![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
#পর্ব- ২
কোনো উপায় খুজে না পেয়ে পিয়াস অতি দ্রুত একটি রিক্সা নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেলো। এবং ডাক্তারকে সঙ্গে নিয়ে বাসায় পৌছালো। এর মধ্যে প্রিয়ন্তিকেও কয়েকবার ফোন করেছিলো। কিন্তু ওপাশ থেকে প্রিয়ন্তি বারবার ফোন টি কেটে দিচ্ছিলো। বাসায় পৌছে শেষবারের মতো ও আবারো প্রিয়ন্তি কে ফোন দেওয়ার চেষ্টা করলো। কিন্তু প্রিয়ন্তির ফোন টা ততক্ষণে সুইচড অফ করে ফেলেছে।
ডাক্তার দেখলো, পিয়াসের মায়ের শরীরের কন্ডিশন খুব একটা ভালো না। অবস্থা বেগতিক দেখে ওনাকে দ্রুত হাসপাতাল নিয়ে যাওয়ার জন্য পরামর্শ দিলেন।
পিয়াস ওর বাবাকে ফোন দিয়ে সব জানালো। এবং একটি এম্বুলেন্স এনে মাকে নিয়ে হাসপাতাল গেলো।
হাসপাতাল পৌছে মাকে ভর্তি করিয়ে পাশের একটি বেঞ্চিতে বসলো পিয়াস। বাবাকে ফোন দেওয়ার জন্য মোবাইল বের করতে গিয়ে বুঝতে পারলো যে, তার পকেটে মোবাইল টা নেই। খুব অবাক হলো। সব গুলো পকেট হাতিয়ে দেখলো। কিন্তু এ-কি কোথাও তো মোবাইল টা নেই,,!! দৌড়ে নিচে নামলো। পার্কিং করা এম্বুলেন্সটার ড্রাইভারকে এ ব্যাপারে বললো। তারপর ওটার ভিতর খোজ করলো। কিন্তু আশ্চর্য,!! সেখানেও নেই। তাহলে মোবাইল টা গেলো কোথায়,,?
ড্রাইভারের নাম্বার দিয়ে নিজের ফোন টাতে ফোন দিলো। কিন্তু আশ্চর্য, ফোন টার সুইচড অফ,,!!
এদিকে বাবাও এসে পৌছেছেন হাসপাতালে।
- কি ব্যাপার, তোর ফোন বন্ধ করে রেখেছিস কেন,?
- বাবা, ফোন টা খুজে পাচ্ছি না। মাকে নিয়ে তারাহুরা করে হাসপাতাল আসার সময় কখন, কোথায় যে হারিয়েছি। তাও বুঝতে পারছি না।
- আচ্ছা, আপাতত তোর মায়ের মোবাইল টা তোর কাছেই রাখ। আমি ডাক্তারের সাথে একটু কথা বলে আসি।
- আচ্ছা, বাবা।
পিয়াস মায়ের মোবাইল টা দিয়ে প্রিয়ন্তির মোবাইলে ফোন দিতে চাইলো। কিন্তু ওর তো প্রিয়ন্তির ফোন নাম্বার মুখস্ত নেই। এমনকি বাকি চারজনের কারো নাম্বারও মুখস্ত নেই। তাই কাউকেই কিছু জানাতে পারলো না।
এদিকে বাবা ডাক্তারের সাথে আলাপ করে বিমর্ষ মুখে বের হচ্ছিলেন। বাবাকে দেখেই পিয়াস উঠে দাড়ালো। এবং জিজ্ঞেস করলো,
- ডাক্তার কি বললো, বাবা,?
- বললো, তোর মাকে আমরা খুব শীঘ্রই বাসায় নিয়ে যেতে পারবো।
- আলহামদুলিল্লাহ্।
- আর হ্যা, এখন তোর মায়ের কাছে যাইস না। ডাক্তার নিষেধ করেছে। বলেছে অপারেশনের জন্য নাকি তাকে অজ্ঞান করে রাখা হয়েছে।
- কিসের অপারেশন, বাবা,?
- তেমন কিছু না। তুই চিন্তা করিস না।
- না, বাবা। তুমি আমার কাছে অবশ্যই কিছু লুকাচ্ছো,!! প্লিজ বাবা, বলো। মায়ের কি হয়েছে,,? অপারেশন করতে হবে কেন,?
কিসের অপারেশন করবে, বাবা,? প্লিজ বলো।
- তোর মায়ের হার্ট ব্লক হয়ে গেছে। আইসিইউ তে লাইফ সাপোর্টে রাখতে হবে। ডাক্তার বলেছে, তোর মা আর বেশিদিন পৃথিবীতে থাকবে না রে, খোকা।
( কথাটুকু বলেই অঝোর নয়নে কেঁদে উঠলেন তিনি)।
বাবার মুখে এই কথা শুনে পিয়াস একদম নিশ্চুপ হয়ে গেলো। তার হৃদপিন্ডও যেন হঠাৎ থেমে গেলো। মুখ দিয়ে কথা বেরুচ্ছিলো না। চোখ দিয়ে পানিও আসছে না। ঠিক যেন একটা মূর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে রয়েছে ছেলেটা।
দু'দিন চলে গেলো। ছেলেটা কিছু খায় না। কারো সাথে কোনো কথা বলে না। সারাদিন শুধু আইসিইউ টার পাশের বেলকনিটাতে পড়ে থাকে। মাঝে মাঝে এক পলকে মায়ের বেডটার দিকে তাকিয়ে থাকে। আর বিড়বিড় করে কিছু শব্দ করতে থাকে। কিন্তু মায়ের সামনে যায় না। হয়তো মায়ের সাথে ছেলেটা বড্ড অভিমান করেছে।
এদিকে প্রিয়ন্তির রাগ টাও কমে নি। দুদিন যাবত তাকেও ক্যাম্পাসে দেখা যাচ্ছে না। প্রিয়ন্তি ও পিয়াস দুজনের ফোনই সুইচড অফ। কারো সাথেই যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। তাই খায়রুল, রিহান, গৌতম ও সায়মা ওরা চারজন মিলে ঠিক করলো যে, আগামীকাল ওরা প্রিয়ন্তি ও পিয়াসের বাসায় যাবে।
পরের দিন প্রথমেই ওরা প্রিয়ন্তির বাসায় যায়। গিয়ে যা শুনলো, তাতে ওদের চক্ষু একেবারে চড়কগাছ। ওর মায়ের কাছ থেকে শুনলো, মেয়েটা নাকি হঠাৎ করেই বায়না ধরেছে অস্ট্রেলিয়া গিয়ে পড়াশুনা করবে। এজন্য খাওয়া দাওয়া সব বন্ধ করে দিয়েছে। এই তিন দিনে মেয়েটা না খেয়ে খেয়ে এতটাই অসুস্থ হয়ে পড়েছে যে, এখন বিছানা থেকেও উঠে দাড়াতে পারছে না। ওর বাবাও শেষ পর্যন্ত রাজি হয়েছে ওকেসহ ওদের পুরো ফ্যামিলি অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার জন্য। এইমাত্র উনি নাকি এ কথাটা প্রিয়ন্তির মায়ের কাছে বলে গেলেন।
ওদের চারজনের আর কিছু বুঝার বাকি রইলো না। মেয়েটা পিয়াস কে কত্তটা ভালোবাসে,!! ওকে ছেড়ে থাকতে পারবে না বলে ওর সাথে সাথে নিজেও অস্ট্রেলিয়া চলে যেতে চাচ্ছে। ওরা দুজন অস্ট্রেলিয়া চলে যাবে বলে ওদের চারজনের কিছুটা মন খারাপ হলেও প্রিয়ন্তির ভালোবাসার প্রতি শ্রদ্ধার কারনে ওরা খুব খুশিও হলো। প্রিয়ন্তি তখনো পর্যন্ত জানতে পারেনি যে, সত্যি সত্যি সে-ও অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছে। ওদের চারজনের কাছ থেকেই প্রথম এই গুডনিউজ টা জানতে পারলো। প্রিয়ন্তির মুখেও আজ হাসির ঝর্ণা। অদ্ভুত আনন্দ অনুভূত হতে লাগলো ওর মনের মাঝে। সাথে সাথেই ফোন টা অন করে পিয়াস কে ফোন দিতে চাইলো। কিন্তু এ কি,,? পিয়াসের ফোন তো সুইচড অফ,,!!
তারপর ওরা পাঁচজন সিদ্ধান্ত নিলো যে, এখনই ওরা পিয়াসের বাড়ি যাবে। যেই কথা সেই কাজ। প্রিয়ন্তি দ্রুত রেডি হয়ে নিলো। এরপর প্রিয়ন্তির বাসায় ওরা হালকা নাস্তা করে পিয়াসের বাসার দিকে রওনা হলো। কিন্তু এর আগে তো কখনো ওরা পিয়াসের বাসায় যায়নি। তাই ওরা কেউই ওদের বাসার সঠিক ঠিকানা টা কখনো জানতে পারেনি। শুধু জানতো যে, মিরপুর-১০ এর একটা ফ্লাট বাসায় ওরা থাকতো। ওদের ভার্সিটি থেকে আধা ঘন্টার পথ দূরে। এতটুকুই জানতো।
খায়রুল ওদের পরামর্শ দিলো।
- চল, আমরা আগে মিরপুর-১০ এ যাই। তারপর একটু চেষ্টা চালালেই খুজে বের করতে পারবো, বোধ হয়।
- ঠিক আছে। তাই হোক। (সবাই সম্মতি জানালো)।
সারাদিন অনেক খুজাখুজি করেও শেষ পর্যন্ত পিয়াসের বাসাটা ওরা আর খুজে পায় নি। সেদিনের মতো সবাই বাসায় ফিরে গেলো। ওরা ভাবলো, ছেলেটা কত স্বার্থপর,!! অস্ট্রেলিয়া চলে যাবে বলে এখন থেকেই আমাদের সাথে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দিলো,,!! তাই ওরা ভাবলো, পিয়াস হয়তো ওদের সাথে আর যোগাযোগ রাখতে চায় না বলেই নাম্বার চেঞ্জ করে ফেলেছে।
কিন্তু প্রিয়ন্তির এসব কথা বিশ্বাস হয় না। সারাক্ষণই পিয়াসের বন্ধ ফোন টাতে ট্রাই করতে থাকে। কিন্তু কোনোভাবেই ওকে পায় না। পিয়াসের ফেসবুক একাউন্ট টাও প্রতিদিন চেক করে, নক করে। কিন্তু তিন চার দিন যাবত সেটাও একটিভ না। কোনো সাড়া পায় না। খুব টেনশন হতে থাকে প্রিয়ন্তির। অস্ট্রেলিয়ার যাওয়ার আগে তো অন্তত ওর সাথে একবার হলেও যোগাযোগ করতে হবে। কিন্তু কিভাবে যোগাযোগ করবে, কোনো উপায় খুজে পায় না। মেয়েটা আবারো খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দেয়। অসুস্থ হয়ে পড়ে। আর সারাক্ষণ ভাবে, পিয়াস কি ওদের বা ওর সাথে স্বার্থপরতা করছে নাকি খুব বড় কোনো বিপদে আছে,? মেয়েটা যেন কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলো না।
এদিকে পিয়াসের মায়ের অবস্থাও দিন দিন সংকটাপন্ন হয়ে যাচ্ছে। যতই দিন যাচ্ছে মৃত্যু যেন তাঁর দিকে ততই এগিয়ে আসছে। মায়ের এমন পরস্থিতিতে ছেলেটা পুরো পাগলপ্রায় আর বাবা আইসিইউর বিল দিতে দিতে জমানো সব টাকা-পয়সা শেষ করে দেউলিয়া হওয়ার পথে। আজ সতেরো দিন যাবত তিনি তার চাকরীতেও জয়েন করেন না। সারাদিন বাবা ছেলে হাসপাতালের বেলকনিতেই পড়ে থাকে। মাঝে কয়েকবার গ্রামের বাড়ি থেকে পিয়াসের ফুপি ও ছোট চাচা এসেছিলো। পিয়াস কে তারা তাদের সাথে তাদের গ্রামের বাড়ি নিয়ে যেতে চেয়েছিলো। কিন্তু পিয়াস তার মাকে ছেড়ে কোথাও যাবে না। তাই পাগলের মতো হাসপাতালের বেলকনিটাতেই পড়ে থাকে।
চলবে....
#সাইফ_আরেফিন_বিপুল (ক্ষুদ্র লেখক)....
©somewhere in net ltd.