নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার ব্লগে ঘুরতে আসায় আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি । আশা করছি আমার লেখালেখি, ফটোগ্রাফি আপনার ভালো লাগবে । ফেসবুকে আমার সাথে যুক্ত হতে পারেন— https://www.facebook.com/SA.Sabbir666

সাব্বির আহমেদ সাকিল

আমাকে যাচাই করার পূর্বে নিজেকে যাচাই করুন ।

সাব্বির আহমেদ সাকিল › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাথরুম/টয়লেট/শৌচাগার/প্রক্ষালন কক্ষ সমাচার*

২৩ শে আগস্ট, ২০২১ বিকাল ৫:০৬

আমার শিক্ষাজীবনের একটা বিশাল খারাপ অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করি...

‘টয়লেট’ অধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিয়ে আমার বরাবরই অসন্তোষ‚ ক্ষোভ‚ অভিযোগ কিংবা অনুযোগ সব-ই ছিলো । সেটা স্কুল পর্যায় থেকে হাইস্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়; প্রত্যেকটা জায়গাতেই একই অবস্থা ।

স্কুলের কথা যদি ধরি‚ তখন স্কুলে পানির সমস্যা ছিলো প্রচুর । একটামাত্র টিউবওয়েল‚ ঠিকমতো পানি থাকতোনা । বেশিরভাগ সময় দেখা যেত টয়লেট মল দিয়ে ভর্তি । যেই প্যান বসানো সেটাতে আবর্জনা । যেই ট্যাঙ্কিতে মল যেত সেটাও ছিলো ভাঙ্গা । দূর্গন্ধে টেকা যেতোনা । কখনও কখনও টিনের ঘরে ফাঁকা দিয়ে এসে বাহিরের লোকজন টয়লেট করে যেত ক্লাসরুমেই । কি এক বিশ্রী অবস্থা ।

স্কুলজীবনে বেশিরভাগ টয়লেট করেছি পাশের বাড়িতে । যদিও সেই বাসাতে কুটনী বুড়ি ছিলো‚ তাঁর চোখ ফাঁকি দিয়েই টয়লেট করতে হতো । স্কুল কতৃপক্ষ কখনও টয়লেটের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে আমলেই নেননি । কারণ মাসশেষে মিটিং‚ ভাগবাটোয়ারা আর তাঁদের জন্য ফলমূল‚ বিস্কিট-চানাচুরের সমাহার । আর পানির জন্য ইনটেক ডিস্টিল ওয়াটারের বোতল!

হাইস্কুলেও একই সমস্যা । টয়লেট আছে কিন্তু টিউবওয়েল নেই‚ টিউবওয়েল আছে কিন্তু পানি ওঠেনা । পুকুর থেকে পানি তুলে সেই পানি দিয়ে কাজ সারতে হতো । আবার পুকুরের পানিতে ছিলো নানারকম ময়লা-আবর্জনা এবং গাছের পাতা । তবুও সেসব সরিয়ে ইমার্জেন্সি কাজ সারতে হতো । আর প্রস্রাবখানার কথা কি বলবো । তিনটা সেপারেশন তাঁর উপর কোনো ছাউনি নেই সেকারণ পাতা দিয়ে ভর্তি হয়ে থাকতো প্রস্রাবখানা । পানির তো কোনো ব্যবস্থা-ই ছিলোনা । আমাদের জন্য ছিলো শ্যাওলা ধরা দেয়াল‚ যেটাতে পুরুষাঙ্গের মাথা ঠেকিয়ে বাকি ইউরিনগুলো বের করে মুছতে হতো ।

যদিও ক্লাস এইটে মরহুমা আঞ্জুমান আরা ম্যাডাম আমাদের জন্য কিছু উদ্যোগ নিলেন । আল্লাহ্ তাকে জান্নাত নসীব করুন । তিনি সবার কাছে থেকো চাঁদা তুলে বালতি‚ মগ কেনার ব্যবস্থা করে দিলেন । কিন্তু এই ভালো উদ্যোগ বেশিদিন টিকলোনা‚ কিছু বেজন্মারা বালতি‚ মগের ভিতরে প্রস্রাব করে রাখতো । সেগুলো ভেঙে ফেলতো । আমরা দুই কিবা তিনবার কিনেছিলাম বরাবরই এই সমস্যা ফেস করতে হয়েছিলো । পরে এসএসসি পাশ করে তো বেরিয়েই গেলাম ।

কলেজের কথা । কলেজেও একই অবস্থা । ট্যাপ ভাঙ্গা । পানি থাকতোনা । বাথরুম অপরিষ্কার থাকতো বেশিরভাগ সময়ই । কলেজের অফিস সহকারী সাজু ভাইকে বলেকয়ে অনেকসময় পানির ব্যবস্থা করতে হতো । কলেজ জীবনও দেয়ালের সাথে পুরুষাঙ্গ ঠেকিয়ে কাটিয়ে দিতে হলো ।

এবার আসলো বিশ্ববিদ্যালয় জীবন । যদিও আমাদের ডিপার্টমেন্টর বাথরুম অন্য ডিপার্টমেন্টের থেকে ভালো এটি আমি নির্দ্বিধায় বলতে পারি । টাইলস করা টয়লেট । কিন্তু বিপত্তি সৃষ্টি হলো অন্য জায়গায়‚ সেটা শুধু মেয়েদের জন্য । আমাদের যেতে হতো পাশের মনোবিজ্ঞান ডিপার্টমেন্টে কিংবা বোটানি ডিপার্টমেন্টের টয়লেটে । মনোবিজ্ঞানের টয়লেটের ছিটকানি ঠিক নাই । ভিতর থেকে একহাত দিয়ে দরজা ধরে থাকতে হতো । কিংবা অনেকসময় বাহিরে ছিটকানির সাথে লিফলেট জুড়ে দিতে হতো পরবর্তী হাগুওয়ালার প্রতি ।

যদিও অনেকসময় সহপাঠীকে দাঁড় করিয়ে ডিপার্টমেন্টের টয়লেটে গেছি যেন হুট করে কেউ ঢুকে না পড়ে । কারণ অন্যকোনো ওয়ে নাইতো‚ মনোবিজ্ঞানের টয়লেট বেশিরভাগ সময় বন্ধ দেখা যেত । আবার যখন দেখতাম কোনো উপায় ই নেই তখন সোজা পথ ধরে জহুরুলনগর মেসে । যদিও ডিপার্টমেন্টের অবকাঠামো সেভাবেই তৈরি‚ সেখানে আমার ডিপার্টমেন্ট বিকল্প চিন্তা করতে পারেনি । আর সেটা সম্ভবও না ।

কথা প্রসঙ্গে আরেকটি কথা মনে পড়লো আমার ডিপার্টমেন্টের সাবেক হেড মরহুমা আশরাফুন্নেছা ম্যাম । প্রতিদিন ক্লাস শুরুর আগে এসে আমাদের সাথে কথা বলতেন । খোশগল্প‚ খবরাখবর নিতেন‚ নিজের জীবনের নানা কথা বলতেন‚ আমাদেে সুবিধা-অসুবিধা(বিশেষত যাঁরা অসচ্ছলতা পরিবারের তাঁদের জন্য ম্যাম ছিলেন উদারতায় ভরা)। ছাত্রবান্ধব‚ নিরহংকার একজন মানুষ ছিলেন । আল্লাহ তাকেও জান্নাতবাসী করুন ।

...টয়লেট নিয়ে কেন লিখলাম বা লিখতে হলো‚ অবশ্যই এটার পিছনে বড় কারণ আছে । পরিচ্ছন্ন টয়লেটের সাথে আমাদের মন-মানসিকতা পরিবর্তনের ব্যাপার জড়িত আছে-থাকে । অপরিষ্কার একটি টয়লেট থেকে বের হওয়ার পর কারোর মানসিকতাই ঠিক থাকার কথা নয় । সেটা শিক্ষকের হোক কিংবা শিক্ষার্থীর । আমি বরাবরই দেখেছি শিক্ষকরুমে কোনোকিছুর ঘাটতি সেটা ফ্যান বা লাইটের হোক‚ এসির হোক সবসময়ই আগ্রহভরে দেখা হতো-হয় । সেটার সার্ভিসিং এর জন্য তড়িঘড়ি করা হয় । কিন্তু শ্রেণীকক্ষে গাদাগাদি করে এতজন ক্লাস করতাম ফ্যান একবার নষ্ট হলে আমাদের কাম সাড়া । কোন জন্মে যে ঠিক হবে তাঁর কোনোই ঠিকঠিকানা নেই । এসব বিষয়ে বলতে গেলেই আবার কমিটি/প্রধান শিক্ষকের কাছে চক্ষুশূল । কারণ টাকাপয়সার ব্যাপার । কিন্তু মাসে মাসে যে মোটা অঙ্কের টাকা নিচ্ছে‚ ব্যাংকের একাউন্টে ডিপোজিট করছে সেটাতে কোনোই সমস্যা নেই । কে খারাপ? ছাত্ররা! কে খারাপ? ছাত্ররা! দোষ কার? ছাত্রদের? দোষ কার? ছাত্রদের!

যদিও আমার জীবনে খুব কম সংখ্যই শিক্ষক ছিলেন-আছেন যাঁরা হেল্পফুল । তাঁরা ভালো গাইডলাইন দিতে জানতেন-পারতেন-পারেন । ফ্রাংকলি কথা বলতেন । আমি সে-সকল শিক্ষকদের দেখেই ভাবি প্রকৃত শিক্ষক আসলে কোন অর্থে ব্যবহার করতে হয় ।

যাইহোক‚ টয়লেট বৃত্তান্ত নিয়ে ভোগা শুধুমাত্র যে আমি একাই এমনটি বোধহয় নয়—হতেও পারেনা । কারণ এদেশের বেশিরভাগ স্কুল-কলেজ-ভার্সিটিতে বাথরুম সমস্যা একটি বড় সমস্যা । বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানেই কমিটির নামে থাকে টাকাখোর‚ দুর্নীতিবাজ‚ রাজনৈতিক সুবিধাবাদীরা যাঁদের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো টাকা হাতিয়ে নেয়া । শিক্ষার পরিবেশ চুলোয় যাক । তাতে কিছু যায় আসেনা । ছেলে-মেয়েরা পানি‚ টয়লেট সমস্যা ফেস করুক‚ অপরিষ্কার ঈটস ডাজেন্ট ম্যাটার ।

ফেসবুকের সুবাদে অনেক প্রাক্তন‚ বর্তমান শিক্ষক আছেন; অনেক সিনিয়র ভাই-বোনেরা আছেন যাঁরা শিক্ষকতা পেশার সাথে ইনভলভ আছেন তাঁদের প্রতি আমার একান্ত অনুরোধ প্লিজ ক্লাসরুমের পাশাপাশি বাথরুমকে গুরুত্বের সাথে দেখবেন । আপনাদের জন্য যদিও ভালো‚ মানসম্পন্ন বাথরুমের ব্যবস্থা থাকে কিন্তু ভেবে দেখুন শত-শত শিক্ষার্থীদের জন্য কয়টা বাথরুম এবং যে কয়টা থাকে সেসবের কি বেহাল দশা । বাথরুমের ট্যাপ‚ পাইপ কিংবা টিউবওয়েল কেউ যদি নষ্ট করে তাঁদের শাস্তির ব্যবস্থা করুন‚ ক্লাসে স্পাই(মেন্টর) গঠন করুন যেন তাঁরা আপনাকে অথেনটিক ইনফরমেশন কালেক্ট করে দেয় । মাসিক শিক্ষক মিটিং‚ কমিটি মিটিং কিংবা শিক্ষক সমাবেশে এসকল বিষয় নিয়ে আলোকপাত করুন । কমিটিকে শক্তপোক্তভাবে ধরুন । কারণ যাঁরা স্কুলে পড়ে তাঁরা কতটাইবা এইসব জ্ঞান রাখে!

আমার মনের একটা বড় চাপাকষ্ট থেকে লেখাগুলো লিখেছি । যা আমাকে এখনও পীড়া দেয়‚ ভাবায় যে বাথরুমগুলো এখনও সেই আগের অবস্থাতেই আছে; কোনো পরিবর্তন হয়নি ।

সাব্বির আহমেদ সাকিল
০৮ ভাদ্র ১৪২৮ বঙ্গাব্দ‚ শরতকাল | সোমবার | ২৩ আগস্ট ২০২১ ইং | ধানমণ্ডি এলাকা‚ ঢাকা

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে আগস্ট, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:০৪

ফুয়াদের বাপ বলেছেন: যথার্থ আর্জি প্রাঞ্জল উপাস্থপনায় লিখেছেন যা পাঠে যন্ত্রনাস্মৃতিতে মুগ্ধ হয়েছি। টয়লেট সমস্যা প্রায় সব পাবলিক প্রতিষ্ঠানের প্রানবিন্দুতে সবসময়। চাপায় কথার খানদানী ভাব থাকলেও কেন জানি পাবলিক টয়লেটের ব্যাপারে উদাসীন যথাযথ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সহ পাবলিক প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষরা।

২| ২৪ শে আগস্ট, ২০২১ ভোর ৪:৫১

মেরুভাল্লুক বলেছেন: একটা জাতি কত উন্নত তা আসলে বোঝা যায় তাদের টয়লেট দেখে। যে জাতি ঠিক মত হাগামুতা করাই শিখলোনা তাদের থেকে আর কি আশা করা যাবে। আপনার ব্লগ পড়ে নিজের স্কুল জীবনের কথা মনে পড়ে গেল। স্কুল জীবন থেকে এখন পর্যন্ত দেশে নিজের বাসা ছাড়া কোন প্রতিষ্ঠানে পরিচ্ছন্ন পরিকল্পিত কোন টয়লেট পাইনি ।
প্লাস মাথা পিছু টয়লেটের একটা হিসেব থাকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, দেশের কোথাও সেটা মানা হয় বলে মনে হয় না।
অথচ পার্সোনাল হাইজিনের প্রধান দুটি জায়গা হচ্ছে টয়লেট এবং রান্নাঘর। আমাদের দেশে কেউ তা জানে বলে মনে হয় না। অথচ আমরা বদনা নিয়ে খুউব গর্ব বোধ করি ।

৩| ২৬ শে আগস্ট, ২০২১ রাত ১:৩০

সাব্বির আহমেদ সাকিল বলেছেন: @ফুয়াদের বাপ, ধন্যবাদ ভাই । এটার প্রতি সুদৃষ্টি দিতে হবে ।

৪| ২৬ শে আগস্ট, ২০২১ রাত ১:৩২

সাব্বির আহমেদ সাকিল বলেছেন: @মেরুভাল্লুক,এটা বড়ই দুঃখ ও ব্যর্থতার বিষয় আমাদের । সত্যিই খুব খারাপ লাগে এসব ভাবতে যে কেমন করে, কেমন পরিবেশে আমরা বেড়ে উঠেছি...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.