নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আসুন সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলি

আসুন সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলি

তক্ষকঁ

আসুন সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলি

তক্ষকঁ › বিস্তারিত পোস্টঃ

কি অধিকার আছে ওদের..

০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৪:২৭

কি অধিকার আছে ওদের...........

January 9, 2014 at 4:21pm



বাবা সকাল বেলায় ঘুম থেকে ডেকে তুলে হাত মুখ ধুইয়ে দিত । কাজে বেরোনোর আগে নাস্তা তৈরি করে নিজ হাতে নাস্তা খাওয়াতো। আমি যখন আর একটু ছোট-বয়স ৩/৪, তখন আমার মা আমায় ছেড়ে চলে যায়,বুঝতাম না হঠাৎ কোথায় গেল যখন জিজ্ঞেস করতাম বাবাকে,বাবা কেমন জানি অন্য মনস্ক হয়ে বলতো মা তোমার জন্য লাল টুকুটুকে জামা কিনতে গেছে। সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়, রাত আসে ছোট্ট বিছানায় মা'কে খুজতাম বাবাকে যখন আবারো জিজ্ঞেস করতাম, বাবা বলতো মা'মনি হয়তো গাড়ি পায়নি! বুঝিনি মা না ফেরার দেশ থেকে ফিরতি গাড়ি আার কখনো পাবেনা ,মা আমার কখনো ফিরবে না।



সেই থেকে বাবাই আমার সব, বাবাকেই বিরক্ত করে, নানারকম আবদার করে তটস্থ রাখতাম। বাবা মাঝে মধ্যে রেগে গেলেও সোহাগের কমতি ছিলনা। আমি মা'কে ভুলেই যেতাম যদি বাবা না বলতেন। যদি অন্যভাবে বলি- মা' কি শব্দ তা বাবার কাছেই শেখা।







এখন আমার বয়স ৩০। একটা বেসরকারী অফিসে চাকরী করি। মাঝে মধ্যেই ফিরতে দেরী হয়। বাসায় ফিরে দেখি বাবা- বসে আছে, না খেয়েই। আমাদের দু'জনের অভ্যেসটা একইরকম। কেউ কাউকে ছেড়ে খেতে পারিনা। দুপুরে অফিসেও খুব একটা খাওয়া হয়না । ইচ্ছাতেই। বাবা তো আর অফিসে এসে খাইয়ে দেয় না! এই ক'দিন আগেও বাবা ভাত মাখিয়ে না দিলে, মুখে তুলে খাইয়ে না দিলে খাওয়া হতো না । বাবাও সব মেনে নিতেন। হয়তো এই ভেবে " ওর তো মা নেই"!আমার বাবা আমার সবচেয়ে বড় বন্ধু। আমার সবকিছুই তাকে বলা যায়। তার সংগে সবকিছুই শেয়ার করা যায়। কারন , মা-বাবা দুটোই উনি। উনি ছাড়া তো আমার আর কেউ-ই নেই।



আবার বাবা আমার কাছে পৃথিবীর শ্র্রেষ্ঠ বাবা, শ্রেষ্ঠ মানুষ; অবশ্য সবার ক্ষেত্রেই তাই!







ঘটনার দিন সকাল বেলায় বাসা থেকে যখন বের হই, বাবা পেছন থেকে বলল, মা'রে একটু দেখে শুনে যাস, চারদিকে যা শুরু হয়েছে! আমি একটু তোর মা'কে দেখতে যাব ( মায়ের কবর) ।বাবা তুমি টেনশন করবেনা, আমি সাবধানেই যাব বরং তুমি সাবধানে যেও।







অফিসে গিয়ে কেন জানি অস্থির লাগছিল, কাজে মনসংযোগ করতে পারছিলাম না। আমার কলিগ ওসমান ভাই ,বয়স্ক মানুষ-উনি একবার জিজ্ঞেস করলেন,কোন সমস্যা?



আমি আলতো হেসে এড়িয়ে গেলাম। দুপুর দু'টোই একটা আন নউন নাম্বার থেকে ফোন এলো। সাধারনত আমি অপরিচিত কোন নাম্বার রিসিভ করিনা। কেটে দিলাম।আবার একই নাম্বার থেকে কল। বিরক্তি নিয়েই ফোনটা ধরলাম। আপনি কি তিথি? অপরপ্রান্ত থেকে জিজ্ঞেস করল। আমি বললাম - জি, কিন্তু আপনি!



আমাকে চিনবেন না । আমি ঢাকা মেডিক্যাল থেকে বলছি। আপনার বাবা সামান্য অসুস্থ।আপনি কি আসতে পারবেন?



আমি ফোনটা রেখে দিলাম। কেমন যেন লাগল, যেমনটা লাগত মা'য়ের কথা ভেবে ,যখন আকাশের তারা দেখতাম!



৩০ মিনিটের মধ্যেই মেডিকেলে পৌছে গেলাম। কলার ভদ্রলোক ফোন মারফত এ্যাড্রেস করলেন। বার্ন ইউনিট!



আমার সমস্ত শরাীর ব্ডড ভারী মনে হল। ভদ্রলোকের চেহারায় কিসের সংকেত! তা' হলে? ভদ্র লোক বললেন, মা শক্ত হও .............। আমি তাকে বললাম - কি হয়েছে আমার বাবার? উনি বার্ন ইউনিটে কেন ,উনার তো হাই ব্লাড প্রেসার! উনাকে বার্ন ইউনিটে থাকতে হবে কেন? ভদ্রলোক কোন কথা বললেন না। আমার মাথায় হাত দিয়ে বললেন - আসো।



সাদা কাপড়ে মোড়ানো একটা লাশ। দুরে আরো একটা, তার পাশেই অনেক ছেলে মেয়ে মহিলা বিলাপ করছে। হয়তো তাদের পরিজন মারা গেছে। কিন্িতু আমার বাবা কোথায়! ইতোমধ্যে পুলিশের এক কর্মকর্তা,কনস্টেবল, ক্যামেরা হাতে সাংবাদিক আমাকে ঘিরে ধরলেন। বললেন- শাহবাগে সন্ধ্যার দিকে একটি বাসে আগুন দেয়া হয়েছিল....তো সেই বাসে আপনার বাবা.......উনি অগ্নিদগ্ধ হয়ে ..............!



আমার বাবা , আবার বাবা আগুনে ভয় পেতেন বলেই তো আমাকে অফিসে বের হওয়ার সময় সতর্ক করেছিলেন। কিন্তু উনি .........



আমার বাবা নেই!



আমার বাবা কেন পুড়বেন? আমার বাবা তো ভালো বাবা! ভালো মানুষ কি কষ্টে মারা যায়?



বাবার কত সুন্দর মুখটা, চোখটা, মুখে কি সুন্দর দাড়ি! আমার বাবার চুলগুলো নেই কেন?



আমিতো বাবার জন্য ইরানী আতর কিনে দেই! সে আতরের কি ঘ্রাণ! কিন্তু বাবার গা দিয়ে এমন গন্ধ ছড়াচ্ছে কেন?



বাবা......... ও বাবা! বাবা! তুমি বললেই তো পারতে, আমি ছুটি নিতাম, তারপর তুমি আমি মিলে মা'কে দেখতে যেতাম! বাবা কথা বল।



তোমার তো শক্ত বিছানায় শুতে কষ্ট হয়............ এখানে শুয়েও তো কষ্টই হচ্ছে........চলো বাড়ী যাই। এখানে ওরা কেমন যেন করছে?







আচ্ছাতুমিই তো ভয় দেখলে কিভাবে পালাতে হয়, তা শিখিয়েছিলে..........তাহলে তুমি পালাতে পারলেনা! আমার যে আর কেউ রইলোনা ..............ও বাাবা!



বাবা..........এখন আমাকে কে খাওয়াবে, কে বসে থাকবে খাবার নিয়ে...............বাবা!............!



বাবা..............................................!







( পরিশিস্ট: শাহবাগ, চট্টগ্রাম রাজশাহী সহ সারা বাংলাদেশে যে মানুষগুলো তাদের মা,বাবা, ভাই-বোন ,আত্বীয়-পরিজন হারিয়েছে,তাদের সব স্বপ্ন গুলো তছনছ হয়েছে,



পৈশাচিক বর্বরতার আগুনে-------যে বাচ্চাটা সারাদিন অপেক্ষায় থেকেছে, বাবা মিষ্টি নিয়ে আসবে.............তারপর..............বাবা এসেছে!.... লাশহয়ে.....



যে মা শেষ বারের জন্য দেখতে পায়নি আদরে লালিত সোনা মুখটা,কিংবা যে বধু জানেও না তা ভাগ্যে রঙ্গিন বসন এই শেষ! তাদের জন্য লিখতে বসলাম ...... হয়তো অনেকে পারতো........আমি আর পারলাম না এর বেশি লিখতে।শুধু প্রশ্ন থেকেই যায় .........কি অধিকার আছে ওদের........... এতগুলো মানুষের জিবননিয়ে হলি খেলার! রাষ্ট্র কেন? রাষ্ট্র কাদের জন্য? সবাই ক্ষমা করবেন!)



এ কান্নার শেষ কোথায়?

এ কান্নার শেষ কোথায়?

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.