নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সৌরভ দাস

সৌরভ দাস ১৯৯৫

চলুন, সবাই কথা বলি

সৌরভ দাস ১৯৯৫ › বিস্তারিত পোস্টঃ

জঙ্গিবাদের আস্ফালন এবং নির্বাক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়

২৭ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ৩:৩৩


জঙ্গিবাদ নিয়ে দেশ এখন বড্ড বেশি চিন্তিত। জঙ্গিবাদ নামক অভিশাপটি পুরো দেশকে ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাচ্ছে। দেশের কোণায় কোণায় তারা আস্তানা গেড়ে বসে আছে। একটু সার্চ করলেই ফস করেই জঙ্গি বেরিয়ে আসছে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বুক ফুলিয়ে এতদিন বলতো- আমরা আগাগোড়া অরাজনৈতিক। অভিভাবকরা ছেলেমেয়েদের ভর্তি করিয়ে তাই তৃপ্তির ঢেকুর তুলে তুলে বাসায় ফিরতেন। সেখানে সার্চ করার আগেই জঙ্গি বেরিয়ে এসেছে। এর সাথে অবশ্য দু একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নামও উঠে এসেছে। এসব কিছুর সাথে সম্প্রতি গুলশানের ঘটনা, শোলাকিয়ার ঘটনা হিসেব করলে গত কয়েক সপ্তাহ জুড়ে বাংলাদেশের গণমাধ্যমের প্রধান সংবাদ হয়ে দাঁড়িয়েছে- জঙ্গিবাদ। কোন দিকে তাহলে যাচ্ছি আমরা? বাংলাদেশ কি আসলেই জঙ্গিদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছে?
জঙ্গিবাদের এই আকস্মিক আস্ফালন সত্যিসত্যিই একটা বড় উদ্বেগের বিষয়। অবশ্য জঙ্গিবাদকে আমরা খালি চোখে দেখি বলে এটাকে কেবল “জঙ্গিবাদ” হিসেবেই দেখা যায়। কিন্তু একটু গভীরে গিয়ে দেখলে দেখা যায়- এর পেছনে রয়েছে একটি সূক্ষ সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্ত। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ এবং ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ। এই দুই গোয়েন্দা সংস্থার জঙ্গিবাদ সৃষ্টি এবং জঙ্গিবাদ বিলোপ করার নাটকীয় কীর্তিকলাপ একটু চোখ কান খোলা রাখলেই বোঝা যায়। জঙ্গিবাদকে একটু সহজ ভাষায় বললে- এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের বাস্তব প্রতিফলন ছাড়া আর কিছুই নয়। ধর্মকে শুধুমাত্র একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে জঙ্গিবাদী কর্মতৎপরতার মধ্য দিয়ে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতে খুব সূক্ষভাবে প্রভাব বিস্তার করে এই চক্রটি। ধর্মীয় চেতনা, ধর্মীয় মূল্যবোধ, ধর্মের ভিত্তিতে রাষ্ট্র গঠন এসব এখানে একেবারে ভিত্তিহীন বিষয়। এগুলো আগ্রাসনের একেকটি হাতিয়া বৈ আর কিছুই নয়।
ইসলামিক স্টেট (আইএস) নামক যে জঙ্গি সংংগঠনটি মাঝখানে পুরো বিশ্ব জুড়ে দমকা বাতাসের মতো ধেয়ে বেড়াচ্ছিলো, আতঙ্কে মানুষের চোখের ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছিলো একটু খোঁজ নিয়ে জানা গেলো আইএস যে অস্ত্রগুলো ব্যবহার করে তা স্বয়ং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে সাপ্লাই দেয়া। এক নিহত আইএস কমান্ডারের ব্যক্তিগত পরিচয় খোঁজ নিয়ে জানা গেলো সে একজন ইহুদী! একজন ইহুদী যদি আইএসের একজন কমান্ডার হতে পারে তাহলে কোনো নির্বোধেরও অকপটে আইএসের আসল চরিত্র বুঝে নেয়ার কথা। সুতরাং আইএস বলি, আল কায়দা বলি, জেএমবি বলি, আর আনসারউল্লাহ বলি এদের সকল কর্মকান্ডের সিদ্ধান্ত তৈরি হয় সিআইএ অথবা মোসাদের গোয়েন্দারে হাতে।
তবে এটা খুবই আশঙ্খাজনক বিষয় যে, সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর আগ্রাসী চোখ এখন বাংলাদেশের উপর এসে ঠেকেছে। এদেশের রাজনীতি, অর্থনীতির উপর পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের রয়েছে একচেটিয়া প্রভাব। আর বাংলাদেশ সরকার তার অস্তিত্ব রক্ষার্থে ভারতের সাথে সুসম্পর্ক (!) বজায় রাখতে খুবই সিরিয়াস। সে দিকটা হিসেব করলে বাংলাদেশ মার্কিন বলয়ের অনেক বাইরে। কিন্তু দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় মার্কিন প্রভাব বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশ ভূখন্ডটি তাদের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এ ব্যাপারে অবশ্য অনেক পরিসংখ্যানও অনেকে দেখিয়েছেন।
তাই বাংলাদেশের উপর জঙ্গিবাদ নামক ষড়যন্ত্রের জাল ফেলেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আর এই ষড়যন্ত্রের বলি হচ্ছে আমাদের যুব সমাজের একটি অংশ। এটা সর্বজনবিদিত যে, বাংলাদেশের মানুষগুলোর ধর্মকে কেন্দ্র করে একটা বড় ধরনের বিশ্বাসের জায়গা কাজ করে। শুধু বিশ্বাসই না, ধর্মীয় অনুশাসন তারা যার যার অবস্থান থেকে যতটুকু সম্ভব (!) পালনের চেষ্টা করেন। তাই এই কাচের মতো ফিনফিনে অনুভূতিকে উস্কে দেয়াটা সহজ। বাস্তবেও তাই হচ্ছে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় আপাতত একটা ফোকাসিং পয়েন্ট মাত্র। প্রাইভেট বিশ্বব্যিালয়ের বেশির ভাগ শিক্ষার্থীরা অদ্ভুত (!) একটি স্বাধীন জীবন যাপন করে এবং একটু বেশি হতাশ থাকে। দেশ, সমাজ, ইতিহাস, রাজনীতি, অর্থনীতি এসব নিয়ে তারা কোনো আগ্রহ বোধ করে না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এসব বিষয়ের ক্ষেত্রে পরিবার কিংবা অ্যাকাডেমিক কারিকুলাম থেকে এক ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা থাকে। এদের অনেকেরই পড়াশুনা আবার ইংলিশ মিডিয়ামে। ফলে দেখা যায়, হয় পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা, নয়তো পড়াশুনার মাধ্যমের কারণেই এরা সমাজের মূল ধারা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ফলে তাদের অদ্ভুত স্বাধীনতা, হতাশা আর সমাজ বিচ্ছিন্নতাকে একটা শক্তি হিসেবে ব্যবহার করে জঙ্গি সংগঠনগুলো। তাদের মাতিয়ে রাখে ইসলামি রোমান্টিসিজমে।
জঙ্গিদের আরেকটা ফোকাসিং পয়েন্ট হচ্ছে দেশের হত দারিদ্র পরিবারের সন্তানেরা। এদের দরিদ্রতাকে পুঁজি করে এদেরকেও তারা অতি সহজে এই রোমান্টিসিজমে আকৃষ্ট করে ফেলে।
সে যাই হোক। মোদ্দা কথা, জঙ্গিবাদের খোলসে বাংলাদেশে মার্কিন সা¤্রাজ্যবাদের কঠিন আগ্রাসন ধেয়ে আসছে। শুধু আসছে না- এটি বাংলাদেশকে একটি নিশ্চিত দীর্ঘমেয়াদী সংকটের দিকে ধাবিত করছে। এ অবস্থায় জন মানুষের প্রতিরোধ কোথায়? জন মানুষ না হয় বাদ দিলাম। আমাদের দেশের সবচেয়ে রাজনীতি সচেতন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়? সেখানকার শিক্ষক- শিক্ষার্থী- কর্মচারি?
বাংলাদেশের ইতিহাস তো বলে এদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের প্রতিটি ক্ষেত্রে এরাই সবচেয়ে সচেতন ভূমিকা পালন করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পাকিস্তানের জাতির জনক মুহম্মদ আলী জিন্নাহর মুখের উপর “না না” বলে জিন্নাহকে থামিয়ে দিয়েছিলো। ১৪৪ ধারা ভেঙে নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও মিছিল করেছে, জীবনও দিয়েছে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্ররাই তো রাজপথ কাঁপিয়েছে। সেই কাঁপন পুরো পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীকে ভড়কে দিয়েছিলো। নব্বইয়ের অভ্যুত্থানও ছাত্রদের অগ্রগণ্য ভূমিকার কোনো ব্যতিক্রম ঘটেনি।
কিন্তু এখন এমনটি ঘটছে কেনো? রামপাল তাপ-বিদ্যুৎ কেন্দ্র দেশের ৯৯% মানুষের মতকে উপেক্ষা করে প্রকাশ্যে সিগনেচার করে অনুমোদন দেয়া হলো। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১-২ দিন ছোট্ট পরিসরে কিছু আন্দোলন ছাড়া আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা কোনো প্রকার টু শব্দ করে নি। রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কুশীলবদের মুখে কী সুন্দর ক্রীতদাসের হাসি! অথচ জাতির ভবিষ্যত কাঁদছে অনাহারের মতো।
জঙ্গিবাদ ইস্যুতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিশ্চুপ। যেসব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রগতিশীল কিছু সংগঠনের কিছু কাজ আছে তাদের ২০-২৫ জনের মিছিলের বাইরে স্বত:স্ফূর্ত আর কোনো প্রতিবাদ দেখা যায় নি।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে টাকা পয়সা দিয়ে নিয়োগ পাওয়া কিংবা প্রভাবশালী মন্ত্রী- এমপি- ক্ষমতাসীন নেতৃবৃন্দের ছত্র ছায়ায় থেকে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকরাও মগজহীন মাথা আর মেরুদন্ডহীন দেহ নিয়ে কী সুন্দর একেকটি চেয়ারে বসে আছেন। সবাই অদ্ভুত রকম উদাসীন! তাদের উদাসীনতা প্রমাণ করে দেয়, তাদের দেহের স্পর্শে ঐ চেয়ারগুলোও অভিশপ্ত হয়ে গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো আর হল নয়- একেকটি মধ্যযুগীয় বর্বর নির্যাতনের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। একেকটি আন্দোলনের স্পৃহাকে এখানে গেস্ট রুম নামক টর্চার সেলে নির্মমভাবে বলি দেয়া হয়। প্রত্যেকটি প্রতিবাদকে যন্ত্রণার আগুনে পুড়িয়ে ছাই করে দেয়া হয়। এসব নির্যাতনের সাথে কারা জড়িত? কারা এরকম করে একেক জন একেকটা হলের হীরক দেশের রাজা হয়ে উঠছে তা আমরা সবাই জানি। তারপরেও সবার নীরবতা এসব বর্বর কর্মকান্ডকেই উৎসাহিত করে। এসব কর্মকান্ড না থাকলে তো ক্রীতদাসের হাসি হাসা যাবে না!
তাহলে সরকারকে এটাও মনে রাখতে হবে, জঙ্গিবাদের আগুনে পুরো দেশ পুড়ে ছাই হয়ে গেলেও যে স্পৃহাটি আপনি মেরে ফেলেছেন সে স্পৃহা অত সহজে জাগবে না, আর জাগলেও আপনার পক্ষে জাগবে না। তখন আপনাকে এর চরম মূল্য দিতে হবে।

জঙ্গিবাদের আদলে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির দীর্ঘমেয়াদী আগ্রাসনের সম্ভাবনা, দেশীয় সম্পদ দেশের লুটপাটকারীদের যোগসাজশে বিদেশী লুটপাটকারীদের হাতে বিসর্জন দেয়া, এদেশের সবচেয়ে সচেতন নাগরিকদের পীটস্থান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একনায়কতন্ত্র এবং লুটপাটতন্ত্রের জয়জয়কার সবমিলিয়ে বাংলাদেশ যেনো অবাধ লুটপাটের স্বর্গে পরিণত হয়েছে। এক কঠিন সংকটের মুখোমুখি বাংলাদেশ।

সৌরভ দাস
সাধারণ সম্পাদক
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, বাকৃবি শাখা।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.