![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
#প্রথম_পর্ব
- পিয়াস, বাবা, আজ কি সারাদিনই ঘুমাবি,,?
- আরেকটু ঘুমাইয়া লই। যাও তো। ডিস্টার্ব কইরো না। (ঘুমের ঘোরে হাই তুলে)।
- অনেক হয়েছে নবাবজাদা, এবার উঠ। আর কত ঘুমাবি,? ১২ টা তো বেজে গেছে।
- মাত্র তো ১২ টা বেজেছে। ১ টা বাজুক। তারপর উঠবো। তুমি যাও তো এখন।
- ঘুমা। যত পারিস ঘুমা। আজ তো তোর বাবা বাসায় নেই। সুযোগ তো পেয়েছিসই। ১টা না তুই ৫টা পর্যন্তই ঘুমা। আমি আর ডিস্টার্ব করতে আসবো না।
কথাগুলো বলেই মা পিয়াসের রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। পিয়াস আবারও নিজেকে ঘুমরাজ্যে নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা চালালো। কিন্তু হঠাৎ কেন যেন মোবাইলটার দিকে ওর নজর পড়লো। দেখলো মোবাইলের স্ক্রিন টা জ্বলে আছে। ঘুমের চোখে কিছুটা আঁচ করতে পারলো যে, কেউ হয়তো ফোন দিয়েছে। (সাইলেন্ট করা ছিলো, তাই রিং হচ্ছিলো না)। মোবাইল টা হাতে নিতেই দেখে প্রিয়ন্তির ফোন।
- হ্যালো। (পিয়াস ফোন টা রিসিভ করে)
- তোর হ্যালোর গুষ্টিরে কিলাই, হারামী, কুত্তা, বিলাই, শয়তান, বান্দর।
- স্যরি রং নাম্বার। আপনি যাদের নাম বললেন, এখানে তাদের কেউই থাকে না।
- একদম ভাব নিবি না বলে দিলাম।
- আশ্চর্য,!! ভাব নিলাম কই,,? সত্যিই তো এখানে কোনো হারামী, কুত্তা, বিলাই, শয়তান বা বান্দর কেউই থাকে না।
- আমি যার সাথে কথা বলছি সে-ই এগুলো সব। তুই-ই এগুলা সব, কুত্তা।
- ও, তাই। জানা ছিলো না।
- তোরে আমি কয়টা ফোন দিছি,,?
- গুনি নাই তো,,!
- সকাল ৯ টা থেকে ফোন দেওয়া শুরু করছি। এ পর্যন্ত কম হলেও ১০০ টার উপরে ফোন দিছি। কই ছিলি এতক্ষণ,? ফোন ধরস নাই কেন,?
- কোথাও যাই নাই তো। আমি তো রুমেই।
- তাহলে ফোন ধরস নাই কেন,? কি করছস এতক্ষণ.?
- তেমন কিছুই না। জাস্ট একটু ঘুমিয়ে ছিলাম। এই আর কি,?
- খুব তো চাপা মারছিলি গতকাল,,!! ১০ টার আগেই ক্যাম্পাসে থাকবো। কই গেলো, তোর সেই চাপা,?
- ইস্,,!! সত্যিই রে আমার একদমই মনে ছিলো না রে।
- আমি আগে থেকেই জানতাম, তুই আজকের এই দিনটাতেও এমন ভুল টা করবি।
- স্যরি। এই কানে ধরছি। আর জীবনে এমন ভুল হবে না। আর হ্যা, শুভ জন্মদিন, বান্ধুবী।
- যাহ্, শয়তান, তোর উইশ আমার লাগবো না। তুই এক্ষুণি ক্যাম্পাসে আসবি। ১০ মিনিট সময় দিলাম। ১ টা সেকেন্ডও যেন দেরি না হয়।
- ১১ মিনিট লাগবে। তুই ওয়েট কর। আমি আসতাছি।
- তুই জীবনেও শুধরাবি না, শয়তান ছেমরা। তারাতারি আয়।
আজ প্রিয়ন্তির জন্মদিন। তাই প্রিয়ন্তির জন্মদিন উপলক্ষে গতকালই কলেজ মাতানো ছয় বান্দরের গ্রুপ প্রিয়ন্তি, পিয়াস, খায়রুল, রিহান, গৌতম ও সায়মা মিলে একটা প্লান করে রাখে। প্লান অনুযায়ী সকাল ১০ টায় ক্যাম্পাসের জামতলায় কেক কাটার কথা। তারপর কিছুক্ষণ আড্ডা মেরে লাঞ্চ করা ও লাঞ্চের পর বিকেল সময়টা একটু ঘুরাঘুরি করার প্লান ছিলো। কিন্ত ইতিমধ্যেই ১২ টা বেজে গেছে। অথচ পিয়াস নবাবজাদার কোনো পাত্তাই নাই।
সকাল থেকে পিয়াস কে ফোন করেও কোনো পাত্তা না পাওয়ায় পিয়াস কে ছাড়াই কেক কাটার জন্য সবাই প্রিয়ন্তিকে জোরাজুরি করছিলো। কিন্তু প্রিয়ন্তি নাছোড়বান্দা। পিয়াস কে ছাড়া ও কখনোই কেক কাটবে না।
পিয়াস, প্রিয়ন্তির বেস্ট ফ্রেন্ড। প্রিয়ন্তি মনে মনে খুব ভালোও বাসে পিয়াসকে। এ কথাটা বাকি চারজন জানলেও পিয়াস কোনোদিনও জানতে পারিনি। বুঝতেও পারেনি কোনোদিন ছেলেটা। প্রিয়ন্তিও কোনোদিন ওর ভিতর জমে থাকা ভালোবাসাটা প্রকাশ করতে পারে নি। এমনকি ওদের চারজনকেও বলতে নিষেধ করে রেখেছে।
এদিকে ও মনে মনে ভেবেছিলো, পিয়াস রাত ১২ টা ০১ মিনিটে হয়তো ওকে বার্থডে উইশ করবে। সবসময় লেট করলেও অন্তত ওর বার্থডে তে ও কোনোভাবেই লেট করবে না। কিন্তু ওর ভাবনাটা কে পিয়াস সম্পূর্ন দুমড়ে চুমড়ে দিলো। প্রিয়ন্তির আজ তাই খুব কষ্ট হচ্ছে। ভাবছে, ছেলেটা এমন কেন,,?
আসলেই পিয়াস কেমন যেন অদ্ভুত টাইপের একটা ছেলে। ওর যখন যেটা ভালো লাগবে সেটাই করবে। কারো কথা মানবে না। এই পৃথিবীতে একমাত্র বাবা ব্যতীত কারো কোনো কথা ও মানতে রাজি না। বাবা কে খুব ভয় পায় ছেলেটা।
এদিকে খায়রুল, রিহান, গৌতম ও সায়মা বারবার প্রিয়ন্তি কে বকছে। প্রিয়ন্তি সব দোষ নিজের ঘাড়ে নিয়ে ওদেরকে মেনেজ করে নিচ্ছে। বারবার নতুন নতুন প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। সবাই প্রিয়ন্তির কথা মানলেও খায়রুল ওর ইমোশনাল কথাবার্তা শুনতে রাজি না। ওর কাজ ও করবেই।
- দেখ, প্রিয়ন্তি। সবাই অপেক্ষা করলেও আমি কিন্তু আর অপেক্ষা করতে পারবো না।
আমার এতো ধৈর্য নেই।
- প্লিজ, খায়রুল, ভাই আমার। রাগ করিস না। ও এক্ষুণি আইসা পড়বো।
- তোমার নাগর তো শুধু তোমার না। তার আরো অনেকে আছে। তাদেরকে সময় দিতে দিতেই তার সব সময় ফুরিয়ে যায়। তোমার জন্য তার সময় হবে না। শুধু শুধু আর অপেক্ষা করে লাভ নেই।
- দেখ, খায়রুইল্লা। পিয়াসের সম্পর্কে আর একটাও বাজে কথা বলবি না।
- কেন,? খুব লাগে। তাই না,?
খায়রুল কিছুটা রাগী ও চারাল টাইপের হলেও মনের দিক থেকে খুবই ভালো একটা ছেলে। ওদের ফ্রেন্ড সার্কেলে সবচাইতে দুষ্টু টাইপের ছেলেও ও-ই। সারাক্ষণ দুস্টামিতে মেতে থাকতে পছন্দ করে। তাই এতক্ষণ অপেক্ষার করার ফাঁকে বাকি চারজন মিলে সময়টাকে মধুর করে নিয়েছে। এখন আবার প্রিয়ন্তির কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিয়ে মেয়েটাকে জ্বালানো শুরু করছে। ছেলেটা এমন ভাবে দুস্টামি করবে যে বুঝার উপায়ই নেই ও-কি দুস্টামিই করছে নাকি সিরিয়াসলি কিছু বলছে। সবসময়ই ও সবাই কে বোকা বানায়।
বলতে বলতে এক গাদা গোলাপ হাতে পিয়াস উপস্থিত। প্রিয়ন্তি মুখ টা ভার করে দাঁড়িয়ে আছে। চোখে মুখে বড্ড অভিমান।
ওর ইচ্ছে করছিলো ছেলেটার গালে দুইটা চড় মেরে লাল করে দিবে। কিন্তু ওর মায়াবী চাহনীতে প্রিয়ন্তি বারংবারই প্রেমে পড়ে যায়। আজও তার ব্যতিক্রম হলো না।
তবে ওর উপর জমে থাকা রাগ ঝাড়ার জন্য প্রতিদিনের ন্যায় ইচ্ছেমতো গালি দিয়ে ওর কানটা মলে দিলো। প্রিয়ন্তির এই শাসন টা পিয়াসের খুব ভালো লাগতো। তাই মাঝে মাঝে কোনো কাজে তারাতারি হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও ও ইচ্ছে করেই লেট করতো।
এরপর কেক কাটলো। কেক কাটা শেষে লাঞ্চ করার জন্য একটা রেস্টুরেন্টে গেলো ওরা।
খাবার অর্ডার দেওয়া হয়ে গেছে। ওরা খাবারের জন্য অপেক্ষা করছিলো। এমন সময় পিয়াসের ফোনে রিং বেজে উঠলো। পিয়াস ফোন টা বের করে দেখলো, ওর বাবা ফোন দিয়েছে। ভয়ে ভয়ে ফোন টা রিসিভ করেই ও রেস্টুরেন্টের বাইরে গিয়ে কথা বলা শুরু করলো।
- হ্যালো, বাবা, আসসালামু আলাইকুম।
- ওয়া আলাইকুম আসসালাম। তুই এখন কোথায়,? তোর সাথে একটা জরুরী কথা আছে।
- বাবা, আমি এখন কলেজে আছি। তুমি কি বলবা, বলো।
- শোন, আজ আমাদের অফিসিয়াল মিটিংয়ে ঘোষনা হয়েছে যে, কিছুদিনের মধ্যেই আমাকে অফিসের কাজে দু'বছরের জন্য অস্ট্রেলিয়া যেতে হবে।
- তাই নাকি,?
- হ্যা। আর আমি চাইলে আমার ফ্যামিলিকেও সাথে নিতে পারবো। তাই আমি ভেবেছি, ফ্যামিলিসহই অস্ট্রেলিয়া যাবো। আর তোকে অস্ট্রেলিয়ার ভালো একটা ভার্সিটিতে ভর্তি করিয়ে দেবো। এখন অফিস কর্তৃপক্ষ জানতে চাচ্ছে আমি কি একা যাবো নাকি ফ্যামিলিসহ যাবো। তোর মায়ের সাথে এ ব্যাপারে আলাপ করেছি। তোর মা সম্মতি দিয়েছে। এখন তুই কি বলিস,,?
- সত্যি,,? আমি অস্ট্রেলিয়ায় পড়ালেখা করবো..!!! বাবা, আজ আমি অনেক খুশি। তুমি এক্ষুণি তাদের সাথে কথা বলে জানিয়ে দাও, তুমি ফ্যামিলিসহ-ই যাচ্ছো।
- ওকে, মাই সান। তাহলে এখন রাখি। বাই।
- বাই।
এই প্রথম পিয়াস আজ ওর বাবার সাথে এতো হেসে কথা বললো। আজ মনে ওর অনেক আনন্দ। খুশিতে আজ ওর পাখা মেলতে ইচ্ছে করছে। বিদেশ গিয়ে পড়ার ওর অনেক দিনের স্বপ্নটা আজ পূরন হবার পথে। এই খুশির সংবাদ টি বেশিক্ষণ চাপা রাখতে পারছিলো না ও। তাই দৌড়ে রেস্টুরেন্টের ভিতরে চলে গেলো ওদের কে এই খুশির খবরটা জানাতে।
- হ্যাল্লো, গাইজ। আজ এই শুভক্ষণে তোমাদের মাঝে আমি আরো একটি সুখবর নিয়ে এসেছি। এইমাত্র মাই ডিয়ার ফাদার আমাকে ফোন করে বললো যে, আমরা কিছুদিনের মধ্যেই অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছি। এবং আমাকে সেখানকার একটা ভার্সিটিতে ভর্তি করিয়ে দিবে। আমার অনেকদিনের স্বপ্নটা খুব শীঘ্রই পূরন হতে যাচ্ছে। তাই আজ আমার চাইতে বেশি খুশি কেউ নয়। এই খুশিতে আজকের ট্রিটের সম্পূর্ন খরচ আমার।
কথাটা শুনেই যেন আকাশ টা মাথায় ভেঙ্গে পড়লো প্রিয়ন্তির উপর। এক মুহুর্তেই স্তব্ধ হয়ে গেলো। সবকিছু কেমন যেন উলোটপালট লাগতে শুরু করলো। এখনই বুঝি মাথা ঘুরে পড়ে যাবে এমন অবস্থা।
বাকিরাও পুরো স্তব্ধ হয়ে গেলো।
পিয়াস কিছু টা অবাক হলো, ওর খুশির খবর শুনে সবাই এমন নীরব হয়ে গেলো কেন,?
- কিরে, কি ব্যাপার,? তোরা কি খুশি হস নাই,,? ওহ, বুঝছি। আমাকে খুব মিস করবি। এজন্য তোদের খারাপ লাগছে। তাই না রে,,?
আরে বোকারা, আমি তো প্রতিদিনই ভিডিও কলে তোদের সাথে আড্ডা দেবো। আর তাছাড়া দেখবি, কিছুদিন গেলে আস্তে আস্তে সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
পিয়াসের ফোনে হঠাৎ আবার ওর মাও ফোন দিচ্ছিলো। আর পিয়াস বারবার কেটে দিচ্ছিলো। এদিকে খাবারও চলে আসলো।
আর খাবার দেখেই প্রিয়ন্তি টেবিল থেকে উঠে গেলো। উঠেই সরাসরি রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে গেলো। পিয়াস কিছুই বুঝে উঠলো না। মেয়েটা হঠাৎ এমন করলো কেন,,?
পিয়াস প্রিয়ন্তির পিছু নিলো। রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে দেখে প্রিয়ন্তি রিক্সাতে উঠছে। দৌড়ে গিয়ে যে-ই রিক্সা টা আটকাতে যাবে তার মধ্যে আবার তার বাবার ফোন। বাবার ফোন কাটার বা রিসিভ না করার দুঃসাহস ওর নেই। তাই বাবার ফোন টা ধরতে গিয়ে প্রিয়ন্তি কে আর আটকানো হলো না।
- হ্যালো, বাবা,, (ক্লান্ত হয়ে হাপিয়ে হাপিয়ে)
- কি ব্যাপার,? তোর মায়ের ফোন ধরছিস না কেন,? আর হাপাচ্ছিস কেন,,?
- না, বাবা। এমনিই। বলো।
- তুই তারাতারি একজন ডাক্তার নিয়ে বাসায় যা। তোর মা নাকি খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আমিও বাসায় চলে আসছি। তবে আমার ফিরতে একটু লেট হতে পারে। তুই তারাতারি যা।
- আচ্ছা, বাবা। আমি এক্ষুণি যাচ্ছি।
চলবে.....
#সাইফ_আরেফিন_বিপুল (ক্ষুদ্র লেখক)...
©somewhere in net ltd.