নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার যত কথা

আমি যে আমার মতো থাকতে পারি না ।

সাবিউল হক

আমি আমার কথাগুলো মনের মাধুরী মিশিয়ে বলতে ঢাই ।

সাবিউল হক › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি ছোট গল্প - প্রত্যার্বতন / সাবিউল হক

১৬ ই নভেম্বর, ২০১৩ ভোর ৬:৩৯

( একটি বাস্তব ঘটনার ছায়া অবলম্বনে । জীবন গল্পের চেয়ে বেশি নিষ্ঠুর ।)

শুভ্র যাচ্ছে নীলাদের বাসায়। আজ ওর সঙ্গে একটা ফাইনাল কথাবার্তা হবে। ওরা দু’জন মিলে সামনের পরিকল্পনা করবে। বিয়ে। সংসার। সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর দু’জনেই নিজ নিজ বাসায় জানাবে।

অনেক সময় পার হয়ে গেছে। নীলা এখন শেষবর্ষ মাষ্টার্সের ছাত্রী। ওর বিষয় কেমিস্ট্রি। শুভ্রর ফিজিক্স এ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স। সে অনার্স , মাষ্টার্স দু’টোতেই ফার্ষ্ট ক্লাস ফার্ষ্ট হওয়ার পর ইউনিভার্সিটিতেই জয়েন করেছে। সামনে বছর ইউএসএ যাচ্ছে ডক্টরেট পড়ার জন্যে। অনলাইনে যোগাযোগ চলছে। সে একটা স্কলারশীপের জন্য দরখাস্ত করেছে। সে আশা করছে এটা গ্র্যান্ট হবে। তাহলে নীলাকে সাথে নিয়েই সে পড়তে যাবে ইউএসএ। নীলারও পরীক্ষার ডেট পড়ে গেছে। আর মাত্র একমাস পর পরীক্ষা। ওর মতো নীলারও রেজাল্ট ব্রাইট। কোনো জায়গায় দ্বিতীয় বিভাগ নেই। একেবারে ক্লাস ফাইভের স্কলারশীপ থেকে অনার্স পর্যন্ত।

সময়টা দুপুরের শেষভাগ। এখনও বিকেল হয় নি। বিকেল বিকেল ভাবটা অবশ্য আকাশে ছড়াতে আরম্ভ করেছে।

এসময় কী করছে নীলা ? নিশ্চয়ই বিশ্রাম করছে। ও বলেছে , আজ বাসায় কেউ থাকবে না। বাবা-মা গেছে গ্রামের বাড়ি। বেড়াতে। বাসায় রঙের কাজ চলছে। গেট খোলা থাকবে। দু’জন মিলে নিরিবিলিতে বসে ভবিষ্যতের প্ল্যান বানাবে।

নীলার সঙ্গে পরিচয়ের প্রথম দিনটির কথা ওর মনে পড়ে। বেশিদিনের কথা নয়। অনার্স শেষের পর মাষ্টার্সে ভর্তি হয়েছে। নীলাদের ব্যাচের রেজাল্ট হয়েছে সেদিন। একটা হেভী সুন্দরী মেয়ে খুব উৎফুল্ল।

শুভ্র ওর বন্ধু নাইমকে জিজ্ঞেস করে , নাইম মেয়েটা ওরকম করছে কেন ? কে ও ?

চিনিস না দোস্ত ? ওর নাম নীলা। ওইতো ফার্ষ্ট ক্লাস ফার্ষ্ট হয়েছে ওদের ব্যাচে।

তা বেশ। সুন্দরীরা সাধারণত মেধাবী হয় না। এ দেখি ব্যতিক্রম। অপরুপা সুন্দরী। আবার এত ব্রিলিয়ান্ট রেজাল্ট ! মেয়েটার সঙ্গে পরিচয় করে আসি।

প্রথম দেখাতেই প্রেমে পড়ে গেলি নাকি দোস্ত ?

পড়লে অসুবিধা কি ? ও জায়গাটা খালিই পড়ে আছে।

সত্যিই সেদিন নিজেই আগবাড়িয়ে নীলার সঙ্গে পরিচিত হয় শুভ্র।

সোজা এগিয়ে গিয়ে বলে , আপনি নীলা ? ফার্ষ্ট ক্লাস ফার্ষ্ট হলেন ? আপনাকে অভিনন্দন।

আপনি ?

আমাকে চিনবেন না। আমি মাষ্টার্সের ছাত্র। সামনে পরীক্ষা। ফিজিক্স এ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ডিপার্টমেন্টে।

কী নাম ?

শুভ্র।

তার মানে নিয়াজ মোরশেদ ? আপনি তো আমার চেয়েও ভালো ষ্টুডেন্ট। মাষ্টার্স শেষ হলে এখানেই টিচার হওয়ার ইচ্ছে আছে। তারপর বাইরে ডক্টরেট করতে যাবেন ?

হ্যাঁ। আপনি জানলেন কীভাবে ? চেনেন নাকি ?

চেহারায় চিনি না। তবে ভালো রেজাল্টের কারণে আমি কেন আমাদের ব্যাচের , এমনকি আমাদের ডিপার্টমেন্টেরও সবাই আপনাকে নামে চেনে। আমি ভাবতাম , আপনি খুব অহংকারী। তা তো দেখছি ‘না’। রা দেখা হলে কথা বলবেন ? রাস্তায় দেখা হলে কথা বলবেন ?

আপনার কী মনে হয় ?

মনে হয় বলবেন। আপনাকে খুব মার্জিত আর ভদ্র মনে হচ্ছে। আপনি যথেষ্ট আত্ববিশ্বাসীও। নিজে থেকেই পরিচিত হতে এসেছেন। আমি খুব খুশি হয়েছি।

সেই থেকে আলাপ। তারপর আস্তে আস্তে অন্তরঙ্গতা।

আজ দু’জনে সিদ্ধান্ত নেবে কিভাবে কী করা যায় । ইউনিভার্সিটিতে জয়েন করার পর থেকে তার বিয়ের জন্য সবাই উঠে পড়ে লেগেছে। সে কাউকে কিছু বলে নি।

সাতদিন আগে ছোট বোন একগাদা ছবি নিয়ে হাজির।

বলে , ভাইয়া , এখানে ডাক্তার , ইঞ্জিনিয়ার থেকে অনার্স , মাষ্টার্স এমনকি কলেজ ছাত্রীরও ছবি আছে। পরিচয় পরে। আগে একজনকে পছন্দ কর।

শুভ্র বলেছে , বারে আগে পাত্রের মতামত নিতে হবে না ? তার যদি কেউ পছন্দের থাকে ?

তাই নাকি ভাইয়া ? কোনোদিন শুনি নি যে। ঠিক আছে , ছবি দেখার দরকার নেই। আব্বু অবশ্য প্রথমে এটাই জিজ্ঞেস করতে বলছিল। মা বলেছে , নেই। তাই ছবি নিয়ে এসেছি। আব্বু বলেছে , তোমার পছন্দই প্রথম। তাহলে বলো , আমরা ওখানেই বিয়ে লাগাবো। ইউএসএ যাবার আগে ভাবী আমাদের পরিবেশে খানিকটা পরিচিত হোক।

সেই কথা নীলাকে জানিয়েছে শুভ্র। সেই জন্যে আজ ওদের বাড়িতে আসা।

ওদের পাঁচতলা বিল্ডিংটার কাছে রিক্সা চলে আসে।ও ভাড়া দিয়ে নেমে যায়।

বিল্ডিংটা ছিমছাম। নীলাদের। নিজস্ব। ওরা থাকে চারতলায়। বাবা ইঞ্জিনিয়ার।

কলাপসিবল গেট। চব্বিশ ঘন্টা তালা মারা থাকে। কলিং বেলে টিপ দিলে এসে তালা খোলে।

আজ ওর আসার কথা। সম্ভবত এজন্য গেটে তালা নেই। তাছাড়া মিস্ত্রি রঙের কাজ করছে। এটাও একটা কারণ হতে পারে। মিস্ত্রিদের বারবার বাইরে যাওয়া প্রয়োজন। তাই হয়তো খুলে নিয়েছে।

যাই হোক , শুভ্র উপরে উঠে যায়।

চারতলার ফ্লাটের সামনে থামে। তবে বেল টেপার প্রয়োজন হয় না। দরজা বন্ধ থাকলেও ভেড়ানো। খোলা। আস্তে করে ভেতরে ঢুকে যায়।

বাসায় কাউকে দেখতে পায় না ও। চাচা-চাচীতো গ্রামে গেছে। নীলা ? ওর ঘরের দরজাটা বন্ধ।

ড্রয়িং রুমে মিস্ত্রি সম্ভবত কাজ করছে। এখন নেই। অর্ধেকটা রঙ হয়েছে। মনে হয় এইমাত্র কোথাও গেছে। হতে পারে বাথরুমে বা বাইরে।

নীলার ঘরের দিকে এগিয়ে যায় ও।

ডাকতে যাবে। এই সময় থমকে দাঁড়ায়। বন্ধ ঘরের ভেতর থেকে শিৎকারেরর মতো ধ্বণি আসছে। নারী-পুরুষ উভয়ের।

শুভ্র থমকে যায়। কী ব্যাপার ? ও আর নীলার নাম ধরে ডাক দেয় না।

ঘরের দরজা লাগানো। এদিক ওদিক তাকাতে দরজায় একটা ছোট্ট ফুটোর সন্ধান পায় শুভ্র।

ওটা দিয়ে ভেতরে তাকায়। প্রথমে কিছুই দেখতে পায় না। তারপর চোখে অন্ধকার সয়ে এলে দেখে , বিকেলের ম্লান আলোতে দু’টো উদোম শরীর। মিথুনরত। নারী আর পুরুষ। ওদের উন্মাতাল শিৎকারেরর ধ্বণি। মনে হয় শেষ মুহূর্ত।

ওরা কে ? নীলার ঘরে ?

ভালোভাবে তাকিয়ে দ্যাখে নিচের শরীরটা নীলার। উপরেরটা ? কুসকুসে কালো একটা পুরুষের। ছিঃ !

রাগে উন্মত্ত হয়ে ওঠে শুভ্র। এই তাহলে নীলা ?

সে এখন কী করবে ?

এরকম অবস্থায় কী করা যায় ?

দু’টো শব্দ সামনে আসে। খুন। আতœহত্যা।

সে কোনোটায় করতে পারবে না।

অস্থিরভাবে বারান্দায় হাঁটাচলা করে শুভ্র। দরজায় ধাক্কা দেওয়ার শক্তিও তার নিঃশেষ। কত আশা আর কল্পনার ভেতরে ছিল শুভ্র। সব শেষ।

কয়েক মিনিট পর দরজা খুলে যায়। বেরিয়ে আসে পুরুষটা। এতো রঙ মিস্ত্রি ! মিস্ত্রি ওকে দেখে একটা আর্তচিৎকার দিয়ে পাশ কাটিয়ে নিচে দৌড় দেয়।

তারপরই বেরিয়ে আসে নীলা। পোষাক-আশাক অবিন্যস্ত। চোখে মুখে অজ¯্র পাপের চিহ্ন।

শুভ্রকে দেখে ও বাঘ দেখার মতো চমকে ওঠে।

বলে , হয়েছে কি নিয়াজ ......

ওকে থামিয়ে দেয় শুভ্র।

বলে , আমি অনধিকার চর্চা হলেও ফুটো দিয়ে সব দেখে ফেলেছি। এই তাহলে তুমি ? ছিঃ!

নিয়াজ , প্লিজ, একটা এ্যাকসিডেন্ট হয়ে গেছে।

কী ?

দুপুরে খাবার পর ইন্টারনেটে বসেছিলাম। পেপার পড়ার জন্য bangla paper লিখতে গিয়ে b অক্ষরে চাপ দিতেই কম্পিউটারে কয়েকটা নাম দেখাল। তার ভেতরে একটা ছিল bangla choti. . ক্লিক করলাম। চটির ভুবনে ঢুকে গেলাম । এর আগে জীবনে ঢুকি নি। একটা বাজে গল্প পড়ছিলাম। একটা ছেলে বর্ণনা করেছে তার মায়ের সব সামাজিক বন্ধন উপেক্ষা করে একটা রঙ মিস্ত্রীর সঙ্গে অনাকাঙ্খিতভাবে মেলামেশার রগরগে কাহিনী। পড়তে পড়তে কেমন যেন হয়ে গেলাম। কাহিনী শেষ হলে একটা ভিডিও ক্লিপ এল। অন করলাম। দেখছিলাম। একেবারে শেষের পথে ছবি। । এমন সময় কাঁধে কার গরম নিঃশ্বাস । তাকাতেই দেখি , আমাদের বাসার রঙ মিস্ত্রি। কখন এসে ঢুকেছে বুঝতেই পারি নি। আমি হতবিহ্বল হয়ে উঠে দাঁড়ালাম। ও বলল , আফা , রঙের কইটা খুইজ্যা পাইতাছি না।

দেখলাম , উত্তেজনায় ওর নাক কাঁপছে। সেও পুরো ব্লু দেখেছে। আমিও কেমন যেন হয়ে গেলাম। শরীরের চাহিদা ছাড়া আর সবকিছু যেন হাওয়া। মান , সম্মান , শিক্ষা , মর্যাদা। আমার পতন হল। বললাম , দরজা লাগা। ও তাই করল। তারপর তো তুমি দেখেইছো। এটাই প্রথম। এবারের মতো আমাকে মাফ কর প্লিজ। আর কখনো এসব করব না।

অসম্ভব। আমি আর তোমার সাথে নেই নীলা। আমি মাফ করে দিলেও আমার অবচেতন মন এটা কোনোদিন ভুলতে পারবে না।

প্লিজ নিয়াজ। আমি অনুতপ্ত। আমি বিরাট ভুল করেছি। এটা ¯্রফে একটা শারীরিক আবেগ। এর সঙ্গে মনের কোনো সম্পর্ক নেই। প্রথম আর শেষবারের মতো আমাকে মাফ কর নিয়াজ। দয়া কর।

কোনো লাভ নেই নীলা। এই কাজ করার আগে তোমাকে হাজারবার ভাবা উচিত ছিল। তাছাড়া ধরো , তুমি রাগের বশে একটা মানুষকে আঘাত করে মেরে ফেললে। তারপর তুমি লাশটাকে যদি বল , আমি ভুল করেছি। তোমাকে মারতে চাই নি। আচমকা আঘাতে তুমি মারা গেছ। দয়া করে জেগে উঠো। লাশটা কি জীবিত হতে পারবে ?

না।

তুমি আমার প্রেমকে হত্যা করেছ নীলা। সে মারা গেছে। আর জাগবে না। তোমাকে আমি জীবনে ভুলতে পারব না। তবে ক্ষমাও করতে পারব না। ঘর-সংসার করার তো প্রশ্নই ওঠে না। আমি চললাম।

প্লিজ , শোনো নিয়াজ। আমার শেষ একটা আর্তি শোনো।

শুভ্র আর দাঁড়ায় না। সে সিড়ি দিয়ে নিচে নেমে যায়।

নীলার দু’চোখ থেকে ঝরে পড়ে অনুতাপের অশ্রু। শুভ্ররও খুলে যায় কান্নার নদী। সিড়ির শেষধাপে গিয়ে সে থমকে দাঁড়ায়। কান্নায় তার বুকের জামা ততক্ষণে সম্পূর্ণ ভিজে গেছে। অভিমান আর কষ্টের অশ্রু।

শুভ্র ভাবতে থাকে , কোথায় লুকিয়ে থাকে এত জল ?

















মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.