নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ভালবাসি জন্মভুমি বাংলাদেশ ।অসহ্য মনে হয় যে কোন অন্যায়-কে।অসততার সাথে আপোষ নয় কখনই।
‘ট্রাইব্যুনাল গঠনের অনেক আগেই জেনারেল জিয়াউর রহমান কর্নেল তাহেরের মৃত্যুদণ্ড প্রদানে মনস্থির করেন।’
সোমবার কর্নেল তাহেরসহ অন্যদের গোপন বিচার, সাজা কার্যকর ও বিচার নিয়ে করা রিটের ওপর দেওয়া হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ের অভিমতে এ বিষয়টি উঠে আসে।
আর হাইকোর্ট এ রায়ে উদাহরণ টানেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ রচিত ‘ডেমোক্রেসি অ্যান্ড চ্যালেঞ্জ অব ডেভেলপমেন্ট: এ স্টাডি অব পলিটিক্যাল অ্যান্ড মিলিটারি ইন্টারভেনশান ইন বাংলাদেশ’ বই থেকে।
রায়ে শুধু মওদুদ আহমদই নন, সঙ্গে মার্কিন সাংবাদিক লরেন্স লিফশুজের সাক্ষ্যও বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে আদালত বলেন, “ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ তার ডেমোক্রেসি অ্যান্ড চ্যালেঞ্জ অব ডেভেলপমেন্ট: এ স্টাডি অব পলিটিক্যাল অ্যান্ড মিলিটারি ইন্টারভেনশান ইন বাংলাদেশ বইয়ে লিখেছেন- এই বিচারের ট্রাইব্যুনাল গঠনের অনেক আগেই জেনারেল জিয়াউর রহমান, পাকিস্তান ফেরত সামরিক অফিসারদের তুষ্ট করতে কর্নেল তাহেরকে ফাঁসি দেওয়ার মনস্থির করেছিলেন। জেনারেল মঞ্জুরের উদ্ধৃতি দিয়ে মার্কিন সাংবাদিক লিফশুজও এর বক্তব্যেও একই বিষয় উঠে এসেছে।”
আদালত এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করেন, “যেহেতু ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ জেনারেল জিয়াউর রহমানের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন এবং তিনি জেনারেল জিয়ার মুখ থেকে এ কথাগুলো শুনেছেন বলে তার বইয়ে দাবি করেছেন, সেহেতু তাকে অবিশ্বাস করার কারণ থাকতে পারে না।”
রায়ে উল্লেখ করা হয়, “এ মামলার শুনানির এক পর্যায়ে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ আদালতে প্রবেশ করলে আদালত তার লেখা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। তখন তিনি স্বীকার করেন- তিনি এ বক্তব্য ও বইয়ের লেখক। এবং তিনি সরাসরি জেনারেল জিয়ার মুখ থেকে এ কথা শুনেছেন।”
সোমবার বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দীন চৌধুরী ও বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন এ রায়ে স্বাক্ষর করেছেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান। পরে তিনি পূর্ণাঙ্গ রায়ের বিষয়টিও সাংবাদিকদের জানান।
বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল (অব.) এম এ তাহেরসহ (বীর উত্তম) অন্যদের গোপন বিচার, সাজা কার্যকর এবং বিচারের জন্য ১৯৭৬ সালের ১৬ নম্বর সামরিক আইন আদেশের মাধ্যমে সামরিক ট্রাইব্যুনাল গঠনকে অবৈধ ঘোষণা করে ২০১১ সালের ২২ মার্চ রায় দেন হাইকোর্ট।
রায়ে আদালত বলেন, “যেহেতু জেনারেল জিয়াউর রহমান জীবিত নেই, আইন অনুযায়ী তার বিচার সম্ভব নয়। কিন্তু তারপরও সরকারের উচিত হবে এই হত্যার জন্য দায়ী কেউ জীবিত থাকলে তাকে বের করে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত করা।”
১৯৮ পৃষ্ঠার রায়ে আদালত বিভিন্ন ঐতিহাসিক দিক তুলে ধরেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর সেনাবাহিনীতে অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থান চলে। এরই এক পর্যায়ে জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা গ্রহণের পর ১৯৭৬ সালের ১৭ জুলাই তাহেরসহ ১৭ জনকে সামরিক ট্রাইব্যুনালে গোপন বিচারের মাধ্যমে সাজা দেওয়া হয়। এর চার দিন পর ২১ জুলাই ভোররাতে তাহেরের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
২০১০ সালের ২৩ আগস্ট কর্নেল তাহেরের স্ত্রী লুৎফা তাহের, ভাই ফ্লাইট সার্জেন্ট আবু ইউসুফ খানের (বীর বিক্রম) স্ত্রী ফাতেমা ইউসুফ ও অপর ভাই ড. আনোয়ার হোসেন ওই বিচার চ্যালেঞ্জ করে প্রথম রিটটি করেন।
এসব রিটের দীর্ঘ শুনানির পর আদালত রায়ে সামরিক শাসন, সামরিক আদালত, এবং কর্নেল তাহেরসহ নয়জনের দণ্ডাদেশ অবৈধ ঘোষণা করেন।
এছাড়াও আদালত মেজর জিয়াউদ্দিন, কর্পোরাল সামশুল হক, হাবিলদার আব্দুল হাই মজুমদার ও মো.আব্দুল মজিদকে সামরিক বাহিনী থেকে বরখাস্তের আদেশকে অবৈধ ঘোষণা করে তাদেরকে পূর্ণ মেয়াদে চাকুরিতে বহাল ছিলো বলে গণ্য করার নির্দেশ দেন। তাদের সমস্ত বকেয়া বেতন, পেনশনসহ অন্যান্য সুবিধাদি ও পদোন্নতির বিষয় বিবেচনা করার জন্য সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রায়ে দণ্ডিতের তালিকা থেকে রিটকারীদের নাম মুছে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রিটের পক্ষে ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ, ড. শাহদীন মালিক প্রমুখ, রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান এবং অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে ড. কামাল হোসেন, ড. এম জহির, ব্যারিস্টার এম আমীর উল ইসলাম, অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, অ্যাডভোকেট এ এফ এম মেজবাউদ্দিন আহমেদ, অ্যাডভোকেট আকতার ইমাম, অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না, অ্যাডভোকেট এম আই ফারুকী ও অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু শুনানি পরিচালনা করেন।
২০১০ সালের ২৩ আগস্ট কর্নেল তাহেরের স্ত্রী লুৎফা তাহের, ভাই ফ্লাইট সার্জেন্ট আবু ইউসুফ খানের (বীর বিক্রম) স্ত্রী ফাতেমা ইউসুফ ও অপর ভাই ড. আনোয়ার হোসেন গোপন বিচার চ্যালেঞ্জ করে প্রথম রিটটি করেন। ‘এই আইন এবং আইনের অধীনে গঠিত বিশেষ সামরিক ট্রাইব্যুনাল ও প্রথম মামলার রায়কে কেন বেআইনি ও সংবিধান পরিপন্থি ঘোষণা করা হবে না’ তার কারণ জানতে চেয়ে ওই দিন রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
পরে ২০১১ সালের ২৪ জানুয়ারি কর্নেল তাহেরের সঙ্গে দণ্ডিত জাসদ সভাপতি বর্তমান তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এমপি ও কেন্দ্রীয় নেতা রবিউল আলম আরো একটি রিট করেন। এছাড়া একই বছরের ৩১ জানুয়ারি ওই গোপন আদালতে দণ্ডিত মেজর (অব.) জিয়াউদ্দিন, কর্পোরাল শামসুল হক ও আবদুল হাই মজুমদার বাদী হয়ে একটি এবং এরপর দিন আবদুল মজিদ বাদী হয়ে আরও একটি রিট হাই কোর্টে দাখিল করেন।
চারটি রিটের শুনানি শেষে ২০১১ সালের ২২ মার্চ এক সঙ্গে এ রায় দেওয়া হয়।
সূত্র - Click This Link
©somewhere in net ltd.