নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চেতনায় মুক্তিযোদ্ধা

সায়েমুজজ্জামান

কাজী সায়েমুজ্জামান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের স্কলারশিপ নিয়ে কিউং হি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড ট্রেড পলিসি বিষয়ে মাস্টার্স। জন্ম ১৯৮১ সালে চট্টগ্রাম শহরের দামপাড়ায়। তার পূর্বপুরুষ ছিলেন দক্ষিণাঞ্চলের বাউফলের ঐতিহ্যবাহী জমিদার কাজী পরিবার। ছাত্রজীবন থেকেই লেখালেখিতে হাতে খড়ি। তবে ১৯৯৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে তিনি সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত হন। তিনি যুগান্তর স্বজন সমাবেশের প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম আহবায়ক। ২০০৪ সালে তিনি দৈনিক মানবজমিন পত্রিকায় স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে যোগ দেন। পরে ইংরেজী দৈনিক নিউ এজ এ সিনিয়র প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করেন। পরবর্তীতে ২৮ তম বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের একজন সদস্য হিসেবে সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, সহকারী কমিশনার (ভূমি), সিনিয়র সহকারী কমিশনার, সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে রেক্টর (সচিব) এর একান্ত সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনডিপিতে লিয়েনে চাকরি করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রোগ্রামে ন্যাশনাল কনসালটেন্ট হিসেবে কাজ করেছেন। শিল্প সচিবের একান্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন৷বর্তমানে সরকারের উপসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বাংলা ছাড়াও ইংরেজী, আরবী, উর্দ্দু ও হিন্দী ভাষা জানেন। ছোটবেলা থেকেই কমার্শিয়াল আর্টিস্ট হিসেবে পরিচিত ছিলেন। যেকোনো প্রয়োজনে ইমেইল করতে পারেন। [email protected]

সায়েমুজজ্জামান › বিস্তারিত পোস্টঃ

নেগোশিয়েশনের কোরিয়ান গোপন রেসিপি

১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫০

সংলাপ এদেশে খুব আলোচিত ও জনপ্রিয় বিষয়৷ সংলাপের প্রস্তুতি পর্যায়ের কৌশল কী! কীভাবে করতে হয়! মাস্টার্সে নেগোশিয়েশন বিষয়ে একটা কোর্স নিয়েছিলাম৷ নেগোশিয়েশন পড়াতেন কোরিয়ান একজন স্বনামধন্য অধ্যাপক৷ কোরিয়ার পক্ষে চীন, জাপান, আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে অনেক দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক নেগোশিয়েশনে অংশ নেয়ার অভিজ্ঞতা ছিল ওই অধ্যাপকের৷ ক্লাসে তিনি তার অভিজ্ঞতা আমাদের সাথে শেয়ার করতেন৷ উনি প্রতিপক্ষের সাথে সংলাপের বেশ কিছু কোরিয়ান কৌশল শিখিয়েছিলেন৷ বলেছিলেন, এগুলো শুধু রাষ্ট্রীয নয়, পেশাগত জীবনেও কাজে লাগবে৷ ব্যক্তিগত জীবনেও কৌশলী হতে নেগোশিয়েশন বিদ্যার প্রয়োগ প্রয়োজন৷ কৌশলগুলো আইনজীবীদের জন্যও বিশেষভাবে জরুরি৷ রাজনীতিবিদদের জন্য অবশ্য পাঠ৷

চলুন ওই অধ্যাপকের দেয়া নেগোশিয়েশনের গোপন দাওয়াইগুলো জানি৷ তিনটি পর্যায়ে এই কৌশলগুলো প্রয়োগ করতে হয়৷ এ পর্বে নেগোশিয়েশন বা সংলাপের প্রস্তুতি পর্যায়ের কৌশলগুলো নিয়ে একাডেমিক আলোচনা করছি৷

এক. নেগোশিয়েট ইন ইওর টার্ফ৷ টার্ফ মানে নিজের জায়গা৷ নিজের অফিসে বা নিজের দেশে আলাপ-আলোচনা বা দরদস্তুর করা৷ কোরিয়ান প্রফেসর বলছিলেন, নেগোশিয়েশনের জন্য খরচের দিকে তাকালে চলবেনা৷ কোরিয়ার লক্ষ্য থাকতো যে কোন বিষয়ে আলাপ আলোচনার জন্য প্রতিপক্ষকে কোরিয়ায় নিয়ে আসা৷ তারপর তাদের ভালো করে আপ্যায়ন করা৷ বিনোদনের ব্যবস্থা করা৷ নিজের জায়গায় নেগোশিয়েশনে অনেক সুবিধা পাওয়া যায়৷ নিজের পরিবেশ পরিস্থিতি পরিচিত ও চেনা-জানা৷ এতে অনেক স্বাচ্ছন্দ্যে থেকে লক্ষ্য অর্জন করা যায়৷ সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, নিজের জায়গায় নেগোশিয়েশনের উপাত্ত ও তথ্যপ্রাপ্তি সহজ হয়৷ সহকর্মীদের সাথে সহজেই যোগাযোগ করা যায়৷ অন্যদিকে প্রতিপক্ষের নূতন পরিবেশে খাপ খাইয়ে সংলাপ করতে একটু হলেও ছন্দপতন হবে৷ হঠাৎ কোন তথ্য প্রয়োজন হলেও তা হাতের কাছে পাবেনা৷ ফলে পিছিয়ে থাকবে৷

দুই. আউটনাম্বার দ্যা কাউন্টারপার্টস৷ মানে হলো সংখ্যায় প্রতিপক্ষকে হারিয়ে দেয়া৷ প্রতিপক্ষ একজন হলে নিজেদের দুইজন হতে হবে৷ প্রতিপক্ষ দুইজন হলে কৌশলে নিজেদের তিনজন হতে হবে৷ এভাবে নেগোশিয়েশন টেবিলে অংশ গ্রহণকারীরা সংখ্যায় যাতে প্রতিপক্ষের চেয়ে বেশি হয়৷ কোরিয়ান প্রফেসর বলছিলেন, তারা যখন জাপানে বা আমেরিকায় কোন বিষয় নিয়ে দরকষাকষির জন্য যেতেন, বিশাল বহর নিয়ে বিমান বোঝাই করে যেতেন৷ বড় বহর হলে সুবিধা রয়েছে৷ বিভিন্ন এক্সপার্টদের এতে রাখা সম্ভব হয়৷ এতে অবশ্য কোরিয়ান জনগণ সমালোচনা করতো৷ দেশের টাকা নষ্ট করে বিদেশে প্রমোদ ভ্রমণ বলে সংবাদপত্রও সমালোচনা করতো৷ তবে কোরিযান সরকারের লক্ষ্য ছিল সুনির্দিষ্ট৷ বিরাট দলবল দেখলে যাতে প্রতিপক্ষ সিরিয়াসনেসের বিষয়ে নিশ্চিত হয়৷ সংলাপের ক্ষেত্রে বড় দেশগুলো সবসময় ছোটদেশগুলোর কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে থাকে৷ এভাবে সংখ্যায় বড় দল হলে নেগোশিয়েশনে সুবিধা পাওয়া যায়৷ প্রফেসর বলছিলেন, আমরা নেগোশিয়েশন কক্ষের খোজ খবর রাখতাম৷ সেখানে কতগুলো চেয়ার তারও হিসাব নিতাম৷ সে অনুযায়ী বৈঠক হওয়ার বহু আগে প্রতিপক্ষের চেয়ে বেশি সংখ্যায় চেয়ার দখল নিশ্চিত করতাম৷ ডব্লিউটিওতে এমনও ঘটেছে চেয়ার নেই৷ অথচ কোরিয়ান প্রতিনিধিদলের সদস্যরা রুমে ঢুকে দাড়িয়ে গেছেন৷ এটা আগে থেকেই ঠিক করা ছিল৷ নিজেদের প্রস্তাব দেয়ার পর সবাই যাতে মাথা নাড়ান৷ হালকা শব্দ করে সমর্থন জানান৷ সেটাও নির্ধারিত ছিল৷ এতে তারা বহু সুবিধা পেয়েছিলেন৷ সেই গল্পও শেয়ার করেছিলেন অধ্যাপক৷

তিনি বলছিলেন, জাপানেরও নিজস্ব কিছু কৌশল রয়েছে৷ আমরাও তাদের কৌশলের শিকার হয়ে বুঝেছি৷ তারাও আমাদের কৌশল ধরে ফেলেছে৷ এ কারণে জাপানিদের আউটনম্বর করা কঠিন৷ চীনারাও এ কৌশল জানে৷ একারণে চীন জাপান ও কোরিয়া যখন ডব্লিউটিওতে কোন নেগোশিয়েশনে অংশ নেয় তখন তা দেখার মতো হয়৷ তিন দেশের প্রতিনিধিদের দিয়ে নেগোশিয়েশন কক্ষ কাণায় কাণায় পূর্ণ হয়ে যায়৷ তখন কোন দেশের প্রতিনিধি বেশি তা বুঝার সাধ্য থাকেনা৷

যাই হোক, এবার বাংলাদেশের কথা বলি৷ আমাদের দেশে বড় বহর নিয়ে বিদেশ গেলে হইচই পড়ে যায়৷ সাধারণ মানুষের কথা বাদ দিলাম৷ শিক্ষিত মানুষগুলো বিশেষ করে টকশোর বুদ্ধিজীবীদের সমালোচনার বন্যা বয়ে যায়৷ অথচ এই যে বড় বহর এটা নেগোশিয়েশন ট্যাকটিসক এর অংশ৷ সেটাই তারা বুঝতে পারেন না৷

তিন. সেট দ্য টাইম লিমিট ফর ইওর ফেভার৷ মানে হলো-নেগোশিয়েশনের সময় বেঁধে দেয়ার প্রম্তাব পাস করে নিতে হবে৷ বলতে হবে ঘড়ি ধরে ঠিক এই সময়ের মধ্যে নেগোশিয়েশন বৈঠক শেষ করা হবে৷ নিজের প্রস্তাব দিতে যতটুকু সময় লাগে তা প্রত্যেক পক্ষের জন্য বরাদ্দ করার প্রস্তাব দিতে হবে৷ তাহলে কেউ বেশি বলার সুযোগ পাবেনা৷ প্রতিপক্ষ যদি না জানে এটা একটা কৌশল তবে এর সুফল পাওয়া যাবে৷

প্রফেসর বলছিলেন, একবার এক নেগোশিয়েশনের সময় বেঁধে দিয়েছিলাম৷ প্রতিপক্ষ জাপানি৷ তারা ভদ্র৷ মুখে কিছু বলেনা৷ সবাই কৌশল প্রয়োগ করে নিরবে৷ আমরা কোরিয়ার পক্ষে কথা বলা শেষ করেছি৷ এরপর তাদের পালা৷ তারা কথা বলছে৷ কিছুক্ষণ পর আমি ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছি৷ এতে তারা বেশি সময় নিলো কী না তা ভেবে বিব্রতবোধ করে৷ দ্রুত আলাপ শেষ করার চেষ্টা করে৷ হয়ত এটা তারা জানতো না যে ঘড়ি দেখাটাও কৌশলের একটা অংশ ছিল৷ তবে পরের বার এ কৌশল আর কাজ করেনি৷ আমি প্রস্তাব দিয়ে বলেছিলাম, আমরা চারটা পর্যন্ত নেগোশিয়েট করবো৷ তখন জবাবে তারা বলেছিলো, চারটা কেন? যতক্ষণ পর্যন্ত বিষয়টায় সমঝোতা না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত আলোচনা চললে সমস্যা কোথায়!

প্রফেসর জাপানের নেগোশিয়েশনের একটি গল্প শুনিয়েছিলেন৷ আশির দশকের ঘটনা৷ জাপান তখন প্রযুক্তিতে বিশ্বসেরা৷ তখন বিশ্বের অন্যান্য দেশ জাপানের কাছ থেকে প্রযুক্তি নিতে উদগ্রীব ছিল৷ বিশেষ করে জাপানি প্রযুক্তির চাহিদায় যুক্তরাষ্ট্র ছিল শীর্ষ দেশ৷ জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ব্যবসা তখন তুঙ্গে৷ যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা এত বেশি জাপানে যাচ্ছিলেন যে নিউ ইয়র্ক- টোকিও রুটে বিমানের টিকেট সোনার হরিণ হয়ে যায়৷ এসময় আমেরিকার এক বড় ব্যবসায়ী তার জাপানি পার্টনারের সাথে নেগোশিয়েট করতে জাপানে যাবেন বলে স্থির করেন৷ তবে সুবিধামতো টিকেট পেলেন না৷ কোন এক রবিবারে তিনি নিউইয়র্ক থেকে জাপানের উদ্দেশ্যে উড়াল দিলেন৷ ফিরতি টিকেট শুক্রবার৷ দীর্ঘ বিমান ভ্রমণ শেষে ওই ব্যবসায়ী নারিতা বিমান বন্দরে নামেন৷ নারিতা বিমান বন্দর টোকিও থেকে দুই ঘন্টার পথ৷ জাপানি পার্টনার তাকে নারিতা বিমান বন্দরে রিসিভ করেন৷ পরে নিজেদের গাড়িতে তাকে টোকিওর হোটেলে নামিয়ে দেন৷ পথে জাপানি পার্টনার আমেরিকান ব্যবসায়ীর কাছে জাপানি কায়দায় জানতে চান, টিকেট পেতে সমস্যা হয়নি তো! ব্যবসায়ী জানান, বহু কষ্টে টিকেট পেয়েছেন৷ তাও শেষ ব্যক্তি হিসেবে৷ জাপানি ভদ্র লোক মাথা নুইয়ে দুঃখ প্রকাশ করে সহমর্মিতা জানান৷ পরে জানতে চান, ফিরতি ফ্লাইট কবে? আমেরিকান ব্যবসায়ী ভদ্রলোক জানান, শুক্রবার ফিরতে হবে৷ এরপরে এক মাসেও টিকেট নেই৷

সোমবার আমেরিকান ব্যবসায়ী জাপানি পার্টনারের সাথে বৈঠকে বসেন৷ তবে কোন অগ্রগতি হয়নি৷ মঙ্গলবার বৈঠক হয়, সামান্য অগ্রগতি৷ এভাবে বুধবার কেটে যায়৷ বৃহষ্পতিবার আমেরিকান ব্যবসায়ী উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেন৷ পরদির ফ্লাইট অথচ তেমন কোন অগ্রগতি নেই৷ জাপানিরা জানতেন যে তাকে শুক্রবার ফিরতে হবে৷ তারা ইচ্ছা করে আলোচনায় যাতে কোন অগ্রগতি না হয় সে চেষ্টা করে গেছেন৷ বৃহষ্পতিবার আমেরিকান ব্যবসায়ী বাধ্য হয়ে সময় নির্ধারণ করে দেন৷ তা অবশ্য তার পক্ষে যায়নি৷ জাপানি প্রতিপক্ষের পক্ষে গেছে৷ এরপর জাপানিরা যা বলেছেন তাতেই তার সায় দিয়ে যেতে হয়েছে৷ যে উদ্দেশ্য নিয়ে জাপান গিয়েছিলেন তা মোটেও অর্জিত হয়নি৷ নেগোশিয়েশনে হেরেছেন৷ কারণ তিনি বিমান টিকেটের সংকটের বিষয়টা জাপানি পক্ষকে জানিয়ে দিয়েছিলেন৷ জানিয়েছিলেন তিনি কবে ফিরবেন৷ অথচ তার টিকেটের সংকটের বিষয়টা গোপন রাখা দরকার ছিল৷ যখন জাপানি পক্ষ জানতে চেয়েছে, কখন ফিরবেন? তখন তার বলা দরকার ছিল, আই উড নট ফ্লাই আনটিল এভরিথিং ইজ এগ্রিড৷

চার. মেক সিওর অব ফ্যাক্টস বিফোর নেগোশিয়েশন৷ নেগোশিয়েশনের আগেই ফ্যাক্টগুলো ঠিক করে নিতে হবে৷ যে তথ্যগুলো সঠিক বলে জানা বা প্রমাণ করা যাবে৷ সেগুলোই উপস্থাপন করতে হবে৷ ভালো করে বিষয়টি না জেনে সে সম্পর্কে সংলাপে বসলে হারের সম্ভাবনা প্রবল৷ এটা যতটা না কৌশল তার চেয়ে এটাকে মুলনীতি বলা যেতে পারে৷

পাঁচ. থ্রো ফাইনাল পজিশন৷ নেগোশিয়েশনে নিজের অবস্থান বুঝে নিতে হবে৷ বলটা কার কোর্টে তা দেখতে হবে৷ নিজের অবস্থান শক্ত হলে চূড়ান্ত অবস্থান জানিয়ে দিতে হবে এটাই আমাদের চূড়ান্ত প্রস্তাব৷ এর বাইরে যাওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়৷ টেক ইট অর লিভ ইট৷ প্রতিপক্ষ এতে থমকে যাবে৷ তারা যদি না জানে এটা একটা কৌশল তবে তারা ঘাবড়ে যাবে৷ তাদের অবস্থান নমনীয় করার চিন্তা করবে৷ ছাড় দেবে৷ তবে অবস্থান শক্ত না হলে চূড়ান্ত অবস্থান জানালে বিপদ হতে পারে৷ এছাড়াও প্রতিপক্ষ যদি জানে এটা একটা কৌশল তবে তারাও হুমকি দেবে৷ তবে এতে ঘাবড়ে গেলে চলবেনা৷

প্রফেসর বলছিলেন, দুটি পক্ষের সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে এই কৌশল প্রয়োগ করতে হয়৷ এটা অনেকটা আমাকে ফোন কিনে না দিলে জন্মদিন পালন করবোনা টাইপের বিষয়৷ স্ত্রী বললে স্বামী ফোন কিনে দেবে৷ ছোট ভাই বা পুত্র ফোন কিনে দেয়ার শর্ত দিলে, অনেক সময় বড় ভাই বা বাবা তাতে কান দিতে নাও পারে৷ ছোট ভাই বা পুত্র বার্থ ডে পালন না করলে কিছুই আসে যায়না৷ তবে স্ত্রী বার্থডে পালন না করলে সংসার করা কঠিন হয়ে যাবে৷

ছয়. মেক ওয়ান অব দ্য এজেন্ডা প্রিকন্ডিশন৷ আলোচনার টেবিলে অনেক এজেন্ডা থাকে৷ এর মধ্যে নিজের জন্য সুবিধাজনক কোন এজেন্ডাকে বাছাই করতে হবে৷ বলতে হবে- এটা নিয়ে কোন আলোচনার দরকার সেই৷ এটা পরেরগুলো নিয়ে আলোচনার পূর্ব শর্ত৷ এটা মেনে নিলেই পরেরগুলো নিয়ে সংলাপ চলতে পারে৷ বলতে হবে এটা মানলে সংলাপ সামনের দিকে এগিয়ে নেয়া যাবে৷ এটা সংলাপে একটা নেতৃত্ব দেয়ার প্রচেষ্টা৷ এতে প্রতিপক্ষও একটা এজেন্ডাকে পূর্বশর্ত হিসেবে ছুড়ে দিতে পারে৷ ফলে আলোচনার প্রথমেই প্রতিপক্ষের চাওয়া সম্পর্কে ধারণাও পাওয়া যাবে৷

প্রফেসর বলছিলেন, আমেরিকানরা সিক্স পার্টি টকসে এই কৌশলের প্রয়োগ করেছিল৷ সিক্স পার্টি টকসে ছয়টি দেশ অংশ নেয়৷ চীন, জাপান, উত্তর কোরিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট৷ উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচির ফলে নিরাপত্তা উদ্বেগের একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান খুঁজে বের করার লক্ষ্যে এই ছয় পক্ষের আলোচনা। বেইজিংয়ে ছয় রাউন্ডে ধারাবাহিক বৈঠক হয়েছিল৷ যাই হোক বৈঠকে বসার পর যুক্তরাষ্ট্র প্রথমেই এই কৌশল ব্যবহার করে বলে, কমপ্লিট অ্যাবানডেন্ট অব নিউক্লিয়ার প্রোগ্রাম বাই নর্থ কোরিয়া ইজ দ্য প্রিকন্ডিশন টু সিক্স পার্টি টকস৷ যুক্তরাষ্ট্র বলে, উত্তর কোরিয়া পারমানবিক কর্মসূচি সম্পূর্ণ ত্যাগ না করলে অন্য কোন এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা হবেনা৷ এতে উত্তর কোরিয়া দমে যায়নি৷ তারা একটি এজেন্ডাকে পাল্টা পূর্বশর্ত হিসেবে ঘোষণা করে৷ বলে ম্যাকাওয়ে ব্যাংক অব এশিয়ায় উত্তর কোরিয়ার যে অর্থ আটকে রাখা হয়েছে তা ছাড় না করলে আমরাও সংলাপ করবোনা৷ এটা আমাদের সিক্স পার্টি টকসের পূর্বশর্ত৷ যাই হোক, এই আলোচনা কিন্তু ছয় রাউন্ড চলছিলো৷পূর্ব শর্ত দিয়ে সংলাপ বন্ধ হয়নি৷

শেষকথা:
মজার কথা হলো, সংলাপে কৌশল এমন বিষয় যা প্রতিপক্ষ না জানলে সুবিধা পাওয়া যায়৷ জেনে গেলে পাল্টা ব্যবহার করতে চায়৷ ফলে সুবিধা পাওয়া যায়না৷ প্রফেসর বলছিলেন, বিষয়টা এমন- আমি প্রয়োগ না করি তাতে ক্ষতি নেই৷ তবে অন্যরা প্রয়োগ করলে তার শিকার যাতে না হই৷ নেগোশিয়েশন বলুন, ডায়লগ বলুন বা সংলাপ বলুন; এটা কেন প্রয়োজন জানেন ? এর প্রয়োজনটা খুবই একটা বেসিক বিষয়৷ যখন শক্তি প্রয়োগে সমাধান হয়না, যখন প্রতিপক্ষের সাথে শক্তিতে টেকা যায়না তখন সমাধান টেবিলে হওয়া দরকার৷ সেটাই নেগোশিয়েশন৷ সেটাই সংলাপ৷ যার সাথে শক্তিতে পারা যাবেনা, তার উপর হামাসের মতো শক্তি প্রয়োগ করতে গেলে হামাসের পরিণতি ভোগ করতে হবে৷ এটা বর্তমানে শুধু হামাসের জন্য নয়৷ সবার জন্যই প্রযোজ্য৷

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:০৬

শূন্য সারমর্ম বলেছেন:




"ড: হেনরী কিসিন্জার নেগোসিয়েশন করার সময় সাথে কি পরিমাণ মানুষ নিতেন? সংখ্যায় বেশী, নাকি খুবই কম?

১৩ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৭

সায়েমুজজ্জামান বলেছেন: যুক্তরাষ্ট্রের BATNA এত বেশি যে তাদের নেগোশিয়েশন করতে দলবল লাগেনা। উপসহকারী পর্যয়ের কর্মকর্তারাই যথেস্ট। BATNA কী জিনিস সেটা জানতে গুগল করুন প্লিজ।

আর কিসিঞ্জার ওয়ান টু ওয়ান সিক্রেট নেগোশিয়েশন করতেন। সাথে তার একজন বিশ্বস্ত সহচর থাকতো।

২| ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪১

নয়ন বিন বাহার বলেছেন: বাঙালীর নেগোশিয়েশন টেকনিক নিয়ে একদিন লিখবেন। এখান থেকে কিছু জানতে পারলাম।

১৩ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২০

সায়েমুজজ্জামান বলেছেন: বাংলাতেশের নেগোশিয়েশন কিছু দেখেছি। সময় পেলে লিখবো।
আমার লেখা পগে সুন্দর মন্তব্য করার জন্য কৃতজ্ঞতা।

৩| ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:২২

কামাল১৮ বলেছেন: আপনার লেখায় কিছু শেখার থাকে।

১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:৫০

সায়েমুজজ্জামান বলেছেন: সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
পড়ার জন্য কৃতজ্ঞতা।

৪| ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৩

ঢাকার লোক বলেছেন: টেকনিকগুলো বেশ সুন্দর করে বুঝিয়ে বলেছেন। নিগোশিয়েশনের টেবিলে কাজে লাগবে।
তবে কোমরে জোর থাকলে নিগোশিয়েশনে লাভবান হওয়ার সুযোগ থাকে। চলতি মাসের ভাড়া দেয়ার টাকা নেই, ঘরে খাবার নেই আগামী কালের, এমতাবস্থাতে ঋণ চাইতে গেলে ঋণদাতার শর্ত মেনে নেয়া ছাড়া কি আর করা যেতে পারে? নিগোশিয়েশনের সুযোগ কোথায় ?

১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০১

সায়েমুজজ্জামান বলেছেন: কোমরের জোড় শব্দটা ভালো লিখেছেন। নেগোশিয়েশনের অধিক্ষেত্রে যেটার নাম BATNA বা Best alternative to a negotiated agreement।
একটা উদাহরণ দেই। কোনো একজন এক কোম্পানীর চাকরি ছেড়ে অন্য কোম্পানীতে চাকরির জন্য নেগোশিয়েশন করতে গেছে। আগের কোম্পানীতে সে একশ টাকা পেতো। তার BATNA বা কোমরের জোর হলো একশ টাকা। একশ টাকার কম হলে সে যাবেনা। এই জোরটাই হলো কোমরের জোর।


আমাদের দেশের ভৌগলিকগত অবস্থানের কারণে কিছু কোমরের জোর রয়েছে। সেটি দেখিয়ে কিছু আদায় করা যায় বৈকি!


ভালো থাকবেন। অনেক ধন্যবাদ।

৫| ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:১৬

মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন:


অসাধারণ! এগুলো এখানে না লেখে আমাকে ইমেইল করে দিতে পারতেন! :)

১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

সায়েমুজজ্জামান বলেছেন: আগে বলবেন তো! এখন নিয়ে নিন! B-)

৬| ১৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৮

ঢাকার লোক বলেছেন: "আমাদের দেশের ভৌগলিকগত অবস্থানের কারণে কিছু কোমরের জোর রয়েছে। সেটি দেখিয়ে কিছু আদায় করা যায় বৈকি!"
বৃহত্তর ও শক্তিশালী প্রতিবেশীর পাশে থেকে বরং এর উল্টোটাই তো বেশি দৃশ্যমান ! পানির হিস্যা, ট্রানজিট সুবিধা, বাণিজ্যিক ভারসাম্যহীনতা দূরীকরণ, কোথাও আমাদের "কোমরের জোরের" কোনো নজির চোখে পড়ছে বলেতো মনে হয় না !

১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:১৭

সায়েমুজজ্জামান বলেছেন: ভৌগলিক দৃষ্টিকোণে আমাদের কোমরের জোরটা আসলে দুটি বড় শক্তির পাশে থাকার কারণেই হয়েছে। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নমনীয়তা দেখলেই বুঝতে পারবেন। তারা হয়ত জিএসপি সুবিধা ফেরত দিতে পারে। RAB এর নিষেধাজ্ঞাটাও উঠে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে। ভিসানীতি প্রয়োগ নিঢে তাদের সুর থেমে গেছে। এ অঞ্চলে চীন ও ভারত দুটি বড় শক্তি। তাছাড়া মিয়ানমার হচ্ছে এ অঞ্চলের কাঠাল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এ অঞ্চলে ঢুকতে গেলে বাংলাদেশকে লাগবেই। কারণ পাকিস্তানকে ভরসা করে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষতি ছাড়া লাভ হয়নি। এ কারণে ভারতকেও তারা পুরা আস্থায় রাখতে পারেনা। এখানেই বাংলাদেশের কোমরের জোর। এই জোরেই রোহিঙ্গাদের জন্য কিছু অর্থ সাহায্য পায় বাংলাদেশ।


ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
ভালো থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.