নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সময়ের দর্পণ

সোহাগ তানভীর সাকিব

বাস্তবতাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখানোর ক্ষুদ্র প্রয়াস।

সোহাগ তানভীর সাকিব › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প: যমুনার জল

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ২:৪০



আকাশে কালো মেঘ। কুচকুচে কালো নয়, ছাইয়ের মতো কালো। শ্রাবণ মাস শেষ হয়েছে দু'দিন হলো। তারপরও বর্ষার রেশ যায় নি। প্রতিদিনই বৃষ্টি হয়। আবার কিছু সময় পর রোদ বের হয়। যেনতেন রোদ নয়, আকাশ ধবধবে সাদা হয়ে একেবারে চৈত্রমাসের মতো রোদ। কিছু সময় পর আবার বৃষ্টি। কখনও আবার আকাশে মেঘ বৃষ্টি আর রোদের খেলা।
আজ সারাদিনই বৃষ্টি হয়েছে। কখনও ভারী বর্ষণ আবার কখনও গুড়িগুড়ি। বিকেলের এই সময়ে বৃষ্টি নেই দেখে খুকি টুলুকে ঘাষ খাওয়াতে বাড়ির বাহিরে নিয়ে যায়। খুকি চরকৈজুরি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ে। টুলু হলো ছাগল ছানা। খুকির একমাত্র খেলার সাথী এই ছাগলছানা টুলু। খুকির খেলার সাথী টুলু আবার টুলুরও খেলার সাথী খুকি। কারণ, চারিদিকে বানের পানি। বাড়ির বাহিরে যেতে নৌকা লাগে। খুকিদের একটি মাত্র ডিঙ্গি নৌকা। তাও সেটা সব সময় খুকির বাবা মকবুল মিয়া নিয়ে মাছ ধরার কাজে ব্যস্ত থাকে। তাই ইচ্ছা থাকলেও খুকি আশেপাশের বন্ধুদের বাড়িতে নৌকা ছাড়া যেতে পারে না। আবার ঠিক এরকম কারণেই খুকির বন্ধুরাও খুকিদের বাড়িতে আসতে পারে না। আবার টুলুকেও সারাদিন বাড়িতে বন্দী থাকতে হয়। পড়াশোনার ফাঁকে যখন কোনো কাজ থাকে না যখন খুকি টুলুর সাথে সময় কাটায়। ওরা দু'জন দু'জনকে খুবই পছন্দ করে এবং ভালোবাসে। খুকি কিন্তু খুকির ভালো নাম বা স্কুলের নাম নয়। খুকির ভালো নাম মাইশা। খুকির বাবার নাম মকবুল মিয়া। বাবার নামের প্রথম বর্ণের সাথে বর্ণ মিলিয়ে মাইশা রেখেছিল খুকির মা সালেহা বিবি । মেয়ের নাম নাকি বাবার নামের সাথে আর ছেলের নাম নাকি মায়ের নামের সাথে মিলিয়ে রাখতে হয়। এমন কথা সাহেলা বিবি ছোট বেলায় মক্তবে পড়ার সময় শিক্ষকের মুখে শুনেছিল। তাই মেয়ে জন্মগ্রহণের সাতদিনের মাথায় মাথার চুল কেটে নাম রাখে মাইশা। সাহেলা বিবির শ্বাশুড়ি নাতীন মাইশাকে খুকি বলে ডাকতে এখন মাইশার ডাক নাম হয়ে গেছে খুকি।
সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলায় যমুনার তীরে খুকিদের গ্রাম চরকৈজুরি। উপজেলা সদর থেকে পিচঢালা সিংগেল রাস্তায় প্রায় দশ কিলোমিটার অতিক্রম করার পর চরকৈজুরি বাজার। বাজার পর্যন্তই পাঁকা রাস্তা। বাজার থেকে গ্রামের অভ্যান্তরে পাঁয়ে হেঁটে যেতে হয়। তবে বর্ষার সময়ে পাঁয়ে হাঁটার এসব নিচু রাস্তাগুলি পানিতে ডুবে গেলে নৌকায় সহজেই যাতায়াত করা যায়। বছরে দু'বার চরকৈজুরি গ্রামের কৃষকেরা ফসল ফলাতে পারে। একবার ধান আর একবার সরিষা। বানের পানিতে যমুনার বালি এসে অধিকাংশ আবাদি জমি ফসল ফলানোর অনুপযোগী হয়ে গেছে। খুকিদের বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরেই যমুনা নদী। অাগে অনেক দূরে ছিল ভাঙ্গে ভাঙ্গে প্রায় কাছে চলে এসেছে।
প্রতি বছরই বর্ষায় যমুনা ফুলে ফেঁপে উঠে। এবারও তার বেতিক্রম হয়নি। তবে এবার একটু বেশি। অনেক বছর পর এবার চরকৈজুরি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্যার কারণে বন্ধ ঘোষণা করে আশ্রয় কেন্দ্র করা হয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাদানে অসুবিধা হওয়ায় প্রধান শিক্ষক আনোয়ার মাস্টার গ্রামের সবচেয়ে উচু জায়গা চরকৈজুরি বাজারের এক পাশে বট গাছের তলায় ক্লাস করানোর সিদ্ধান্ত নেয়। কারণ, প্রাথমিক সমাপনি পরীক্ষার বাকী মাত্র তিন মাস। এখন যদি স্কুল বন্ধ থাকে তাহলে ছাত্রছাত্রীদের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। তাই আনোয়ার মাস্টার তাঁর স্কুলের অন্যান্য শিক্ষক শিক্ষিকার সাথে পরামর্শ করে এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। চরকৈজুরি বাজারে এসে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ব্যাপারটি জানার পর আনোয়ার মাস্টারকে বটগাছের তলায় অস্থায়ীভাবে টিনের ছাউনি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। বলে.........
- "মাস্টার, তুমার সিদ্ধান্ত বেশ ভালো। বৃষ্টি এলে পোলাপানের শিক্ষা যাতে বন্ধ না হয় তার জন্য আমি টিনের ছাউনি করে দেওয়ার ব্যবস্থা করবো। তুমি কালকে একবার পরিষদে আসো।"
মোক্তার চেয়ারম্যানের কথা মতো দিনের পর দিন ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে ঘুরতে থাকে আনোয়ার মাস্টার। কোনোদিন চেয়ারম্যানের দেখা পায় না, আবার কোনোদিন দেখা পেলেও চেয়ারম্যানের ব্যস্ততার কারণে ঠিক মত আলাপ হয় না। একদিন ব্যস্ততার ফাঁকে চেয়ারম্যান বলে.......
- "ও মাস্টার, তুমি এসেছো? তুমার ব্যাপারটা আমার মাথায় আছে। কাল উপজেলা পরিষদে এ ব্যাপারে কথাও বলেছি। একটু কষ্ট করে কালকে একবার আসো। দেখছো-ই তো কত ব্যস্ত আছি। বুঝতেই তো পারছো?
আনোয়ার মাস্টারের মতো বন্যাদূর্গত এলাকার অনেকেই বিভিন্ন আরজি নিয়ে চেয়ারম্যানের মর্জির জন্য পরিষদ অফিসের বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকে। তাদের মধ্য শিশু আর বৃদ্ধা নারী পুরুষও রয়েছে। মোক্তার চেয়ারম্যান সবাইকে আনোয়ার মাস্টারের মতো আশ্বাস দিয়ে উপজেলা পরিষদে জরুরী মিটিং আছে বলে পরিষদ থেকে প্রস্থান করে।
পনের দিন ধরে আনোয়ার মাস্টার পরিষদে ঘুরাঘুরি করার পর ব্যস্ততার মাঝে চেয়ারম্যানের শান্তনা.......
"- ধৈর্য ধর, মাস্টার। একটা কাজ তো এতো সহজেই হয় না। পাশ হওয়ার একটা ব্যাপার আছে। পাশ হলেই তুমাকে জানাবো।"
এ কথার পর আনোয়ার মাস্টার আর কোনোদিন কষ্ট করে পরিষদে গিয়ে সময় নষ্ট করে না। গাছের তলায় খোলা আকাশের নিচে ক্লাস শুরু করে দেয়। ছাত্রছাত্রীদের বইখাতার সাথে শীতল পাটিও সাথে করে নিয়ে আসতে হয়। বৃষ্টি যেদিন হয় সেদিন ক্লাস বন্ধ। ক্লাস করার মাঝে বৃষ্টি এসেও অনেক দিন খুকিদের ক্লাস পণ্ডু হয়ে যায়। খুকির বাবা মকবুল মিয়া প্রতিদিন ডিঙ্গিতে করে খুকিকে স্কুলে রেখে আসে। বই খাতার সাথে খুকিকে শীতল পাটিও সাথে করে নিয়ে যেতে হয়। মকবুল মিয়া পেশায় কৃষি শ্রমিক। তবে বর্ষায় কৃষি কাজ না থাকার কারণে মাছ ধরে।
(সংক্ষেপিত)

সোহাগ তানভীর সাকিব
গল্পলেখক

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৩:৫৪

খায়রুল আহসান বলেছেন: ব্লগে আপনাকে বিলম্বিত সুস্বাগতম জানাতে এখানে এলাম! এখানে আপনার বিচরণ দীর্ঘস্থায়ী হোক, আনন্দময় ও স্বচ্ছন্দ হোক!
এখানে প্রকাশিত আপনার প্রথম পোস্টটা পড়ে গেলাম। গল্পটা সংক্ষেপিত হলেও ভাল লেগেছে। + +
গল্পের শুরুটা চমৎকার হয়েছিল। সৎক্ষেপ করার তাড়নায় বোধহয় শেষের দিকে একটু অতি সংক্ষেপিত হয়ে গেছে।
শুভকামনা রইলো, হ্যাপী ব্লগিং!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.