নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবন একটা অদৃশ্য শিরোনাম । যার বিস্তারিতই দেখে শুধু মানুষ, মূল শিরোনাম দেখেনা কেউ । কেউ কেউ আবার বিস্তারিত সংবাদের মাঝেই হার মেনে যায়...

নির্বাক কাকতাড়ুয়া

নদীতে ভেসে চলা ভাসমান কচুরিপানাগুলোর মতই আমার জীবন...

নির্বাক কাকতাড়ুয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

কালো মেয়েটার জীবনজুড়ে ...

২২ শে নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০৫

#ছোটগল্প
→লিখা :- সাব্বির আহমেদ(নির্বাক কাকতাড়ুয়া)
অন্য সব মেয়ে শিশুর মতই মেয়েটার জন্ম হলো। সেই একইভাবে একই শরীর,হৃদপিন্ড,হাত-পা সবকিছুই অন্য সবার মত । আকাশে বাতাসে যেন রটিয়ে গেলো মেয়েটার জন্ম হওয়ার কথা । যদিও মেয়ে সন্তানের প্রতি কিছু মানুষের আলাদা ধরনের মনোভাব আছে,দুঃখের বিষয় মেয়েটা জীবন সেই কিছু মানুষের জীবনেই এসেছে । যেন একটা কালো ঝড়ো হাওয়া । তার চেয়েও বড় কথা মেয়েটা অন্যরকম একটা 'ট্যাগ' নিয়ে পৃথিবীতে এসেছে আর সেটা হলো ত্বকের বর্ণ অন্য সবার চেয়ে আলাদা মানে মেয়েটা কালো । কালো জিনিসগুলোকে মানুষ এমনিতেই অপছন্দ করে যেমন নিকষ কালো অন্ধকার,কালো আকাশ।
অন্য সবার মত মেয়েটার বেড়ে ওঠা আর স্বাভাবিক হয়ে উঠলোনা । মেয়েটার কথা কেউ বলুকনা কেনো "কেমন হয়েছে মেয়েটা?" "এইতো ভালোই কিন্তু মেয়ের রংটা কালো" । মেয়েটার মুখেও মায়াবি হাসি,দীঘল কালো চুল,পরিপাটি দাঁত,বড় চোঁখ,উচুঁ নাক কিন্তু মেয়েটার এত কিছু থাকা সত্ত্বেও কাউকে ভোলাতে পারলোনা । মেয়েটার জন্য সবারই একটা মনোভাব পোষন করত "ইশ!" মেয়েটার গায়ের রংটা যদি ফর্সা হতো । মেয়েটা সবার জন্য একটা আনন্দের বার্তা নিয়ে এলো অথচ পৃথিবীর সবকিছুই তার বিপরীতে । প্রচন্ড একটা আর্তনাদ,হাহাকার,অপূর্নতা,অস্বস্তি মেয়েটাকে গ্রাস করে ফেলেছে । কখন জানি মুখ থুবড়ে পড়ে যায় পিচ ঢালা রাস্তায় যেন মুখের আকারটা কেউ চিনতে না পারে লাল বর্ণে রঙিন ।
মেয়েটা এখন শিশু সেও বোঝে আদর,স্নেহ,ভালবাসা কি জিনিসটা কি? সুন্দর জিনিস কি?
ঈদ বা কোনো অনুস্ঠানে গেলে কেউ গালটা টেনে দিয়ে বলেনা "আহ্ কি সুন্দর মেয়েটা! একদম পরীর মত লাগছে"!!
অন্য সব পাঁচটা মেয়ের মত কোলে নিয়ে আদর দেয়না কেউ । অন্য সবার মত সেই মেয়েটা কখনো তাদের মত আদর পায়না ।
মেয়েটা ক্রমে ক্রমে বুঝতে শিখে যায় সে সাধারন,অতি সাধারন ।
মেয়েটা যখন শিশু থেকে কিশোরী হতে লাগলো চোখে হাজারো স্বপ্ন,নিজেকে নীল প্রজাপতি মনে হয় । উড়তে চায় এক গাছ হতে অন্য গাছে, নীল ডানার ঝাপটা দিয়ে চলতে চায় । অদ্ভুত সব ভালোলাগা,মুচকি হাসি আর অনেক অনেক চাওয়া ।
অন্য সব বান্ধবীদের মত কেউ একরাশ লাল টকটকে গোলাপ হাতে দিয়ে বলেনা "ভালবাসি তোমায়"।
কেউবা রাস্তা দিয়ে সাইকেল নিয়ে যাওয়ার সময় সামনে থেকে নীলের খামের চিঠি তার সামনে ফেলে রেখে যায়না । কেউ জানালায় উঁকি দিবে,আর কেউ বোকার মত চেয়ে চেয়ে শুধু দেখবে কোনদিন ভালবাসার কথাটা বলার মত সাহস পাবেনা ।। কেউ তার সাথে ঝুম বৃষ্টিতে ভিজবে... কোনো চাওয়াই যেন পূর্নতা পায়না । আক্ষেপের রাস্তাটায় যেন ঘোর অন্ধকার,পথ ভূলে যায়,ভূল পথে হেঁটে চলে।
মেয়েটার রঙীন স্বপ্নগুলো যেন কালো রঙে ঢেকে যায় ।সাদা-কালো একাকার হয়ে যায় সবকিছু ...
কেউ যেনন অদৃশ্য হাত দিয়ে নীল প্রজাপতি হওয়ার প্রজাপতির ডানাটা কেটে দেয়। ডানাহীন প্রানী যেমন উড়তে পারেনা তেমনি মেয়েটাও অন্য সবার মত করে চলতে পারেনা ।
এখন সে একজন তরুনী, জীবনের সাথে যুদ্ধ করে হাঁপিয়ে ওঠা এক তরুনী । যার চারিদিক শুধু অপূর্নতা আর বাজে সব মন্তব্যর শিকারিনী ।
যে নিজেকে নিজের কাছে আড়াল করে রাখছে প্রতিনিয়ত । বাসার রঙীন টিভিটা তার কাছে কেমন জানি অসহ্য,অস্বস্তিকর মনে হয় । কারনটা টিভি চ্যানেলগুলার রঙ ফর্সাকারি এ্যাড দেখবেনা বলে । কি অদ্ভুত জাতের মেয়েটা!!
মেয়েটা অন্য সবার মত বাসার বাহিরে বের হয়না বান্ধবীদের একশ'টা রঙ ফর্সাকারি রূপচর্চার কথা শুনাবে বলে । নিজেকে চার দেয়ালের কোনে যেন নিজের শরীরটার মত মনটাকেও আটকে রেখেছে মেয়েটা ।
শুধু রুমের জানালার কাছে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকে মেয়েটি, আকাশটা কালো হলে মেয়েটার খুব ভালো লাগে,রাত যত গভীর হতে থাকে মেয়েটার ভালোলাগাটা সমানুপাতিক হারে বেড়েই চলে ।দূর আকাশের চাঁদটাকে অসহ্য লাগে,চাঁদটাকে নিয়ে আদিখ্যেতাও অসহ্য লাগে খুব বেশি বড় বেশি ।চাঁদকে নিয়ে আদিখ্যেতা কিসের শুনি!!?
মেয়েটার নিজেকে নিয়ে নিজের সময়টা ভালোই কেটে যায় । মাঝে মাঝে জড় পদার্থের মত দাঁড়িয়ে থাকতে হয় মেয়েটার ।কিন্তু কিছুই হয়না! একজন যায় তো আরেকজন আসে ।
বাজারের অচল পন্যটার মত কেউ ঘরে নিয়ে যেতে চায়না । কেউ ভদ্রতা করে মুখ ফুটিয়ে কিছু বলেনা,অথচ মেয়েটার তো সবকিছুই জানা!।
আজকাল বড্ড হাসি পায় মেয়েটার কেনো জানেন?
যখন প্রতিবেশী কোনো ভাবী,চাচী,মামী একগুচ্ছ করে রঙ ফর্সাকারী ক্রিম অফার করে, সেগুলোকে ব্যবহার করতে বলে ।। সেগুলো দেখে মেয়েটা শুধু ছলছল নয়নে চেয়ে থাকে প্রসাধনীগুলোর দিকে,কারন সে তো জানে এগুলো নিছক কল্পনা মাএ যা বাস্তবে কখনো সম্ভব নয় । যখন চাচী,খালারা পাউডার মাখিয়ে ফর্সা হওয়ার ব্যর্থ চেস্টা করে তখন আরো বেশী জোরে হাসি পায় মেয়েটার । আগে বলত,না করত তবে তাতে কোনো লাভ হয়নি শুধু পাএপক্ষের দ্বিধাটা দেখে মেয়েটা ।
মেয়েটাতো এমন চায়নি কখনো?
কখনোকি চেয়েছিল তাকে কেউ অবজ্ঞা করুক?ভালোবাসাহীন হতে,কারো রাজকন্যা হতে???
নাহ্ মেয়েটা মেনে নিয়েছে হয়তোবা কারো রাজকন্যা হতে পারেনি তবে হয়ে একটা সুকন্যা, যার ভিতরে আছে জমে থাকা ভালবাসার বিশাল পাহাড়,আছে কারো আদর,স্নেহ পাবার অপরিমেয় বাসনা ।
মাঝে মাঝে উপর ওয়ালাকে দোষারোপ করত,সে কেনো এরকম?তার কি কোনো কিছুই পাওয়ার অধিকার নেই,সব থেকেও কেন নেই?
মেয়েটা শুধু ভাবে তাকেও হয়তোবা কোনো একদিন কেউনা কেউ ভালবাসবে তার রঙের উর্ধ্বে গিয়ে । আপন করে কাছে টেনে নিবে ।।
মেয়েটার আবার রঙীন প্রজাপতি হবে,চাঁদটাকে ভালো লাগা শুরু করবে,চার দেয়াল ছেড়ে খোলা প্রান্তরে হেসে খেলে বেড়াবে,অন্য সবার মত অট্টহাসি দিবে ।
অসীমের হাত ধরে স্বপ্নলোকে ভিড়ে হারিয়ে যাবে দেশ হতে দেশ দেশান্তরে ।।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ৩:৫০

মিঃ আতিক বলেছেন: এই তো জীবন।

২| ১০ ই অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৪:১১

নির্বাক কাকতাড়ুয়া বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.