নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যেখানে শেষ....সেখান থেকেই শুরু...।

মেঘ প্রহর

ভালবাসি জীবনকে,ভালবাসি মানুষকে। নিজের জন্য ও ভালবাসার কমতি নেই আমার। সাজতে আর সাজাতে দুটোই আমার অনেক প্রিয়।

মেঘ প্রহর › বিস্তারিত পোস্টঃ

রুম নম্বর তের

১২ ই জুলাই, ২০১৭ দুপুর ১২:২৪

এই জায়গাটাতে সে এসেছে বেশ অনেকক্ষন আগে। তার সব চাইতে কাছের প্রিয় মানুষদের সাথে। প্রথম যখন এই জায়গাটা আসলো তার কেমন ভয় ভয় লাগছিল, কেমন হিম শীতল একটা পরিবেশ। যদিও ব্যাপারটা কাউকে বলেনি। তার মনটা খারাপ হতে হতে মনে হল- যতটা খারাপ মনে হয়েছিল আসলে তা না। তার সামনেই একটা জানালা, সেখান থেকে ব্যস্ত পথ-পথচারী,কত রকমের মানুষ, কত কিছু দেখা যায়। তার সবচাইতে ভাল লাগছে একটা প্রকান্ড কৃষ্ণচূড়া গাছ দেখে। এত ফুলে ফুলে ভরে আছে, অদ্ভুদ সুন্দর। সবই ঠিক আছে শুধু এই জায়গাটাই কেমন হিমশীতল যেন অন্য এক পৃথিবী।
সে আসলে অনেক কোলাহল প্রিয়। সংসার, কাজ, আড্ডা, গান এই নিয়ে তার জীবন।আর তার সন্তান-সবে মাত্র বছর দুয়েক হয়েছে, সারাক্ষণই মা..মা.. করে বেড়ায়।ওর কথা ভাবতে ভাবতে তার চোখে জল চলে এলো।বুকের ঘরে একটা হাহাকার শুনতে পায়।কতটা সময় ওর সাথে দেখা হয় না।কখন যে সবাই তাকে নিতে আসবে কে জানে?
এমন সময় তার কানে এল কয়েকজন মানুষের গলার শব্দ। সে আশা নিয়ে রইল-বুঝি তার ঘরের কেউ হবে। না, এরা সবাই তার অপরিচিত মানুষ। তারা একজন অল্প বয়সী মেয়েকে সাথে নিয়ে এসেছে। এক সময় তারাও মেয়েটিকে রেখে সবাই চলে যায়। যাবার সময় বলে যায়-তাড়াতাড়ি আসছি মা।
সে দেখতে পায়, মেয়েটি কেমন বিষন্ন হয়ে বসে আছে। সে ধীরে ধীরে এগিয়ে মেয়েটির পাশে আসে। এরপর শুরু হয় তাদের কথপোকথন।
- কি মন খারাপ নাকি তোমার? তুমি করেই বলি। কিছু মনে করছো না তো?
- না, না কিছু মনে করিনি। আসলে কেমন যেন অন্য রকম লাগছে।বুঝতে পারছি না।
- হুম, এখানে এসে আমারও কেমন যেন লাগছে। থাক, মন খারাপ করো না। খুব বেশি সময় মনে হয় থাকতে হবে না।আচ্ছা- কি নাম তোমার?
- আমি? আমর নাম নিশি।
- বাহ্, বেশ সুন্দর নাম তো তোমার।
- হুম, জানেন আমার ক্লাশের সবাই এই নামটা নিয়ে অনেক মজা করে।
- কোন ক্লাশে পড়?
- আমি, এইতো ইন্টার ফাস্ট ইয়ার। আচ্ছা, আমি তো শুধু আমার কথা বলছি। আপনার কথা জানতে ইচ্ছে করছে।
- আমি সেজুতি, একটা স্কুলে পড়াই, সংসার করি, আর একটা ছোট্ট পুচকু আছে।
- অনেক হ্যাপী ফ্যামিলী, তাই না?
- (একটা দীর্ঘনিশ্বাস) হ্যাঁ তা বলতে পারো।
সেই সময় তার মনে পড়ল সেই মানুষটার কথা। যার সাথে তার দীর্ঘদিন বসবাস।সেই মানুষটা যে বলেছিল-সারাজীবন শুধু পাশে থেক,তাহলেই আমি অনেক শক্তি পাব,সাহস পাবো-তোমার ভালবাসার স্পর্শই আমাকে বাঁচিয়ে রাখবে। তারপর আস্তে আস্তে বদলে যেতে থাকে তার রূপ।
(কিছু কাঁচের জিনিষ ভাঙ্গার শব্দ-পুরুষ কণ্ঠ)কি হচ্ছে, এমন করে জিনিষ পত্র ভাঙ্গছো কেন?
আমার ইচ্ছে হয়েছে, তাই ভাঙ্গছি। তোমার কি?
আমার কি মানে? এগুলো আমি কত কষ্ট করে করেছি।তুমি কি করেছো বলো?
আমি কিছু করিনি? কি বলতে চাচ্ছো তুমি?আর ভাল কিছু করবো কিভাবে? তোমাকে কত বার বলেছি- বাবার কাছ থেকে আমাকে ৫ লাখ টাকা এনে দিতে। আমার ব্যবসাটা ভাল যাচ্ছে না।
তো-এইজন্য আমার বাবার উচিত তোমাকে টাকা দেওয়া?জানো তো-আমাদের পরিবারের অবস্থা এত ভাল না।আমার বাবা এতগুলো টাকা তোমাকে কিভাবে দেবে? আর কেন দেবে?
কেন দেবে? সে বোঝে না-এটা তার জামাইয়ের অধিকার?( জিনিষ ভাঙ্গার শব্দ)আজ আমি এর শেষ দেখতে চাই। নয় আমাকে টাকা দেবে নইলে তুমি এই বাড়ি থেকে বিদায় হবে।এখনি বাবাকে ফোন দেও।
না-আমি পারবো না।তুমি মানুষ না অন্য কিছু? কিভাবে তুমি এভাবে বলতে পারো।
হ্যাঁ আমি অমানুষ, দেখ আমি তোমার কি করি। (ভারী কোন কাঁচের বোতল ভাঙ্গার শব্দ)
(একটা আর্ত চিৎকার)

- কি হলো আপু আপনার? কিছু ভাবছিলেন নাকি?
- না, তেমন কিছু না। সবার কথা অনেক মনে পড়ছে। মনটা কেমন খারাপ হয়ে যাচ্ছে।
- আচ্ছা আপু,দেখি আপনার মাথার কাছটা কেমন কেটে গেছে মনে হয়। রক্তগুলো কেমন জমাট বেঁধে গেছে।
- আরে তেমন কিছু না।একটু পড়ে গিয়েছিলাম তো।কেটে গেছে বোধহয়।আচ্ছা তোমার গলার কাছে কেমন একটা কালচে দাগ। এটা কিসের?
- ওহ্ আর বলবেন না, আমার এক বন্ধু এমন জোড়ে ওরনা পেঁচিয়ে ধরেছিল যে বলার না। সেই জন্যই বোধহয় দাগটা।
- কি কেউ আছে নাকি ? বিশেষ কেউ?
- না না, মানে হুম আছে একজন। জানেন আপু আমি ওকে অনেক ভালবাসি কিন্তু ও মনে হয় আমাকে একদম ভালবাসে না।ভালবাসলে হয়তো এমন করতে পারতো না।
- কাঁদছো? শোন- কিছু ভুলের সত্যি কোন মাসুল দেওয়া যায় না।হয়তো সেই সময়ও থাকে না।
- সত্যি আপু আপনি ঠিক বলেছেন।
হঠাৎ একটা নীরবতা নেমে আসে।দুজন অপরিচিত মানুষ একই সাথে কাঁদছে।দুজনার কষ্ট দুরকম কিন্তু যন্ত্রনা হয়ত একই।এই সময় বাইরে মানুষের গলার শব্দ শোনে তারা।একজন বলে এই সময়:
এই তো রুম নম্বর থারর্টিন।এখানেই লাশ দুটো আছে। জানিস-দুজনই মেয়ে। একজনের জামাই এত জোড়ে মাথায় বাড়ি মেরেছে যে বেচারা সাথে সাথেই মারা গেছে।আর আর একজনের তো আরো ভায়াবহ। মেয়েটা অনেক অল্প বয়েসী।যে ছেলেটাকে ভালবসতো সেই ওকে রেপ করে মেরে ফ্যানের সাথে ঝুলিয়েছিল।কি হতভাগ্য মানুষ। আসলে মানুষ কাকে বিশ্বাস করবে বল তো।যাক- চল লাশ দুটোকে বের করি, ওদের পরিবারের লোকজন নিতে আসছে।(এম্বুলেন্সের শব্দ)

***(একটা অডিও গল্পের জন্য লিখেছিলাম)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.