নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চেতনায় মুক্তিযোদ্ধা

সায়েমুজজ্জামান

কাজী সায়েমুজ্জামান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। জন্ম ১৯৮১ সালে চট্টগ্রাম শহরের দামপাড়ায়। তার পূর্বপুরুষ ছিলেন দক্ষিণাঞ্চলের বাউফলের ঐতিহ্যবাহী জমিদার কাজী পরিবার। ছাত্রজীবন থেকেই লেখালেখিতে হাতে খড়ি। তবে ১৯৯৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে তিনি সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত হন। তিনি যুগান্তর স্বজন সমাবেশের প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম আহবায়ক। ২০০৪ সালে তিনি দৈনিক মানবজমিন পত্রিকায় স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে যোগ দেন। পরে ইংরেজী দৈনিক নিউ এজ এ সিনিয়র প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করেন। পরবর্তীতে ২৮ তম বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের একজন সদস্য হিসেবে সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, সহকারী কমিশনার (ভূমি), সিনিয়র সহকারী কমিশনার, সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে রেক্টরের একান্ত সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনডিপিতে লিয়েনে চাকরি করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রোগ্রামে ন্যাশনাল কনসালটেন্ট হিসেবে কাজ করেছেন। সর্বশেষ শিল্প সচিবের একান্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন৷ বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের স্কলারশিপ নিয়ে কিউং হি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড ট্রেড পলিসি বিষয়ে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত। তিনি বাংলা ছাড়াও ইংরেজী, আরবী, উর্দ্দু ও হিন্দী ভাষা জানেন। ছোটবেলা থেকেই কমার্শিয়াল আর্টিস্ট হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

সায়েমুজজ্জামান › বিস্তারিত পোস্টঃ

দু’গজ জমি

০৯ ই আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ১২:৫৯

দু’গজ জমি
আজ দুপুরে গিয়েছিলাম হযরত গরীবুল্লাহ শাহ রা. এর মাজারে৷ যেয়ারতের উদ্দেশ্যে৷ মাজারটি দামপাড়ায়৷ ছোট একটি পাহাড়ের উপরে৷ চট্টগ্রাম আসলে আমাকে এই মাজারে যেতে হয়৷ কারণ এখানেই আমার দাদি কাজী জীবন্নেছা জামান এর কবর৷ আমার বয়স যখন আড়াই বছর তখন তার মৃত্যু হয়৷ আমার ঝাপসা কিছু ঘটনা মনে পড়ে৷ মৃত্যুর পূর্বমুহূর্তে তিনি আমার ছোট পায়ে সরিষার তেল মাখিয়ে দিয়েছিলেন৷ দেশের প্রাচীন মাজারগুলো লক্ষ্য করলে দেখা যাবে আল্লাহর ওলীর মাজারকে কেন্দ্র করে কবরস্থান গড়ে উঠেছে৷ সাথে মসজিদও থাকে৷ এখানেও তাই৷ গরীবুল্লাহ শাহ রা. মাজারের ভেতরে একটা পুকুর ৷ পুকুরের দক্ষিণ পাশেই আমার দাদির কবর৷ এখন নিশ্চিহ্ন৷ সেখানে আরো কত যে কবর হয়েছে তার কোন হিসেব নেই৷ বিখ্যাত না হলে নাতিরা তার দাদার কবর কোথায় বলতে পারে৷ দাদার বাবার কবরের খবর কেউ রাখেনা৷ ওলী বা বিখ্যাতদের ক্ষেত্রে হিসেব ভিন্ন৷ যুগ যুগান্তর ধরে মানুষ তাদের মাজার যেয়ারত করে চলে৷ আর সেই পূণ্যের অংশীদার হতে মানুষ তাদের পাশেই নিজের শেষ শয্যাকে বেছে নেয়৷ এই গরীবুল্লাহ শাহ রা. এর মাজারেও প্রতিদিন কত মানুষ আসেন৷ তারা কবরস্থানে শায়িতদের কবরে ঈছালে সওয়াব রেছানী করে যাচ্ছেন৷ এদিক থেকে আমার দাদির অনেক ভাগ্য৷ এখানে দুগজ পেয়েছিলন তিনি।

২.০
শেখ সাদী একজনকে টাকা ধার দিয়েছিলেন৷ কিন্তু লোকটা টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়৷ আর এদিকে ওই ব্যক্তিকে না পেয়ে শেখ সাদী প্রতিদিন কবরস্থানে গিয়ে বসে থাকেন৷ একজন তার প্রতিদিন কবরস্থানে যাওয়ার কারণ জানতে চান৷ শেখ সাদী তাকে বলেন, অমুককে টাকা ধার দিয়েছিলাম। সে টাকা নিয়ে পালিয়েছে। কবরস্থানে তার অপেক্ষায় আছি৷ যেখানেই পালিয়ে যাক৷ তাকে কবরস্থানে ফিরতেই হবে৷ এটাই যে তার আসল ঠিকানা৷ সেখান থেকে বের হবার কোন উপায় নেই। আরেকটা গল্প মনে পড়ছে। গল্পটা মার্ক টোয়েনকে ঘিরে। কবরস্থানের চারদিকে দেয়াল নির্মাণ করা হবে। একজন মার্ক টোয়েনের কাছে চাঁদা চাইতে গেলেন। মার্ক টোয়েন বললেন, কবরস্থানের চারদিকে দেয়াল নির্মাণের কোন কারণ নেই। কবরের বাসিন্দাদের বাইরে আসার ক্ষমতা নেই। আর বাইরে যারা আছেন তারা জীবন থাকতে সেখানে যেতে চাইবেন না। তবে বাংলাদেশ ভ্রমণে আসলে মার্ক টোয়েনের ধারণা পরিবর্তিত হতো নিশ্চয়। গোরস্থানে সাবধান’ গল্পে লালমোহন বাবু গোরস্থানে এসে গোরস্থান লাগোয়া কিছু ফ্ল্যাট বাড়ি দেখিয়ে ফেলুদাকে বলেছিলেন আমাকে লাখ টাকা দিলেও এখানে থাকব না। থাকব না। গরীবুল্লাহ শাহ রা. এর মাজারের পশ্চিম পাশে অস্থায়ী ঘরগুলো দেখে মার্ক টোয়েন আর ফেলুদাকে মনে পড়লো।
সুরা তাকাসুরে কবরের কথা বলা আছে৷ কুরআনে কবরস্থানের আরবী লেখা হয়েছে মাকাবির৷ কবরের বহুবচন৷ আল্লাহ যেটা বলেছেন, মানুষ গর্ব করতে করতে শেষ পর্যন্ত কবরস্থান পর্যন্ত যায়৷ অনেক অর্থ আছে এর৷ দাদা বিরাট কেউ ছিলেন৷ এটা দেখাতে মানুষ কবর নিয়ে আসে৷ কবর এর রাজনীতিকরণ সারা বিশ্বে৷ অনেক সময় জীবিত নেতার চেয়ে মৃত নেতার কবর অনেক বেশি শক্তিশালী। এ কারণে আমেরিকানরা বিন লাদেনকে মাটিতে কবর দেয়ার ঝুঁকি নিতে চায়নি৷ ইসলামের প্রথম যুগে এসব কারণে আমাদের নবী দ. কবর যেয়ারত নিষেধ করে দিয়েছিলেন৷ পরে অবশ্য মানুষের দুনিয়ামুখী কার্যক্রমকে লাগাম টানার উদ্দেশ্যে পুনরায় কবর জেয়ারতের অনুমতি দিয়েছেন৷ সুনানে ইবনে মাজা শরীফে ইবনে মাসউদের সনদে এ হাদিসটি বর্ণনা করা হয়েছে৷ তবে যে কারণে মাজার বা কবর যেয়ারত নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, অনেক মানুষ এখন তা ই করে যাচ্ছে৷ আল্লাহ বলেছেন, কুল্লু নাফসিন জায়িকাতুল মাউত৷ প্রত্যেক জীবনকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে৷ তাই আপাত দৃষ্টিতে মৃত্যুই মানুষের শেষ পরিণতি৷ আর কবর শেষ ঠিকানা৷ যদিও আজ গরীবুল্লাহ শাহ রা. এর মাজারে ঢুকতে হাতের বাম দিকে অবস্থিত কবরগুলো চোখে পড়েছিল৷ অনেকগুলো কবর অস্থায়ী বাশেঁর বেড়ায় ঘেড়া৷ কিছু ছোট সাইনবোর্ডও রয়েছে৷ তাতে মৃত ব্যক্তির নাম ধাম৷ স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে তাদের জীবিতকালীন ঠিকানাই ব্যবহার করা হয়েছে৷ মানুষকে বুঝা বড় দায়৷

৩.০
গরীবুল্লাহ শাহ রা. মাজার পুনঃনির্মাণ চলছে৷ গেট পেরুলেই আগে পুরাতন সিড়ি ব্যবহার করতে হতো৷ তারপর বেয়ে বেয়ে পাহাড়ের উপরে মাজার৷ এখনো নির্মাণ কাজ চলছে৷ আগে মাজারে ঢুকতেই প্রাচীন স্থাপত্যের একটা গাম্ভীর্য অনুভবে আসতো৷ এখন আর সেটা নেই৷ নতুন সিড়ি করা হয়েছে। সিড়ি বেয়েই মাজারে পৌঁছে গেলাম৷ দেখলাম কয়েকজন বসে আছেন৷ কেউ কুরআন শরীফ পড়ছেন৷ কেউ দুরুদ শরীফ৷ কেউ মুনাজাতে জারেজার হয়ে কাঁদছেন৷ আল্লাহর ওলীর এ এক কারামত৷ তার সান্নিধ্য মানুষের চোখে জল এনে দেয়৷
আমি আগে একটা ভ্রান্তিতে ছিলাম৷ মনে হতো বাংলা সাহিত্যের পুঁথি রচয়িতা শাহ গরীবুল্লাহ, যিনি জঙ্গনামা কিম্বা আমীর হামজা লিখেছেন; যিনি ইসলামের সাধকও ছিলেন, তিনিই বুঝি চট্টগ্রামের এখানে শুয়ে আছেন৷ পরে জানতে পারি তার মাজার পশ্চিমবঙ্গের হাওড়ায়৷ তাহলে চট্টগ্রামের এই শাহ গরীবুল্লাহ রা. কে? মাজারের লোকজন যতটা টাকা পয়সার হিসেব নিকেষে আগ্রহী এই ওলীর জীবনী জানানোর বিন্দু পরিমাণ আগ্রহ থাকলে তার সম্পর্কে কিছু লেখা গবেষণা বা বই চোখে পড়তো৷ পরে নিজে খোঁজ খবর নিলাম৷ কে এই পাহাড়ের পাদদেশে শেষ বিশ্রামে আছেন৷ জানা গেল, তার প্রকৃত নাম রূহুল্লাহ। তিনি সম্রাট শাহজাহানের পুত্র দারাশিকোহর ভৃত্য ছিলেন। ভাতৃ সংঘাতে দারা পরাজিত ও বন্দী হন৷ দারাশিকোর করুণ দুর্দশা দেখে তার মন বিগলিত হয়৷ তিনি সরকারি চাকরি ছেড়ে দিয়ে চট্টগ্রাম চলে আসেন। নাসিরাবাদে খানকাহ স্থাপন করেন। পরে তিনি সুফিবাদে কামালিয়ত্ব অর্জন করেন৷ তার ইন্তেকালের পর পাহাড়ের তার খানকাতেই দাফন করা হয়৷ যা আজকের হযরত গরীবুল্লাহ শাহ রা. এর মাজার নামে পরিচিত৷

৪.০
সুফিদের সাথে আমার সম্পর্ক আত্মিক। সুরা ফাতেহায় প্রতিদিনই পড়ে থাকি। হে দয়াময়, আমাদের তুমি তোমার নেয়ামতপ্রাপ্তদের পথে পরিচালিত করো। আল্লাহর ওলীরা নেয়ামতপ্রাপ্ত। স্রষ্টার সাথে প্রেমের সম্পর্ক তাদের। এ সম্পর্কে তারা সফল হয়েছেন। আমি এমনই এক ওলীর সামনে বসে আছি। হৃদয়ের টান অনুভব করছি। এটা পুরোপুরি আধ্যাত্মিক। কোন যুক্তি দিয়ে প্রকাশ করা যাবেনা। মানুষের জীবনে সবারই একটা জায়গা থাকে। যেখানে নিজেকে শূন্য করে দিতে ইচ্ছা হয়। যত পুরাতন হয় ভালোবাসা তত বাড়ে। আমারও এ ভালোবাসা বহু দিনের। ছোটবেলা থেকে। এটা আমার সংস্কৃতি। মাওলানা রুমিকে মনে পড়ছে। ‘ ইসকে কাহার আসত ওয়া মন মাকহুরে ইশক/ চুনে সুকুর শিরিণ সাদাম আজ নুরে এশক/বারগ কাহেম পেশ তু আয় তুনাদ বাদ/ মন চেহ দানেম কেহ কুজা খাওয়াহেম কুনাদ।’
বাংলায় এভাবে অনুবাদ করা যায়-
প্রেম এমন শক্তি যার কাছে আমি বিজিত
প্রেমের আলোকে সুমিষ্ট হয়েছি চিনির মতো,
আমি তোমার সামনে ঘাসপাতা কেবল হে ঘুর্ণিঝড়,
জানিনা কোথায় উড়িয়ে নিয়ে যাবে এই শুকনা খড়।
যেয়ারত করলাম। প্রিয় ওলীর মাজার। দাদীর কবরের কাছে আর যেতে পারিনি। মাজার নির্মাণের কারণে বাম দিকে কবরস্থানের দিকে যাবার জায়গা নেই। তাছাড়া কাঁদা মাটি। সিড়িতে দাড়িয়েই দাদীর কবর যেয়ারত করলাম। মোনাজাতে দাদীর আত্মার মাগফেরাতই উদ্দেশ্য। আমি নিজের জন্য কিছুই চাইতে পারিনা। কারণ দয়াময় সবই জানেন। কি দরকার আমার। তবে উসিলা আল্লাহর ওলী। নিজের জন্য কিছু না চাওয়ার সুবিধা আছে। আবারও রুমি।
শোকরে খোদা রো ক'ন দোয়া মারদুদ শোদ
মান যিঅ'ন পানদাশতাম অন সুদ শোদ
বাস দোয়াহা ক'ন যিঅ'ন আস্ত ও হালাক্ব
ওয কারাম মি নাশনাওয়াদ ইয়াজদ'ন প'ক।
অর্থাৎ,
‘যে দোয়া কবুল হয় নি সে জন্য আল্লাহর শোকর
যা ভেবেছিলাম আমি তা ছিল সবই ক্ষতিকর।
অকল্যাণ আর ধ্বংসই চাই আমরা বহু প্রার্থণায়
কিন্তু অপার করুণায় সেসবে কান দেন না দয়াময়।’
ফেরার সময় হলো। মাজার থেকে বেড়িয়ে এলাম। আমি অন্য এক মানুষ।

৫.০
আমার দাদীর জেনারেশন বেশিদিন বাঁচেননি। নিজেদের এগারো একরের জমিদার বাড়ি ছিল। একদিন চোখের সামনে নদীতে বিলীন হয়ে গিয়েছিল। গর্বের সুলতানি আমলের মসজিদ। বাড়ি ঘিড়ে পুরোনো দেয়াল। এসব নিয়ে শোক করতেন তারা। মরণের পর মানুষ নিজের মাটিতে সমাহিত হতে চান। পাখি আর মানুষের মাঝে এই এক পার্থক্য। পাখি মৃত্যুর সময় হলে বহুদূরে চলে যায়। আড়ালে আবডালে। প্রিয়জন ছেড়ে দূরে। আর মানুষ মৃত্যুর সময় হলেই স্বজনদের কাছে থাকতে চান। তারা চান স্বজনরা তাদের ঘিরে রাখুক। মরণের পরও চান স্বজনের পাশে সমাহিত হতে। কবি শামসুর রহমানের শেষ ইচ্ছা ছিল নিজের মায়ের কবরেই সমাহিত হতে। আমরা তাকে মায়ের কবরেই সমাহিত করে এসেছিলাম। নিজের দেশে নিজের ভূমিতে সমাহিত হবার ইচ্ছার কথা বলে দেশপ্রেমের ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন শেষ মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ। তাঁর একটা ছবি মন খারাপ করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। রেঙ্গুনে নির্বাসনের আগে মনভার করে বসে আছেন। ঘটনা আমরা সবাই জানি। ইতিহাস ঘুরে আসি।
১৮৫৭ সাল আমরা ভুলতে বসেছি। অথচ আমাদের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ ছিল সেটি। কিন্তু সেই যুদ্ধে হেরে যায় হিন্দু মুসলমানের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা। ইংরেজ সেনাপতি হাডসন বাহাদুর শাহ জাফরকে অপমানিত করে গ্রেফতার ও বন্দী করলেন। সম্রাটের ২ পুত্র সহ পরিবারের মোট ২৯ জন শিশু বালক বালিকাকে দিল্লীর প্রকাশ্য রাজপথে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ২৯ বাচ্চার কাটা মাথা সম্রাটের নিকট পাঠানো হয়। আর বিদ্রোহ সংগঠনের দায়ে অপরাধী করে বিচার করা হয় সম্রাট বাহাদুরের। তবে বার্ধক্যের কথা বিবেচনা করে প্রাণদন্ডাদেশ না দিয়ে নির্বাসনে পাঠানোর নির্দেশ প্রদান করা হয়।
বিচারে রেঙ্গুনে আমৃত্যু নির্বাসনে পাঠানোর রায় হয়। সেখানে ক্যাপ্টেন নেলসন ডেভিসের বাস ভবনের ছোট গ্যারেজে সম্রাট ও তার পরিবারের বন্দী জীবন শুরু হয়। প্রিয় মাতৃভূমি থেকে বহুদূরে রেঙ্গুনের মাটিতে সম্রাটের বাকী দিনগুলো চরম দুঃখ ও অভাব অনটনের মধ্যে কেটেছিল। এমন বিড়ম্বনাপূর্ণ জীবনের অবসান হয় ১৮৬২ খ্রিষ্টাব্দের ৭ নভেম্বর শুক্রবার ভোর ৫ টায়। সম্রাটের ইচ্ছা ছিল স্বদেশের মাটিতে সমাহিত হওয়ার। জন্মভূমির প্রতি তার ছিল প্রচন্ড অনুরাগ। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন জীবনের শেষ সময় ঘনিয়ে আসছে। স্বদেশের মাটিতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ কিংবা সমাহিত হওয়ার সাধ কোনটাই পূরণ হবে না। নিদারুন দুঃখে তিনি লিখেছেন একের পর এক কালোত্তীর্ণ কবিতা। “মরনেকে বাদ ইশক মেরা বা আসর/ হুয়া উড়নে লাগি হ্যায় খাক/ মেরি ক্যোয়ি ইয়ার মে/ কিৎনা বদনসিব জাফর দাফনকে লিয়ে দোগজ/ জমিন ভি মিলানা চুকি ক্যোয়ি ইয়ার মে”
জাফর, তোমার কত মন্দ ভাগ্য; নিজের দেশে,
কবরের জন্য দু’গজ জমিও মিলেনি অবশেষে।
ভারতের মানুষ রেঙ্গুনে তাঁর কবরের সমাধি-লিপি দেখে কেঁদেছে বহুকাল। তবে ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী মায়ানমার সফরে গিয়ে তার কবিতার উত্তর দিয়ে এসেছেন। তিনি পরিদর্শন বইতে লিখেছেন, “দু গজ জমিন তো না মিলি হিন্দুস্তান মে/ পার তেরী কোরবানী সে উঠি আজাদী কি আওয়াজ/ বদনসীব তো নাহি জাফর/ জুড়া হ্যায় তেরা নাম ভারত শান আউর শওকত মে/ আজাদী কি পয়গাম সে।
অর্থাৎ- “হিন্দুস্তানে তুমি দুগজ মাটি পাওনি সত্য, তবে তোমার আত্মত্যাগ থেকেই আমাদের স্বাধীনতার আওয়াজ উঠেছিল। দুর্ভাগ্য তোমার নয় জাফর, স্বাধীনতার বার্তার মধ্য দিয়ে ভারবর্ষের সুনাম গৌরবের সঙ্গে তোমার নাম চিরস্মরণীয় হয়ে রয়েছে।
বলেছিলাম, মৃত্যুর পরও মানুষের চাওয়া থাকে। কাফন। সাথে দুগজ জমি। উর্দু ভাষার কবি ক্যায়ফি আজম বলেছিলেন –‘ইনসান কি খোয়াইব কি কোই ইন্তেহাঁ নেহি/ দো গজ জমিন চাহিয়ে, দো গজ কফন কে বাদ।’

কাজী সায়েমুজ্জামান
অ্যাডমিন রিসোর্ট, নাসিরাবাদ, চট্টগ্রাম
৮ আগস্ট ২০১৭, রাত ১২:০০ টা

মন্তব্য ১১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ২:২৫

অনন্য দায়িত্বশীল আমি বলেছেন: লেখা চালিয়ে যান। একদিন সাফল্য আসবেই। ধন্যবাদ।

১৫ ই আগস্ট, ২০১৭ সকাল ১১:০৩

সায়েমুজজ্জামান বলেছেন: ধন্যবাদ অাপনাকে৷

২| ০৯ ই আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৩:৪১

বজ্রকুমার বলেছেন: হুম্...দু'গজ জমি!!

১৫ ই আগস্ট, ২০১৭ সকাল ১১:০৪

সায়েমুজজ্জামান বলেছেন: হুম.. মুসলিম হলে দু গজ৷ হিন্দু হলে তাও জুটেনা৷

৩| ০৯ ই আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৩:৪৬

চিটাগং এক্সপ্রেস বলেছেন: আপনার তথ্যবহুল পোস্টটি ভাল লেগেছে ।
মাজারে যাওয়ার আগ্রহ না থাকায় এখানে কখনও যায় নি। অথচ ঐটার সামনে দিয়ে আসা যাওয়া হয়েছিল অনেক।

১৫ ই আগস্ট, ২০১৭ সকাল ১১:০৫

সায়েমুজজ্জামান বলেছেন: ধন্যবাদ..

৪| ০৯ ই আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৫:৪২

চিটাগং এক্সপ্রেস বলেছেন: আরেকটি কথা গরীবুল্লাহ শাহ মাজারে জিয়া হত্যা মামলার তথাকথিত আসামি প্রহসনের রায়ে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন জামিল হক ঐখানে শায়িত আছেন ।

১৫ ই আগস্ট, ২০১৭ সকাল ১১:০৭

সায়েমুজজ্জামান বলেছেন: ধন্যবাদ৷ অধুনা অালোচিত সালমান শাহ হত্যায় ভিডিও বার্তা প্রদানকারী রুবি ক্যাপ্টেন জামিলের স্ত্রী নাকি৷

৫| ১৫ ই আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ১২:৪৭

চিটাগং এক্সপ্রেস বলেছেন: রুবি তো সালমানের মামী শাশুড়ি ছিলেন, রুবির স্বামী চীনা নাগরিক। আপনি এই তথ্য কোথায় পেলেন?

৬| ১৮ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ১:১৯

সায়েমুজজ্জামান বলেছেন: ক্যাপ্টেন জামিলের প্রথম স্ত্রী ছিলেন রুবি৷ পরে চায়নিজকে বিয়ে করেছেন৷ রুবির সাক্ষাতকারে বলেছেন৷ গুগল করেন৷ তথ্য ঠিক অাছে৷

৭| ১৮ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ১:২১

সায়েমুজজ্জামান বলেছেন: Click This Link

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.