নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সময়ের দর্পণ

সোহাগ তানভীর সাকিব

বাস্তবতাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখানোর ক্ষুদ্র প্রয়াস।

সোহাগ তানভীর সাকিব › বিস্তারিত পোস্টঃ

কলাম: বাতাসে আসছে লাশের গন্ধ

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:৪৬


১.
মিয়ানমারে আধুনিক সভ্যতার সবচেয়ে নিকৃষ্ট আর নির্মমভাবে রোহিঙ্গা সম্প্রদায় নিধন চালাচ্ছে সেদেশের সেনাবাহিনী আর উগ্র জাতীয়তাবাদী বৌদ্ধ সম্প্রদায়। নিরীহ রোহিঙ্গা মুসলমানদের নাগরিকত্বকে অস্বীকার এবং জঙ্গি আক্ষায়িত করে এই নিষ্ঠুর কর্মকাণ্ড বার্মায় সংগঠিক হচ্ছে। পুরুষদের গুলি কিংবা চোখ বেঁধে জবাই করা হচ্ছে। আর নারীদের বাবা, মা কিংবা ভাইয়ের সামনে গণধর্ষণ করে উলঙ্গ অবস্থায় হাত-পা বেঁধে জবাই করা হচ্ছে। বাবা, ভাই অথবা স্বামী বা ছেলের সামনে মা আর মেয়েকে একসাথেও ধর্ষণ করা হচ্ছে কোথাও কোথাও। শুধু তাই নয়, ধর্ষিত হতভাগী সেইসব নারীদের যৌনাঙ্গে ধারালো অস্ত্র প্রবেশ ছিন্নভিন্ন করছে। এই হত্যাযজ্ঞ থেকে শিশুদেরও নিস্তার নেই। কোথাও একজনকে আবার কোথাও একাধিকজনকে কুপিয়ে বা জবাই করে হত্যা করা হচ্ছে। হত্যার পর অনেক সময় সেই লাশ গরু বা মহিষের মাংসের মত টুকরো টুকরো করে পৈশাসিক আনন্দ উপভোগ করছে বার্মিজ আর্মি। হত্যা আর ধর্ষণের পাশাপাশি তাদের বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দিচ্ছে আর ধনসম্পদ লুট করছে। ফেসবুকের ওয়াল জুড়ে এখন শুধু বার্মার এমন ভয়াল দৃশ্য চোখে পড়ে। রাস্তায় বাড়িতে মাঠে-ঘাটে, ক্ষেতে, বনে-বাদারে, খালে-বিলে মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে এখন রোহিঙ্গাদের লাশ। সঠিক সৎকারের অভাবে শিয়াল শকুন আর কীট পতঙ্গের খোরাক হয়েছে সেইসব লাশ। ভৌগলিক কাঁটা তারের সীমা রেখায় আবদ্ধ না থেকে বাতাসে আসছে সেই সব সৎকার বিহীন লাশের গন্ধ। রোহিঙ্গাদের নির্যাতনের কিছু কিছু চিত্র এতটাই ভয়ানক যে, দেখলে শরীরের লোম শিউরে ওঠে। হত্যাযজ্ঞেরর এমন ভয়ংকর চিত্র অন্য কেউ নয় হত্যাকারীরা নিজেরা ছবি তুলে বা ডিভিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোষ্ট করছে। মানুষ হত্যা তাদের কাছে যেন উৎসবে পরিণত হয়েছে। তারা নিজেরা বিশ্ববাসী এসবের কিছুই দেখতে পেত না। কারণ, সেখানে সাংবাদিক প্রবেশ নিষিদ্ধ। বর্তমানে বিশ্বে যতটি দেশে যুদ্ধবিগ্রহ চলছে কোনো দেশে-ই গণমাধ্যম নিষিদ্ধের খবর শোনা যায় নি। কিন্তু মিয়ানমারে নিষিদ্ধ। গণমাধ্যম নিষিদ্ধ করে সু চি রোহিঙ্গা নির্যাতন অস্বীকার করছে। সু চি অস্বীকার করলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের তথ্য মতে, সহিংসতায় এ পর্যন্ত চার শতাধিক মানুষ নিহত এবং প্রায় সাত হাজার ঘর-বাড়িতে অগ্নি সংযোগ করা হয়েছে। প্রায় চার লক্ষাধিক শরণার্থী এসেছে বাংলাদেশে। এই হত্যাযজ্ঞে শুধু যে মুসলমানেরা-ই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তা নয়। রাখাইনের প্রায় ত্রিশ হাজার বৌদ্ধ ও হিন্দু অধিবাসীও বাড়ি-ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর দাবী, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী আসলে রোহিঙ্গাদের দেশ থেকে বের করে দিতেই এই নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞ পরিচালনা করছে।
২.
জাতিসংঘের আনান কমিশন মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের সাথে বিরোধ সমাধানের নিমিত্তে রোহিঙ্গারা ভোট প্রদানের অধিকার পায়। ২০১৫ সালের নভেম্বরে মিয়ানমারের জাতীয় নির্বাচনে রোহিঙ্গা সম্প্রদায় অং সান সু চির রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) এর নির্বাচন করে এবং ভোট দেয়। এই নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করে এনএলডি। দীর্ঘদিনের সামরিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে গণতন্ত্র ফিরে পায় মিনানমার। আর সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অধিকারী হন শান্তিতে নোবেল জয়ী অং সাং সু চি। নোবেল কমিটি সু চি কে মূলত তিনটি কারণে পুরস্কার প্রদান করেন।
১. মিয়ানমারে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের জন্য তাঁর অসহিংস সংগ্রাম।
২. দমন এবং নিপীড়নের বিরুদ্ধে তিনি একজন আদর্শ।
৩. বিশ্বের বহু মানুষের গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম মানবাধিকার ও জাতিগত শান্তি বজায়ে রাখায় তাঁর শান্তিপূর্ণ সমর্থন ও অবিরত প্রচেষ্টার জন্য।
১৯৯১ সালে নরওয়ের নোবেল কমিটি বিবেচিত বিষয়গুলির একটিও বর্তমানে সুচির চরিত্রে লক্ষ্যণীয় নয়। তাহলে কেন সুচির নোবেল পুরস্কার প্রত্যাহার করা হবে না? মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য যখন রোহিঙ্গাদের রক্তে রঞ্জিত তখন কি করে শান্তি পুরস্কার সুচির ঘরে শোভা পায়?


মধ্যযুগীয় কবি চণ্ডীদাসের মতো বলতে চাই "সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই।"
ধর্ম, বর্ণ, জাত দেশ সবকিছুর ঊর্ধ্বে মানুষ। মানুষের উপরে আর কিছু নাই। একটি শিশু জন্মগ্রহণের সময় কিন্তু দেশ জাতি বা ধর্ম চিনে জন্মগ্রহণ করে না। মানুষ-ই সেই শিশুকে দেশ চেনায়, মাথায় বর্ণবাদের বীজ ঢুকিয়ে দেয় আর ধর্ম সম্পর্কে সচেতন করে।
ইসলাম, খ্রীষ্টান, হিন্দু কিংবা বৌদ্ধ যে ধর্মের কথাই বলি না কেন, প্রত্যেক ধর্মের মূলমন্ত্র একটাই সেটা হলো শান্তি। বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক গৌতম বৌদ্ধ সারা জীবন শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সাধনা করেছেন। ভক্তদের উদ্দেশ্য বলেছেন "জীব হত্যা মহাপাপ"।
সেই গৌতম বৌদ্ধের অনুসারিরা-ই মিয়ানমারে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব মানুষকে হত্যা করছে। তারাই এখন রক্ত পিপাসু পিশাস।
সারা বিশ্বে রোহিঙ্গা হত্যার প্রতিবাদ হচ্ছে। জাতিসংঘ এব্যাপারে এখনও কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণ করতে পারে নি।
আমরা বিশ্বকে শান্তিময় দেখতে চাই। যেখানে মুসলমান, হিন্দু, খ্রীষ্টান সবাই স্বাধীন, সবার অধিকার সমান।

-সোহাগ তানভীর সাকিব
গল্পলেখক

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.