![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
#পর্ব- ৪
পিয়াসের হাতটাকে প্রিয়ন্তি আরো শক্ত করে ধরলো। হঠাৎ তাকিয়ে দেখে পিয়াসের চোখে অশ্রুজল। প্রিয়ন্তি ওড়নাটা এগিয়ে জলটুকু মুছে দিলো। কিন্তু নিজের চোখের জলটাকে কিছুতেই আটকে রাখতে পারছিলো না। পিয়াস নীরব দৃষ্টিতে প্রিয়ন্তির দিকে তাকিয়ে আছে। কিছু বলতে চেয়েও যেন বলতে পারছে না।
- এই বোকা, তুই কি আমায় চিনতে পারছিস না,? আমি তোর প্রিয়ন্তি। খুব তো বলতি, সারাজীবন পাশে থাকবি। এখন কেন এমন করছিস,? আমার জন্য কি তোর একটুকুও মায়া হয় না,,?
পিয়াসের কোনো জবাব নেই। প্রিয়ন্তি একা একাই বলে যাচ্ছিলো।
- জানিস, তোকে বলবো বলে কত কথা জমিয়ে রেখেছি,? তোকে নিয়ে দেখবো বলে কত স্বপ্ন কুড়িয়ে রেখেছি,? তুই কি বুঝিস না, তোকে ছাড়া এই প্রিয়ন্তি যে কতটা একা,! তোকে ছাড়া একেক টা মুহুর্ত আমার কতটা বেদনাদায়ক,! তুই বুঝবি কি করে,? তুই তো কখনো ভালোবাসিস নি। ভালো তো আমিই তোকেই বেসে গেছি। কিন্তু কোনোদিন বলার সাহস পায়নি। ভেবেছিলাম, কোনো এক স্নিগ্ধ বিকেলে মেঠো পথ পেরিয়ে স্রোতধারায় ক্লান্ত এক নদীর পাড়ে দুজনে হাটতে হাটতে তোকে আমার ভালোবাসার কথাগুলো বলবো। কিন্তু দেখ, আমার ভাগ্য কতটা অসহায়,! তুই যখন আমার কথাগুলো বুঝতি। তখন বলতে পারিনি। একটা স্নিগ্ধ বিকেল আর একটা প্রবাহমান নদীর আশায় কথাগুলো বুকে চেপে রেখেছিলাম। আর আজ আমার কথাগুলো বুঝার শক্তি তোর নেই। নেই কোনো স্নিগ্ধ বিকেল, মেঠো পথ বা প্রবাহমান নদী। তবুও আজ সব বলার জন্য ব্যাকুল হয়ে যাচ্ছি। কি হবে আজ তোকে এসব বলে,? তুই কি বুঝবি, তোর জন্য ছটফট করে নিদ্রাহীন আমার প্রতিটা রাতের অব্যক্ত কথাগুলো,? তুই কি আজ বুঝবি, আমার প্রতিটা হৃদকম্পনের সাথে বেজে ওঠা আর্তনাদ গুলোর শব্দ কতটা ভয়ানক,? জানি, তুই বুঝবি না। তবুও আজ আমি বলার জন্য ছটফট করছি। কিন্তু কেন বলছি, তোকে এসব কথা,? কেন,,? হ্যা, তবুও আমি বলবো। আজ আমি হালকা হবোই। এত অব্যক্ত কথার ভার আমি আর সইতে পারবোনা। জানিস, আমি আগামীকাল তোকে খুঁজার জন্য অস্ট্রেলিয়া যাবো। খুব আশ্চর্যের বিষয়, তাই না,? তুই তো এখানে,,!! তাহলে আমি কেন যাবো অস্ট্রেলিয়া, বল,,? আমি তো বিদেশে পড়া নিয়ে স্বপ্ন দেখি না। আমার সব স্বপ্ন তো তোকে ঘিরে।
এপাশ থেকে পিয়াস কোনো উত্তর দেয় না। হয়তো দিতে চায়, কিন্তু পারে না।
কিন্তু প্রিয়ন্তি নিজে নিজেই কথা গুলো অনবরত বলে যাচ্ছিলো।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলো। ওরা চারজন প্রিয়ন্তিকে ডাকলো। বিদায় নিয়ে চলে যাবে ওরা। কিন্তু পিয়াস কে এ অবস্থায় রেখে ওকে ছেড়ে প্রিয়ন্তির যেতে একদমই ইচ্ছে করছিলো না। যাওয়ার সময় পিছু ফিরে ফিরে তাকাচ্ছিলো। আর পিয়াস অসহায় নীরব দৃষ্টিতে ওদের চলে যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকে। ছেলেটা যেন ওদের কিছু বলতে চায়। কিন্তু বলতে পারছিলো না।
বাসায় এসে খুব কান্না পাচ্ছিলো প্রিয়ন্তির। ও ওর মাকে সব ঘটনা খুলে বললো।
- কিন্তু মা, এসব ভেবে এখন আর কি হবে,? কাল আমাদের ফ্লাইট। তুই তো এখন চাইলেও পারবি না, পিয়াসের পাশে গিয়ে দাড়াতে।
- মা, আমি পিয়াস কে খুব ভালোবাসি। ওকে ছাড়া আমি এক মুহুর্তও থাকতে পারবো না। জানো মা, ওকে ছাড়া থাকতে পারবো না বলেই যেদিন জানতে পারলাম ও অস্ট্রেলিয়া চলে যাবে, সেদিন থেকে আমিও অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার জন্য পাগল হয়েছি। কিন্তু এখন আমি অস্ট্রেলিয়া কেন যাবো,? কার জন্য যাবো,? আমি অস্ট্রেলিয়া যাবো না, মা। আমি আমার পিয়াসের পাশে থাকতে চাই। আমি ওকে সুস্থ্য দেখতে চাই। আমাকে একটু সুযোগ দাও মা। আমি আমার ভালবাসা ও সেবা-শুশ্রুষা দিয়েই ওকে সুস্থ্য করে তুলতে চাই। তুমি বাবাকে বলে অস্ট্রেলিয়া যাওয়া বন্ধ করো, প্লিজ মা, প্লিজ।
- তোর বাবা তোর কথায় এতো কষ্টে সব বন্দোবস্ত করলো। আর তুই এখন এসব কি বলছিস,?
- প্লিজ মা, একটু বুঝার চেষ্টা করো।
- তোর বাবা এসব কথা শুনলে কিছুতেই তা মেনে নিবে না। তার চেয়ে বরং তুই পিয়াসের কথা ভুলে যা, মা। অস্ট্রেলিয়া গিয়ে ভালোভাবে পড়াশুনা করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত কর।
- ওকে, তোমাকে বলে আর লাভ নেই। তোমাদের যা ইচ্ছে তাই করো।
- পাগলামী করিস না, মা। যা, ঘুমাতে যা। কাল সকালে উঠে আবার সবকিছু গুছাতে হবে।
প্রিয়ন্তি ভাবছে, ও এখন কি করবে,? ও কোনো পথ খুজে পাচ্ছে না। যত যাই হোক, পিয়াস কে ছেড়ে ও অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছে না। আপাতত এটাই ওর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া যাওয়া রোধ করবে কিভাবে,? সে উপায় তো ওর জানা নেই। অনেক ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিলো যে, ভোর হওয়ার পূর্বেই ও বাড়ি থেকে পালাবে। যেই কথা সেই কাজ। পালিয়ে যাওয়ার জন্য সকল প্রস্তুতি ও রাতের মধ্যেই সেরে নিলো।
বিছানায় গা এলিয়ে শুয়ে আছে। কিন্তু দু'চোখ একেবারেই নির্ঘুম। রাতভর এপাশ-ওপাশ করতে করতে ঘড়ির কাটা ঠিক যখন ৩ টা। তখনই প্রিয়ন্তি নিজেকে শেষবারের প্রস্তুত করে নিলো। গুটি গুটি পায়ে নিভৃতে বাড়ি থেকে বের হচ্ছিলো। বের হওয়ার পূর্বে বাবা-মায়ের রুমটাতে একটু উঁকি দিলো। ইচ্ছে হচ্ছিলো দু'জনের পায়ে একটু সালাম করবে। কিন্তু খুব ভয় হচ্ছিলো। তাই পারলো না। ধীরে ধীরে বাড়ির বাইরে পা রাখলো। গেইটের দারোয়ান টা তখন গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন।
হ্যা, অবশেষে হাফ ছেড়ে বাঁচলো। ও এখন বাড়ি থেকে সম্পূর্ন বাইরে। বাস স্টপে এসে বসে রইলো।
ভোর হলো। চারদিকে পাখিগুলো কলতান শুরু করে দিলো। তাদের মধুর কন্ঠে যেন জানান দিচ্ছে, এগিয়ে যাও প্রিয়ন্তি। তোমার ভালোবাসাকে রক্ষা করো। তুমি পারবে প্রিয়ন্তি, তুমি পারবে। প্রিয়ন্তি দিনের প্রথম বাসটাতে চেপে বসলো। মুন্সীগঞ্জের উদ্দেশ্যে বাস ছাড়লো সকাল ৭ টায়। ৯ টার মধ্যেই প্রিয়ন্তি পিয়াসের বাসায় গিয়ে পৌছলো।
পিয়াসের বাসায় পৌছেই প্রিয়ন্তি ছুটে গেলো পিয়াসের কাছে। কিন্তু অই রুম টা বন্ধ পেলো। প্রিয়ন্তি পিয়াসের বাবার কাছে হাত জোর করে বললো,
- আঙ্কেল, আমি পিয়াস কে খুব ভালোবাসি। ওকে ছেড়ে থাকতে পারবো না বলে ও অস্ট্রেলিয়া যাবে শুনে আমিও অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার জন্য সব রকম প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। আজ আমার ফ্লাইট ছিলো। কিন্তু যে অস্ট্রেলিয়াতে আমার পিয়াস নেই, সেই অস্ট্রেলিয়াতে গিয়ে আমি কি করবো.?
তাই আমি বাসা থেকে পালিয়ে এসেছি। প্লিজ, পিয়াস কে আমার ভালোবাসা দিয়ে সুস্থ্য করার সুযোগ টুকু দিন আমায় প্লিজ।
- কিন্তু তোমার বাবা মা তো তোমায় অনেক খুজবে। তাদের মনে কষ্ট দিচ্ছো কেন,?
- আজকের দিন টা যাক। তারপর আমার আর কোনো চিন্তা নেই। অন্তত আমি অস্ট্রেলিয়া যেতে চাই না। পিয়াসের পাশে থাকতে চাই। আমার বিশ্বাস, আমি পারবো। আমি পারবো, আমার পিয়াসকে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে। প্লিজ, আমায় ফিরিয়ে দেবেন না। আমাকে এ সুযোগটুকু দিন, প্লিজ।
- কিন্তু....
- না। আর কোনো কিন্তু নয়।
- আচ্ছা, যাও তোমার পিয়াসের কাছে।
এদিকে প্রিয়ন্তিকে খুজে না পেয়ে ওর বাবা-মা দু'জনেরই প্রায় দিশেহারা অবস্থা। অনেকবার ওর ফোনে ট্রাই করা হলে ফোনটি সুইচড অফ পায়। প্রিয়ন্তির মায়ের আর বুঝতে কিছু বাকি রইলো না। তিনি প্রিয়ন্তির বাবার কাছে সব বললেন। নিশ্চয়ই তাদের মেয়েটা পিয়াসের কাছে ছুটে গেছে। অনেক কষ্টে খোজ নিয়ে পিয়াসের বাসা খুজে বের করলেন তাঁরা। অস্ট্রেলিয়ার ফ্লাইট কেন্সেল করে দিলেন ওর বাবা। মেয়ের খোঁজে ছুটে গেলেন পিয়াসের বাসায়।
প্রিয়ন্তি নিজ হাতে পিয়াস কে খাইয়ে দিচ্ছিলো। ছেলেটা অসহায়ের মতো শুধু ওর দিকে তাকিয়ে থাকে। আর কি যেন বলতে চায়। কিন্তু পারে না। প্রিয়ন্তি এই পাগল টার মাঝেই নিজের সকল সুখ খুজে নিয়েছে। ওর মুখে এক বিন্দু পরিমাণ হাসির জন্য ও এক সিন্ধু পরিমাণ কষ্ট ভোগ করতেও প্রস্তুত আছে। তাই তো নিজের সমস্ত শখ-আহ্লাদ, বিলাসিতা বিসর্জন দিয়ে আজ ছুটে এসেছে নিজের পরম ভালোবাসার কাছে। ওর পৃথিবীর সব সুখ যেন অই পাগল ছেলেটার মায়াবী চোখ দুটোতে লুকিয়ে আছে।
এরই মধ্যে প্রিয়ন্তির বাবা-মা পিয়াসের বাসায় এসে পৌছেছেন। প্রিয়ন্তি ওনাদের দেখেই নিজেকে আড়াল করার ব্যর্থ প্রয়াস চালালো। কিন্তু মায়ের চোখ সে দৃশ্যটা এড়াতে পারেনি। প্রিয়ন্তি ওর বাবা-মায়ের কাছে এলো। ওনাদের পা ধরে ক্ষমা চাইলো ও অনেক কান্নাকাটি করলো। পিয়াসের পাশে থাকার সুযোগটুকু দেওয়ার জন্য হাতজোর করে ভিক্ষা চাইলো। বাবা, প্রিয়ন্তির মাথায় হাত বুলালেন। নিজেও বসে পড়লেন। মেয়েটাকে বুঝালেন।
- আমরা তোর পর কেউ রে, মা,,? আমরা কি তোর সুখটা চাই না,?
- বাবা, আমি পিয়াস কে ছেড়ে কোথাও যেতে পারবো না। আমি আমার পিয়াস কে আবার স্বাভাবিক দেখতে চাই। ওকে সুস্থ্য করে তোলার দায়িত্বটুকু নিতে চাই। প্লিজ, বাবা আমাকে বাঁধা দিও না।
- আরে বোকা মেয়ে, আমরা তো চাই-ই তুই সুখে থাক। অবশ্যই, তুই পিয়াসের পাশে থাকবি। এবং আমার দৃঢ় বিশ্বাস, তুই পারবি তোর সমস্ত ভালোবাসা দিয়ে ওকে সুস্থ্য করে তুলতে।
কথাগুলো বলেই বাবা-মেয়ে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করলো। প্রিয়ন্তি মা নিজের চোখের জলটুকু মুছে নিলেন।
দূর থেকে পিয়াসের বাবা এ দৃশ্য দেখে তাদের নিকটে আসলেন। প্রিয়ন্তির বাবা-মা কি নিয়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলেন।
চলবে.....
#সাইফ_আরেফিন_বিপুল (ক্ষুদ্র লেখক)...
©somewhere in net ltd.