![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
#পর্ব- ১
আয়ান ও কুশল দুই বন্ধু। দুজনেই ভার্সিটির হোস্টেলে থেকে পড়াশুনা করছে। ওরা একে অপরের রুমমেটও। আয়ান কিছুটা চতুর ও চঞ্চল হলেও পড়ালেখার চেয়ে মেয়ে পটানোতে ছিলো বেশি দক্ষ। খুব সহজেই যেকোনো মেয়েকে ওর সান্নিধ্যে নিয়া আসার এক অদ্ভুত ক্ষমতা আছে ওর। একসাথে ৭-৮ টা প্রেম চালিয়ে যেতেও ও হিমশিম খায় না। এ পর্যন্ত কতগুলো মেয়েকে যে ওর প্রেমের ফাঁদে ফেলেছে, তার কোনো ইয়ত্তা নেই। এদের মধ্যে কারো কারো সাথে তো রুম ডেটও করেছে। কিন্তু বেলাশেষে সবাইকেই ওর অবহেলার পাত্র হয়ে রিক্ত হস্তে ফিরে যেতে হয়। আর অন্যদিকে কুশল পড়ালেখার ক্ষেত্রে ছিলো প্রখর মেধাবী কিন্তু মেয়েদের ব্যাপারে ছিলো খুবই ভীতু এবং স্বভাবে একেবারে সহজ-সরল।
একদিন রাতে ওরা যখন গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন, হঠাৎ করেই একটা বিকট শব্দে আয়ানের ঘুম ভেঙ্গে যায়। আয়ান কুশলকে ডাকলো। কিন্তু কুশল উঠলো না। শব্দ টা আবারো হলো। কিন্তু এ-কি এতো বিকট শব্দেও কুশলের ঘুম ভাঙছে না, কেন,? আয়ান আবার কুশল কে ডাকলো। এবার কুশল বিরক্তিকর একটা ভাব নিয়ে চোখ কচলাতে কচলাতে উঠলো।
- কিরে, এতো রাতে ডাকাডাকি করছিস কেন,,?
- শব্দটা কি তুই শুনিস নি,?
- কিসের শব্দ,?
- কেমন যেন একটা ভয়ংকর ও বিকট শব্দ আসতাছে বাইরে থেকে।
- দেখ, প্লিজ অযথা ভয় দেখানোর চেষ্টা করবি না। ঘুমাতে দে।
- আরে সত্যিই আমি শব্দ টা শুনেছি। এইতো আবারো শব্দটা হলো। একটা মেয়ের চিৎকারের শব্দ। তুই কি শুনিস নি,,?
- যাহ্, মজা করবি না। আমি ঘুমাইলাম। আর একটাও ডাক দিবি না।
এই বলে কুশল আবার ঘুমিয়ে পড়লো। কিন্তু আয়ানের মনে কৌতুহল বাড়তেই লাগলো। চিৎকারের শব্দটা এবার অনেকটা গোঙানির মতো বের হতে লাগলো। আয়ান ধীরে ধীরে যেদিক থেকে শব্দটা আসছিলো, সেদিকে হাটতে লাগলো। অনেক খুজাখুজি করলো। কিন্তু শব্দটা কোথা থেকে আসছে তার কিছুই বুঝতে পারলো না। গোঙানির শব্দটাও কিছুক্ষণ পর বিলীন হয়ে গেলো। আয়ানও রুমে ফিরে আসলো। ঘুমিয়ে পড়লো।
পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে আয়ান গতরাতের কথা কিছুই মনে করতে পারছে না। কুশল তাকে জিজ্ঞেস করলো
- গতরাতে কোনো শব্দ কি সত্যিই হয়েছিলো,?
- শব্দ,!! কিসের শব্দ,?
- আমি জানতাম তো, তুই আমার সাথে দুস্টামি করে আমাকে ভয় দেখানোর জন্য মিথ্যে বলেছিলি,,!!
- সত্যি, দোস্ত। আমি এর কিছুই জানিনা। তুই কি বলছিস,? আমি তোকে ভয় দেখাতে যাবো কেন,?
- হইছে, হইছে। আর ভণিতা করতে হবে না। ক্লাসের সময় হয়ে গেছে। তারাতারি রেডি হ।
আয়ান কুশলের কথায় খুব অবাক হলো। সত্যিই কি রাতে এমন কিছু ঘটেছিলো,? কিছু যদি না-ই ঘটে তাহলে ও কিসের শব্দের কথা বললো? আয়ান মনে করার চেষ্টা করলো। কিন্তু কিছুই মনে করতে পারছে না।
পরদিন রাতেও সেই একই ঘটনা। সেদিন রাতেও অই একই রকম আওয়াজেই আয়ানের ঘুম ভেঙ্গে যায়। ও ধীরে ধীরে বাইরে বের হয়। কিন্তু কিছু দেখতে পায় না। রুমে প্রবেশ করার সময় পাশের দেয়াল টাতে ওর চোখ পড়তেই ও থমকে গেলো। দেয়ালটাতে লাল রঙে বড় করে লিখা "চিরকুট টা তোমার জন্য"। লিখাটার রঙ গুলো অনেকটা রক্তের মতো বেয়ে বেয়ে পড়ছে। আয়ান বুঝলো, সম্ভবত ওটা কোনো রঙ নয় ওটা রক্ত-ই। আয়ান চিরকুট টা খুজতে লাগলো। খুজতে খুজতে অই দেয়াল টার নিচেই একটা চিরকুট পেলো। চিরকুট টা হাতে নিলো। কিন্তু পড়ার সাহস পাচ্ছিলো না। হাত-পা থরথরে কাপছিলো। চিরকুট টা নিয়ে ও রুমে ফিরে গেলো। চিরকুট টা পড়ার জন্য রুমের লাইট জ্বালালো। চিরকুটটা মেলতেই ওর চক্ষু চড়কগাছ। হাতের লিখাটা খুব পরিচিত পরিচিত লাগছে। কিন্তু ঠিক ধরতে পারছে না। আয়ান পড়া শুরু করলো:
"আয়ান, নিশ্চয়ই ভালো আছো। আমিও চাই, তুমি ভালো থাকো। কিন্তু তোমাকে ছাড়া যে, আমি ভালো নেই। সেটা তোমাকে কিভাবে বুঝাবো,? তোমাকে দেখতে খুব ইচ্ছে হয়। তাইতো প্রতিরাতেই তোমার কাছে ছুটে আসি। কিন্তু তোমার অই বুকে মাথা রাখার সাহসটা পাই না। আমি জানি, এই চিরকুট টা পড়ার সময় তুমি খুবই অবাক হচ্ছো। ভাবছো, কে আমি,? অবাক তো হবেই। কারন আমার মতো এমন করে তোমাকে তো অনেক মেয়েই লিখে। তুমি যদি শুধু একজন কে ভালোবাসতা, তাহলে আমায় ঠিকই চিনতা। যাই হোক, তুমি সুখে আছো। এটা দেখেই আমি খুশি। আর আমি কে সেটা খুজার প্রয়োজন নেই। আমি নিজেই একদিন তোমার কাছে ধরা দেবো। আর হ্যা, তোমার জন্য একটা দুঃসংবাদ, আগামীকাল সকালে ঘুম থেকে উঠার পর তুমি একটা মৃত্যুসংবাদ পাবে। কিন্তু যেখান থেকে মৃত্যুসংবাদ আসবে তুমি সেখানে যাবে না। তুমি এখানেই থাকবে। আমি আগামীকাল আবার আসবো। নতুন কোনো দুঃসংবাদের চিরকুট নিয়ে। তৈরি থেকো।"
আয়ান পড়া শেষ করে নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে পারছিলো না। ও খুব ভয় পেয়ে গেলো। ভয়ে কুশলকেও কিছু বললো না। ঘড়িতে তখন রাত ৩ টা বেজেছে। আয়ানের চোখে আর ঘুম নেই। এপাশ ওপাশ করতে করতে সকাল হলো। সকালের একটু আগেই আয়ান ঘুমিয়ে পড়ে।
সকাল ১০ টায় কুশলের ডাকে আয়ানের ঘুম ভাঙ্গে।
- এই আয়ান, কি হলো,? আজ কি ক্লাসে যাবি না,?
- কেউ কি মারা গেছে রে,?
- কে মারা যাবে,? ঘুম থেকে উঠেই কিসব আবোল-তাবোল বকছিস,,? স্বপ্নে কি খারাপ কিছু দেখেছিস,?
আয়ান কোনো উত্তর না দিয়ে ওয়াশরুমের দিকে যেতে লাগলো। এর মধ্যেই ওর ফোনে ফোন আসলো। ওর মা ফোন করেছে।
- হ্যালো, মা।
- (কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে) হ্যা, বাবা। আজ সকালে তোর বড় মামা মারা গেছে। তুই তারাতারি তোর মামার বাসায় চলে আয়।
খবরটা শুনে আয়ান একেবারে নিস্তব্দ হয়ে গেলো। ভয়ে গলাটা শুকিয়ে আসছিলো। মাকে কি বলবে ভেবে পাচ্ছিলো না। ভেবে পাচ্ছিলো না, মামাকে শেষবারের দেখতে যাবে কিনা,? কিন্তু চিরকুটটাতে তো ওকে যেতে মানা করেছিলো। ও কিছুই ভেবে পাচ্ছে না। তাই আয়ান ওর মাকে পরীক্ষার অজুহাত দেখিয়ে না যাওয়ার কথা জানালো।
- কিরে,? কি হয়েছে,? আন্টি কি বললো,?
- আমার বড় মামা মারা গেছে।
- তার মানে তোর দুঃস্বপ্নটাই সত্যি হলো। কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব,?
আয়ান কুশলকে সব খুলে বলতে চাইলো। কিন্তু ও ভেবে দেখলো, কুশল এসব কথা শুনলে হয়তো ওর সাথেই আর থাকবে না। কারন ছেলেটা এমনিতেই অনেক ভীতু। তাই আয়ান কুশলকে চিরকুটের ব্যাপারে কিছুই জানালো না।
পরেরদিন রাতে আয়ানের চোখে ঘুম নেই। নতুন কোনো দুঃসংবাদের ভয় ওর চোখের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। রাত যখন ২ টা। সেই শব্দ আবারো। আয়ান ভয়ে কেপে উঠলো। আজ বের হওয়ার সাহস পাচ্ছে না। শব্দটা আরো তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। আজ হলের আশেপাশের কুকুরগুলোও বেশ ডাকাডাকি শুরু করেছে। আয়ান বের হতে চাচ্ছিলো না আবার কেন যেন না বের হয়ে থাকতে পারছিলো না। আয়ান উঠে দাড়ালো। হাটতে হাটতে আবারো সেই দেয়ালটার নিকট গেলো। সেই একই লেখা। একই রক্ত। দেয়াল টার নিচেই চিরকুট টা পড়ে আছে।
চলবে....
©somewhere in net ltd.