ডিম । এই নাস্তাটা পাবেন , মাছের আড়তের ঠিক উল্টো দিকে ।
এদিনই আমাদের লাস্টদিন, কুয়াকাটায় । বাইকওয়ালাকে ( ওর নাম ফোরকান ) বলা ছিল , দুপুর দুটায় হোটেল থেকে আমাদের পিক করতে । ছেলেটা যেমন ভালো বাইক চালায় , তেমন পাংচুইয়াল আবার খুব হেপ্লফুল । সকালটা ছিলাম বিচে আর হোটেলেই দুপুরে খেয়ে রওয়ানা দিলাম , কুয়াকাটার বাকি কিছু স্পট দেখতে । এবারের স্পটগুলো হল, সীমা বৌদ্ধ বিহার , রাখাইন পল্লী , কাঁকড়ার চর , চর গঙ্গামতি হয়ে হোটেল ।
বৌদ্ধ বিহারটা বেশ সুন্দর , ছিমছাম । এখানে দক্ষিন এশিয়ার দ্বিতীয় ( পক্ষান্তরে প্রথম) ৩৬ফুট উচু গৌতম বুদ্ধের মূর্তি আছে । আছে একটি পবিত্র কুয়া , যদিও কুয়ার পানি চরমভাবে দুষিত । পবিত্র কুয়ার পানি কেন পরিষ্কার থাকে না , এটা আমার কাছে বোধগম্য হল না ।
বৌদ্ধ বিহারের ঠিক পাশেই রাখাইন পল্লী । সাধারণ জীবন-যাপন দেখতে পাবেন এখানে । কয়েকটি দোকান আছে , যেখানে তাদের উৎপাদিত পণ্যগুলো বিক্রি হয় । তবে দেখে মনে হয়েছে , অনেক কিছুই মনে হয় তাদের উৎপাদিত না । কিনলে একটু দেখে কেনা ভালো ।
আবার বাইকে করে , আকা বাকা , খানিকটা বন পেরিয়ে খুজে পেলাম , অপরূপ সমুদ্র । এই দৃশ্যটা অন্য যেকোনো সমুদ্রের সাথে ঠিক মেলানো যাবে না । আদিদিগন্ত সমুদ্র , কিছু জেলে নৌকা মেরামত করছে আর চারিদিক শুধু সৌন্দর্য । আমরা বাইক থেকে নেমে , পা ভেজাতে গেলাম আর রোদ দৌড় দিয়ে পানিতে । ওকে পানি থেকে পাঁজাকোলা করে আনতে হল । আবারো বিচের পাড়ে বাইক রাইড । চমৎকার লাগে ।
আসলাম , লাল কাঁকড়ার চরে । নেমেই আমার ছেলে আর বউ কাঁকড়া ধরার জন্য বসে পড়লো । ছেলে তো একেবারে বালুতে বসে , বাচ্চা কাঁকড়া ধরার বৃথা চেষ্টা শুরু করল , সাথে বউও । বউ অবশ্য , বাইকওয়ালার সাহায্য নিয়ে , দুটো কাঁকড়া ধরতে পেরেছিল । আমি ছবি তোলার চেষ্টা করলাম । ভালো একটা জুম লেন্স থাকলে আরও ভালো ছবি তুলতে পারতাম বোধহয় । কাঁকড়ার চর থেকে আবার বাইকে , বিচ দিয়ে আসলাম , চর গঙ্গামতি ।
এই চরে যেতে খেয়া পার হতে হয় । ব্যাপারটা হল , সমুদ্র এসে পরেছে এক নদী । এপার ওপার দেখা যায়। কিন্তু পার হতে হয় খেয়া দিয়ে । বাইক’ও কিন্তু খেয়া দিয়ে পার করাতে হয় । সবাই দেখলাম যে , এতে বেশ অভ্যস্ত । খেয়া নৌকায় ছিল , কিছু কাঁকড়া শিকারি । একবার মনে হল যে, কিনে নেই কিন্তু বাইকে থাকার জন্য কিনলাম না । সবার ব্যাগেই দেখলাম বেশ পরিমান কাঁকড়া । খেয়া থেকে নেমেই চর গঙ্গামতি ।
এখানেও বাইক চলল , সমুদ্রপার ঘেঁষে , মাঝে মাঝে বিচের পাশের গাছের ফাক ফোকর দিয়ে । যতটুক না লিখছি ব্যাপারটা কিন্তু তার চাইতে থ্রিলিং । আর সমুদ্র এভাবে দেখাটা আমাদের জন্য নতুন । আমরা সমুদ্র দেখেছি কক্সবাজারে , দেখেছি সেন্ট মারটিনে , দেখেছি মালয়েশিয়ার লাঙ্কাউতে , দেখেছি নরওয়েতে কিন্তু কুয়াকাটার এই সমুদ্রটা বাইকে ঘুরে নতুন করে দেখলাম । আর পরন্ত বিকালের সমুদ্র সবসময়ে সুন্দর ।
যাত্রাপথে , এক জায়গায় এসে দেখলাম যে , জোয়ারের পানি চলে এসেছে । বেশকিছু বাইক দাড়িয়ে আছে , ভাটা হবার সাথে সাথে পার হবে । মজার ব্যাপার হল , ভাটা হলে পানি হয় , হাঁটু সমান আর জোয়ার হলে হয় কোমর সমান বা তার কিছুটা উপরে । আর এই পুরো জোয়ার ভাটার ব্যাপারটা মিনিটখানিকের মধ্যেই হয় । সবাই অপেক্ষা করছে কখন ভাটা হবে । ভাটা হলেই বাইক ও মানুষ মিলে দৌড় । ছোট খালটি প্রায় ২০ফুটের মত লম্বা , খুব কিন্তু বেশি না , কয়েক সেকেন্ড লাগে পার হতে , কিন্তু ব্যাপারটা বেশ মজার । দাড়িয়ে দাড়িয়ে জোয়ার এবং ভাটার এই পুরো ব্যাপারটা বোঝা যায় । আমরাও দৌড়ে পার হলাম । ওপারে উঠে আবার বাইকে করে চলে আসলাম টাউনে । শেষ হল আমাদের কুয়াকাটা ভ্রমন । সন্ধ্যায় বাসে করে ঢাকায় ।
অনেকে হয়ত চিন্তা করছেন যে, সূর্যাস্ত এবং সূর্যোদয়ের বর্ণনা কোথায় ? কারন সবাই চিন্তা করে কুয়াকাটায় গিয়ে একই জায়গায় দাড়িয়ে সূর্যাস্ত এবং সূর্যোদয় দেখার । ব্যাপারটা হল , এটা দেখা যায় মুলত শীতকালে । বর্ষাকালে , বাইকওয়ালারা আপনাকে বলবে যে , সূর্যাস্ত এবং সূর্যোদয় দেখাবে এবং নির্দিষ্ট জায়গায়ও হয়ত নিয়ে যাবে , কিন্তু দেখা হবেনা কিছুই । প্রায় দিনই বৃষ্টি থাকে । আর শীতকালে গেলেও , গ্রুপ নিয়ে যাওয়া ভালো ,নিরাপত্তার জন্য ।
কিভাবে যাবেন ঃ কোন এসি বাস নেই । গাবতলি থেকে গেলে সাকুরা , শ্যামলী বা ঈগল পরিবহনে । আর সায়দাবাদ থেকেও যাওয়া যায় , এস আলম , কুয়াকাটা এক্সপ্রেসসহ আরও কিছু বাস সার্ভিস আছে । বাস ভাড়া পড়বে ৭৫০টাকা ( ওয়ান ওয়ে ) ।
একটু ঘুরে যেতে চাইলে , সদরঘাট থেকে বেশ কিছু আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন লঞ্চ আছে , যেতে পারবেন পটুয়াখালী পর্যন্ত । তারপর সেখান থেকে বাস অথবা মাইক্রোবাস ভাড়া করে ।
কোথায় থাকবেন ঃ এখন বেশ কিছু ভালো মানের হোটেল/ রিসোর্ট আছে । তবে কোনটাই সমুদ্রপারে না এবং ব্যালকনিতে বসে সমুদ্র দেখা যাবে না । পাঁচ-সাত মিনিট হাঁটতে হবে । নামে একটা ফাইভস্টার হোটেল আছে । প্রায় সব ভালো মানের হোটেল / রিসোর্ট অনলাইনে পেয়ে যাবেন , বুকিং দিতে কোন সমস্যা হবে না ।
আমরা ছিলাম , হোটেল বনানী প্যালেস । বাজেট হোটেল । এখানে থাকতে পারেন , নন-এসি ভাড়া পড়বে , ১৬৫০ টাকা আর এসি রুমের ভাড়া পড়বে ঃ ৩০০০ থেকে ৪০০০টাকা পর্যন্ত । ব্যাচেলারদের জন্য আট বিছানার রুম আছে , ভাড়া পড়বে ৪০০০ টাকা । এদের কাস্টমার সার্ভিস তেমন ভালো না কিন্তু রুমগুলো ভালো , থাকতে তেমন সমস্যা হবে না । আর সুবিধা হল , এখানে রেস্টুরেন্ট সার্ভিস আছে , প্রায় সব খাবার অর্ডার দিলে পাবেন । রান্না ভালো । কোরাল মাছটা অবশ্যই খাবেন । ভোর বেলা , মাছের আড়তে চলে যান , অনেক রকম মাছ পাবেন , কিনে এনে দেন , এরাই রান্না করে দিবে ।
কি খাবেন ঃ আগেই বলেছি , সন্ধ্যায় সমুদ্র পাড়ে কাঁকড়া , চিংড়ী , কিছু সামুদ্রিক মাছ পাবেন । দাম অনেক বেশি কিন্তু খেতে পারেন । এক দিনই তো । ডাব পাবেন অনেক । বাস স্ট্যান্ডের চার রাস্তার মোড়ে , পুলিশ ফাঁড়ির ঠিক উল্টা দিকে খুজে পাবেন একটা চিপার/খুপরি দোকান । এখানে সন্ধ্যায় পাবেন চিংড়ী ভাজা , পিয়াজুটা বেশ মজার এবং পাবেন চিকেন ফ্রাই । ইলিশ খেতে পারেন জেলেদের কাছ থেকে কিনে । এজন্য খুব ভোরে উঠে , জেলেদের কাছ থেকে কিনতে পারেন । ভালো মানের রেস্টুরেন্ট বলতে সি-গার্ল , যেটা বিচের কাছাকাছি । আর বড় হোটেলগুলোতে , আগে অর্ডার দিলে খেতে পারেন । আর বাজারে , ছোট ছোট কিছু রেস্টুরেন্ট আছে । মাংসই পাবেন বেশি ।
কখন যাবেন ঃ শীতকালে যাওয়াটাই শ্রেয় , ঢেউ কম থাকে । কিন্তু আমাদের তো চাকরি লাইফ, তাই যখন ছুটি , তখনই যাওয়া যায় ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.