নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সৌরভ দাস

সৌরভ দাস ১৯৯৫

চলুন, সবাই কথা বলি

সৌরভ দাস ১৯৯৫ › বিস্তারিত পোস্টঃ

গুপ্ত পরবর্তী ভারত এবং ইসলামের জয়জয়কার

০২ রা জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:৩৮


গুপ্তযুগের পর পুরো ভারতবর্ষ জুড়ে বিরাজ করতে থাকে এক বিশৃঙ্খল অবস্থার। পুরো গুপ্ত সা¤্রাজ্য ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। আবির্ভাব ঘটে অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যের। পূর্ববর্তী অধ্যায়ে আমরা দেখেছি শক্তিশালী হূণদের আক্রমণই ছিলো ভারতবর্ষে গুপ্তদের পতনের কফিনে শেষ পেরেক। হূণরা বেশ শক্তিশালী হিসেবে তখন আবির্ভূত হয়েছিলো । হূণদের আক্রমণ প্রথম দিকে কিছুমাত্র প্রতিরোধ করতে পারলেও শেষের দিকে গুপ্ত স¤্রাটরা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়। এরপর গুপ্ত শাসন আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি।
এর মধ্য দিয়ে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয় বৌদ্ধ ধর্ম। কারণ হূণ স¤্রাট মিহিরকুলা মারাত্মকভাবে বৌদ্ধ বিদ্বেষী ছিলেন। অন্যদিকে সমাজে বৈদিক রীতি নীতির প্রভাব সমাজে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে।
এসময় অর্থাৎ গুপ্ত সা¤্রাজ্যের পতনের পর উত্তর ভারত- দক্ষিণ ভারত জুড়ে অসংখ্য রাজ্যের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। রাজ্যগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- ১. মগধ ও মালবের গুপ্ত বংশ ২. কনৌজের মৌখরী বংশ ৩. থানেশ্বরের পুষ্যভুতি বংশ ৪.বলভীর মৈত্রক বংশ ৫. যশোধর্মন বংশ ৬. চোল রাজবংশ ৭. রাজকূট রাজবংশ
১.মগধ ও মালবের গুপ্ত বংশঃ “গুপ্ত” নামটা দেখে অনেকেরই মনে হতে পারে এই রাজবংশের সাথে গুপ্ত সা¤্রাজ্যের স¤্রাটদের কোনো না কোনো মিল আছে। বিভিন্ন শিলালিপির মাধ্যমে মগধ ও মালবের গুপ্ত রাজাদের অস্তিত্ব সম্পর্কে জানা যায়। তবে তারা গুপ্ত সা¤্রাজ্যের স¤্রাটদের পরবর্তী বংশধর কি না এ বিষয়ে ঐ শিলালিপিগুলো থেকে সুস্পষ্ট কোনো বক্তব্য পাওয়া যায় নি। ফলে বিষয়টা ধোঁয়াশায়ই থেকে গেছে। এজন্য এই রাজবংশের নাম দেয়া হয়েছে “পরবর্তী গুপ্ত বংশ”। এরাই উত্তর বাংলা, পশ্চিম বাংলার উত্তরাংশ ও মগধে প্রভাব বিস্তার করে। কয়েক বছর পর ছয় শতকের মাঝামাঝি সময়ে এ অঞ্চলই গৌড় জনপদ নামে পরিচিতি লাভ করে। এ গৌড়েরই রাজা ছিলেন শশাঙ্ক। যার সম্পর্কে আমরা একটু পরে বিস্তারিত আলোচনায় যাবো।
শক্তিশালী কোনো কেন্দ্রীয় শাসন ব্যবস্থা না থাকায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যগুলোর মধ্যে প্রায়শই দ্বন্দ্ব সংঘাত হানাহানি লেগেই থাকতো। ঘটতো বিশাল বিশাল যুদ্ধও। মগধ ও মালবের গুপ্ত রাজবংশও এর বাইরে ছিলো না। মৌখরী রাজাদের সঙ্গে সংঘর্ষ, উত্তরের তিব্বতীয় ও দক্ষিণের চালুক্য রাজাদের আক্রমণে “পরবর্তী গুপ্ত সা¤্রাজ্যের” ভিত একেবারে নড়বড়ে হয়ে পড়ে।

২.কনৌজের মৌখরী বংশঃ কনৌজের অবস্থান বর্তমান ভারতের উত্তর প্রদেশে। গুপ্ত স¤্রাটদের পতনের মুহূর্তে মৌখরীরা উত্তর ভারতের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ধরা হয় কনৌজই ছিলো ঐ সময়কার রাজনৈতিক কেন্দ্র। কনৌজের সামরিক দিকটিও বেশ শক্তিশালী ছিলো। তবে অবয়বের দিক দিয়ে ছোট এবং কৌশল গত দিক দিয়ে পিছিয়ে থাকার কারণে অনেক সম্ভাবনা থাকার পরেও মৌখরী বংশ ভারতজুড়ে কোনো সা¤্রাজ্য গড়ে তুলতে পারে নি।
মগধ ও মালবের গুপ্ত বংশের পতনের কারণ হিসেবে আমরা দেখেছি মৌখরী রাজাদের সাথে সংঘর্ষ ছিলো অন্যতম একটি কারণ। উত্তর প্রদেশে প্রাপ্ত হারাহ শিলালিপি এমনই সাক্ষ্য বহন করে। শিলালিপিটিতে ঈষানবর্মন নামক একজন মৌখরী রাজার যুদ্ধ জয়ের বর্ণনা দেয়া আছে। তিনি গৌড় (মগধ ও মালবের গুপ্ত বংশের দখলকৃত এলাকা), অন্ধ্র এবং সুলিকা জয় করেছিলেন। সুস্পষ্টভাবে এটি তাদের সামরিক সক্ষমতারই পরিচয় দেয়।
কিন্তু মৌখরী বংশের এই আধিপত্য বেশি দিন টিকে নি। গৌড়ে ইতোমধ্যে ইতিহাস কাঁপানো শশাঙ্কের আবির্ভাব ঘটেছে। “পরবর্তী গুপ্ত বংশের” মুমূর্ষু অবস্থার রাজা দেবগুপ্তকে নিয়ে শশাঙ্ক মৌখরী রাজা গ্রহবর্মনের উপর হামলা চালান এবং গ্রহবর্মন নিহত হন। কিন্তু শশাঙ্ক আধিপত্য বলতে যে বিষয়টা বুঝায় সেটা কনৌজে আরোপ করতে পারেন নি। যুদ্ধে গ্রহবর্মনের স্ত্রী রাজ্যশ্রীকে বন্দী করা হয়। রাজ্যশ্রী অন্যদিকে থানেশ্বরের রাজা প্রভাকরবর্ধনের কন্যা। যখন রাজ্যশ্রীকে বন্দী করা হয় তখন থানেশ্বরের রাজা ছিলেন প্রভাকরবর্ধনের ছেলে রাজ্যবর্ধন। তিনি বোনকে উদ্ধারের জন্য সর্বশক্তি নিয়ে আসেন। তুমুল যুদ্ধে দেবগুপ্ত পরাজিত হন। পরে অবশ্য কনৌজের দিকে অগ্রসর হতে উন্মুখ হলে রাজ্যবর্ধন নিহত হন। রাজ্যশ্রী তখনো বন্দী দশায় রয়েছেন। পরে রাজ্যবর্ধনের ছোট ভাই হর্ষবর্ধন পুরো ঘটনার মোড় পাল্টে দিয়েছিলো। সেটা আমরা পরে আলোচনা করছি। মোদ্দাকথা, রাজ্যশ্রীকে আর বন্দীদশায় থাকতে হয় নি। অন্যদিকে শশাঙ্কের শাসনও দীর্ঘস্থায়ী হয় নি।

৩.থানেশ্বরের (বর্তমান পূর্ব পাঞ্জাব) পুষ্যভুতি বংশঃ এই বংশটিও গুপ্ত সা¤্রাজ্যের পতনের মুখে আত্মপ্রকাশ করে। পুষ্যভুতি বংশ ভারতবর্ষের ইতিহাসে বেশ উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে আছে হূনদের পতন ঘটানোর জন্য। হর্ষচরিতের সূত্র অনুযায়ী যত দূর পর্যন্ত জানা যায়, ৬০৪ খ্রিষ্টাব্দে রাজ্যবর্ধন (প্রভাকরবর্ধনের ছেলে) হূনদের যুদ্ধে পরাজিত করেছিলেন। তখনো অবশ্য প্রভাকরবর্ধন জীবিত ছিলেন। প্রভাকরবর্ধন মারা গেলে রাজ্যবর্ধন সিংহাসনে আরোহণ করেন। কিন্তু আরোহণের পরপরই যখন শুনলেন তার বোন রাজ্যশ্রীকে বন্দী করেছে অন্য দেশের রাজা রাজ্যবর্ধন এগিয়ে গেলেন তার সৈন্য সামন্ত নিয়ে। যার পরিণতি আমরা ইতোমধ্যে দেখেছি। রাজ্যবর্ধনের মৃত্যুর পর হর্ষবর্ধন সিংহাসনে বসেন। হর্ষবর্ধনকে নিয়ে আমরা একটু পরে বিস্তারিত আলোচনায় আসছি।

৪.বলভীর মৈত্রক বংশঃ এই বংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন ভট্টারক। ভট্টারক সৌরাষ্ট্র অঞ্চলে এই রাজবংশের প্রতিষ্ঠা করেন। গুপÍ শাসনামলে সৌরাষ্ট্র গুপ্ত সা¤্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিলো এবং ভট্টারক তখন সৌরাষ্ট্রের প্রাদেশিক কর্মকর্তা ছিলেন। থানেশ্বরের সিংহাসনে একটু আগেই আমরা যে রাজাকে (রাজা হর্ষবর্ধন) রেখে এসেছিলাম তার মাধ্যমেই শুরু হয় মৈত্রক রাজবংশের পতনের ইতিহাস। ঠিক পতনও নয়, হিউয়েন সাঙ এর বিবরণ থেকে যতটুকু জানা যায়, বলভীর রাজা ধ্রুবসেনের সঙ্গে হর্ষবর্ধনের সংঘর্ষ লেগেছিলো। পরে অবশ্য বিষয়টা মিটমাট হয়ে যায়। হর্ষবর্ধন পরে তার নিজ মেয়েকে ধ্রুবসেনের সঙ্গে বিয়ে পর্যন্ত দিয়েছিলেন (যতটুকু জানা যায় বিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন)।

৫.যশোধর্মনঃ যশোবর্ধন মান্দাশোরের দিকে তার প্রভাব সৃষ্টি করতে সক্ষম হন। যশোবর্ধন ছিলেন একজন সামন্ত রাজা। গুপ্ত বংশের পতনের পর তিনি শক্তিশালী হয় উঠেন। যশোবর্ধনের শাসনকালের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো হূনরাজ মিহিরকুলাকে পরাজিত করা। মান্দাশোর লিপি থেকে জানা যায়, তিনি সম্ভবত ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে আরব সাগর পর্যন্ত এক বিশাল সা¤্রাজ্য স্থাপন করেন। তার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে এই রাজবংশের পতন ঘটে।

৬. চোল রাজবংশ: চোল রাজবংশ মূলত একটি তামিল রাজবংশ। গুপ্ত সা¤্রাজ্যের পতনের পর এই রাজবংশ একটি সংকটময় পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়। চোল রাজবংশের অস্তিত্ব প্রাচীন কাল থেকেই ভারতবর্ষে পাওয়া যায়। অশোকের রাজত্বকালেও এই রাজবংশের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। যদ্দুর জানা যায়, অশোকের সাথে সদ্ভাব থাকার কারণে স¤্রাট অশোক এই রাজবংশকে হুমকি হিসেবে মনে করেন নি এবং সে কারণে এই চোল রাজবংশ গুপ্ত সা¤্রাজ্যের বাইরে ছিলো।
তবে গুপ্ত সা¤্রাজ্যের পতনের পর চোল সা¤্রাজ্যের পতনের ঘণ্টা বাজে। চতুর্থ শতাব্দীতে অন্ধ্র থেকে কলভ্ররা এসে চোলদের প্রায় সমগ্র অঞ্চল পরবর্তী তিনশো বছর শাসন করে। তারপর অবশ্য বিজয়ালয় চোলের নেতৃত্বে চোল সা¤্রাজ্য আবারো মাথা তুলে দাঁড়ায়। সেটি ছিলো ৮৫০ খ্রিষ্টাব্দের ঘটনা। তবে চোল রাজ্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাজা ছিলেন রাজরাজ চোল। তিনি চোল রাজ্যের বিস্তারে ব্যাপক ভূমিকা পালন করেন। তার নেতৃত্বে শ্রীলংকা এবং মালদ্বীপ চোল সা¤্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। এভাবে বিভিন্ন সময় চোল রাজবংশের বিস্তৃতি ঘটে। যা অব্যাহত থাকে বিজয়ালয় চোলের পর আরো ৪৫০ বছরের মতো। এজন্য নবম শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে ত্রয়োদশ শতাব্দীর প্রথম ভাগ পর্যন্ত সময়কে চোল সা¤্রাজ্যের স্বর্ণযুগ বলা হয়। আনুমানিক ১৩০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে চোল সা¤্রাজ্যের পতন শুরু হয়।

৭. রাজকূট রাজবংশ: রাজকূট রাজবংশ মূলত গড়ে ওঠে কর্ণাটক রাজ্যের গুলবার্গ অঞ্চলকে কেন্দ্র করে। এই রাজবংশ ৭৫৩ খ্রিষ্টাব্দে দক্ষিণ ভারতের প্রধান রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়েছিলো। রাজকূটদের সম্পর্কে আমরা জানতে পারি তৎকালীন শিলালিপি, সাহিত্যের মাধ্যমে। তাছাড়া বেশ কিছু মুদ্রাও পাওয়া যায়, যার মাধ্যমে আমরা এই রাজবংশ সম্পর্কে জানতে পারি। যেমন- ৭৫৩ খ্রিষ্টাব্দে তা¤্রলিপি থেকে জানা যায় বেরারের (আধুনা মহারাষ্ট্রের এলিচপুর) অচলপুরের সামন্ত রাজা দন্তিদূর্গ চালুক্য রাজা দ্বিতীয় কীর্তিবর্মনকে পরাজিত করে চালুক্য রাজ্য দখল করে নেন।
তৃতীয় গোবিন্দের রাজত্বকালে রাজকূটরা গাঙ্গেয় অববাহিকার দখলকে কেন্দ্র করে পাল ও প্রতিহারদের সঙ্গে ত্রিমুখী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। প্রতিহার স¤্রাট দ্বিতীয় নাগভট্ট ও পাল স¤্রাট ধর্মপালের বিরুদ্ধে বিজয়ের কথা উল্লেখ করে সঞ্জন লিপিতে বলা হয়েছে, তৃতীয় গোবিন্দের যুদ্ধাশ্ব হিমালয়ের নদীগুলোর হিমশীতল জল পান করেছিলো এবং যুদ্ধ হস্তীরা পান করেছিলো গঙ্গার পবিত্র জল।
এই রাজকূট রাজবংশের দ্বারাই সমকালীন সময়ের ভারতীয় অর্থনীতির এক বিরাট অংশ নিয়ন্ত্রিত হতো। বিশেষ করে রাজকূটদের মাধ্যমে আরবদের সাথে সুদৃঢ় বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। রাজকূটদের শাসনামলে সমাজে বিভিন্ন ধরনের কর আরোপ করা ছিলো। উৎপাদনের ১৬% পর্যন্ত কর দিতে হতো। ৯৪১ খ্রিষ্টাব্দের বনবাসী শিলালিপি থেকে জানা যায়, পুরনো সেচ খাল মজে যাওয়ায় ওই অঞ্চলে ভূমিকর বাড়ানো হয়েছিলো। যুদ্ধেও সামরিক খরচ মেটাতে ২০% পর্যন্ত ভূমিকর বাড়ানো হতো।


আমরা কনৌজের মৌখরী বংশের বর্ণনায় জেনেছি প্রভাকরবর্ধনের ছেলে রাজ্যবর্ধন যুদ্ধে নিহত হন। যতটুকু জানা যায়, গৌড় রাজ শশাঙ্কই রাজ্যবর্ধনকে হত্যা করেন। রাজ্যশ্রী তখনো শশাঙ্কের হাতে বন্দী। এই হত্যাকান্ডই জন্ম দিতে থাকে ভারতবর্ষের ইতিহাসে নতুন এক নেতৃত্বের।
রাজ্যবর্ধন যুদ্ধে নিহত হলে ৬০৬ খিষ্টাব্দে তার ছোট ভাই হর্ষবর্ধন সিংহাসনে বসেন। তখন হর্ষবর্ধনের বয়স ছিলো মাত্র ষোল। নিজের বড় ভাইয়ের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে হর্ষবর্ধন ছিলেন দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তিনি হাত মেলান কামরূপের রাজা ভাস্করবর্মনের সাথে। শশাঙ্কের সামরিক শক্তি দেখে এই রাজা ক্রমাগত ভয়ে সিঁটিয়ে যাচ্ছিলেন। এক পর্যায়ে নিজেকে গুটিয়ে নেয়া শুরু করেন। এই ভাস্করবর্মনকে সঙ্গে নিয়ে হর্ষবর্ধন গড়ে তোলেন এক বিশাল সামরিক বাহিনী।
এই বিশাল সামরিক বাহিনী নিয়ে হর্ষবর্ধন অগ্রসর হন তার প্রধান শত্রু শশাঙ্কের দিকে। মেদিনীপুর লিপির মাধ্যমে জানা যায়, শশাঙ্ক ৬১৯-৬২৯ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে পরাজিত হন। লিপি থেকে সুস্পষ্টভাবে জানা যায় যে, শশাঙ্ক “মহারাজাধিরাজ” উপাধি ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন।


শশাঙ্ক এমনিতে একজন কট্টর হিন্দু ছিলেন। ফলশ্রুতিতে তার বিপরীত ধর্মমতগুলোকে নিধন করতে তিনি ছিলেন সিদ্ধ হস্ত। শশাঙ্ক খুব নিষ্ঠুরভাবে বৌদ্ধ ধর্মকে সেসময় দমন করেছিলেন। শশাঙ্ক অসংখ্য বৌদ্ধ বিহার ও স্তুপ ধ্বংস করেন। বুদ্ধগয়ার বোধিবৃক্ষের মূলোচ্ছদ করে অবশিষ্টাংশ অগ্নিতে ভস্মীভূত করেছিলেন। শুধু তাই নয়, অসংখ্য বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী, বৌদ্ধ ভিক্ষু শশাঙ্কের হাতে নিষ্ঠুর নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
শশাঙ্ককে পরাস্ত করার পাশাপাশি হর্ষবর্ধন এক বিশাল রাজ্য গড়ে তোলেন সে সময়। গুপ্ত সা¤্রাজ্যের পতনের পর ভারতবর্ষে ইসলাম আগমনের পূর্ব পর্যন্ত এত বড় রাজ্যের আবির্ভাব আর ঘটেনি। হর্ষবর্ধন উত্তরাধিকার সূত্রেই থানেশ্বরের (বর্তমান পূর্ব পাঞ্জাব) সিংহাসনে বসেছিলেন। বোনের স্বামীর রাজ্য কনৌজ বা উত্তর প্রদেশের দোয়াব অঞ্চল তার রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করে নেন। শশাঙ্ক মারা যাওয়ার পর মগধ (বর্তমান বিহার), পশ্চিম বাংলা, উড়িষ্যা ও কঙ্গোদ সহজেই দখল করে নেন। তাছাড়া হর্ষবর্ধনের প্রতি অনুগত ছোট ছোট রাজ্যগুলোর কথা বিবেচনা করলে এটা বলার আর অপেক্ষা রাখে না যে, ভারতবর্ষের এক বিশাল অংশ জুড়ে হর্ষবর্ধনের রাজত্ব ছিলো। জনশ্রুতি মতে হর্ষবর্ধনের সেনাবাহিনীতে এক লক্ষ ঘোড়া ও ৬০ হাজার হাতি ছিলো।

হর্ষবর্ধনের শাসনকাল তৎকালীন বিশ্বের খুবই তাৎপর্যপূর্ণ একটি সময়। কারণ এই সময়েই হযরত মমুহাম্মদ (সাঃ) এর হাত ধরে ডানা মেলতে শুরু করে ইসলাম ধর্ম নামক একটি মতাদর্শ। যা ক্রমশ ছড়িয়ে পড়তে থাকে আরবসহ অন্যান্য দেশে।
গুপ্ত যুগের পর পুরো ভারতবর্ষ যে একক নেতৃত্বের সংকটে ভুগছিলো হর্ষবর্ধন সেই সংকটটি অনেকখানি পূরণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। গুপ্ত যুগের পর ইসলাম ধর্ম আসার পূর্ব পর্যন্ত ক্যারিশম্যাটিক লিডার হিসেবে তার নামটিই বেশি করে উচ্চারিত হয়। হর্ষবর্ধনের শাসনকাল ও শাসনরীতি সম্পর্কে আমরা অনেক কিছুই জানতে পারি হিউয়েন সাঙ এর রেখে যাওয়া বিবরণগুলো থেকে।
হিউয়েন সাঙ ছিলেন একজন বিখ্যাত চীনা পর্যটক। চীনের একটি সম্ভ্রান্ত পরিবারে হিউয়েন সাঙ এর জন্ম। তার পূর্বসূরি চেন শি হান সা¤্রাজ্যের একজন মন্ত্রী ছিলেন। হিউয়েন সাঙ এর পুরো পরিবারই ছিলো কনফুসীয় দর্শনে বিশ্বাসী। ছোটবেলায় হিউয়েন সাঙও কনফুসীয় দর্শনে বিশ্বাসী ছিলেন। কিন্তু তার বড় ভাই চেন সু বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করে বৌদ্ধ ভিক্ষু হয়ে গেলে বড় ভাই দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত হন হিউয়েন সাঙ। তিনিও বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করে বৌদ্ধ ভিক্ষু হয়ে যান। হিউয়েন সাঙ এর ভারতবর্ষে আসার মূল উদ্দেশ্য ছিলো এখানকার বৌদ্ধ তীর্থস্থানগুলো পরিদর্শন ও বৌদ্ধ ভিক্ষুদের রচনা সংগ্রহ করা। হিউয়েন সাঙ ৬৩০ খ্রিষ্টাব্দে ভারতবর্ষে প্রবেশ করেন। অর্থাৎ সময়টা হলো হর্ষবর্ধনের সিংহাসনে আরোহণের ২৪ বছর পর। ইতোমধ্যে শশাঙ্কও যুদ্ধে পরাজিত হয়েছেন হর্ষবর্ধনের দ্বারা।
হর্ষবর্ধন প্রথম দিকে শৈব ধর্মের অনুসারী ছিলেন। যে ধর্মটি শিবকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে তাকে শৈব ধর্ম বলা হয়। কিন্তু ধীরে ধীরে তিনি বৌদ্ধ ধর্মের একজন মহান পৃষ্টপোষকে পরিণত হয়ে যান। এর পেছনে হিউয়েন সাঙ এর প্রভাব সহজেই অনুমেয়। হিউয়েন সাঙ এর ভারতবর্ষ ভ্রমণের পৃষ্টপোষকতা হর্ষবর্ধন নিজেই করেছিলেন। তবে হিউয়েন সাঙ আসার আগে না পরে হর্ষবর্ধন বৌদ্ধ ধর্মের দিকে আকৃষ্ট হয়ে পড়েন সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কিছু জানা যায় নি। তাছাড়া হর্ষবর্ধন কি শুধু পৃষ্টপোষকই ছিলেন, নাকি বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণও করেছিলেন সেটা নিয়েও রয়েছে নানা বিতর্ক। বিভিন্ন তথ্যসূত্র মতে, বৌদ্ধ স্তুপ নির্মাণ, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে হর্ষবর্ধনের উপস্থিতির কথা জানা যায়। হিউয়েন সাঙ প্রদত্ত তথ্য মতে, জয়সেন নামক এক বৌদ্ধ পন্ডিতকে হর্ষবর্ধন উড়িষ্যার আশিটি গ্রামের রাজস্ব দান করেছিলেন।
তবে হর্ষবর্ধন বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করুন আর নাই করুন তিনি যে বৌদ্ধ ধর্মের কট্টোর সমর্থক ছিলেন তা তার কিছু কর্মকান্ড দেখলেই বুঝা যায়। ব্রাহ্মণদের প্রতি হর্ষবর্ধনের দমন পীড়নমূলক নীতি তার জাজ্বল্যমান উদাহরণ। হিউয়েন সাঙ কামরূপে বেশ কিছু শিক্ষিত ব্রাহ্মণদের চলে যাওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন। হর্ষবর্ধনের নিপীড়নই ছিলো এই প্রস্থানের মূল কারণ। চন্ডাল জাতীয় অস্পৃশ্যদের জীবন প্রণালী হর্ষবর্ধনের শাসনকালেও ছিলো অপরিবর্তিত। গুপ্ত যুগের মতোই তাদের শহরের বাইরে বসবাস করতে হতো এবং শহরের ভেতরে প্রবেশ করতে চাইলে ঘণ্টা বাজিয়ে প্রবেশ করতে হতো। যাতে শহরের মানুজন বুঝতে পারে একটি অস্পৃশ্য শহরে প্রবেশ করছে এবং একটু সাবধানে থাকতে হবে যাতে তার মুখটি পর্যন্ত দেখা না যায়।
তবে হর্ষবর্ধনই ছিলেন প্রথম ভারতীয় রাজা যিনি চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। তাছাড়া নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম একজন পৃষ্টপোষক ছিলেন।
হর্ষবর্ধন ৬৪৬ খ্রিষ্টাব্দে মারা যান। হর্ষবর্ধনের মৃত্যুর পর পুরো ভারতবর্ষ দীর্ঘ সময়ের জন্য আবার একক নেতৃত¦শূণ্যতায় ভুগতে থাকে।

এবার একটু বাংলার দিকে নজর দিই। কী অবস্থা ছিলো তৎকালীন বাংলার?
গুপ্ত সা¤্রাজ্যের পতনের পর অতি অল্প সময়ের জন্য শশাঙ্ক, তারপর হর্ষবর্ধনের নেতৃত্বে বাংলার বেশ কিছু অংশ শাসিত হয়। কিন্তু এদের কেউই বাংলায় কোনো সা¤্রাজ্য গড়ে তুলতে পারে নি। হর্ষবর্ধনের মৃত্যুর পর পুরো বাংলা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যে বিভক্ত হতে শুরু করে। আবির্ভাব ঘটে নতুন নতুন অসংখ্য নেতৃত্বের। সৃষ্টি হয় এক অরাজক পরিস্থিতির। কোনো শাসকই আর বড় বড় রাজ্য নিয়ে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছিলো না। বাংলার প্রত্যেক আঞ্চলিক রাজাই পুরো বাংলার শাসন কর্তা হওয়ার জন্য সব সময় যুদ্ধে মগ্ন থাকতেন।
৬৪৬ সালে হর্ষবর্ধনের মৃত্যুর পর রাজা শশাঙ্কের পুত্র রাজ্য পুণঃপ্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেও সফল হতে পারেন নি। তারপর জয়নাগ নামে একজন রাজার আবির্ভাব ঘটে। তিনি অল্প সময়ের জন্য গৌড়ের রাজা হতে পেরেছিলেন। তারপর তিব্বতীয়দের কিছু চেষ্টার প্রমাণ পাওয়া যায়। শশাঙ্কের মৃত্যুর পর থেকে পাল রাজত্বের উত্থান পর্যন্ত পুরো বাংলা জুড়ে এই অরাজক পরিস্থিতি চলতেই থাকে। পাল তা¤্র শাসনে এই সুদীর্ঘ সময়কে “মাৎস্যন্যায়” বলে অভিহিত করা হয়েছে। মাৎস্যন্যায় শব্দটির অর্থ হলো- পুকুরে বড় মাছগুলোর শক্তির দাপটে ছোট ছোট মাছগুলো ধরে খেয়ে ফেলার বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি।
আসলে তৎকালীন পরিস্থিতিটাই ছিলো এরকম। বিভিন্ন রাজার বিভিন্ন উপায়ে বাংলা দখলের চেষ্টায় বাংলা হয়ে পড়ছিলো ছিন্ন বিচ্ছিন্ন। এবং সেখানে ছোট ছোট কোনো আঞ্চলিক রাজার অস্তিত্ব ছিলো না।
এই বিচ্ছিন্ন অবস্থার অবসান ঘটে পাল রাজত্বের উত্থানের মধ্য দিয়ে। তৎকালীন প্রভাবশালীদের দ্বারা ৭৫০ খ্রিষ্টাব্দে নির্বাচনের মাধ্যমে গোপাল নামক একজন জনপ্রিয় সামন্ত বাংলার রাজা হিসেবে আবির্ভূত হন। পালরা প্রায় চারশো বছরের মতো বাংলা শাসন করে। ৭৫০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১০৯৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত। সর্বমোট আঠারো জন রাজা এই সুদীর্ঘ সময় বাংলার রাজত্ব করেন।
০১. গোপাল (৭৫০-৭৭০ খ্রিষ্টাব্দ)
০২. ধর্মপাল (৭৭০-৮১০ খ্রিষ্টাব্দ)
০৩. দেবপাল (৮১০-৮৫০ খ্রিষ্টাব্দ)
০৪. প্রথম শূরপাল (৮৫০-৮৫৪ খ্রিষ্টাব্দ)
০৫. বিগ্রহ পাল (৮৫৪-৮৫৪ খ্রিষ্টাব্দ)
০৬. নারায়ণ পাল (৮৫৪-৯০৮ খ্রিষ্টাব্দ)
০৭. রাজ্য পাল (৯০৮-৯৪০ খ্রিষ্টাব্দ)
০৮. দ্বিতীয় গোপাল (৯৪০-৯৬০ খ্রিষ্টাব্দ)
০৯. দ্বিতীয় বিগ্রহ পাল (৯৬০-৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দ)
১০. মহীপাল প্রথম (৯৮৮-১০৩৮ খ্রিষ্টাব্দ)
১১. নয়পাল (১০৩৮-১০৬৪ খ্রিষ্টাব্দ)
১২. তৃতীয় বিগ্রহ পাল (১০৫৪-১০৭২ খ্রিষ্টাব্দ)
১৩. দ্বিতীয় মহীপাল (১০৭২-১০৭৫ খ্রিষ্টাব্দ)
১৪. দ্বিতীয় শূরপাল (১০৭৫-১০৭৭ খ্রিষ্টাব্দ)
১৫. রামপাল (১০৭৭-১১৩০ খ্রিষ্টাব্দ)
১৬. কুমারপাল (১১৩০-১১৪০ খ্রিষ্টাব্দ)
১৭. তৃতীয় গোপাল (১১৪০-১১৪৪ খ্রিষ্টাব্দ)
১৮. মদনপাল (১১৪৪-১১৫২ খ্রিষ্টাব্দ



পাল রাজদের এই সুদীর্ঘ সময়ের ইতিহাসে ঘটেছে নানান উত্থান পতন। কখনো খুবই শক্তিশালী আবার কখনো একটু দুর্বল হয়ে চলেছে পাল রাজাদের শাসন। গোপাল, গোপালের পুত্র ধর্মপাল এবং ধর্মপালের পুত্র দেবপালের শাসনামল পর্যন্ত উপমহাদেশের অন্যতম শক্তিশালী হিসেবে পালদের ধরা হতো। কিন্তু এর পরেই স্থবির অবস্থা বিরাজ করতে থাকে। পাল বংশের এই স্থবির অবস্থা চলে একশো বছরেরও বেশি সময় ধরে। ধীরে ধীরে বাংলাও পালদের হাতছাড়া হয়ে যায়। শুধুমাত্র বিহারের অংশ বিশেষ নিয়ে পাল রাজ বংশের রাজত্ব সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। এরপর প্রথম মহীপাল পাল শাসনের হারানো ঐতিহ্য অনেকটা ফিরিয়ে আনে। তারপর আবার তাতে ধস নামে। পরে রামপাল পুনরায় পালদের আধিপত্য বিস্তার করেন। কিন্তু তার উত্তরাধিকারীগণ এ ধারা আর অব্যাহত রাখতে পারে নি। এরপর আর পাল রাজাদের কোনো রাজাই মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে নি।
পাল বংশের প্রত্যেক রাজাই বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী ছিলেন। গোপাল থেকে শুরু করে মদন পাল পর্যন্ত প্রত্যেকেই বৌদ্ধ ছিলেন। এজন্য পাল রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রচুর বৌদ্ধ বিহার নির্মাণের প্রমাণ পাওয়া যায়। অর্থাৎ বাংলায় তথা উত্তর ভারতে বৌদ্ধ ধর্ম পাল শাসনে নতুনভাবে উজ্জীবিত হয় তা নিঃসন্দেহে বলা যায়।
নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নতি সাধনে পাল রাজারা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। বিক্রমপুরের অতীশ দীপঙ্কর (৯৮০-১০৩৫ খ্রিষ্টাব্দ) এই পাল আমলেরই জ্ঞান সাধক ছিলেন। তিনি নালন্দার স্বনামধন্য শিক্ষক ও পন্ডিত ছিলেন।
পাহাড়পুরের বৌদ্ধ বিহার এবং ময়নামতির শালবন বিহার এই পাল আমলেরই কৃতিত্ব।
পাল শাসনামলের তা¤্র শাসনগুলোতে প্রচুর কর্মচারির তালিকা পাওয়া যায়। এ থেকে এটা খুব সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে পালদের শাসনব্যবস্থা ছিলো খুবই সুশৃঙ্খল। দেশের প্রতিটি সেক্টরে প্রশাসনের নজরদারি ছিলো।
পাল রাজারা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী হলেও তৎকালীন জনগণের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই ছিলো হিন্দু। কিন্তু হিন্দু জনগণের সাথে কখনোই বিরোধে জড়াতো না তারা। বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে মন্দির নির্মাণে পাল রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতারও প্রমাণ পাওয়া যায়। অর্থাৎ ধর্মীয় ব্যাপার স্যাপারে পাল রাজা অন্য ধর্মের সাথে সর্বাত্মক সদ্ভাব বজায় রাখার চেষ্টা করতেন।

পালবংশের প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠার যুগ ছিলো ধর্মপাল ও দেবপালের তেজোদীপ্ত শাসনকাল। এ যুগের পাল রাজারা উত্তর ভারতে প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার প্রতিদ্বন্দ্বীতায় অবতীর্ণ হওয়ার মতো শক্তিশালী ছিলেন। উত্তর ভারতে প্রভুত্ব স্থাপনের জন্য তাঁরা পশ্চিম ভারতের গুর্জ্জর প্রতিহার এবং দক্ষিণাত্যের রাজকূটদের সাথে এক ত্রিপক্ষীয় সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।
বাংলায় যখন পাল বংশের উত্থান ঘটে দক্ষিণ ভারতে তখন রাজকূটগণ চালুক্যদের হাত থেকে ক্ষমতা কেড়ে নেয় এবং গুর্জ্জর- প্রতিহারগণ মালব ও রাজস্থানে নিজেদের শক্তি সংহত করে। অন্যদিকে উত্তর ভারতে চলছে রাজনৈতিক শূণ্যতার। যশোবর্মন ও ললিতাদিত্যের ঝটিকা আক্রমণের কারণেই মূলত এ রাজনৈতিক শূণ্যতার সৃষ্টি। পরবর্তী দু পুরুষ ধরে কনৌজ কেন্দ্রিক উত্তর ভারতের শূণ্যতা পূরণে অভিলাশী এ তিন শক্তির মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে।
দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাস (১৫২৬ খ্রিষ্টাব্দ), ড. এ কে এম শাহনাওয়াজ


পালদের পর বাংলার রাজত্ব চলে যায় সেনদের হাতে। যতটুকু অনুমান করা যায় সেনরা বাংলায় আসে দক্ষিণাত্যে কর্ণাটক থেকে। তবে সেন বংশ সংক্রান্ত যে সকল লিপিমালা পাওয়া যায় সেই লিপিগুলোতে সেনদের আসার কারণ এবং কিভাবে আসলো সে ব্যাপারে কোনো কিছুই জানা যায় নি। তবে আমরা যদি পাল শাসনামলের কিছু খুঁটি নাটি বিষয়ের দিকে তাকাই তাহলে বাংলায় সেনদের আগমন সংক্রান্ত অনেক কারণ জানতে পারবো।
সেন রাজাদের শিলালিপি থেকে জানা যায়, তারা ছিলেন চন্দ্রবংশীয় ব্রহ্মক্ষত্রিয় (যারা আদিতে ব্রাহ্মণ ছিলেন, পরে কোনো কারণে ক্ষত্রিয়ের পেশা গ্রহণ করেন)।
পাল রাজাদের প্রশাসন যে আকার আকৃতিতে বৃহৎ ছিলো একটু আগেই আমরা জেনেছি। এই প্রশাসনিক চাকার গতিশীলতার জন্য অনেক বিদেশী কর্মচারিরাও প্রশাসনিক বিভিন্ন পদে নিয়োগ পেতেন। এতে রাষ্ট্রীয় কোনো বাধ্যবাধকতা ছিলো না। এই সুযোগে সেন বংশও বাংলার বুকে ডানা মেলা শুরু করে। আর পাল বংশের দুর্বলতার সময়ে পুরো রাজত্ব নিজেদের পকেটস্থ করে।
বাংলায় সেন বংশের প্রতিষ্ঠা করেন সামন্ত সেন। সামন্ত সেন পাল রাজাদের নিকট খুবই বিশ্বস্ত ছিলেন। এই বিশ্বস্ততাই কাল হয়ে দাঁড়ায় পাল রাজাদের জন্য। তবে সেন রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা হলেন হেমন্ত সেন। হেমন্ত সেনের হাত ধরেই মূলত সেনদের শাসন গড়ে ওঠে। হেমন্ত সেন হলেন সামন্ত সেনের পুত্র।
বাংলায় সেন রাজাদের রাজত্বকাল-
০১. হেমন্ত সেন (জানা যায় নি)
০২. বিজয় সেন (১০৯৭-১১৭৯ খ্রিষ্টাব্দ)
০৩. বল্লাল সেন (১১৭৯-১২০৬ খ্রিষ্টাব্দ)
০৪. বিশ্বরূপ সেন ও কেশব সেন (১২০৬-১২৩০ খ্রিষ্টাব্দ)

অর্থাৎ হেমন্ত সেনের সময় থেকে ১২৩০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত একশো বছরেরও বেশি সময় ধরে সেনরা বাংলা শাসন করে। তবে পুরো বাংলায় নিরঙ্কুশ আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন একমাত্র বল্লাল সেন। উল্লেখ্য, এই বল্লাল সেনই কৌলিন্য প্রথার প্রবর্তন করেন। বাকিরা পুরো বাংলার উপর আধিপত্য বিস্তার করতে সক্ষম হন নি।
পালদের পরে সেনদের উত্থান যে কেবলই ক্ষমতার হাত বদল বিষয়টা সেরকম নয়। এর মাধ্যমে বাংলায় নতুন আঙ্গিকে আবির্ভাব ঘটে বৈদিক ধর্মের।
পাল আমলে সমাজের ধনী গরিব, উঁচু- নিচু, ভালো- মন্দ সবার সাথে ইচ্ছে মতো মেলামেশা করতে পারলেও সেন রাজারা এখানে এসে নতুন নতুন নিয়ম আরোপ করে। আবির্ভাব ঘটে ব্রাহ্মণ্যবাদের। সমাজ আবার বিভক্ত হতে থাকে। বাড়তে থাকে মানুষে মানুষে দূরত্বের পরিধি।
বাংলায় একটি প্রবাদ আছে- ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভাঙে। সেন রাজারা ছিলেন মূলত ভারতবর্ষে আর্য জাতির নিজ রক্তের একটি ¯্রােতধারা। আর্যদের মতো তারা বাংলার সকল সাধারণ জনগণকে বানালেন শূদ্র। যে দেবতা পূজার আবেদন বেশির ভাগের কাছ থেকে হারিয়ে যাচ্ছিলো সেই দেবতাপূজাকে পুর্ণজীবন দান করেন।
সতীদাহ প্রথা যেনো সেন যুগের এক বিষাক্ত অভিশাপ। সতীদাহ প্রথা নামক এক অমানবিক রীতির বিকাশ হয় এই যুগেরই রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতায়। তাছাড়া নারীদের সামাজিক অবস্থানও অনেক নিচে চলে গিয়েছিলো এসময়। গুপ্ত সা¤্রাজ্যের পূর্বেই এই সতীদাহ প্রথার প্রচলন হয়। সেন রাজাদের পৃষ্টপোষকতায় এই প্রথা তৎকালীন সমাজের মধ্যে দৃঢ়ভাবে গেঁথে যায়। যা পুরোপুরি বেদেরও নিয়ম বহির্ভূত। বরং স্বামীর মৃত্যুর পর পুনরায় বিবাহের নিয়মও বেদে পাওয়া যায়-
অথর্ববেদ ১৮.৩.১:
“হে মনুষ্য! এই স্ত্রী পুনর্বিবাহের আকাঙ্খা করিয়া মৃত পতির পরে তোমার নিকট আসিয়াছে। সে সনাতন ধর্মকে পালন করিয়া যাতে সন্তানাদি এবং সুখভোগ করতে পারে।”
অথর্ববেদ ১৮.৩.২:
“হে নারী! মৃত পতির শোকে অচল হয়ে লাভ কি? বাস্তব জীবনে ফিরে এসো। পুনরায় তোমার পানিগ্রহণকারী পতির সাথে তোমার আবার পত্মীত্ব তৈরি হবে।”
“কৌলিন্য প্রথা” নামক আরেক প্রতারণার ও শোষণের অস্ত্র এই সেন আমলেরই সৃষ্টি। কৌলিন্য প্রথা হচ্ছে এককথায়- মুষ্টিমেয় লোককে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করে বাকীদের উপর নির্যাতনের খড়গ চালানো। তাহলে প্রতিষ্টিত করা হবে কাদের? এটা আন্দাজ করা খুব কঠিন নয় যে- ব্রাহ্মণদের! কিন্তু বাংলায় তো ব্রাহ্মণ সংখ্যায় কম। তাহলে? তাহলে যেভাবেই হোক ব্রাহ্মণের সংখ্যা বাড়াও। এই বাড়ানোর প্রক্রিয়াই হলো কৌলিন্য প্রথা। সমাজে এ সময় কুলীন ব্রাহ্মণদের দৌরাত্ম অতিমাত্রায় বেড়ে যায়। কুলীন ব্রাহ্মণ ছাড়াও যে মূল ধারার ব্রাহ্মণ সম্প্রদায় ছিলো তাদের স্বেচ্ছাচারিতা ছিলো অবর্ণনীয়।
সেন রাজা বল্লাল সেন এই প্রথার প্রবর্তন করেন। মূলত ব্রাহ্মণ্যবাদী প্রভাব বাড়ানোর জন্যই সমাজে এই প্রথার প্রবর্তন করা হয়। যারা ব্রাহ্মণ্যবাদী দৃষ্টিতে নিচু জাতের মানুষ তাদের জাতের প্রমোশনস্বরূপ ছিলো এই কৌলিন্য প্রথা। এভাবেই সেই সময়কার বসু, গুহ, মিত্র ইত্যাদি বংশীয়রা কুলীন ব্রাহ্মণে পরিণত হয়েছিলেন। এটা মূলত ব্রাহ্মণ্যবাদের পাল্লাকে ভারী করার জন্যই করা হয়েছিলো। কনৌজ থেকে ব্রাহ্মণদের ধরে এনে বাংলায় তখন ব্রাহ্মণ্যবাদের প্রতিষ্ঠা করা হয়। ব্রাহ্মণরা যাতে সংখ্যায় উত্তোরোত্তর বৃদ্ধি পায় এজন্য তাদের বহু বিবাহে উৎসাহ প্রদান করা হতো।
সেন যুগের আধিপত্যকামী এই ব্রাহ্মণদের কারণে চন্ডালদের ছিলো খুবই শোচনীয় অবস্থা। নগরের ভেতরে তাদের কোনো বসতি পর্যন্ত ছিলো না। নগরে প্রবেশেও ছিলো নিষেধাজ্ঞা।
বিভিন্ন লিপি প্রমাণ থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, সেন শাসনের পতন ঘটে ১২০৬ খ্রিষ্টাব্দের দিকে- লক্ষণ সেনের পতনের মধ্য দিয়ে। যদিও ১২০৬ খ্রিষ্টাব্দে লক্ষণ সেনের (লক্ষণ সেন সম্পর্কে অনেকগুলো তা¤্রলিপি পাওয়া গিয়েছিলো। সেই লিপিগুলো অনুসারে, লক্ষণ সেন তার পিতার রাজ্য সীমা অক্ষুণœ রাখতে পেরেছিলেন।) মৃত্যুর মধ্য দিয়ে সেন রাজত্বের পতন ঘটেছে বলে ধরা হয় , তবে লক্ষণ সেনের দুই পুত্র (বিশ্বরূপ সেন ও কেশব সেন) লক্ষণ সেনের মৃত্যুর পরেও দক্ষিণ- পূর্বাঞ্চলের কিছু জায়গায় রাজত্ব করেছেন।

সেন আমলে চরম আঘাত আসে বৌদ্ধ ধর্মের উপর। বৌদ্ধরা দলে দলে তখন সেন শাসনের বলয় ছিঁড়ে পাশ্ববর্তী নিরাপদ স্থানগুলোতে আশ্রয় নিতে শুরু করেন।
বল্লাল সেন সমাজে ব্রাহ্মণদের দৌরাত্ম বাড়িয়েই ক্ষান্ত হন নি। হিন্দু ধর্মকে এই বল্লাল সেনই ৩৬ ভাগে ভাগ করেন। আগে কারো নামের সাথে পদবি যুক্ত হওয়ার কোনো রেওয়াজ ছিলো না। রামায়ণ মহাভারতের কোথাও কোনো পদবির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। রামের নাম রামই ছিলো, লক্ষণের নাম লক্ষণই ছিলো, অর্জুনের নাম অর্জুনই ছিলো, পুর নগরে তান্ডব চালানো ইন্দ্রের নাম ইন্দ্রই ছিলো।
পরে মৌজার অধিকারী ছিলেন বলে মজুমদার। শক্তি রক্ষার কাজ করতেন বলে সিকদার। কেরানির কাজ করতেন বলে মুন্সি। চট্টগ্রাম থেকে চাটুজ্যে, বন্দ্যগ্রাম থেকে বন্দ্যেপাধ্যায়। এরকম নামের পাশে পদবি যুক্তির মাধ্যমে খন্ড বিখন্ড হয়ে যায় পুরো হিন্দু সমাজ। এই সেন আমলেই, বিশেষ করে বল্লাল সেনের হাত ধরে বাংলায় পদবির আবির্ভাব ঘটে। ভারতবর্ষের অন্যান্য জায়গায়ও একই প্রেক্ষাপটে এরকম পদবি যুক্ত হয়ে গিয়েছিলো। এই পদবিগুলো নির্ধারিত হয়েছে মূলত খানিকটা বংশ পরিচয়, খানিকটা নিজের কর্মস্থল এসবের ভিত্তিতে। সুতরাং এসব পদবি যা নিয়ে ভারতবর্ষের লোকজন আজো বিভ্রান্তিতে ভোগে, সংঘর্ষে লিপ্ত হয় তা সমাজকে বিভক্ত করার একটি সুতীক্ষ্ণ কৌশল ছাড়া আর কিছুই নয়। এজন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন- “...মেয়েরই হোক, পুরুষদেরই হোক পদবি মাত্রই বর্জন করবার আমি পক্ষপাতি।”

এবার বাংলা থেকে দৃষ্টি সরিয়ে ভারতের দিকে নিবন্ধ করি। পাল শাসনামলের শেষ সময় এবং পুরো সেন শাসনামল উপমহাদেশে ইসলাম আগমনের প্রেক্ষাপটের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। হযরত মুহম্মদ (সাঃ) এর মৃত্যুর পর থেকেই আরবরা ব্যাপক হারে নতুন নতুন অঞ্চলে ইসলামের বাণী প্রচার করতে শুরু করে। বিশেষ করে ইসলাম প্রচার, রাজ্য বিস্তার, সেই সাথে ব্যবসা বাণিজ্য সবদিক দিয়ে আরবরা এগিয়ে যেতে থাকে। মুসলমানরা বাংলায় মাৎস্যন্যায় অবস্থা চলাকালেই (৭১২ খ্রিষ্টাব্দে) সিন্ধু বিজয় করে ফেলতে সক্ষম হয়েছিলো ।
এ সময় সিন্ধুতে দাহির নামক এক রাজা সাধারণ মানুষদের উপর খুবই নির্যাতন করতো। এক সময় হাজ্জাজ বিন ইউসূফের সাথে তার বিশাল বিরোধ লেগে যায়। হাজ্জাজ বিন ইউসূফ ছিলেন ইরাকের পূর্বাঞ্চলের একজন শাসনকর্তা। রাজা দাহির কিছু আরব বিদ্রোহীকে সিন্ধুতে আশ্রয় দিয়েছিলেন এবং তাদের হাজ্জাজ বিন ইউসূফ ফেরত চাইলে যখন দাহির তাদের ফেরত দিতে অস্বীকার করে তখনই যুদ্ধের মুখোমুখি হন হাজ্জাজ বিন ইউসূফ এবং রাজা দাহির। হাজ্জাজ প্রথমে রাজা দাহিরের বিরুদ্ধে দুটি অভিযান চালান। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত দুটো অভিযানই ব্যর্থ হয়। এরপর হাজ্জাজ বিন ইউসূফ তার জামাতা মুহম্মদ বিন কাসিমে নেতৃত্বে একটি শক্তিশালী বাহিনী পাঠান। এই বাহিনী অবশ্য ব্যর্থ হয় নি। সফলতার সাথে দাহিরকে পরাজিত করেছিলো।


কিন্তু সিন্ধু বিজয় করলেও ভারতবর্ষে কোনো রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে তখনো ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি। হাজ্জাজ বিন ইউসূফের জামাতা মুহম্মদ বিন কাসিম ৭১২ খ্রিষ্টাব্দে সিন্ধু বিজয় করেছিলেন। সিন্ধু জয়ের পর অনেকটা ইসলামিক স্টাইলে মুহম্মদ বিন কাসিম তার বিজিত অঞ্চলগুলোতে শাসন করেন। মুসলমানদের জন্য জাকাত, অমুসলিমদের জন্য জিজিয়া কর প্রবর্তন করেন। হিন্দু ধর্মীয় ব্যাপার- স্যাপারে মুহম্মদ বিন কাসিম কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন নি। কারণ তখনো ইসলামী ভাবধারায় সাধারণ মানুষ পরিচিত তেমন পরিচিত ছিলো না। তাই জোর করে ইসলাম চাপিয়ে দিতে চাইলে বিদ্রোহের ব্যাপক সম্ভাবনা ছিলো। এ ভয় থেকেই মুহম্মদ বিন কাসিম একটি উদার নীতি গ্রহণ করেছিলেন।
মুহম্মদ বিন কাসিমের আগমনের আগেই অবশ্য আরবের সাথে এই উপমহাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিলো। তখনো রাসুলের জন্ম হয় নি এবং পৃথিবীতে ইসলামের প্রচারও ছিলো না। রাসূল যখন ইসলাম প্রচার শুরু করেন তখন এই বাণিজ্যের রেশ ধরেই ভারতবর্ষের সাথে ইসলামের যোগাযোগ ঘটে। “পেরুমল ভাস্কর রবি বার্মা” ছিলেন ভারতবর্ষের প্রথম মুসলিম। ভারতবর্ষে প্রথম মসজিদ স্থাপিত হয় ৬২৯ খ্রিষ্টাব্দে। মসজিদটির নাম ছিলো- চেরামান জুম’ আ মসজিদ। এটি ভারতের কেরালায় স্থাপিত হয়েছিলো। মূলত ভারতবর্ষের সাথে আরবের বাণিজ্যিক সম্পর্কের হাত ধরে ভারতবর্ষে ইসলামের প্রত্যাবর্তন ঘটেছিলো। কিন্তু মুহম্মদ বিন কাসিমই প্রথম একটি ভূখন্ড বিজয় করে শাসন শুরু করেন।
এমন সময় হঠাৎ করে বিশ্ব মুসলিম নেতৃত্বে একটি গুণগত পরিবর্তন ঘটে। হাজ্জাজ বিন ইউসূফের মৃত্যুর পর খলিফা ওয়ালিদ- ইবনে- আব্দুল- মালিক (৭০৫-৭১৫ খ্রিষ্টাব্দ) মুহম্মদ বিন কাসিমকে স্বদেশে ডেকে পাঠান এবং ৭১৫ খ্রিষ্টাব্দে তাকে মৃত্যুদন্ড দেন। মূলত হাজ্জাজ বিন ইউসুফের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক থাকায় তাকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। কিছু দিন পর খলিফা ওয়ালিদ- ইবনে- আব্দুল- মালিকও মৃত্যুবরণ করেন। ফলে এসময় এক চরম সংকটের মধ্যে আপতিত হয় মুসলিম বিশ্ব।
বাংলায় তখন পাল রাজাদের শাসন চলছে। আরব মুসলিমরা সিন্ধু জয় করতে পারলেও তাদের আভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণে তারা ভারতবর্ষে রাজনৈতিক প্রভাব সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হন। আরবদের সিন্ধু বিজয়ের ৩০০ বছর পর এই ঘাটতি পূরণ করে দেন তুর্কির মুসলমানেরা। আব্বাসীয় খেলাফতের শেষ পর্যায়ে যখন একেকটি প্রদেশের শাসনকর্তা নিজ নিজ অঞ্চলের স্বাধীনতা ঘোষণা করতে থাকেন, তখন তুর্কিদের একটি গোত্র মধ্য এশিয়ার বেশ কিছু অঞ্চলে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। এই গোত্রের সুলতান মাহমুদ ৯১৭ খ্রিষ্টাব্দে গজনীর সিংহাসনে আরোহণ করেন।
ভারতবর্ষের রাজনৈতিক দুর্বলতা এবং নৈরাজ্যই তখন ভারতবর্ষ আক্রমণে গজনীর সুলতান মাহমুদকে উৎসাহিত করেছে। ১০০০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১০২৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত মোট সাতাশ বছরে গজনীর সুলতান মাহমুদ উপমহাদেশের পশ্চিমাঞ্চলে সর্বমোট ১৭ বার আক্রমণ করেন এবং বিভিন্ন এলাকার উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেন।


তার অনেক পরে মোহাম্মদ ঘুরী (প্রকৃত নাম- ময়েজ উদ্দীন বিন সাম) যখন গজনীতে সা¤্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন তার পর পর তিনিও তার সা¤্রাজ্য বিস্তারে মনোযোগী হন। ১১৯১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি এই সা¤্রাজ্য বিস্তারের লক্ষ্যেই পৃথিরাজ চৌহানের ( পৃথিরাজ চৌহান ছিলেন একজন রাজপূত রাজা যিনি ১১৫৫ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১১৯২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত উত্তর ভারতের আজমীর এবং দিল্লীর শাসন কর্তা ছিলেন। পৃথিরাজ ছিলেন সর্বশেষ স্বাধীন হিন্দু রাজা।) সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। যা ইতিহাসে তারানের প্রথম যুদ্ধ নামে পরিচিত। এই যুদ্ধে পৃথিরাজের কাছে শোচনীয় পরাজয়ের পর মুহম্মদ ঘুরী গজনীতে ফিরে আসেন। ঠিক তার এক বছর পর ১১৯২ খ্রিষ্টাব্দে পুনরায় মুহম্মদ ঘুরী এবং পৃথীরাজ তারানের দ্বিতীয় যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। এবার ঘুরী ১,২০,০০০ সৈন্য নিয়ে পৃথিরাজের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালান। এ যুদ্ধে মুহম্মদ ঘুরী জয়লাভ করেন এবং তার সেনাপতি কুতুবউদ্দীনের হাতে পৃথিরাজের রাজ্যের শাসনভার ন্যস্ত করে তিনি গজনীতে ফিরে আসেন। এই প্রথম ইসলাম ধর্মের প্রভাব সরাসরি উপমহাদেশের রাজনীতিতে পড়তে থাকে।
অন্যদিকে বাংলার দিকে চোখ মেললে দেখা যায়, বাংলায় হিন্দু শাসনের (অবশ্য বখতিয়ার খলজি যে হিন্দু শাসনের অবসান ঘটান সে হিন্দু শাসন বাংলার একটি ক্ষুদ্র অংশ জুড়ে ছিলো, অনেকটা নদীয়া কেন্দ্রিক ছিলো এ শাসন) অবসান ঘটান ইখতিয়ার উদ্দীন মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খলজী। তিনি সেন বংশের শেষ রাজা লক্ষণ সেনকে পরাজিত করে গৌড় দখল করেন।
বখতিয়ার খলজী তুর্কি জাতির খলজী সম্প্রদায়ভুক্ত ছিলেন। মুহম্মদ ঘুরীর নিকট এই বখতিয়ার খলজীই সৈনিক পদে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু তার হাত দুটি অতিশয় লম্বা (এতই লম্বা যে তার হাঁটুর নিচ পর্যন্ত পৌঁছে যেতো।) হওয়ায় তার আবেদন খারিজ করে দেওয়া হয়। তারপর দিল্লীতে কুতুবউদ্দীনের অধীনে চাকরি করেন কিছুদিন। কিন্তু সৈনিক হয়েও রাজ্য জয়ের স্বপ্নে বিভোর বখতিয়ার খলজীর মন কিছুতেই ভরছিলো না। তিনি তার স্বপ্নের টানেই ছুটতে লাগলেন এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায়। এক পর্যায়ে সত্যি সত্যিই বখতিয়ার খলজী একটি সৈন্য বাহিনী গঠন করতে সক্ষম হন।
এই বাহিনী নিয়েই ১২০৩ সালে বখতিয়ার খলজী বিহার আক্রমণ করেন। ব্যাপক তান্ডব চালান পুরো বিহার জুড়ে। এই তান্ডবের ফলেই নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংস হয়ে যায়। এ হচ্ছে সেই নালন্দা বিশ্বদ্যিালয় যেটি ১৪ হেক্টরের এক বিশাল আয়তন নিয়ে বিস্তৃত ছিলো। যেখানে বর্তমান কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, গ্রীস, পারস্য, চীন, পার্শিয়া, জাপান, তিব্বতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে শিক্ষার্থীরা এখানে পড়াশুনা করতো। যেখানে ১৮টি মেজর সাবজেক্টের উপর শিক্ষাদান হতো। সেই নালন্দা ধ্বংস হওয়ার সাথে সাথে ধ্বংস হয়ে যায় ভারতবর্ষের একটি গর্ব, একটি ঐতিহ্য, একটি অহংকার। তারপরের বছরই বখতিয়ার খলজী সেন রাজত্বের পতন ঘটান বাংলার বুক থেকে। আক্রমণ করেন লক্ষণ সেনের রাজধানী নদীয়াতে। পরাজিত করেন বাংলার শেষ হিন্দু রাজা লক্ষন সেনকে। আক্রমণের পূর্বে বখতিয়ার খলজি পুরো বাহিনীকে ক্ষুদ্র ক্ষদ্র অংশে বিভক্ত করেন। তারপর অশ্ব বিক্রেতার ছদ্মবেশে নীরবে কোনো প্রকার বাধা বিপত্তি ছাড়াই বখতিয়ার খলজি নদীয়ায় পৌঁছাতে সক্ষম হন। অশ্ব বিক্রেতা বলে রাজ্যের নিরাপত্তা রক্ষীরাও কোনো প্রকার বাধা দেয়ার প্রয়োজনীয়তা বোধ করেন নি। ১২০৪ খ্রিষ্টাব্দে বখতিয়ার খলজি পুরো নদীয়া দখল করে নেন। ভারতবর্ষে মুসলিম সা¤্রাজ্যের থলিতে ঝুটলো নতুন আরেকটি অঞ্চল।
ভারতবর্ষে ইসলামের এই বিস্তৃতির পেছনে ভারতবর্ষের দুর্বল ও বিশৃঙ্খল অবস্থাই যে কাজ করেছে তা নয়। মূলত হিন্দু রাজাদের সীমাহীন নির্যাতন, সমাজে উঁচু বর্ন- নিচু বর্ণ ব্যবধান হিন্দু রাজাদের প্রতি সাধারণ মানুষদের বিতৃষ্ঞা ধরিয়ে দিয়েছিলো। যা এদেশে ইসলাম প্রচারে ব্যাপক সুবিধে করে দেয়। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের “সেই সময়” উপন্যাসেও বিষয়টি খানিক ফুটে উঠেছে (যদিও এটা ঐ সময়ের প্রেক্ষাপটে লেখা নয়, তবে ঐ সময়ের সাথে অনেকখানি মিলে যায়)-
“খান জাহানের সেই কর্মচারিটির সঠিক নামও আমরা জানি না। যে ব্রাহ্মেেণর ছেলে, নবদ্বীপের কাছে পিরল্যা গ্রামে তার জন্ম। সে এক সুন্দর মুসলমান রমণীর প্রতি প্রণয়াসক্ত হলো। সেই প্রণয় এমনই তীব্র যে তার জন্য সে জাত ধর্ম বিসর্জন দিতেও প্রস্তুত। হিন্দু ধর্ম এমনই কঠোরভাবে গন্ডিবদ্ধ হয়ে যে সেখানে অন্যধর্মের মানুষের কোনো ক্রমেই প্রবেশ অধিকার নেই। ব্রাহ্মণ ছেলে যবনী বিবাহ করলে তার স্ত্রীকে তো কোনো ক্রমেই হিন্দুত্বে বরণ করা যাবে না, বরং সে ছেলেটিরই জাত যাবে। সুতরাং প্রণয় পরিণামে এই ব্রাহ্মণ সন্তানটি জাতিভ্রষ্ট হলেও তার নতুন নাম হলো মাসুদ তাহির। . . . . . .হিন্দু ধর্ম নতুন কারুকে গ্রহণ করে না; বরং নিজের লোকদেরই পরধর্মের দিকে ঠেলে দেয়, পৃথিবীর অপর ধর্মগুলি কিছু নবাগতদের সাদর অভ্যর্থনা জানায়।”

ভারতবর্ষ জুড়ে জয়জয়কার নতুন একটি মতাদর্শের। এই মতাদর্শটিও মানুষকে ডাক দিচ্ছে মূর্তি পূজার বিরুদ্ধে, বর্ণপ্রথার বিরুদ্ধে। ভারতবর্ষের মানুষজনও দলে দলে ভিড়ে গ্রহণ করেছে নতুন একটি ধর্ম। কিন্তু তারপরেও যেনো মুক্তি মিলছে না। সর্বত্র শাসক ও শোষকের মধ্যে এক তীব্র দ্বন্দ্ব কাজ করে কখনো প্রকাশ্যে কখনো গোপনে। যে দ্বন্দ্ব আজো চলমান। এর কোনো সমাধান আজো হয় নি। ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসন করেছে, চলেও গেছে। ধর্মের ভিত্তিতে অখন্ড ভারত দ্বিখন্ডিত হয়েছে। হয়েছে ভারত ও পাকিস্তান নামক দুটি রাষ্ট্রের সৃষ্টি। সেই পাকিস্তানও ১৯৭১ সালে দ্বিখন্ডিত হয়েছে। কিন্তু সেই দ্বন্দ্বটি এখনো চলমান।

লেখক
সৌরভ দাস
শিক্ষার্থী,
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়,
ময়মনসিংহ।

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +৭/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:৫৫

দরবেশমুসাফির বলেছেন: ভালো লেখা। আপনার ইতিহাসনির্ভর লেখাগুলি ভালো হচ্ছে।

২| ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:৫৮

দরবেশমুসাফির বলেছেন: এই বাহিনী নিয়েই ১২০৩ সালে বখতিয়ার খলজী বিহার আক্রমণ করেন। ব্যাপক তান্ডব চালান পুরো বিহার জুড়ে। এই তান্ডবের ফলেই নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংস হয়ে যায়। এ হচ্ছে সেই নালন্দা বিশ্বদ্যিালয় যেটি ১৪ হেক্টরের এক বিশাল আয়তন নিয়ে বিস্তৃত ছিলো।

এই ব্যাপারটি ব্যপক বিতর্কের অবকাশ রাখে। নিচের পোস্টটি পড়ে দেখতে পারেন।

http://www.somewhereinblog.net/blog/DarvishMusafir/30080422

তবে খিলজি একেবারেই ধোয়া তুলসি পাতা ছিলেন না।

০২ রা জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:০৯

সৌরভ দাস ১৯৯৫ বলেছেন: ধন্যবাদ। বখতিয়ার খলজীর নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংসের ব্যাপারটি যে বিতর্কিত তা আমি জানতাম। তবে বখতিয়ার খলজী সংক্রান্ত তথ্যগুলো ঘেঁটে আমার কাছে যে জিনিসটা ঠিক মনে হয়েছে সেটাই উপস্থাপন করলাম।

৩| ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:০১

ঠ্যঠা মফিজ বলেছেন: অনেক বড় ইতিহাস পরে সময় করে পুরোটুক পড়তে হবে ।

৪| ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:০৫

নীল আকাশ ২০১৬ বলেছেন: ইতিহাস নতুন করে জানলাম। তবে কোন ছবির সাথেই পরিচয় দেওয়া হয়নি। একদম নিচের ছবিটা কোন দিগবিজয়ী বীরের জানতে পারি কি?

০২ রা জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:১০

সৌরভ দাস ১৯৯৫ বলেছেন: বখতিয়ার খলজী

৫| ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:১৩

সৌরভ দাস ১৯৯৫ বলেছেন: ছবিগুলোর নাম দিতে না পারার জন্য আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।

৬| ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:১৪

নীল আকাশ ২০১৬ বলেছেন: তাই নাকি? বখতিয়ার খিলজির হাত লম্বা - এটা জানতাম। কিন্তু চশমা পড়ে রঙ্গিন ফটো তুলেছে - এটা তো জানা ছিলনা!

০২ রা জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:১৮

সৌরভ দাস ১৯৯৫ বলেছেন: ও, দুঃখিত। শেষের ছবিটা যে লেখকের সেটা বুঝতে পারছেন না?

৭| ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০৪

আসিফ আযহার বলেছেন: অসাধারণ! বাংলা ভাষায় এ ধরণের লেখা বিরল। এত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো না জেনেই এদেশে বুদ্ধিজীবীদের প্রজন্ম দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। এর ভয়াবহ পরিণতি হল বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে পঙ্গু একটি জাতিতে পরিণত হয়েছি আমরা। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সৌরভ দাশদের প্রয়োজন। আমাদের বিদ্যাসাগর প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন হল আমাদের জ্ঞানের ভারসাম্য অর্জন করা। এদেশে জ্ঞানের ধারাগুলো সম্পূর্ণরূপে ভারসাম্যবিহীন ও অসঙ্গতিপূর্ণ। সবাই একটি দিক নিয়ে বিদ্যাসাগর হয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকের কোন খবরই জানে না। এ ধরণের জ্ঞানচর্চা সর্বনাশ ঘটায়। আমাদের বেশী জ্ঞান প্রয়োজন নেই। বরং ভারসাম্যপূর্ণ কম জ্ঞানই অনেক মূল্যবান। এ বিবেচনায় সৌরভ দাশ এদেশের মার্কামারা বুদ্ধিজীবীদের তুলনায় অনেক এগিয়ে। আমার বিশ্বাস সৌরভ দাশের মত ১০ - ১২ জন বুদ্ধিজীবী বাংলদেশকে মূর্খতা ও বিভ্রান্তির পথ থেকে উদ্ধারের জন্য যথেষ্ট।

৮| ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫৩

গ্রিন জোন বলেছেন: পিডিএফ ফাইল থেকে কপি করেও যদি কেউ এ ধরণের পোস্ট দেয় তবুও তাকে স্বাগত জানাই। কারণ ইতহিাস পাঠের ইচ্ছা ও তা পোস্ট করার মতো যার আগ্রহ আছে তিনি নিশ্চয় বিজ্ঞ বলে আমি মনে করি। ধন্যবাদ সৌরাভ দাস।

০২ রা জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১৬

সৌরভ দাস ১৯৯৫ বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.