![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমাকে যাচাই করার পূর্বে নিজেকে যাচাই করুন ।
গতবছর আজকের এই দিনে আমার সাথে ঘটে যাওয়া একটা ঘটনা সবার সাথে শেয়ার করছি । (রিলেটেড সব ঘটনাগুলো কয়েকটি পর্বে লিখবো—এটি প্রথম পর্ব)
২২ আগস্ট ২০২৪, দিনটা ছিল বৃহস্পতিবার । সেদিন ছিল ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালের এনিমেল হেলথ এন্ড ভ্যাক্সিন ডিভিশনের মান্থলি কনফারেন্স । সেকারণে আগের দিন-ই এলার্ম সেট করে রেখেছিলাম সকাল সাড়ে ৬টায় । যেন সকাল ৮টা থেকে শুরু হওয়া কনফারেন্সে অ্যাটেন্ড করতে পারি ।
১৮/১৯ আগস্ট থেকে ভারীবর্ষণ এবং ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে ইতিহাসে ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়তে শুরু করেছে । ফুলগাজী, পরশুরাম, ছাগলনাইয়ার অধিকাংশ বাড়ি-ঘর তলিয়ে গেছে । মানুষ জীবন বাঁচাতে জিনিসপত্র, পশুপাখিদের নিয়ে শহরের দিকে আসতেছে ।
২২ আগস্টে আমি সকাল ৬টা ১৮ মিনিটে ঘুম থেকে উঠি । উঠে রুমের দরজা খুলে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছি । বাহিরে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে । বাহিরের উঠোন ডুবে গেছে । তিন তলা বাসার আমি থাকতাম নিচতলায় । মোটামুটি মিনিট চারেকের মধ্যে আমার রুমের মধ্যে হুহু করে পানি ঢুকতে শুরু করে ।
তখন দেখি পাশের রুমে থাকা ছোটভাই Md. Nahid Hossain ও ঘুম থেকে উঠে গেছে । আমি কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে পড়ি । রুমে থাকা একটা বেলচা দিয়ে পানি সেচতে শুরু করি । কিন্তু কিছুতেই পানি আটকানো যাচ্ছিলোনা । উপায়ান্তর না পেয়ে আমি আমার তোষক, চালের বস্তা, আলুর বস্তা তড়িঘড়ি করে রুমের ভেতর থাকা আমার বাইকের ওপর রাখি ।
যখন বুঝতে পারলাম এ পানি আরও উঁচুতে উঠবে তখন তিন তলায় বাসার মালিককে ডেকে বলি নিচে সব ডুবে গেছে । তখন তিনি পরামর্শ দেন জিনিসপত্রগুলো তাঁদের ওখানে রাখতে । চটজলদি করে জিনিসপত্রগুলো বাসাওয়ালার ফ্ল্যাটে রেখে আসতে আসতেই রুমের মধ্যে এক হাঁটু পানি জড়ো হয়ে গেলো ।
নাহিদকে বললাম আমার তো থাকার জায়গা নেই আমি চললাম । রুমে হোন্ডাটা যদিও ডুবে যাচ্ছিল কিন্তু নিয়ে যাওয়ার উপায় নেই । আগে জীবন বাঁচাতে হবে । পরনের কিছু জামাকাপড় নিয়ে রওনা দিই । বাসা থেকে বের হয়ে রাস্তায় দেখি বুক পরিমাণ পানি । কাপড়চোপড়গুলো মাথার ওপর নিয়ে বুক সমান পানির মধ্যে দিয়ে ফেনী গার্লস ক্যাডেট কলেজের রোড ধরে হেঁটে হেঁটে এগোতে থাকি । রাস্তায় শত শত মানুষ গাট্টি বোঁচকা মাথায় নিয়ে এগোচ্ছে ।
আমাকে যেতে হবে সিজলার রেষ্টুরেন্টে, যেখানে কনফারেন্স চলছে । প্রায় ৪ কিলোমিটার রাস্তা ওভাবেই হেঁটে হেঁটে গেলাম । গিয়ে দেখি কনফারেন্স শুরু হয়েছে । আমার এরিয়া ম্যানেজার আব্দুল জলিল খানকে বললাম আমার রুম ডুবে গেছে । আমি এক বুক পানির ভেতর দিয়ে এখানে আসলাম । তিনি আমাকে বললেন কনফারেন্সে অ্যাটেন্ড করতে ।
আমি ভেজা শরীরটা গামছা দিয়ে মুছে কনফারেন্স রুমে প্রবেশ করলাম । বাহিরে যখন মানুষ জীবন বাঁচাতে ছোটাছুটি করছিল তখন আমাদের কনফারেন্স চলছিল । এরপর দুপুরের লাঞ্চ পর্ব, লাঞ্চের পেমেন্ট আনার জন্য এরিয়া ম্যানেজার আমাকে বললেন ডিপোতে গিয়ে টাকা আনতে । আমি কিছু না বলে শহীদুল্লাহ কায়সার রোডে আবারও এক বুক পানির মধ্যে নেমে গেলাম । প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে ডিপোতে হেঁটে গেলাম । টাকা এনে ম্যানেজারের হাতে দিলাম ।
তারপর একা একা নিজের লাঞ্চ সারলাম । দুপুর আড়াইটার দিকে ঢাকা থেকে সেখানে অবস্থানরত কোম্পানির বড় অফিসারদের বলা হলো কনফারেন্স দ্রুত শেষ করে যেন ঢাকায় ব্যাক করে । কারণ ফেনীর অবস্থা খারাপ । তার আধা ঘণ্টার মধ্যে কনফারেন্স শেষ করা হলো ।
কনফারেন্স শেষে আমাকে বলা হলো এক অফিসারের কাপড়চোপড় অন্য এক হোটেলে আছে সেটা যেন আমি নিয়ে এসে দিই । আমি আবারও এক বুক পানি ঠেলে সেই হোটেলে গিয়ে তাঁকে কাপড়চোপড় এনে দিই । সব কাজ শেষ হওয়ার পর হোটেলের নিচে এসে আমার ম্যানেজারকে বলি, ‘আমার রুম পানিতে ডুবে গেছে । থাকার জায়গাও নেই । আমি বাড়ি যেতে চাই ।’
এ কথা বলার পর তিনি আমাকে ছুটি দিতে অস্বীকৃতি জানান । বলেন আমি যেন তাঁর বাসায় গিয়ে থাকি । কিন্তু হাস্যকর ঘটনা হলো তাঁর নিজের বাসা ডুবে যাওয়ায় তিনি নিজেই রিজিওনাল ম্যানেজারের বাসায় গিয়ে উঠেছিলেন । উপায়ান্তর না দেখে আমি সরাসরি রিজিওনাল ম্যানেজারকে বাড়ি আসার সম্মতি চাই । তিনি দুই দিন ছুটির শর্তে আমাকে বাড়ি যাওয়ার সুযোগ করে দেন ।
বলে রাখি— তখন আমার অনাগত সন্তান তাঁর মায়ের গর্ভে । দু মাস পরেই ডেলিভারি । সুতরাং চাকরির চাইতে আমার জীবন বাঁচানো এবং আমার সন্তানের চাঁদমুখ দেখাটা আমার কাছে অত্যাবশকীয় হয়ে ওঠে । সম্ভবত পৃথিবীর সকল পিতার ক্ষেত্রেই তাঁর সন্তানের কাছে ফেরা অধিক গুরুত্বপূর্ণ ।
সিজলার রেষ্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে আবার ডিপোতে আসি । কিছু অবশিষ্ট খাবার আমাদের অন্য সহকর্মীদের দিতে । তাঁদের খাবার দিয়ে মহিপালের উদ্দেশ্যে রওনা দিই । মহিপালে সহস্র মানুষ দাঁড়িয়ে আছে । আমার চিন্তা যেকোনোভাবে যতদুর যাওয়া যাবে সেই গাড়িতেই উঠে পড়বো ।
একটা লোকাল বাসে ঠেলাঠেলি করে উঠে পড়ি । সেই বাস কুমিল্লা পর্যন্ত যাচ্ছিল । কুমিল্লা পড়ন্ত দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই আসি । এসে যাত্রাবাড়ির বাসে উঠি । তারপর সেখান থেকে গাবতলীতে এসে বগুড়ার দিকে রওনা দিই । এই পুরোটা সময় আমার গা ভেজাই ছিলো ।
ফেনীর ইতিহাসে ভয়াবহ এই বন্যার মধ্যে আমার সাথে ম্যানেজারের ঘটা সেই নির্দয় ও অমানবিক ঘটনাটি আমার খুব মনে পড়ে । সম্ভবত সারা জীবনেও এই ঘটনাগুলো আমি ভুলতে পারবোনা । ফার্মাসিউটিক্যালসে উচ্চ বেতন হওয়া সত্ত্বেও দিন দিন ম্যানেজারের নির্দয়তা যেভাবে বাড়তেছিল তাতে বাধ্য হয়ে চাকরিটা আমাকে ছেড়ে আসতে হয় । নয়তো লাশ হয়ে আমাকে হয়তো বগুড়ায় ফিরতে হতো!
সাব্বির আহমেদ সাকিল
০৭ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, শরৎকাল | শুক্রবার | ২২ আগস্ট ২০২৫ ইং | বগুড়া
২| ২৩ শে আগস্ট, ২০২৫ রাত ৯:২৬
বিজন রয় বলেছেন: বন্যা মানে করুণ অবস্থা।
©somewhere in net ltd.
১|
২৩ শে আগস্ট, ২০২৫ সকাল ৯:২৬
রাজীব নুর বলেছেন: বন্যা নিয়ে আমাদের দেশে ব্যবসা হয়।
বাঁধ ভাঙ্গা বন্ধ করা কঠিন কিছু না। কিন্তু এই ইচ্ছা টুকুই কারো নেই।