নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সময়ের দর্পণ

সোহাগ তানভীর সাকিব

বাস্তবতাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখানোর ক্ষুদ্র প্রয়াস।

সোহাগ তানভীর সাকিব › বিস্তারিত পোস্টঃ

পেতাত্মা

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:০৬



সুন্দরবন দেখার উদ্দেশ্য আমরা কয়েকজন বাল্যবন্ধু মংলা এসেছি। এসে উঠেছি আমাদের সাথে আগত বন্ধু শাহেদের ফুপার বাসায়।

শাহেদের ফুপা মংলা বন্দরের একজন সরকারী কর্মকর্তা। সরকারী কোয়াটারে পরিবারসহ থাকে। অনেক পথ জার্নি করে এসে পৌঁছানোর দিন আমরা খুবই ক্লান্ত থাকার কারণে বিশ্রাম করি। যে রুমে আমাদের থাকতে দেয়া হয়, সেই রুমের সিলিং ফ্যানের সাথে ফাঁসি নিয়ে গত দু'বছর আগে শাহের কাজিন রুপা ইহলোক ছেড়ে চলে গেছে।

রুপার সাথে ওঠা ওদের পারিবারিক একটা ছবি বাঁধিয়ে আমাদের রুমের দেয়ালে লাগানো রয়েছে। শুধু তাই নয়, জুতা'র রেকে রুপার ব্যবহার্য কয়েক জোড়া জুতা কাগজে মুড়িয়ে রাখা। শোকেসে রুপার ব্যবহার্য চুড়ি, চুলের ক্লিপ, হাত ঘড়িসহ কিছু জামা-কাপড় ও প্রাসাধনি সামগ্রীর মোড়ক থরে থরে সাজানো। রাতে আমাদের ঘুমানোর আগে আণ্টি আমাদের কাছে এসে চোখের পানি বিসর্জন দিয়ে রুপার জন্য হৃদয়ের শূণ্যতা প্রকাশ ও স্মৃতিচারণ করে। সন্তানের প্রতি মায়ের ভালোবাসার আবেগ প্রবণ কথায় আমাদের চোখ থেকেও অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।

রাতে শোবার পরে আমার চোখে আর ঘুম আসে না। চারিদিক নিস্তব্দ নিঝুম। ঘুমন্ত চারপাশের লোকালয়। ঘড়ির কাটার খটখট শব্দ অবিরত চলছে। আমার পাশে শুয়ে থাকা বন্ধুরা ঘুমের সাগরে নিমজ্জিত হয়ে স্বপ্নপুরী পারি দেয় তবুও আমার ঘুম আসে না। আমি চোখ দুটি বুজে ঘুমের অভিনয় করি। শনশন শব্দে চলে ঘাতক সেই ফ্যান। চোখ খুললেই চোখের তারায় ঝাপসা ভেসে ওঠে রুপার ঝুলন্ত লাশের নির্মম দৃশ্যের প্রতিচ্ছবি।

আমি বিছানায় কিছুতেই শুয়ে থাকতে পারি না। তাই বেলকনিতে গিয়ে চোখ দু'টি বন্ধ করে চেয়ারে বসে থাকি। বাসার চারপাশে বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালানো। সেই বাতির আলোর প্রভাবে আমার চারপাশে অন্ধকারের ঘনত্ব একেবারেই নগণ্য। কোথা থেকে যেন বকুল ফুলের ঘ্রাণ বাতাসে ভেসে আসে। আকাশে চাঁদ ছিল, আমি বেলকনিতে আসার পরপরই মেঘের আড়াল চলে যায়। চার তলা ভবনের তৃতীয় তলার এ বেলকনি থেকে সমুদ্র বন্দর দেখা যায়। মাঝে মাঝে বন্দর থেকে জাহাজ নোঙ্গর করার শব্দ আসে। বেলকনিতে বসে প্রাকৃতিক বাতাসে দেহ মন জুড়িয়ে যায়।

তবুও চোখে ঘুম আসে না। এক সময় নির্ঘুম চোখ দু'টি খুলতেই চোখে পড়ে ধবধবে সাদা শাড়ি পড়ে এলো চুলে আমার পাশের চেয়ারে বসে অাছে রুপা। রুপাকে চিনতে আমি একটুও ভুল করি না। কারণ, ঘরের দেয়ালে ওর বাঁধানো ছবি দেখেছি। তবে ছবির চেয়েও রুপাকে বেশি সুন্দর আর আর্কষণীয় লাগে বেলকনির এই আবছা অন্ধকারে। আচমকা রুপাকে দেখে আমি চিৎকার দিই। সেই নিঃশব্দ চিৎকার হয়তো কেউ শুনতে পায় না। ভয়ে আমার শরীরের সমস্ত লোম শিউরে ওঠে। রুপাকে দেখা মাত্রই চোখ বন্ধ করি।

রুপা বলে...........
- ভয় পাবেন না। আমি আপনার সাথে গল্প করতে এসেছি।

তবুও আমি চোখ খুলতে ভয় পাই। আমার ভীতু সন্তুষ্ট দেখে রুপা মিটিমিটি হাসে আর বলে.......
- পুরুষ মানুষ হয়ে যদি একটা মেয়ে মানুষকে ভয় পায়, তাহলে তাঁর পুরুষ হয়ে জন্মগ্রহণই বৃথা।

রুপার এমন কিছু ইনসল্ট মূলক কথার পর ইনসল্টের তারনায় আমার ভয় কেটে যায়। আমি এক সময় স্বাভাবিকে ফিরে এসে জিজ্ঞাসা করি......
- আচ্ছা আপনি সুইসাইট করলেন কেন?
- সে অনেক কথা। সেসব কথা আপনাকে বলব কেন?
- বলতে না চাইলে বলবে না। তবে জানতে ইচ্ছা করল তাই জিজ্ঞাসা করলাম।

- আমি ইন্টার মেডিয়েট সেকেণ্ড ইয়ার থেকে ফুয়াদ নামের একটা ছেলের প্রেমে পড়ি। অবশ্য, প্রেমের ক্ষেত্রে প্রথমে আমার চেয়ে ফুয়াদের
আগ্রহই বেশি ছিল। আমার বাবার কলিগের ছেলে হওয়ার কারণে ফুয়াদের ফ্যামিলির সাথে আমাদের ফ্যামিলির একটা গুড আন্ডারস্ট্যান্ডিং ছিল। আমাকে ফুয়াদের বাবা-মা খুবই পছন্দ করত। ফুয়াদ ছিল জগন্নাথ ইউনির্ভাসিটির স্টুডেন্ট। ছুটিতে যখন মংলায় তাদের বাসায় আসত তখন আমাদের দেখা হতো। তখন আমি মাঝে মাঝে কলেজে যাওয়ার নাম করে ফুয়াদের সাথে সুন্দরবনসহ মংলার বিভিন্ন স্থানে বেড়াতে যেতাম। পরে আমাদের বেড়াতে যাওয়ার কথা আব্বু-আম্মু জানলেও কিছু বলত না। ফুয়াদ ঢাকা থাকার কারণে ফেসবুকে নিয়মিত আমাদের যোগাযোগ হতো। প্রায় প্রতিরাতেই ইমুতে ভিডিও কলে আমাদের কথা হতো। এভাবে এক পর্যায়ে আমি ফুয়াদকে খুব ভালো বেসে ফেলি। চলে যায় এক বছর।

ফুয়াদ মংলা আসলে বিকেলে দু'জন ঘুরতে যাই। পশুর নদীর তীরে গিয়ে দু'জন সময় কাটাই। ফুয়াদের ফোনে সমস্যা হওয়ার কারণে আমার ফোন দিয়ে ওর ফেসবুক আইডিতে লগিং করে। আমাদের গল্পের মাঝে লগ আউট করতে ভুলে যায় ফুয়াদ। বাসায় ফিরে রাতে আমি আমার ফেসবুক আইডিতে যাওয়ার সময় দেখি ফুয়াদের আইডি লগিং করা।

আমি ফুয়াদের আইডিতে ঢুকি। দেখি নীলা নামের এক মেয়ে মেসেঞ্জারে তার একক কিছু আপত্তিকর ছবি ফুয়াদের সাথে শেয়ার করেছে।

দেখার সাথে মনে হয় আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। বুকের ভেতর বিদ্যুৎ চমকায়।

নীলার সাথে ফুয়াদের চ্যাটিং পড়ে জানতে পারি, নীলা ফুয়াদের ভার্সিটির ক্লাস ফেণ্ড এবং ফুয়াদের সাথে প্রেম করে। দু'জনের একাধিবার শারীরিক সম্পর্কও হয়েছে।

সেই রাতে মুঠোফোনে ফুয়াদের সাথে আমার প্রায় এক ঘণ্টার মত কথা কাটাকাটি হয়। তারপর থেকে সে আমার সাথে সব রকম যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়, ফেসবুক থেকেও আনফেণ্ড করে দেয়।

আমি যোগাযোগ করতে চাইলেও ওর কোনো রেসপন্স পাই না। নিজেকে বড় একাএকা লাগে। পড়াশোনা করতে পারি না ঠিক মত। রাতে ঘুমাতে পারি না। খাবারের প্রতি অনীহা চলে আসে। জীবনকে হতাশা গ্রস্থ বড় দুর্বিসহ মনে হয়। এই হতাশা আর ব্যর্থতাবোধে আমার আচরণে অনেকটা পরিবর্তন চলে আসে। সেটা আব্বু আর আম্মু দু'জনই বুঝতে পারে তবে কারণ কিছুই জানতে পারে না। আর আমি তাদেরকে কারণ জানানোর প্রয়োজনও মনে করি না।

জানালে, ফুয়াদের বাবার কাছে ভদ্রভাবে নালিশ জানানো ছাড়া কিছুই করতে পারবে না তারা। আর আমি ফুয়াদের নামে কোনো নালিশ করতে চাইও না।

একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রুপা বলতেই থাকে.......
একদিন সকালে বাহিরে কাঁচা রোদ ফুটে বের হয়েছে। হকার এসে সংবাদপত্র দিয়ে গেছে বাসায়। আমার রুমের বেলকনির পাশ থেকে বকুল ফুলের ঘ্রাণ এসে চারিদিকে মাতিয়ে দিয়েছে। আব্বু অফিসে যাওয়ার জন্য নাস্তার টেবিলে বসার আগে আমার রুমের দরজার পাশে এসে আমাকে কয়েকবার ডেকে তারপর নাস্তার টেবিলে বসে অপেক্ষা করে। তারপর পরই পলক স্কুলে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে যায় নাস্তার টেবিলে। আমার যাওয়া দেড়ি দেখে আম্মু আসে আমাকে ডাকতে। অনেক ক্ষণ ডাকাডাকি করার পরও যখন কোনো সাড়া শব্দ পায় না, তখন নাস্তার টেবিল থেকে আব্বু এসে আম্মুর সাথে যোগ দেয়, পলক এসে ডাকে তবুও আমার ঘুম ভাঙাতে পারে না। দরজা ভেঙ্গে যখন ওরা আমার ঘরে প্রবেশ করে তখন আমাকে ঘরের সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পায়। আমাকে অমন অবস্থায় দেখে আব্বু আর আম্মু জোরে এক চিৎকার দিয়েই বাকরুদ্ধ হয়ে যায়। বাঁধ ভাঙ্গা পানির স্রোতের মতো দু'জনের চোখ দিয়ে পানি বের হতে থাকে। ছোট ভাই পলক কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে শুধু আর্তনাদ করে।

- আচ্ছা এমন একটা কাজ করে কি আপনি হ্যাপি?
- কি ভাবে হ্যাপি হই বলুন, যার কারণে আমি জীবন বিসর্জন দিলাম সে আমার জন্য কোনোদিন একফোঁটা চোখের পানিও বিসর্জন দিলো না।
- আপনার জন্য কিন্তু আপনার আব্বু আর আম্মু অনেক কষ্ট পেয়েছে।
- সেটা এখন বুঝি যে, তারা আমাকে কতটা ভালোবাসতো। তাইতো প্রতিরাতে এসে তাদের দেখে যাই।
- আপনি জানেন কি? পলকের ল্যাপটপ ওপেন করলে, স্কিনে সর্বপ্রথম আপনার ছবি ভেসে ওঠে।
- জানি। যে পলককে সারাক্ষণ বুকের সাথে জড়িয়ে রেখেছি, কখনও কোল থেকে নামাই নি। এখন তার জন্য বুকটা হাহাকার করে।
- আর ফুয়াদের জন্য?
- ঐ নাম আমার সামনে আর কখনও মুখে আনবেন না, প্লিজ। আমি ঐ নাম শুনতে চাই না। শুধু ওর জন্য আজ আমি আত্মা থেকে পেতাত্মা।

ইতোমধ্যে ফযরের আজান এসে কানে প্রবেশ করে। পাখিদের কলকালি শুরু হয়ে যায় চারিদিক। অদৃশ্য হয়ে যায় রুপা। আমি তখনও বেলকনিতে বসে বকুল ফুলের ঘ্রাণ নিতে থাকি।


-সোহাগ তানভীর সাকিব
সেপ্টেম্বর-২০১৪
রাধানগর, পাবনা

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:২৬

সনেট কবি বলেছেন: ভাল লিখেছেন।

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ৮:৩৫

সোহাগ তানভীর সাকিব বলেছেন:
পড়ে ভালো লেগেছে জেনে খুশি হয়েছি। মতামত প্রদানের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ। সব সময় ভালো থাকবেন প্রত্যাশা রইল।

২| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:৪১

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: প্রিয় তানভীরভাই,

আজ আমার বিসর্জন সুন্দর লাগলো।


শুভকামনা ও ভালোবাসা জানবেন।


২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ৮:৩৮

সোহাগ তানভীর সাকিব বলেছেন:
প্রিয় চৌধুরি ভাই,
আপনার বির্সজন সুন্দর লেগেছে জেনে আমারও ভালো লাগলো। কষ্টটা সার্থক মনে করি। আরো অনেক অনেক উৎসাহিত হলাম।
ভালো থাকবেন সব সময় এই প্রত্যাশা রইল।

৩| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:৪৬

নজসু বলেছেন: পড়বো ভাই।

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ৮:৪০

সোহাগ তানভীর সাকিব বলেছেন:
আপনার মতামতের মানে আমার বোধগম্য নয়।
তারপরও আপনার জন্য শুভ কামনা।

৪| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:৪৮

রাজীব নুর বলেছেন: মংলার পাশে সুন্দরবন আসল সুন্দরবন না।
আসল সুন্দরবন হচ্ছে দুবলার চর, কটকা, হিরন পয়েন্ট।
মংলা দিয়েও আমি বোটে করে সুন্দরবন গিয়েছি।

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ৮:৪২

সোহাগ তানভীর সাকিব বলেছেন:
প্রিয় রাজিব নুর ভাই, আসলে আমার লেখার বিষয় সুন্দরবন নয়।
তারপরও আপনি সুন্দর পরামর্শ দিয়েছেন। ধন্যবাদ ভাই।

৫| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:২৪

আরোগ্য বলেছেন: সময়োপযোগী পোস্ট।

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ৮:৪৪

সোহাগ তানভীর সাকিব বলেছেন:
হয়তো হতে পারে।

মতামত প্রদানের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।

৬| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:৫৭

ফারিহা হোসেন প্রভা বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন। শুভ কামনা রইলো।

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ৮:৪৭

সোহাগ তানভীর সাকিব বলেছেন:
লেখাটি পড়ে মতামত প্রদানের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.