| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেশবাসীর মনমানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন। অনেকেরই ধারণা কিছু কিছু পণ্য সেটা কসমেটিক হোক বা ইলেকট্রনিক আইটেম হোক কিংবা অন্য যে কোনো যন্ত্রই হোক, তা বিদেশী হলে ভালো হয় বা বিদেশীটাই অধিকতর পছন্দনীয়। আমার যেটা মনে হয়, বাংলাদেশ যদি ওইসব পণ্য তৈরি না করে বা তৈরি করার দক্ষতা না থাকে, তাহলে সেগুলো আমদানি করতে পারে। আমরা যেসব পণ্য বিশাল পরিমাণ উত্পাদন করি বা আমাদের সর্বোচ্চ যোগ্যতা দিয়ে যেসব তৈরি করি, সেসব অবশ্যই রফতানি করা উচিত। বাংলাদেশ কে প্রযুক্তিগত শক্তি অর্জন করতে হলে বাংলাদেশী পণ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে হবে এবং সে রকম ধারণা মানুষের মধ্যে গড়ে তুলতে হবে। মনমানসিকতার এ ধরনের পরিবর্তন হবে অবশ্যই বৈপ্লবিক। সারা বিশ্বে নারীরা চমত্কার ও দক্ষ পরিবর্তনের মাধ্যম হিসেবে সুপরিচিত। আমি বিশেষভাবে নারী বিজ্ঞানীদের আহ্বান জানাব, আত্মনির্ভরতার বৈপ্লবিক চিন্তার কথা দেশে, ল্যাবরেটরিতে, শিল্প প্রতিষ্ঠানে বা তা সেখানে কাজ করুক, সেখানেই ঘটা করে প্রচার করতে। উন্নত ও আত্মনির্ভরশীল বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণের জন্য জ্ঞানবান সমাজ হলো মূল ভিত্তিগুলোর একটি। জ্ঞানের রয়েছে নানা দিক এবং এটি বিভিন্ন স্থানে পাওয়া যায়। সমৃদ্ধি ও ক্ষমতার চালিকাশক্তি হয়ে আসছে জ্ঞান। তাই জ্ঞান অর্জন সারা বিশ্বে সবচেয়ে শক্তিশালী ও মূল জিনিস এবং অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করা দেশের সংস্কৃতির জন্য চমত্কার একটা ব্যাপার। এগুলোর ব্যাপারে সচেতনতা অপর্যাপ্ত। গত শতাব্দীতে পৃথিবী কৃষিসমাজ হতে পরিবর্তিত হয়ে গেছে। তখন কায়িক শ্রম ছিল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যেখানে প্রযুক্তি, মূলধন ও শ্রমিক— এগুলোই ছিল প্রতিযোগিতামূলক সুযোগ- এর পর এল তথ্যের যুগ। পরস্পর সংযোগ স্থাপনের যুগ ও সফটওয়্যারের যুগ, যার মাধ্যমে মাত্র কিছু দেশের অর্থনীতি পরিচালিত হতো। একবিংশ শতাব্দীতে এসে একটা নতুন সমাজের আবির্ভাব ঘটছে, যেখানে মূলধন ও শ্রমের বদলে জ্ঞানই হলো প্রাথমিক উত্পাদন উত্স। এই জ্ঞানকে দক্ষতার সঙ্গে কাজে লাগাতে পারলে জাতির জন্য প্রচুর সম্পদ সৃষ্টি করা যাবে এবং জীবনের মানও উন্নত হবে। অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সমাজের সমৃদ্ধি নির্ধারণের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো হবে জ্ঞান অবকাঠামো সৃষ্টি ও তা বজায় রাখার দক্ষতার মাধ্যমে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মী উন্নয়ন ও তাদের উত্পাদনশীলতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এবং নতুন জ্ঞান ও জাতি কার্যকরভাবে জ্ঞান সৃষ্টি করতে পারে কিনা ! ১৯৬০ সালের দিকে কৃষি খাতে আংশিক বা পুরোপুরি ৭৪ শতাংশ লোক কর্মরত ছিল। এ সংখ্যা ১৯৯২তে ৬২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে এবং মনে করা হচ্ছে আরো ৫০ শতাংশ হ্রাস পেতে পারে। পক্ষান্তরে কৃষিপণ্যের চাহিদা বাড়তে পারে দ্বিগুণ। তাই প্রযুক্তিকে যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে উত্পাদনশীলতা বাড়াতে হবে ও কৃষিকাজে জনশক্তি কমে যাওয়াটা পুষিয়ে নিতে হবে। শিল্পের ক্ষেত্রে ১৯৬০ সালে মাত্র ১১ শতাংশ জনশক্তি ছোট ও বড় আকারের শিল্প-কারখানায় নিয়োজিত ছিল। এ ধারা ১৯৯২ সাল পর্যন্ত ছিল। সেবার হার অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ, আর্থিক খাত, আইটি খাতে ও বিনোদন শিল্পের চাহিদার বিবেচনায় ৫০ শতাংশে বাড়ে। এ বিশাল পরিবর্তনের ফলে আরো প্রশিক্ষিত, দক্ষ মানবসম্পদ এবং প্রযুক্তি ব্যক্তিদের প্রয়োজন দেখা দেবে। তাই আমাদের শিল্পপতিদের, বাণিজ্যিক নেতাদের ও প্রযুক্তিবিদদের কৃষিক্ষেত্রে, শিল্পে ও সেবা খাতে বিদ্যমান চাহিদা মেটানোর জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। অর্থাত্ মহত্ উদ্দেশ্য নিয়ে অভিজ্ঞতা একটা দেশের জনগণের চিন্তাধারা ও কর্মকাণ্ডের মাধ্যমেই সে জাতি মহত্ হতে পারে। স্বাধীনতা অর্জনই ছিল জাতির প্রথম স্বপ্ন। এ স্বপ্ন বাস্তবায়ন হতে ৯০ বছর। সে স্বপ্ন সুচিন্তায় রূপ নিয়েছিল, যা বৈপ্লবিক কাজে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছিল এবং অবশেষে স্বাধীনতা অর্জন হয়। তাই দেখা যায় বর্তমানে দেশের জন্য ও দেশের মানুষের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন জ্ঞানবান সমাজ ও তাদের মধ্যে যেটি বেশি প্রয়োজন, তা হলো ‘আত্মনির্ভরতা’। ‘উন্নত বাংলাদেশ’ যে জাতি চিন্তাচেতনায় মহান ও কর্মোদ্যোগী, সে জাতি তত মহান ও উন্নত। ওই দেশের জনগণ গুরুত্বপূর্ণ নাগরিকে পরিণত হয়। আমি মনে করি, ২০২০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ হবে প্রযুক্তি রূপান্তরের একটা সময়। নতুন বাংলাদেশ এ পরিণত হতে পারে জ্ঞানবান সম্পদে, যেখানে তথ্যপ্রযুক্তিকে মূল বিষয় ধরে নিয়ে উদ্যমী মনোভাব গড়ে উঠবে। এসব পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে আমাদের সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যবাহী ধারাকে মনে প্রোথিত করা হবে একটা বড় চ্যালেঞ্জ। সমৃদ্ধি ও শক্তির মূল চালিকাশক্তি হলো সাহস॥ জ্ঞানভিত্তিক অবকাঠামো দক্ষতা সৃষ্টি ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য জ্ঞানবান কর্মী তৈরি করুন। এসব মানবসম্পদের মধ্যেই আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য প্রোথিত হোক। (চলবে)
©somewhere in net ltd.