নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সময়ের দর্পণ

সোহাগ তানভীর সাকিব

বাস্তবতাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখানোর ক্ষুদ্র প্রয়াস।

সোহাগ তানভীর সাকিব › বিস্তারিত পোস্টঃ

রাঘব বোয়াল

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১০:২৫


মোজাহার মোল্লা মুগনীগঞ্জ গ্রামের মাতব্বর। কারণ সে ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বর। মুগনীগঞ্জ গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীতে প্রতি বছর বর্ষার সময়ে সরকারী ভাবে মাছের পোনা ছাড়া হয়। চৈত্রমাসে নির্বিঘ্নে মাছ ধরে যেন গ্রামবাসী আমিষের চাহিদা পূরন করতে পারে।

এবারও বর্ষার সময় তার ব্যতিক্রম হয় নি। বর্ষার মাঝামাঝি সময়ে মৎস অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা এসে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে ডেকে গ্রামবাসির সামনে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে কয়েক ট্রাক মাছের পোনা অবমুক্ত করে। এই মাছের হকদার শুধু মাত্র মুগনিগঞ্জ গ্রামবাসীই নয়, বয়ে চলা নদীর আশপাশের কয়েকটি গ্রামের মানুষ। আইন অনুযায়ী নদীতে মাছের পোনা অবমুক্ত করার পর প্রথম তিন মাস কেউ নদীতে মাছ মারতে পারবে না । আইনে নিষেধ থাকার পরেও কিছু অসৎ লোক অনেক সময় চুরি করে মাছ ধরে। তাই সর্বসাধারণের মাছ ধরার উপযুক্ত সময় না আসা পর্যন্ত অর্থাৎ প্রথম তিন মাস মেম্বরের তত্ত্বাবধানে কিছু সংখ্যক প্রহরি নিয়োগের মাধ্যমে নদী এবং নদীর মাছ রক্ষণা-বেক্ষণ করার সরকারী বিধান রয়েছে। মেম্বর কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত সেসব প্রহরী শ্রমিকদের বেতন-ভাতা সরকারী বরাদ্দের মাধ্যমে মেম্বর সাহেব পরিশোধ করে থাকে।
মাছ ছাড়ার আগে প্রহরি নিয়োগ হয়। এসময় কাজের জন্য গ্রামের অনেকেই মোজাহার মেম্বারের কাছে ধরণা দেয়।

মেম্বর সাহেব সৎ অসৎ বিচার না করে নিজের পছন্দ মত লোকদের প্রহরি হিসেবে নিয়োগ দেয়। তাদের কাছে এজন্য ঘুষও নেয়। মেম্বর সাহেবের এমন নিয়োগে গ্রামের সৎ এবং নিষ্ঠাবান অনেক যুবক প্রহরির তালিকা থেকে বাদ পড়ে। যোগ্য ব্যক্তিরা যোগ্যতায় কর্ম চায় ঘুষ দিয়ে নয়। তবে তাদের বাদ পড়ার আরো একটা কারণ হলো, নির্বাচনের সময় তারা মোজাহার মেম্বরের পক্ষে কাজ করেছিল না ভোটও দিয়েছিল না। প্রথম দফায় মেম্বর হওয়ার পর নির্বাচনী ওয়াদা অনুযায়ী চার আনা কাজও করে না মোজাহার মেম্বর। গ্রামবাসির জন্য যেসব বাজেট বা অনুদান আসে তার বারো আনা নিজের মনে করে আত্মসাত করে, দুই আনা দেয় তার চামচে আর চেলাপেলাদের এবং অবশিষ্ট দুই আনা তার পছন্দের দরিদ্রদের মাঝে ভাগ করে দেয়।

মোজাহার মেম্বর মিশুক স্বভাবের মানুষ হলেও লোকটা সুবিধার না। ভোটের সময় পাঞ্জাবি টুপি পড়ে ধার্মিকের রূপ ধারণ করে আর ভোট চলে গেলেই বকধার্মিক। বহুরূপী চরিত্রের কারণে দ্বিতীয় দফা নির্বাচনের সময় মোজাহার মোল্লার ওয়াদা আর কেউ বিশ্বাস করে না। পেশী শক্তি আর অবৈধ টাকার প্রভাবে ভোট কারচুপি করে ইউপি সদস্য হয় সে। এমন একজন দুর্নীতিগ্রস্থ নীতিহীন মিথ্যাবাদী জনপ্রতিনিধিকে নদীর মাছের দায়িত্ব দেওয়া আর শিয়ালের কাছে মুরগি হেফাজত রাখা একই কথা। নির্বাচনের সময় যারা মোজাহার মোল্লার পক্ষে কাজ করে। ভোটের দিন কেন্দ্র দখল করে বা জাল ভোট দেয়, প্রহরি নিয়োগে তারা অগ্রাধিকার পায়। অস্ত্রধারী আর সাহসীকতা বিশেষত্বের কারণে গত দুই নির্বাচনে তারা মেম্বর সাহেবের বিশেষ বিশ্বাসও অর্জন করেছে। যদিও প্রহরিদের কেউ-ই নিষ্ঠাবান নয় তারপরও মেম্বরের এমন নিয়োগ অসহায় গ্রামবাসির মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই। যতই ভোট কারচুপি করুক, সে তো বর্তমানে মেম্বর। গ্রামের মাথা। তার মুখের ওপর কে বলবে কথা? মোজাহার মেম্বরের মনোনিত প্রহরিরা নদীর মাছ চুরি রোধ করতে দিন-রাত পাহারা দেয়।

দুই মাস পর........
গ্রামবাসীদের দু'একজন জানতে পারে মেম্বর সাহেব মনোনিত প্রহরিরাই রাতের বেলা নদী থেকে মাছ চুরি করে মারে। আস্তে আস্তে খবরটি গ্রামের অনেকের মধ্যেই ছড়িয়ে পরে। এ নিয়ে মাঠে-ঘাটে হাটে-বাজারে প্রতিটা চায়ের দোকানে চলে আলোচনা। গ্রামবাসি গিয়ে নালিশ জানায় মোজাহার মেম্বরের কাছে। মেম্বর উপযুক্ত প্রমাণ পেলে অভিযুক্তদের দৃষ্টান্ত মূলক বিচার করবে এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে গ্রামবাসিকে বিদায় করে।
এদিকে দিনে দিনে নদীতে প্রহরীদের মাছ চুরি বৃদ্ধি পেলেও মেম্বর মোজাহার উপযুক্ত প্রমাণ পায় না। সুতরাং অভিযুক্তরা দোষমুক্ত থেকে যথারীতি উক্ত কাজে নিযুক্ত থাকে। এই মহা অন্যায় গ্রামবাসী মেনে নিতে না পেরে একদিন রাতে প্রহরী নামের চোরদের চুরি করার সময় হাতে নাতে ধরে মেম্বরের কাছে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় মেম্বর রেগে আগুন। উপযুক্ত শাস্তি হিসেবে সকল প্রহরীকে কাজ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। মেম্বর সাহেবের এমন বিচারে খুশি হয়ে গ্রামের সহজ সরল মানুষেরা ঘরে ফিরে যায়।

এ ঘটনার দু'দিন পরেই সবার নির্বিঘ্নে মাছ ধরার জন্য কর্তৃপক্ষ নদী উন্মুক্ত করে দেয়।
হইহুল্লা করে উৎসব মুখর পরিবেশে পলো আর ঢেলাজাল নিয়ে মাছ ধরতে নদীতে নেমে পরে গ্রামবাসি। বউ-ঝি রা মাছ কাটার জন্য ছাই আর বটি নিয়ে বাড়িতে অপেক্ষা করে। অনেক বাড়িতে নতুন মেয়ে-জামাই নায়র আসে। শীতের শুরুতে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে উৎসবের আমেজ বিরাজ করে নদী পাড়ের গ্রামগুলিতে। কিন্তু মাছ ধরতে নদীতে নেমে গ্রামবাসির মাথায় হাত! দেখা যায়, মোট মাছের বিশ ভাগ মাছও নদীতে নাই। মোট মাছের আশি ভাগ-ই মেম্বর মনোনিত প্রহরিরা রাতের আধারে লোক চক্ষুর অন্তরালে চুরি করে মেরেছে। এই চুরিতে মেম্বর, চেয়ারম্যান এমনকি মৎস অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদেরও লাভ হয়েছে। মূলত এসব কর্তাব্যক্তিদের সাপোর্টে সীমিত অর্থের লালসায় প্রহরীরা এমন অন্যায় কাজ করে। আর উপযুক্ত প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হয় গ্রামের সাধারণ জনগণ।


-সোহাগ তানভীর সাকিব
অক্টোবর-২০১৭
তেজগাঁও, ঢাকা।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১০:৩৬

চাঁদগাজী বলেছেন:


আপনাদের এলাকায় ভালো মানুষ আছে?

০২ রা জানুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:০৭

সোহাগ তানভীর সাকিব বলেছেন: ভালো খারাপ নিয়েই আমার সমাজ। যদিও খারাপ মানুষের সংখ্যা দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে তারপরও ভালো মানুষ আছে।

মন্তব্য করার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।

২| ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:১৫

রাজীব নুর বলেছেন: আমার বাড়ি মুন্সিগঞ্জ।
বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীর নাম পদ্মা।

০২ রা জানুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:১০

সোহাগ তানভীর সাকিব বলেছেন: আমার বাড়ি পাবনা। বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীর নাম পদ্মা।

প্রিয় ব্লগার রাজীব নুর ভাইকে পাবনা ঘুরে যাওয়ার নিমন্ত্রণ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.