নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সময়ের দর্পণ

সোহাগ তানভীর সাকিব

বাস্তবতাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখানোর ক্ষুদ্র প্রয়াস।

সোহাগ তানভীর সাকিব › বিস্তারিত পোস্টঃ

সাংস্কৃতিক আগ্রাসন ও বর্তমান শিশু-কিশোর

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৫৮


একটি জাতি ধ্বংস করার পেছনে যে কয়টি বিষয় জড়িত তার ভেতর সেই জাতির নিজস্ব সাংস্কৃতি অন্যতম। শিল্প, সাহিত্য বা সাংস্কৃতি ধ্বংস তো সেই জাতি ধ্বংস। সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের সাথে সামাজিক, সাহিত্যিক এবং অর্থনৈতিক পরির্বতন জড়িত।
বর্তমানে আমাদের দেশীয় সাংস্কৃতিতে পশ্চিমা আর ভারতীয় সাংস্কৃতির আগ্রসন চলছে। এই আগ্রসন থেকে শিশু-কিশোরেরাও রেহাই পায় নি। ভিনদেশী সিনেমা, নাটক থেকে শুরু করে পোষাক পরিচ্ছদ সব কিছু-ই আমরা অনুসরণ করি। ভিনদেশী সিনেমা, নাটকের পাশাপাশি টিভি অনুষ্ঠান পর্যন্ত রিমেক হয় এদেশে। ছোটবেলায় স্কুল শিক্ষকের মুখে শুনেছিলাম, বানরের একটা স্বভাবের সাথে বাঙ্গালীদের একটা স্বভাবের সাদৃশ্য আছে। উভয়-ই অনুকরণ প্রিয়। এজন্য-ই হয়তো আমাদের গান, নাটক, সিনেমা, টিভি অনুষ্ঠান, পোষাক-পরিচ্ছদ, চলন-বলন ইত্যাদি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে ভিনদেশী সাংস্কৃতির প্রভাব দেখা যায়।
ছোট বা ক্ষুদে যাদের আমরা শিশু-কিশোর হিসেবে জানি, তাদের নিয়ে একটি প্রসিদ্ধ বেসরকারী টিভি চ্যানেলের গানের রিয়েলিটি শো করে। অনুষ্ঠানের প্রতিযোগীরা শিশু-কিশোর হলেও তারা কিন্তু শিশুদের গান গায় না। গায় বড়দের গান। শিশুদের কণ্ঠে বড়দের গান হা করে শোনে এসব অনুষ্ঠানের কথিত বিচারক। গান শেষে সেই সব বিচারকেরা সকল প্রতিযোগীকে প্রায় একই ধরণের মন্তব্য করে। আর এসব টিভি চ্যানেলের গানের লাইভ অনুষ্ঠানেও বড় শিল্পীদের সাথে সেই শিল্পীর শিশু সন্তানদের কিংবা শীর্ষকেও বড়দের গান গাইতে দেখা যায়। অবস্থাটা এমন হয়েছে বড় ছোট সবাই সমান। গান, নাটক, মিউজিক ভিডিও, সিনেমা কোনো কিছুতেই যেন শিশু-কিশোরদের সাথে বড়দের কোনো ভেদাভেদ নাই। বিটিভিতে শিশু-কিশোরদের শিল্পীত্ব প্রতিভা প্রকাশের প্রতিযোগীতা মূলক অনুষ্ঠান "নতুন কুঁড়ি" বন্ধ হওয়ার পরে সরকারী বা বেসরকারী কোনো টিভি চ্যানেলেই শিশু-কিশোরদের এমন প্রতিযোগীতা মূলক অনুষ্ঠান আর দেখি না।

বাজারে শিশুদের মডেল বা অভিনয়ে বিভিন্ন মিউজিক ভিডিও পাওয়া যায়। শিশুদের এসব মিউজিক ভিডিও বা সিনেমার আদলে নির্মিত নাটক কিংবা টেলিফিল্ম ফেসবুক বা ইউটিউবেও ছড়াছড়ি। মিউজিক ভিডিও বা নাটক বানানোর ক্ষেত্রে কোনো সেন্সর নীতিমালা না থাকার কারণে একশ্রেণীর স্বার্থনেশী অসাধু নির্মাতারা শিশু-কিশোদের দিয়ে অশালীন অঙ্গভঙ্গিময় আবেদনময়ী এসব মিউজিক ভিডিও বা নাটক নির্মাণ করছে। আর শিশু-কিশোরসহ একশ্রেণীর রুচিহীন দর্শক এসব দেখছে। ফলে তাদের ক্যাসেট বিক্রি বা ইউটিউবে ভিউয়ার্স বাড়ছে।

এসব মিউজিক ভিডিও আর নাটক দেখে শিশু-কিশোরতের নৈতিক অবক্ষয় হচ্ছে। প্রাইমারি স্কুলে পড়ুয়া ছেলে মেয়েরাও এখন প্রেম করে। শহরের পার্কেগুলোতে সেসব প্রেমিক-প্রেমিকাকে দেখা যায় তাদের বেশির ভাগ-ই স্কুলে পড়ুয়া শিক্ষার্থী । যে শিশুটি এখন স্কুলেই যায় না সেও জানে I Love you এর মর্মার্থ।
শিশু বা কিশোর কিশোরীরা থাকবে তাদের মত। গাইবে শিশুতোষ গান। তাদের অভিনীতি নাটক বা মিউজিক ভিডিও হবে শিশুতোষ। যেখানে নীতি, নৈতিকতা, সহমর্মিতা এবং মূল্যবোধ থাকবে। আর থাকবে অপরকে সম্মানবোধ। কাজী নজরুল কিংবা বরীন্দ্রনাথ ঠাকুরসহ আমাদের বাংলা সাহিত্যিকেরা শিশুতোষ অসংখ্য গান, নাটক রচনা করেছেন। শিশুরা যদি বড়দের গান-ই গাইবে তাহলে তো বিখ্যাত কবি সাহিত্যিকেরা আলাদা ভাবে শিশু সাহিত্য রচনা করতেন না। বর্তমানেও শিশুতোষ গান, নাটক, সিনেমা হচ্ছে তবে খুবই স্বল্প।
"ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুর-ই অন্তরে" কিংবা "আজকের শিশু আগামি দিনের ভবিষ্যৎ"। আজকে যে শিশু আগামি ত্রিশ বছরের মধ্যে সে আরেকটি শিশুর পিতা বা মাতা হবে। অভিনয় শিল্পী, সংগীত শিল্পী, শিক্ষক, ডাক্তার, প্রকৌশলি, আইনজীবি, বিচারক, মন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি হবে। আজকের শিশু-ই একদিন দেশ পরিচালনা করবে। জ্ঞান বিজ্ঞানে পারদর্শীতা অর্জন করে বিশ্ব জয় করবে। এর বিপরীতও হবে। কেউ দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর, নেষাখোর, সন্ত্রাসীও হবে কেউ কেউ।
বিপথগামী মানুষ বিপথে যায় শিশু বয়স থেকেই। এজন্য যখন যেটা দরকার তখন সেটার বাহিরে অন্য কিছু করা থেকে শিশু-কিশোরদের বিরত রাখতে হবে। সাংস্কৃতির আগ্রসনের শিকার পিতা-মাতার খুনি ঐশীর মত করে নয়, শিশু-কিশোরদের আমার বন্ধু রাশেদের মত করে গড়ে তুলতে হবে।

-সোহাগ তানভীর সাকিব
সেপ্টেম্বর-২০১৭
তেজগাঁও, ঢাকা-১২১৫

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.