![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শিশু বয়স থেকে টিনএজ পর্যন্ত যে প্রেম, তার সময়সীমা দীর্ঘ হয় না মোটেও। কিছুদিন আগে যে বালক-বালিকাকে হাত ধরে হাঁটতে, চুমু খেতে দেখেছি তাদেরই যখন আবার একইভাবে অন্যজনের সঙ্গে দেখতাম, তখন মনে হতো এসব কি সত্যিই প্রেম? এ রকম বালক-বালিকা, কিশোর-কিশোরীদের সঙ্গে এ ব্যাপারে আলাপ করে যা বুঝেছি, তার স্বাভাবিকতা না মেনে উপায় ছিল না।
টিনএজ মিতুকে একদিন প্রশ্ন করেছিলাম, 'কিছু দিন আগে মামুন এর জন্য অস্থির থাকতে তুমি, আর এখন ভালবাস রিয়াজকে , কি করে সম্ভব?' 'তখন ওটাই সত্যি ছিল, এখন এটাই সত্যি। মামুনের ভেতরের দিকটা যখন জেনেছি, তখন আর ভাল লাগেনি ওকে' বলেছিল মিতু। 'যদি রিয়াজের সম্পর্কেও একদিন বিপরীত ধারণা বা অভিজ্ঞতা হয়, তবে কি ওকে ও ছেড়ে দেবে?' জানতে চেয়েছিলাম। 'অবশ্যই' স্পষ্ট জবাব ছিল মিতুর।
এ বিষয়টি নিয়ে যতই ভেবেছি, মনে হয়েছে দু'জন নারী-পুরyষের প্রেম ভালবাসা তো মূলত ভাল লাগার দায়ে আবদ্ধ, অন্য কোন দায় নেই এতে। ভাললাগার পরিমাণ কমে এলে, ভালবাসার পরিমাণ তো অননত্ম অসীম হয়ে উঠতে পারে না।
পৃথিবীর কোন কিছুই যদি অবিনশ্বর না হয়, তো নর-নারীর প্রেম সম্পর্ক অবিনশ্বর হবে কেন? প্রেম, নারী ও পুরম্নষের হৃদয়কে কিছুদিন একত্রে ধরে রাখতে পারে মাত্র। তবুও গভীর প্রেমে পড়ার পর একজন অন্যজনকে বলে, 'তুমি আমার চিরদিনের, জন্ম-জন্মানত্মরের' ধরনের সংলাপ। কেন বলে? বলে, সঠিক জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতার অভাবে। বলে, ভয় থেকে। বলে, প্রেম সম্পর্ককে স্থায়ী করার অলিখিত চুক্তি আর নিশ্চয়তা হিসেবে। যখন সে এসব কথা বলছে, তখন সে বুঝতেও পারছে না, আজ যাকে এত ভাল লাগছে, পরিবর্তনের অনিরম্নদ্ধ স্রোতে মন বা হৃদয়ের চাহিদা বদলে গেলে, কাল তাকে আর ভাল লাগবে কি না। এক মুহূর্ত পরে কী ঘটবে তা জানার উপায় যেখানে মানুষের নেই, সেখানে, জন্ম-জন্মানত্মরের নিশ্চয়তা দেবার পরে যখন সম্পর্কের ভাঙ্গন শুরম্ন হয় এবং তা অনিবার্য হয়ে ওঠে তখন একজন অন্যজনকে কি বলে? 'মিথ্যেবাদী' 'অবিশ্বাসী' 'ভ-' 'প্রতারক'সহ এ ধরনের যত শব্দ আছে সবই কী ব্যবহার করে না? অবশ্যই করে। ভেতরের সবটুকু ঘৃণা বের করে দিতে, বিক্ষত মনটাকে সুস্থ করে তুলতে এসব শব্দ টনিকের মতোই কাজ করে তখন।
'নারী ও পুরম্নষ পরস্পরের প্রতি আকর্ষণ বোধ করবে এটা তাদের নিয়তি এবং আরও মম©নত্মিক নিয়তি হচ্ছে, তাদের আকর্ষণ দীর্ঘস্থায়ী হবে না' লিখেছেন হুমায়ুন আজাদ। কিন্তু কেন তাদের আকর্ষণ দীর্ঘস্থায়ী হবে না তার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও আছে। গবেষকদের মতে, মানুষের অন্য অনেক নেশার মতো, প্রেমও এক বিশেষ ধরনের নেশা। তবে এই নেশা অন্য নেশার তুলনায় অল্পায়ু।
প্রেম সম্পর্কের এক পর্যায়ে নর-নারী দেহ স্পর্শের যে সুখ পেতে চান, তার কারণ এক জৈব রাসায়নিক, যা মানুষের রক্তে মাত্রাভেদে মিশ্রিত থাকে। অধিকাংশ প্রেম সম্পর্কের নির্ধারিত গনত্মব্য হচ্ছে দেহজ সুখ। প্রেম অনুভূতি দেহের বা যৌন সুখের মধ্যে তার গনত্মব্য খুঁজে না পেলেও একটা নির্দিষ্ট সময়ের পরে এই সম্পর্কের জোয়ারে ভাটা পড়তে থাকে। প্রতিটি প্রেমের সময় সীমা নির্দিষ্ট করে দিয়েছে প্রকৃতি। গড়ে প্রায় চার বছর।
প্রেম হচ্ছে অনেক রকম দায়-দায়িত্বের জটিল শেকলে আবদ্ধ হয়ে একত্রে থাকার অভ্যেস মাত্র। তার চেয়েও জরyরী সমাজকে সুখী করার ব্যাপারটি।
।
মানুষের প্রতিষ্ঠিত বিধানের কাঁচি, মানুষের হৃদয়ের ওপর চালানো যায়নি। যায়নি বলেই, প্রেমে পড়লে প্রতিটি মানুষ তার প্রেমিক, প্রেমিকার সঙ্গে আচরণ করেন তার নিজের স্বভাবমতো। তারপরও আমার ধারণা, পৃথিবীর বেশিরভাগ প্রেমিক-প্রেমিকা প্রবল আবেগায়িত অবস্থায় একে অন্যকে যেসব কথা বলেন, অধিকাংশ প্রেমের গানে, কবিতায়, সাহিত্যে যে প্রেমাবেগ প্রকাশ করেন তার ধরন অনেকটা একই রকম।
'তুমি আমার' 'তোমাকে পেলে আমার আর কিছুই চাই না' 'তোমার চেয়ে বেশি সুন্দর আর কেউ নয়' 'আমি কোন দিন তোমাকে ছেড়ে যাব না' 'সারা জীবন তোমাকে ভালবাসব' 'আমি তোমাকে আমার জীবনের চেয়েও বেশি ভালবাসি' ধরনের সংলাপ কী সব প্রেমিক-প্রেমিকাই কোন না কোন সময় বলেননি? হাজার হাজার বছর ধরে চলে আসা এ রকম সব কথা, আমার মতে অজ্ঞানে অসচেতনে করা প্রতারণা। কিভাবে? বলছি।
'তোমাকে পেলে আমার আর কিছু চাই না' বলার আগে নিজেকেই প্রশ্ন করা দরকার, সত্যিই কি তাই? তাকে পেলেই কি অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, অর্থসহ অন্য সব অভাব মিটে যায়? যায় না। যায় না বলেই যদি এভাবে বলা যায়, 'আমার জীবনের সুখকে সমৃদ্ধ করার জন্য তোমাকে চাই' তাহলেই কি প্রেমের সংলাপ যুক্তিসঙ্গত হয়ে ওঠে না?
'তোমার চেয়ে বেশি সুন্দর আর কেউ নয়' তাকে খুশি করার জন্য এ রকম কথা না বলে যদি বলা হয়, 'তোমাকে আমার কাছে ভারি সুন্দর লাগে' তাহলেই কি তা সত্যতায় অনন্য হয়ে ওঠে না?
'আমি কোনদিন তোমাকে ছেড়ে যাব না' না বলে, যদি বলা হয় 'যত দিন সম্ভব তোমার কাছেই থাকব' তবে কী তা মিথ্যা বলা হবে?
'সারাজীবন তোমাকে ভালবাসব' বলার মতো নিশ্চয়তা বা গ্যারান্টি, কী কেউ কাউকে দিতে পারেন আসলে? পারেন না। কারণ মানুষের জীবনের সব কিছুই হচ্ছে রিলেটিভ। প্রায় সব কিছুই নির্ভর করে অন্য কিছুর ওপরে। যাকে মানুষ ভালবাসে, তার প্রতিমুহূর্তের আচরণের ওপর নির্ভর করে, তাকে কতটা ভালবাসা যায় এবং কতদিন। তাই, সঠিক হয়ে উঠবে সংলাপ, যদি বলা হয়, 'এই মুহূর্তে তোমাকে আমি আমার সমসত্ম অনুভূতি দিয়ে ভালবাসি, এখন এটাই সত্যি।'
'আমি তোমাকে আমার জীবনের চেয়েও বেশি ভালবাসি' এ কথা কাউকে বলা মানেই হচ্ছে, অচেতনে মিথ্যেবাদী হওয়া। মনে রাখা ভাল, ৯৮ ভাগ মানুষ বেঁচে থাকে, মূলত তার নিজের প্রতি প্রবল প্রেমের ভিত্তিতে। তাই নিজের চেয়ে বেশি ভাল সে কাউকেই বাসতে পারে না। মা তার সনত্মানকে নিজের জীবনের চেয়ে বেশি ভালবাসেন বলে আমার মনে হয় না। যদি তাই হতো, তাহলে সনত্মানের মৃতু্র পরও মা বেঁচে থাকতে পারতেন না। এ রকম কথা যারা বলেন, তাদেরকেই ভেবে দেখতে বলছি, এসব কথা সত্য এবং সঠিক কি না। যা মিথ্যে তা বিশ্বাস করলে কি ঠকতে হয় না?
ভালবাসা প্রকাশের ভাষা, সুচিনত্মিতভাবে সঠিক এবং যৌক্তিক করে তুলতে পারলে, এই সম্পর্ক সমৃদ্ধ এবং যথার্থ হয়ে উঠবে সত¨তায়। এক সময়ে যে কোন কারণে প্রেম সম্পর্কের মৃতু্¨ হলেও একজনের প্রতি অন্যজনের শ্রদ্ধাবোধ হারিয়ে যাবে না। অসততা বা মিথ্যাচারের দায়ে অভিযুক্ত হতে হবে না কাউকেই। বন্ধুত্ব রূপানত্মরিত হবে না ভয়াবহ শত্রম্নতায়। প্রেম না থাকুক, পরিচয়ের স্বাভাবিক সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা যাবে। আর সেটাই কী হওয়া উচিত নয়?
ঢাকা আসার আগে বা ঢাকায় থাকতে হলে যা জানতে হয় তা দেখুন এখানে।
২| ০৭ ই অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৫:১৭
ইরফান আহমেদ বর্ষণ বলেছেন: হুমম
©somewhere in net ltd.
১|
১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:১৪
বিল্লা বাবা বলেছেন: ভালো লিখসেন। বর্তমানে যুগে প্রেম দৈহিক সম্পর্কের উপর দাঁড়ানো। কিছু করবানা তো প্রেম টিকবে না আবার কিছু করলেও টিকবে না। আজব............