নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চেতনায় মুক্তিযোদ্ধা

সায়েমুজজ্জামান

কাজী সায়েমুজ্জামান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের স্কলারশিপ নিয়ে কিউং হি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড ট্রেড পলিসি বিষয়ে মাস্টার্স। জন্ম ১৯৮১ সালে চট্টগ্রাম শহরের দামপাড়ায়। তার পূর্বপুরুষ ছিলেন দক্ষিণাঞ্চলের বাউফলের ঐতিহ্যবাহী জমিদার কাজী পরিবার। ছাত্রজীবন থেকেই লেখালেখিতে হাতে খড়ি। তবে ১৯৯৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে তিনি সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত হন। তিনি যুগান্তর স্বজন সমাবেশের প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম আহবায়ক। ২০০৪ সালে তিনি দৈনিক মানবজমিন পত্রিকায় স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে যোগ দেন। পরে ইংরেজী দৈনিক নিউ এজ এ সিনিয়র প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করেন। পরবর্তীতে ২৮ তম বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের একজন সদস্য হিসেবে সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, সহকারী কমিশনার (ভূমি), সিনিয়র সহকারী কমিশনার, সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে রেক্টরের একান্ত সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনডিপিতে লিয়েনে চাকরি করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রোগ্রামে ন্যাশনাল কনসালটেন্ট হিসেবে কাজ করেছেন। শিল্প সচিবের একান্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন৷বর্তমানে সরকারের উপসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বাংলা ছাড়াও ইংরেজী, আরবী, উর্দ্দু ও হিন্দী ভাষা জানেন। ছোটবেলা থেকেই কমার্শিয়াল আর্টিস্ট হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

সায়েমুজজ্জামান › বিস্তারিত পোস্টঃ

তারে বলে দিও, সে যেন আসেনা..

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সকাল ৭:৫৫


আজ আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে বৃষ্টি এসেছিলো৷ সারাদিনে কোন ক্লাস ছিলনা৷ মেঘ মাথায় নিয়ে গেলাম স্টুডেন্ট ইউনিয়ন অফিসে৷ একটু কাজে৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয়পত্র করতে হবে৷ লাগবে স্টুডেন্ট সার্টিফিকেট৷ কোরিয়ার স্থায়ী কার্ড করতে হবে কাল৷ কেবল ঢু মেরেছি অফিসে৷ সাথে সাথেই বৃষ্টি এলো৷ এই অপরূপ ক্যাম্পাসে বৃষ্টি দেখার আলাদা আকর্ষণ আছে৷ আমার সাথে কয়েকজন সহপাঠি৷ একজনকে বললাম, আমার কাগজগুলো নিয়ে আসো৷ আমি গেলাম বৃষ্টি দেখতে৷ সোজা চলে এলাম নিচে৷ এখানকার ভবনগুলো শ্বেত পাথরের৷ দূরে গ্রীক ভাস্কর্য৷ সামনে চেরি গাছের সারি৷ সাকুরার সবুজ ছাউনি৷ এখানকার গাছগুলো কোনটা লাল৷ কোনটা সবুজ৷ কোনটা হলুদ৷ গোলাপি৷ কী নেই৷ একটা রংয়ের গাছের পর আরেক রংয়ের গাছ৷ দেখলে মনে হয় আঁকা ছবি৷ বৃষ্টি এখানেই এসেছে৷ আমার বৃষ্টি৷ ঘন্টাখানেক পর সহপাঠিনী এলো কাগজ হাতে৷ বললো, নো বডি হ্যাজ ব্রট আমব্রেলা৷ সো ইটস এ লেসন ফর আস৷ উই মাস্ট কিপ আমব্রেলা উইথ আস৷ তারা তো অবাক৷ বৃষ্টি দেখছে বসে বসে৷ বৃষ্টিও আবার দেখার জিনিস নাকি! আমি বললাম, বৃষ্টিই আমার প্রেমিকা৷ তবে প্রতিদিন প্রেমিকা আসলে আমার তো সব গোল্লায় যাবে৷ তার না আসলেই ভালো৷

কিউন হি বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সাথে চল্লিশ জন পড়ছে৷ চল্লিশটা দেশের৷ আমি একটা বিষয় ভেবে পাইনা; ইউরোপের ছেলে মেয়েরা কেন কোরিয়ায় আসবে৷ কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের সিস্টেম তাদেরকে নিয়ে এসেছে৷ চারটা সেমিস্টার থাকলে চারটা পৃথিবীর চার দেশে৷ কোরিয়ার শিক্ষার্থিরা যাচ্ছে ইউরোপ আমেরিকা৷ আর সেখানকার শিক্ষার্থীরা এখানে আসছে৷ আমাদের মতো এই দেশেরই শিক্ষক নয়৷ সারা পৃথিবী থেকে সেরা শিক্ষকদের ধরে এনেছে৷ সবই ভালো৷ সমস্যাটা হচ্ছে চাপ৷ পড়া লেখার চাপ৷ স্কলারশিপের যে কয়টা টাকা দেবে তা সুদে আসলে তুলে নেবে মনে হচ্ছে৷ হিসেব করে দেখেছি এই ফল সেমিস্টারে আমার ১৮ ক্রেডিট নিতে হবে৷ সবগুলো ইকোনমিক্স আর ম্যাথমেটিক্স সম্পর্কিত৷ আমি সমাজ বিজ্ঞানের একটা সাবজেক্টে পড়া মানুষ৷ এবার পড়তে এলাম আর্টস৷ এম এ৷ অথচ বসে বসে গণিত করতে হবে৷ এরা এমনই৷ এদেশের সবচেয়ে বড় শ্লোগান পাল্লি পাল্লি৷ মানে তারাতারি৷ কত দ্রুত নিঁখুত কাজ করে যায় এরা৷ বাস, ট্রেন থামে কয়েক সেকেন্ডের জন্য৷ এর মধ্যেই নারী পুরুষ নির্বিশেষে সবাই উঠে পড়ে৷ বাসে উঠতে দেরী হলে লোকজন রেখেই বাস ছেড়ে যায়৷ অবাক হয় যাই, দশ পনের সেকেন্ডের মধ্যেই বাস ভরে যায়৷ আর এ সময়ের মধ্যে আমাদের দেশের শাড়িপড়া একজন মহিলা উঠতে পারবেন কী না সন্দেহ৷ এতে নারীদের কোন দোষ দেখিনা৷ তাদেকে ছোটবেলা থেকেই মেয়ে আর দুর্বল হিসেবে বড় করা হয়৷ পৃথিবীতে নারীকে দমিয়ে রাখার জন্য অনেক পন্থা অবলম্বন করেছে বিভিন্ন জাতি৷ প্রাচীন চীনে পায়ে পড়ানো হতো লোহার জুতা৷ যাতে নারী দৌড়াতে না পারে৷ মিয়ানমারে এক উপজাতির মেয়েদের গলায় তামার তার পেচিয়ে গলা লম্বা করে দেয়া হয়৷ যাতে তারা বেশি কথা বলতে না পারে৷ সবচেয়ে বর্বর একটা কাজ হতো মধ্যপ্রাচ্যে৷ মেয়েদের ভগাঙ্গুর কেটে দেয়া হতো৷ এখনো কোন কোন দেশে এ প্রথা চলমান৷ উদ্দেশ্য একটাই৷ পুরুষের সাথে মিলনে যাতে আনন্দ লাভ না করতে পারে৷ তাদের ধারণা, এতে মহিলারা অন্য পুরুষের কাছে যাবেনা৷ আমার কেন যেন মনে হয়, শাড়িটাও এরকমের একটা পোষাক৷ দশ হাত লম্বা একচা কাপড় দিয়ে পেচিয়ে রাখার ব্যবস্থা৷ দৌড়ানোর কোন সুযোগ নেই৷ শাড়ি পড়ে সিড়ি দিয়ে উপরে ওঠা কঠিন৷ যাক, বিষয়টি বিতর্কিত হতে পারে বলে আর আলোচনায় গেলাম না৷ মাত্র দুই দশকে ম্যাজিক দেখিয়েছে কোরিয়ান জাতি৷ একসময় বাংলাদেশের কাছাকাছি অর্থনৈতিক অবস্থার একটি দেশ৷ হঠাৎ উন্নত বিশ্বের কাতারে৷ আমি কোরিয়া আসার আগে শিল্প সচিবের পিএস ছিলাম৷ কিছুদিন আগে অফিসে এলেন দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত৷ তিনি বলছিলেন, ছোটবেলায় আমাদের গ্রাম খুঁজেও একটি টেলিভিশন পাওয়া যেতোনা৷ একটা যুদ্ধ পীড়িত দেশ৷ খাদ্যের অভাব ছিল প্রচন্ড৷ পরিশ্রম করেই আমরা দেশকে উন্নত করেছি৷ আমাদের কোরিয়ান কালচার পড়িয়েছেন অধ্যাপক জিউন৷ তাকে একদিন জিজ্ঞাসা করলাম, সত্যি কি কোরিয়ার মানুষ অভাবের তাড়নায় কুকুর বিড়াল খেতো৷ সুন্দরি অবিবাহিত অধ্যাপিকা বলছিলেন, আমাকেও ছোট বেলায় কুকুরের মাংস খাওয়ানো হয়৷ কারণ আমি ছিলাম রোগাটে৷ পাতলা শরীর৷ বাবা মায়ের ধারণা ছিল, কুকুরের মাংসে শক্তি বেশি৷ আমাকে একা মাংস খেতে দিতেন৷ কেউ মাংস খেতে পারেনা৷ আমাকে খেতে দিচ্ছে লুকিয়ে৷ খুশী হতাম৷ পরে ছোট বোনকে আদর করে মাংস দেই৷ সে খেয়ে গিয়ে মাকে বলে দেয়৷ পরে মা মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়েন৷ বলেন, তাকে কেন ওই মাংস খাওয়ালে৷ পরে জানতে পারি, আমাকে যে মাংস খাওয়ানো হচ্ছিল তা ছিল কুকুরের৷ পরে মা বন্ধ করে দিয়েছিলেন৷ কোরিয়ার এই হলো কুকুরের মাংস খাওয়ার বিষয়৷আমাদের দেশের শিয়াল খাওয়ার মতো। এখনৈা গ্রামে গঞ্চে শিয়াল ধরা পড়লে মাংস ভাগাভাগি করে লোকজনকে নিয়ে যেতে দেখেছি। উদ্দেশ্য একটাই। শিয়ালের মাংসে নাকি বাত রোগ ভালো হয়।

যাই হোক, বিশ্বের অন্যতম ধনী রাষ্ট্র দক্ষিণ কোরিয়া৷ জাপানকে কিছু দিনের মধ্যে ফেলে দেবে৷ কীভাবে সম্ভব হলো এটা৷ জাপান একশ বছর আগেও ধনী রাষ্ট্র ছিল৷ এই কোরিয়া ছিল তাদের কলোনি৷ আমি কোরিয়ায় আসার পর কদিন কইকা'য় ছিলাম৷ সেখানে কোরিয়ার অর্থনীতি, রাজনীতি, সংস্কৃতি, ভাষা ও লোকজনের ব্যবহার সম্পর্কে ধারণা দেয়া হয়৷ কইকার সাবেক নির্বাহী যিনি কোরিয়ার রাষ্ট্রদূতও ছিলেন; বলছিলেন, কোরিয়া যাতে আরো গরীব থাকে সেজন্য জাপান অনেক কৌশল অবলম্বন করে৷ এরমধ্যে একটা হলো- তারা কোরিয়ার স্কুলগুলো বন্ধ করে দেয়৷ যাতে মানুষ অশিক্ষিত থাকে৷ মানুষ পরে প্রত্যন্ত পাহাড়ে বিভিন্ন প্যাগোডায় গিয়ে পড়তো৷ বাচ্চারা বড় হলে সেখানে পাঠানো হতো৷ শিক্ষিত লোকজন স্বেচ্ছায় তাদের পড়াতেন৷ কনফুসিয়াসের আদর্শ শেখানো হতো তাদের৷ নিজেও লেখা পড়ার জন্য কত কষ্ট করেছেন বলছিলেন তিনি৷ এরা লেখাপড়ার ব্যাপারে এমনই শক্ত৷ কোন ছাড় নেই৷ কষ্ট ছাড়া উপায় নেই৷ এদেশে কারো গায়ে চর্বি জমার কোন সুযোগ নেই৷ একটা বয়সে সবাইকে কঠোর সামরিক প্রশিক্ষণ নিতে হয়৷ সামরিক প্রশিক্ষণকে ফাঁকি দিয়ে বিদেশ যেতে পারবে ঠিকই৷ তবে সরকারি চাকরি আর মিলবেনা৷ কোরিয়া দেখে অতীত বুঝার কোন উপায় নেই৷ সিউলকে তারা বলে সউল৷ শান্তির শহর৷ বুঝার উপায় নেই শহরটা মাত্র কয়েক দশকের৷ খুব দ্রুত রেল যোগাযোগ কাঠামো তৈরি করা হয়েছে৷ পাতাল রেল বা সাবওয়ে, মেট্রো রেল, এক্সপ্রেস হাইওয়ে কী নেই৷ ভাবি আর অবাক হই৷ কোরিয়া আসার আগের যে বিস্ময় তা এখনো কাটেনি৷ একটা জাতির উন্নত সভ্যতা দেখছি প্রতিদিন৷ চোখে ধাঁ ধাঁ লেগে যায়৷

এখানে আসতে আমাকে চারটি ধাপ অতিক্রম করতে হয়েছে৷ শেষ ধাপে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক টেলিফোনে সরাসরি কথা বলেন৷ আমার সাথে কথা হয়েছিল চল্লিশ মিনিট৷ কথা হয় আমার রিসার্চ প্রপোজাল নিয়ে৷ এক পর্যায়ে আমি কেন ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড ট্রেড পলিসি পড়তে আসবো তা নিয়ে জানতে চান৷ আমি বললাম, কদিন আগেও তো কোরিয়ার মানুষ বিদেশে যেতেন৷ মধ্যপ্রাচ্যের সব রাস্তাগুলোর শ্রমিক ছিল এই কোরিয়ানরা৷ স্বাধীনতা পরবর্তী দুর্যোগ কাটিয়ে ওঠার পর বাংলাদেশের অর্থনীতির কাছাকাছি ছিল সাউথ কোরিয়া৷ অথচ দেশটি বিশ্বে এখন চার নম্বরের অর্থনীতির দেশ৷ আমরা সেই হিসেবে তলানিতে৷ কীভাবে সম্ভব হয়েছিল৷ ভেবে দেখেছি, উন্নত বিশ্ব যেমন পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো বা পূর্বের দেশ জাপান এরা বহু আগে থেকেই ধনী৷ তাদের কাছ থেকে আমরা কী শিখবো? তাদের জুতা আমাদের পায়ে লাগবে বলে মনে হয়না৷ তাদের নীতি উন্নত দেশের পটভূমিতে রচিত৷ শুধু দক্ষিণ কোরিয়াই একমাত্র দেশ যেটি বাংলাদেশের সমকক্ষ ছিল৷ বাংলাদেশকে তাদের কাছ থেকেই শেখা দরকার৷ তাছাড়া অ্যা কান্ট্রি ইজ ডেভেলপড হোয়েন ইট ইজ ইন্ডাস্ট্রিয়ালি ডেভেলপড৷ ইন দিস কনটেক্সট সাউথ কোরিয়া হ্যজ শৌন ম্যাজিক টু ডেভেলপ ইটস ইন্ডাস্ট্রি সেক্টর৷ ডিউ টু ইটস পলিসি, কোম্পানিজ লাইক স্যামসাং, হুন্দাই, দাইয়ু, এলজি কোম্পানিজ হ্যাভ বিন স্টাবলিশড৷ আই উড লাইক সি লার্ন দোস ম্যাজিক অ্যান্ড অ্যাপ্লাই ইন আওয়ার ইন্ডাস্ট্রি সেক্টর৷ অধ্যাপক তো খুশীতে আটখানা৷ আগেভাগেই বলে দিলেন, কোরিয়ার সবচেয়ে সুন্দর ক্যাম্পাসে দেখা হবে৷

বলছিলাম কেরিয়ার উন্নতির পেছনের কথা৷ কঠোর পরিশ্রম৷ আর দ্রুততা৷ হান নদীর উপরে ৩১ টা ব্রিজ তৈরি করা হয়েছে৷ এর মধ্যে চারটি রেল সেতু৷ চিন্তা করা যায়! যেখানে আমরা দশক ধরে একটা ব্রিজও বানাতে পারিনা৷ কথা বলা সহজ৷ বাস্তবায়ন অনেক কঠিন৷ কোরিয়া সেটা খুব সহজেই করে দেখায়৷ এখানকার জেনারেশন দেখলেই পার্থক্যটা ধরা পড়ে৷ আগের জেনারেশন খাটো৷ গায়ের রঙ পোড়া৷ তামাটে৷ আর এ জেনারেশনের কথা আর কী বলবো৷ ছেলেদের গড় উচ্চতা আমার চাইতে বেশি৷ মেয়েদের দেখলে চোখ ফেরানো যায়না৷ যেটা বলছিলাম, পূর্বের জেনারেশন বর্তমান জেনারেশনকে ছাড় দিচ্ছেনা৷ কষ্ট করতে হয়৷ সহজে পাস করার উপায় নেই৷ পড়তে হবে৷ জীবন বের হওয়ার উপক্রম হলে তবেই সার্টিফিকেট৷ এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাতারে৷ আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান সাতাশে৷ দেশের বর্তমান প্রেসিডেন্টও আমাদের অ্যালামনাই৷

আমি হাল ছেড়ে দেয়ার মানুষ না৷ কষ্ট করে বড় হয়েছি৷ আর পুড়তে পুড়তে খাটি হতেই তো এসেছি৷ হিসেব করে দেখেছি প্রতিটি কোর্সের জন্য প্রতিদিন ৪ ঘন্টা পড়া দরকার৷ ছয়টা কোর্সে দিন রাত পার৷ কখন ঘুমাবো৷ কখন রান্না করবো৷ মাথাটা কয়েকদিন ধরে আউলা৷ এর মধ্যেই এলো বৃষ্টি৷ পড়ালেখা বাদ৷ আগে বৃষ্টিটা দেখে নেই৷ হঠাৎ একটা গান মনে পড়লো৷ হেমন্ত কুমারের৷ 'তাকে বলে দিও৷ সে যেন আসেনা আমার দ্বারে৷ ওই সুরে মন হাসেনা৷' মনের মধ্যে কে যেন সুরটা বাজিয়ে দেয়৷ গা মা পা৷ মা গা রে৷ একটা মেয়ে এসে পেছন থেকে ধাক্কা৷ সায়েম, বসে আছো কেন? জিএসপি ভবনে যেতে হবে৷ বৃষ্টি কমেছে৷ মনের ভেতরে বাজছে- সা রে মা- গা রে গা- রে সা রে- সা নি ছা৷ বললাম, চলো, ভিজেই যাই৷ কাজগপত্র তার ব্যাগে দিলাম৷ একটু যেতেই মুসল ধরে বৃষ্টি৷ আমরা ভিজে একাকার৷ মনে মনে বলি, যেহেতু এসেই পড়েছো, সপে দিলাম নিজেকে৷ বহুদিন পরে বৃষ্টিতে ভিজছি৷ আমার মনে আছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু বৃষ্টিতে ভেজার জন্য একটা গ্রুপ বানিয়েছিলাম৷ চাঁদ দেখার জন্য একটা৷ জোৎস্নাও দেখতাম দল বেঁধে৷ আমি কি আবারো ফিরে গেলাম সেই দিনগুলিতে৷ সন্বিত ফিরে পেলাম আমার সহপাঠিনি ল্যাটিন আমেরিকান মেয়েটির কথায়৷ তার সোনালি চুল উড়ছে৷ বৃষ্টিতে ভিজলে কেন সবাইকে আরো বেশি সুন্দর লাগে৷ কেন৷ জানিনা৷ মেয়েটি তখনো বলেই যাচ্ছে, ইটস অ্যা লেসন৷ আমি তারে বলি, টেল হার, সি সু্ড নট কাম টু মাই ডোর৷ সে জিজ্ঞাসা করে, কারে?

আমি বলি, বৃষ্টি৷

কাজী সায়েমুজ্জামান
কিউন হি ইউনিভার্সিটি
দক্ষিণ কোরিয়া

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সকাল ১০:৩১

শাহিন-৯৯ বলেছেন:

মনহারানো সেই বৃষ্টি বিলাসের একটি ছবি কিন্তু দিতেই পারতেন তাহলে আরও বেশি মন ছুঁয়ে যেতে পাঠকদের।

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:২৫

সায়েমুজজ্জামান বলেছেন: ছবি দিলাম৷ দেখে নিন৷ ধন্যবাদ৷

২| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১:১৫

রাজীব নুর বলেছেন: আপনার পোষ্ট পড়ে, ইচ্ছা করছে আমার লেখাপড়া শুরু করি।

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:২৬

সায়েমুজজ্জামান বলেছেন: শুরু করে দেন৷ আমি বুড়া বয়সে মাস্টার্স করছি৷ কোরিয়ায় অনেক স্কলারশিপ দেয়৷ বাংলাদেশের কোটা পূরণ হয়না৷ খোঁজ খবর রাখেন৷ কমেন্টের জন্য ধন্যবাদ৷

৩| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:৫৭

ডার্ক ম্যান বলেছেন: অনেকদিন পর ব্লগে দেখলাম । খুব ব্যস্ত জীবন কাটছে আপনার । ভালো থাকুন

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৪:২৯

সায়েমুজজ্জামান বলেছেন: ঠিকই বলেছেন৷ এখন আর সময় পাই না৷ ধন্যবাদ আপনাকে৷

৪| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৫১

ইসিয়াক বলেছেন: চমৎকার লেগেছে।
শুভসন্ধ্যা।

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:৪৬

সায়েমুজজ্জামান বলেছেন: ধন্যবাদ৷ ভালো থাকবেন৷

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.