![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রোনালির সাথে আমার প্রথম সাক্ষাৎ হয় আমার একটা পেজের পোস্ট এ। মেয়েটার সাথে কথা বলে ভালো লাগল তাই ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠালাম। ভেবেছিলাম হয়ত একসেপ্ট করবেনা কারন ও ফেসবুক চালায় অনেক আগে থেকেই কিন্তু ফ্রেন্ডলিস্ট অনেক ছোট। কিন্তু ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠিয়ে বলার পর সাথে সাথেই একসেপ্ট করে মেসেজ দিল, "আপনিও কি এড মি পাবলিকদের মত নাকি?"
আমি মনে করলাম হয়তো কথা শুনানোর জন্যই হয়ত একসেপ্ট করছে তাই বললাম, "আমাকে আপনার তাই মনে হল?"
"হাহাহা, আমি একটু বাঁকা কথা বলতে পছন্দ করি। আপনাকে না চিনলেতো একসেপ্টই করতামনা!"
"তাই, আপনি আমাকে কিভাবে চিনলেন?"
"আপনার পেজের মেইন এডমিন আমার ভাইয়া হয়।"
"কে? রাইয়ান?"
"হ্যাঁ"
"কিভাবে? রাইয়ানতো আমার বেস্ট ফ্রেন্ড হয়!"
"আমি এটাও জানি।"
"আর কি কি জানেন?"
"আপনাকে অনেক মেয়েরা পছন্দ করে। "
"রাইয়ান তাই বলেছে? এটা একদম মিথ্যা কথা! কিন্তু, রাইয়ানের কোন এত ছোট বোন তো নেই! তুমি কে বলতো?"
"বোন হতে রক্তের সম্পর্ক থাকা লাগে নাকি? আমার বায়োলজিক্যাল ভাই ছাড়া আরো অনেক ভাই আছে?"
"তাই, তোমার কয়টা ভাই? "
" আমার চার ভাই। "
"ভালো, তা আপনি কেমন আছেন? "
"এতো আপনি-তুমি করছেন কেন! আমাকে তুই করে বলতে পারেন যেহেতু আপনি আমার ভাইয়ার ফ্রেন্ড!"
"আসলে তোমাকে চিনিনাতো তাই।"
"ওকে, এর পরেরবার আমাকে আপনি করে বললে আপনাকে আমি তুই করে বলবো! "
"কি দুষ্টু মেয়েরে বাবা!'
"হ্যাঁ, আমি দুষ্টুই! "
"অনেক দুষ্টামি হল , এখন তাহলে যাই। কাল খুব সকালে উঠতে হবে। ভালো থেকো। টেক কেয়ার।"
"ওকে, আল্লাহ্ হাফেয"
মেয়েটা একটু দুষ্টু, কিন্তু কথা বলে অনেক ভালো লাগল। এক নিমিষেই মন ভালো করে দেয়ার ক্ষমতা আছে।
এভাবে কয়েকদিন কথা হল। ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হওয়ার পড় আমি বাড়িতে যাব তাই একদিন মেসেজে লিখলাম " তোমার সাথে হয়ত আর কথা হবে না।"
"জানেন, আমি সবার আগে মরবো। "
"এরকম কথা বলছ কেন? "
" আপনি তাহলে বললেন কেন আর কথা হবেনা?"
"আরে পাগলী, আমি বাড়িতে যাব। আর বাড়িতে ইন্টারনেট ইউজ করিনা অনেক স্লো বলে। "
"অহহ, এই কথা। আমিতো ভেবেছিলাম..."
"সবার আগে তুমি মরবা এটা তোমাকে কে বলল?"
"আমি চাই সবার আগে মরতে কারন আমি আমার প্রিয় মানুষদের মৃত্যু সহ্য করতে পারবনা।"
এই কথাটা শুনার পর অন্যরকম একটা অনুভূতি হল। কয়েকদিনেই এত ভালো বন্ধুত্ব সবাই করতে পারেনা। এত পাগলাটে মানুষ আমি কখনো দেখি নি।
সেদিনের মত কথা বলা করে পরেরদিন বাড়িতে গেলাম। কিন্তু প্রায় প্রতিদিনই রাইয়ানের মোবাইলে ফেসবুকে যেতাম। একদিন কথাও হল ওর সাথে। কথা বলার সময় মেয়েটাকে বুঝার চেষ্টা করতাম কারন সবকিছু নিয়েই ফান করত অনেক। অনেক হাসাতে পারে আমাকে।
বাড়ি থেকে ফিরার পর স্কাইপে দুইদিন কথা বললাম। ও নিজেও অনেক হাসে। এমনকি কষ্টের কথা বলার সময়ও হাসে। কথা বলার পর ওর প্রতি কেমন যেন একটা দুর্বলতা তৈরি হয়ে গেল। কিন্তু এসব দুর্বলতার কোন দাম নেই বাস্তব জগতে। তাই ভেবেছিলাম রোনালির সাথে কম কথা বলবো। কিন্তু কথা বললে কখনো কথা শেষ হতে চায় না আমাদের। একদিন রোনালি নিজেই বলল যে আমাদের কথা বলা ঠিক হবেনা। কষ্ট হলেও আমিও ওকে শান্তনা দেয়ার জন্য বললাম ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এবারও ব্যর্থ হলাম দুজনেই কথা বলা থেকে বিরত থাকায়। তারপর আর চেষ্টা করিনি কথা বলা বন্ধ করতে। একদিন ওর সাথে অনেক ফান করল্যাম। এর পরদিন শুনি ও নাকি ঘুমের ট্যাবলেট খেয়েছিল ৪ টা বেশি করে ঘুমানোর জন্য। আমি জানি রোনালি ঠাণ্ডা- জ্বর হলেও ওষুধ খায়না, কারন ওষুধ খেয়ে অভ্যাস করতে চায়না। আর এই মেয়ে কখনোই শুধুমাত্র ঘুমের ট্যাবলেট খাবেনা। হয়ত আমার কোন কোথায় কষ্ট পেয়ে এরকম করেছে। আমি জিজ্ঞেস না করে অনেক রাগারাগি করার পর আমাকে প্রমিজ করল যে আর খাবেনা। জানিনা এই ঘটনায় ও কতটুকু কষ্ট পেয়েছিল তবে আমি অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম। হয়ত দু'ফুটা চোখের জল গড়িয়ে পরেছিল কিন্তু মুখ ধুয়ে পানির সাথে মিশিয়ে দিয়েছিলাম কারন পুরুষ মানুষের কান্না মানায় না।
এরপরও ভালোই যাচ্ছিল কিন্তু আজকাল রোনালি আমাকে এড়িয়ে চলে। কেমন যেন অদ্ভুত হয়ে গেছে ওর আচরণগুলো। আগে একদিনও স্কুল মিস করতনা কিন্তু এখন প্রায়ই স্কুল মিস করে। স্কুল খোলা অবস্থায় ২ মাসের জন্য খালার বাসায় বেড়াতে যাবে। সেইদিন স্কাইপে কথা বললাম কিন্তু আগের মত ফান করলনা। বরং আধ্যাত্মিক কথা বলল বেশি। আগে অনেক গল্প লিখে আমাকে দিত কিন্তু এখন এটার প্রতিও তেমন আগ্রহ দেখছিনা। জানুয়ারির ৫ তারিখ ওর জন্মদিন। আর তখন আমিও বাড়িতে থাকব আর রোনালিও ওদের বাড়িতে থাকবে।
ভাবলাম আব্বু-আম্মুকে বুঝিয়ে ওদের বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাব ওর জন্মদিনে।
আব্বু-আম্মুকে বুঝানোর পর রাজি হয়েছেন কিন্তু শর্ত হল জব পাওয়ার পর বিয়ে করতে হবে। এখন এঙ্গেজমেন্ট হতে পারে। ওকে না জানিয়েই যাব প্লান করলাম।
ওকে কখনো ছোটদের মত লুকোচুরি খেলতে দেখব চিন্তা করতেই পারিনি। ওদের বাড়িতে ঢুকার পরেই দেখলাম রোনালি চোখে হাত দিয়ে গুনছে। অদ্ভুত রকমের সুন্দর আর অনেক পিচ্চি লাগছিল মেয়েটাকে। আম্মু-আব্বু ঘরে ঢুকে গিয়েছিল আমি ওকে দেখেই যাচ্ছিলাম। চোখ খুলে আমাকে দেখে অবাক হলনা। অপরিচিতের মত আমাকে এড়িয়ে চলে গেল। আমিই অবাক হয়ে যাচ্ছি ওর কোন রিএকশন না দেখে।
কথা বলার পর ওর ফ্যামিলিও তেমন আপত্তি করলনা। কিন্তু রোনালিকে অনেকক্ষণ ধরে বুঝিয়ে রাজি করাল ওর আপু। বাড়িতে আসার পর ওইদিনই আমাকে ফোনে বলল কোথাও দেখা করতে। অনেক খুশি হলাম যে ও আস্তে আস্তে নরমাল হচ্ছে।
কুমিল্লা কোটবাড়িতে গেলাম ঘুরতে পরেরদিন। কথা বলার এক পর্যায়ে জিজ্ঞাসা করলাম,
"তুমি কাল কেন রাজি হতে চাইছিলে না? কিন্তু আমি সিউর তুমি আমাকে অনেক ভালোবাসো!"
"ভালবাসলেই কি বিয়ে করতে হবে? আপনি আমার ফ্রেন্ড হয়েই থাকলে ভালো হত!"
"কেন? লাইফ পার্টনার হতে সমস্যা কোথায়?"
"আমি যে একদিন বলেছিলাম কাউকে আমার লাইফের সাথে জড়াতে চাইনা এটা মনে আছে?"
"মনে আছে, কিন্তু কেন চাও না?"
" কারন আমি পাগল!!!"
"এটা আবার নতুন কি? তুমি তো পাগলই!!!"
"দুষ্টামি না। সেদিন আমি ঘুমের ট্যাবলেট খেয়েছিলাম মাথা ঠিক ছিলনা বলেই। আমি একা থাকলেই সুইসাইড করতে ইচ্ছা করে।"
"ধুরর পাগলী, লোনলিনেসস থেকে অনেকেরই এরকম হতে পারে। তাই বলে এরকম সুযোগ্য পাত্র হাতছাড়া করা ঠিক হবেনা। হাহাহা"
"তাই নাকি? তা আপনার পাত্রীটা কি অযোগ্য???"
"এখনো আমাকে আপনি করে ডাকছ খেয়াল করিনি তো!"
"আপনি কি পিচ্চি বাবু যে তুই করে সম্বোধন করব? বুইড়া কোথাকার!!!"
"তা এই বুইড়া জামাইকে পছন্দ হল কিভাবে?"
"হ্যাঁ তাইতো, এটা মনে ছিল না। তাহলে রাইয়ান ভাইয়ার পিচ্চি কোন ফ্রেন্ড আছে কিনা দেখতে হবে।"
" দাঁড়াও দেখাচ্ছি!!! গতকালই আমার চাকরির জয়েনিং লেটার এসে গেছে। এই একমাসের মধ্যেই আপনি আমার খাঁচায় বন্ধী হচ্ছেন।"
উৎসর্গঃ ছদ্মনামের আড়ালে লুকিয়ে থাকা রাইয়ান ভাইয়াকে
©somewhere in net ltd.