নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চেতনায় মুক্তিযোদ্ধা

সায়েমুজজ্জামান

কাজী সায়েমুজ্জামান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের স্কলারশিপ নিয়ে কিউং হি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড ট্রেড পলিসি বিষয়ে মাস্টার্স। জন্ম ১৯৮১ সালে চট্টগ্রাম শহরের দামপাড়ায়। তার পূর্বপুরুষ ছিলেন দক্ষিণাঞ্চলের বাউফলের ঐতিহ্যবাহী জমিদার কাজী পরিবার। ছাত্রজীবন থেকেই লেখালেখিতে হাতে খড়ি। তবে ১৯৯৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে তিনি সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত হন। তিনি যুগান্তর স্বজন সমাবেশের প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম আহবায়ক। ২০০৪ সালে তিনি দৈনিক মানবজমিন পত্রিকায় স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে যোগ দেন। পরে ইংরেজী দৈনিক নিউ এজ এ সিনিয়র প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করেন। পরবর্তীতে ২৮ তম বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের একজন সদস্য হিসেবে সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, সহকারী কমিশনার (ভূমি), সিনিয়র সহকারী কমিশনার, সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে রেক্টরের একান্ত সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনডিপিতে লিয়েনে চাকরি করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রোগ্রামে ন্যাশনাল কনসালটেন্ট হিসেবে কাজ করেছেন। শিল্প সচিবের একান্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন৷বর্তমানে সরকারের উপসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বাংলা ছাড়াও ইংরেজী, আরবী, উর্দ্দু ও হিন্দী ভাষা জানেন। ছোটবেলা থেকেই কমার্শিয়াল আর্টিস্ট হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

সায়েমুজজ্জামান › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাবরি মসজিদ নিয়ে রায়ের ভালো-মন্দ দিক

১০ ই নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৪:৫৮

বাবরি মসজিদ নিয়ে রায়ের পর দুই দিন ধরে বিভিন্ন লেখা পড়ছিলাম। রায়টা বুঝতে চেষ্টা করেছি। দেশি বিদেশী লেখা মন্তব্য পড়ে একটা ধারণা তৈরি হয়েছে। তাছাড়া ভূমি আইনে আমার সামান্য অভিজ্ঞতা রয়েছে। বৃটিশদের রচিত ভূমি ব্যবস্থা উপমহাদেশে প্রায় একই রকমের। একই ইতিহাসের অংশ। যাই হোক আমার দৃষ্টিতে আলোচ্য রায়ের ভালো-মন্দ দিক রয়েছে। তবে মন্দ দিকগুলোর প্রাধান্যের সাথে রায়টা মিডিয়াতে যতটুকু পড়েছি পরষ্পর বিরোধী বলে মনে হয়েছে। ভারতের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে রায়ের ভালোর দিকটা বেশি বলে আমার মনে হয়েছে। সেদিকটি বিবেচনা করে মহামান্য বিচারকগণ রায় দিয়েছেন কী- না সময় তা বলে দেবে।

ভালো দিক:
১। রায়ের পর কোন সহিংসতা হয়নি। যতদূর দেখেছি, ভারতে বা আশপাশের কোন দেশে রায় নিয়ে কোন সহিংসতা দূরের কথা কেউ তেমন জোরালো প্রতিবাদ করেনি। মুসলমান পক্ষ রায়ে তাদের অসন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন। কোন জোরালো প্রতিবাদ করেননি। রায়টা উল্টা হলে- এতক্ষণে পুরা ভারত জুড়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়তো। অনেক প্রাণহানির আশংকা ছিল। তার প্রভাব আশপাশের দেশেও দেখা যেতো। সেদিক থেকে সফল রায়।
২। রায়ের শুরুতেই ওয়াকফ বোর্ডের আর্জি এবং নির্মোহ আখড়ার বিতর্কিত জমির ওপর দাবি খারিজ করে দেয়া হয়। রায়ে বলা হয়েছে, সেখানে যে দেবতা রামের জন্মভূমি তা বাদীপক্ষ নির্মোহ আখড়া প্রমাণ করতে পারেনি। বিবাদী মুসলমান পক্ষও তাদের দখল ছাড়া মালিকানা প্রমাণ করতে পারেনি। আমার দৃষ্টিতে জমিটি আসলে সরকারের মালিকানায় চলে গেছে।
৩। রায়ে বাবরি মসজিদ ভেঙ্গে ফেলাকে আইন ভাঙ্গা হয়েছে মর্মে বলা হয়েছে। যারা বাবরি মসজিদ ভেঙ্গেছেন তারা অপরাধ করেছেন। যে রায়ে যাদের অপরাধি সাব্যস্থ করা হয়েছে, তারপর তাদের আসলে খুশী হওয়ার কোন কারণ নেই। এটা তারাও বুঝতে পেরেছেন। এজন্য তাদের মধ্যে উচ্ছ্বাস কম দেখা গেছে।
৪। ইসলাম ধর্মে বিভিন্ন কারণে মসজিদ স্থানান্তরিত করা যায়। জনমানুষের সুবিধার্থে সড়ক সম্প্রসারণসহ বিভিন্ন উপলক্ষে মসজিদ স্থানান্তর করা যায়। রায়ে মসজিদের জন্য পাঁচ একর জমি বরাদ্দ দেয়ার জন্য আদেশ দেয়া হয়েছে। যা মন্দিরের জমির চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। যদিও ভারতের মুসলমানরা জমি প্রত্যাখ্যান করেছেন। তারপরেও বিষয়টি মুসলমান ধর্মের অনুসারীদের কিছুটা হলেও সান্ত্বণা দিয়েছে।
৫। রায়ে জায়গাটা খালি রাখার কথা বলা হলে- মুসলমানরা মেনে নিতেন। মন্দির নির্মাণ ছাড়া কোন রায় হিন্দুরা মানতেন না। কারণ মন্দির নির্মাণের ঘোষণা রয়েছে বিভিন্ন সংগঠনের তরফে। সেখানে পাথরসহ সকল সরঞ্জাম আগেই জমা করে রাখা হয়েছে। ফলে সেই শুরুতে যে অবস্থা ছিল, তা আবার চক্রাকারে ফিরে আসতো। হিন্দুদের একটাই দাবি ছিল- সেটা হলো মন্দির নির্মাণের। রায়ে তাদের যতই অপরাধি বলা হোক, তাদের আরজি খারিজ করে যতই পক্ষ নয় বলে ঘোষণা করা হোক, চূড়ান্ত কথা হচ্ছে- মসজিদের স্থানে মন্দির নির্মাণ করতে হবে। তাদের দেশের প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলে রায় সঠিক বলে মনে হয়।

মন্দ দিক:
১। রায়ের পর আরো একটি আইনি ধাপ বাকী আছে। সংক্ষুব্ধ পক্ষ রিভিউ- এর আবেদন করতে পারবে। রায়ে বিভিন্ন অসামঞ্জস্যতা ও বৈপরীত্য আছে। মুসলমানরা এখনো আশাবাদি। রিভিউতে হেরে গেলেও এটা মনে করার কোন কারণ নেই, মুসলমনরা মেনে নেবে। মসজিদের জায়গায় মন্দির নির্মাণ কেয়ামত পর্যন্ত কোন মুসলমান অন্তর থেকে মেনে নেবেনা।
২। রায়ে রাজনৈতিক দিকটি বিবেচনা করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। কারণ একদিকে বলা হচ্ছে, মসজিদ ভেঙ্গে আইন ভাঙ্গা হয়েছে। অন্যদিকে সেখানে মন্দির নির্মাণের আদেশ দেয়া হচ্ছে। সেখানে মসজিদ থাকলে কী তা ভেঙ্গে মন্দির নির্মাণের আদেশ দেয়া হতো- এটাই জিজ্ঞাসা। দুই পক্ষের আরজি খারিজ করা হলে জমিটি সরকারকে না দিয়ে কোন যুক্তিতে মন্দির করার আদেশ দেয়া হলো- তা বোধগম্য নয়। এটা আইনের ক্ষেত্রে একটি বাজে উদাহরণ তৈরি করবে।
৩। উপমহাদেশে জমির মালিকানা প্রধাণত দখল দিয়ে নির্ধারিত হয়। একটি জায়গা প্রায় সাড়ে পাঁচশ বছর দখলে রাখার পরেও তার মালিকানা হারালে ভারতের ভূমি ব্যবস্থাপনায় ব্যপক গোঁজামিল তৈরি হবে। এত বছর ধরে নিম্ন আদালতে যেসব রায় দখলের ওপর নির্ভর করে দেয়া হয়েছে, তার বৈধতা এখন প্রশ্নের সম্মুখীন হবে। একযোগে এ রায়কে বরাত দিয়ে বহু মামলা হতে পারে।
৪। চাক্ষুষ প্রমাণের চেয়ে বিশ্বাসকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। বিচার ব্যবস্থায় এটা হওয়া উচিত নয়। একজন বিচারক অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী হয়ে চোখ বুজে কে কাকে হত্যা করলো, তা দেখতে পারেন। তবে বিচারে খুনী ব্যক্তি খালাস পেয়ে গেলে, তার বিশ্বাস বা অলৌকিক ক্ষমতা দোহাই দিয়ে ওই ব্যক্তিকে ফাঁসি দেয়ার কোন ক্ষমতা বিচারকের নেই। ভারতে ঠিক এটাই হয়েছে।
৫। সুপ্রীম কোর্টের রায় বলে জোরালো কেউ কিছু না বললেও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হয়েছে। মসজিদের নিচে মন্দির ছিলো, তা কোন কর্তৃপক্ষই স্পষ্ট করে বলেন নি। প্রমাণ করতে পারেননি। পুরোটাই ডাউট কেস। বেনিফিট অব ডাউট কে পাবেন তা নির্ধারণের বিষয় বলে মনে হয়েছে।
৬। রায় অনুযায়ী মসজিদ ভাঙ্গাকে আইন ভাঙ্গা বলা হয়েছে। মন্দিরের ওপরই যদি মসজিদ তৈরি করা হয়ে থাকে- সে অবৈধ স্থাপনা ভাঙ্গলে তো তাকে বাহবা দেয়া উচিত ছিল। রায়ে তাকে বাহবা দেয়া হয়নি। তবে আইন ভাঙ্গার কারণে তাদেরকে আইনের আওতায় আনার নির্দেশনাও দেয়া হয়নি। রায় সঠিক হলে, রায়ের পথে যত কর্মকান্ড সব বৈধতা পায়। পুরাই হযবরল অবস্থা।
৭। এরপর কী তাজমহল নিয়ে শুরু হবে। কিছু দিন আগে দেখলাম, তাজমহলের নিচে নাকি হিন্দুদের ধর্মীয় স্থাপনা রয়েছে। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকের নাম দিয়ে একটা লেখা সোসাল মিডিয়াতে ঘুরছে। এরকম হলে তো ভারতে যত স্থাপনা আছে, কোন স্থাপনাই নিরাপদ নয়। ( স্থাপনাগুলোর জন্য আমার দরদ আছে। কারণ তা নির্মাণে আমাদের পূর্বপুরুষের খাজনার টাকা ব্যয় করা হয়েছে।)

কী রায় হতে পারতো:
কোন দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায় নিয়ে কথা বলা ঠিক নয়। তারপরেও কথা থাকে। যেহেতু এ রায়ের সাথে এ অঞ্চলের শান্তি শৃংখলা জড়িত, সেহেতু একটা ইউটোপিয়ান চিন্তা করাই যেতে পারে।
রায়ে দুইটি জিনিস করা যেতো। একটি হলো- জায়গাটি সরকারকে দিয়ে দেয়া। দুই পক্ষ গিয়েই সেখানে পুজা বা নামাজ পড়তে পারতেন। তবে জায়গাটি মুসলমানদের জন্য এমন কোন গুরুত্বপূর্ণ স্থান নয়, যতটা দেশের জন্য গুরুত্বের। কারণ জায়গাটি মুসলমানদের কোন মনিষী বা কোন আল্লাহর অলী আউলিয়ার স্মৃতি বিজড়িত কোন স্থান নয়। পাড়ার একটি মসজিদও যেমন আল্লাহর ঘর, বাবরি মসজিদও তেমনি আল্লাহর ঘর। বাবরি মসিজিদ একটি পুরাকীর্তি। ঐতিহাসিক স্থাপনা। এটা দেশের সম্পদ ছিল। আদালত হাইকোর্টের মতো পাশাপাশি একটি মসজিদ ও একটি মন্দির তৈরি করে দেয়ার আদেশ দিতে পারতেন। ভারতে কয়েকটি জায়গায় এরকম মসজিদ মন্দির পাশাপাশি রয়েছে। সেখানে কোন সমস্যা নেই। কাটা দিয়ে কাটা তোলার মতো সাম্প্রদায়িক একটা গন্ডোগলের স্থানে অসাম্প্রদায়িকতার নজির স্থাপনের একটা বড় সুযোগ হারালো ভারত।

বাংলাদেশে হলে কী হতো:
প্রথমে নিজের একটা অভিজ্ঞতার কথা বলি। তাহলে দেশের ধর্মীয় বিশ্বাসে যারা সংখ্যায় কম সেসব নাগরিকদের প্রতি একজন তরুন সরকারি কর্মকর্তার দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হবে। কী হতে পারতো সেটা সহজেই বুঝা যাবে। আমি তখন পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। একদিন একটি নামজারির নথি পেলাম। আমার অফিসের সামনেই কালী মন্দির। দক্ষিণাঞ্চলে এত বড় কালি মন্দির আর নেই। মন্দিরের অনেক জমিজমা। এর আয় থেকে মন্দিরের পুজা ও অনুষ্ঠানের ব্যয় নির্বাহ করা হয়। দিনের পর দিন দূর দূরান্ত থেকে আসা মানুষজনকে খাওয়ানো হয়। তারা কী খাওয়ায় তা দেখতে গিয়ে নিজেও একদিন খেয়েছি। নথি উল্টে দেখলাম মন্দিরের পাঁচ একরের মতো জমি জনৈক হিন্দু আইনজীবীর নামে নামজারির জন্য আবেদন। বহু আগের। আমার আগে যিনি দায়িত্বে ছিলেন, সংবেদনশীল বলে তা ফেলে রেখেছিলেন। আর ওই আইনজীবী তার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আদালত অবমাননার মামলা ঠুকে দিয়েছেন। সমস্যাটা হচ্ছে, তিনি বাই নেমে মামলা করেন নি। করেছেন পদের বিরেুদ্ধে। একারণে আমি না জেনে শুনেও অবমাননা মামলার আসামী হয়ে গেলাম। নথি হাতে নিয়ে দেখি ওই উকিল বিভিন্ন কাগজপত্র (যার অধিকাংশ আমার কাছে জাল মনে হয়েছে) দিয়ে মন্দিরের জমি তার পৈত্রিক সম্পত্তি দাবি করে জজ কোর্টে একটি দেওয়ানি মোকদ্দমা করেন। মন্দিরের সেবায়েত ও পরিচালনা কমিটি মামলায় তাদের পক্ষে রায় পান। উকিল রায়ের বিরুদ্ধে জেলা জজ আদালতে আপীল করেন। জেলা জজ কোর্টের আপীলেও মন্দিরের পক্ষে রায় হয়। এবার উকিল রায়ের বিরুদ্ধে মহামান্য হাইকোর্টে মামলা করেন। হাইকোর্টে মন্দির কমিটি হেরে যান। ঢাকায় মামলা, মন্দিরের পরিচালনা কমিটির অধিকাংশ বৃদ্ধ, কমিটির একজন তরুন তিনি আবার স্কুলের শিক্ষক, তাছাড়া আর্থিক কারণে মন্দির কমিটি মামলায় হেরে কিংকর্বব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন। তারা বাস্তবতা বুঝতে পারেন যে ঢাকায় গিয়ে মামলায় জিতে আসা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। এজন্য জমিজমা থেকে মন্দিরের নামে কিছু সম্পত্তি পেলেও উপকার হবে ভেবে আপোসে যাওয়ার প্রস্তাবে সাড়া দেন। স্থানীয় এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যানের মধ্যস্থতায় আপোষ হয়- হাইকোর্টের মামলার বিরুদ্ধে মন্দির কমিটি আপীল করবেন না। এর বিনিময়ে ওই আইনজীবী মন্দিরকে দুই একর জমি বা কম বেশি জমি দেবেন। আপোষের একটা কপিও নামজারির আবেদনের সাথে যুক্ত করা হয়। নথিটি নিয়ে আমি বেকায়দায়। কারণ পৌরসভার উপরে জমি। অনেক মূল্যবান। কোটি কোটি টাকা দাম। আইনজীবী নাকি মামলা জিততে অনেক টাকা খরচ করে ঋণী হয়েছেন। তিনি নামজারির পর জমি বিক্রি করবেন। যারা কিনবেন, তারা আবার প্রভাবশালী। হিন্দু মুসলমান সবাই আছে। তারা প্রতিদিন তদিবর করেন। আমার অবস্থা কইতেও পারিনা, সইতেও পারিনা। মন্দিরের কমিটিকে ডাকলাম। বললাম, কত টাকা পেয়ে আপোষ করছেন। তারা কেঁদে ফেলেন। বললেন, মায়ের জমি নিয়ে তারা টাকা পয়সা আদান প্রদান করবেন- এমন মানুষ তারা নন। বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে তারা আপোষ করতে বাধ্য হয়েছেন। কারণ ঢাকায় গিয়ে মামলা লড়ার মতো অবস্থা তাদের নেই। আমি বললাম, যত আপোষ করেন না কেন, মন্দিরের জমি আমি জীবন থাকতে কোন ব্যক্তির নামে নামজারি করবোনা। আমি চেষ্টা করবো। আপনারা আমার সাথে থাকবেন কী না বলেন। আপনাদেরকে আপীল করতে হবে। আগেরবার যথাযোগ্য উকিল ধরতে পারেন নি। বুঝাই যাচ্ছে, তিনি কোন কারণে কাজ করেননি। এবার একজন ভালো উকিলকে আমি ঠিক করে দেবো। কিন্তু আগে আমার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা ঠেকাতে হবে। সময় মাত্র এক সপ্তাহ। ওনারা বললেন, আমরা আপনার সাথে আছি। আমি সার্ভিসের সিনিয়র যারা ভূমি আইনে এক্সপার্ট তাদের সাহায্য চাইলাম। তখনকার নির্বাচন কমিশনার মোবারক স্যারকে ফোন দিয়ে বললাম এ পরিপ্রেক্ষিতে আমার কী করণীয়। তিনি বললেন, আরে তোমাকে তো হাইকোর্টে দাড় করিয়ে রাখা হবে। আদালত অবমামনায় তোমার চাকরিটাও যেতে পারে। দুই পক্ষ রাজি। তুমি কীভাবে নামজারি না করে ফাইল ফেলে রাখতে পারো। হতাশ হলাম। ভাবলাম, শেষ চেষ্টা করি। ওই কোর্টের একজন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল। তার নামটা ভুলে গেছি। তিনি এতটা উপকার করেছেন যা আজীবন ভুলতে পারবোনা। তার নাম ভুলে যাওয়া অকৃজ্ঞতার লক্ষণ। শুনেছিলাম তিনি হাইকোর্ট ডিভিশনের বিচারক হওয়ার তালিকায় রয়েছেন। আমি তাকে গিয়ে সব খুলে বললাম। বললাম, মন্দিরের জমি। মন্দির শুনে তিনিও আমার মতো দাড়িয়ে গেলেন। আমি বললাম, দুদিন পরেই মামলার তারিখ। আপনি আমাকে রক্ষা করেন। জবাব দাখিলের জন্য অন্তত এক মাসের একটা সময় অনুমোদন করিয়ে দেন। তিনি বললেন, সময়ের আবেদন এনেছেন? আমি বললাম, এনেছি। তিনি সেটি নিয়ে হাইকোর্টের জাস্টিসের খাস কামরায় গেলেন। ফেরত এসে বললেন, একমাস সময় পাবেন। এর মধ্যে যা করার তা করতে হবে। আমি বললাম, আপনার আন্তরিকতাই বলে দিয়েছে, এ মামলায় মন্দিরের পক্ষে লড়াই করার উপযুক্ত মানুষ আপনি। আমরা টাকা পয়সা দিতে পারবোনা। মামলা আপনাকেই লড়তে হবে। তিনি কোন টাকা পয়সা দাবি করেননি। বললেন, মন্দিরের জমি। কার কাছ থেকে টাকা নেবো বলেন। আমি এমনিতেই মামলায় লড়বো। পরে কমিটির লোকজনকে তার কাছে পাঠাই। বলে দেই তিনি টাকা না চাইলেও আপনাদের কিছু দিতে হবে। আপিলেট ডিভিশনে যেখানে কোন সিনিয়র আইনজীবীর সহায়তা নিতে গেলেই পঞ্চাশ হাজার টাকা গুনতে হয়, সেখানে তাকে মাত্র কয়েক হাজার টাকা দিতে বললাম। এটাও বলে দিয়েছি, নিতে না চাইলেও জোর করে দেবেন। যাই হোক আমি এক মাসের সময় পেয়েছিলাম। এক মাসের মধ্যে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করা হয়। সেই কাগজ দিয়ে আমি আদালত অবমামনা মামলায় জবাব দাখিল করেছি। ওই ডেপুটি অ্যাটর্ণি জেনারেলের সহযোগিতায় বিনা টাকায় মান্যবর হাইকোর্টে আদালত অবমাননার মতো মামলা থেকে মুক্ত হই। নিজের চাকরিকে ঝুঁকির মুখে রেখে হলেও মন্দিরের জমি নামজারি করে দেইনি। মন্দির বলেই এমন সাহস নিজের মধ্যে তৈরি হয়েছিল। মন্দিরের জমি বলেই সবার কাছ থেকে সহযোগিতা পেয়েছিলাম।
বুঝতেই পেরেছেন, বাংলাদেশে হলে কী হতো। বলার অপেক্ষা রাখেনা- জমিটা সংখ্যায় কম এমন ধর্মীয় গোষ্ঠিই পেতেন।

বেনিফিট অব ডাউট ভালনারেবলরাই পেতে পারেন। তারাই হকদার।

কিউনহি বিশ্ববিদ্যালয়
দক্ষিণ কোরিয়া
১০ নভেম্বর ২০১৯

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:১৫

পাঠকের প্রতিক্রিয়া ! বলেছেন: ভালো -মন্দ দিকগুলো দারুন লিখেছেন। আর শেষের গল্পটাও ভালো লেগেছে।

রায় যা হবাব হয়েছে, আমার মনে হয় এ নিয়ে আর না এগিয়ে সরকার থেকে বাবরি মসজিদের আদলে একটা মসজিদ তৈরী করতে পারে। নিজেদের মধ্যে সম্পৃতি নষ্ট করে দেবতার পুজো করে কী যে হবে, কে জানে!

১১ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:৪০

সায়েমুজজ্জামান বলেছেন: ইসলাম ধর্মবলম্বীদের ছাড় দেয়া উচিত। আল্লাহর জমিনে সবটাই আসলে মসজিদ। নামাজ সবখানেই আদায় করা যায়। আপনাকে ধন্যবাদ। আপনার মন্তব্য পড়ে ভালো লাগলো।

২| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:২২

জে.এস. সাব্বির বলেছেন: বাবরি মসজিদের জায়গায় মন্দির নির্মাণ এর রায় হয়েছে এই ভূমিকার থেকে বাবরি মসজিদ যারা ভাঙলো তাদের কতটুকু বিচারের আওতায় আনা হলো এই ভূমিকাটা বেশি ইমপ্যাট রাখে।

আশা করি নতুন কোন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা দেখতে হবে না।

১১ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:৪২

সায়েমুজজ্জামান বলেছেন: এ নিয়ে তো ১৯৯২ সালের পর অনেক কিছুই হলো। কয়েকজন নেতাকে অভিযুক্ত করে রিপোর্টও দেয়া হয়েছিল। তাদের বিরুদ্ধে মামলাও চলছে।
এটা নিয়ে মুসলমানদের আর আগানো ঠিক হবেনা। মুসলমানদের ছাড় দেয়া উচিত।

৩| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১২:১১

কৃষ্ণগহ্বর বলেছেন: তথ্যবহুল পোস্টের জন্য ধন্যবাদ।

১১ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:৪৩

সায়েমুজজ্জামান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।

৪| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:০৪

রাজীব নুর বলেছেন: ধর্ম নিয়ে যারা ক্যাচাল করে তারা নির্বোধ।

১৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ১১:০০

সায়েমুজজ্জামান বলেছেন: নির্বোধ না, আমার মতে তারা ক্রিমিনাল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.