নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লিখালিখির ভুবনে আমি এক ক্ষুদ্র লেখক।

সাইফ আরেফিন বিপুল

সাইফ আরেফিন বিপুল › বিস্তারিত পোস্টঃ

চিরকুট

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ২:৩৪

#পর্ব-২

ভয়ে ভয়ে আয়ান চিরকুটটা হাতে নিলো। চিরকুট হাতে ওর সারা শরীর কাপছিলো। গা ছমছম করছে। ধীরে ধীরে নিজের রুমের দিকে এগুতে লাগলো। আবারো একটি ভয়ানক শব্দে ওর পা থেমে যায়। ও পিছন ফিরে তাকায়। কিন্তু কিছুই দেখতে পায় না। চিরকুটটা ওর হাত থেকে পড়ে যায়। চিরকুট টা তোলার জন্য যখন ও কুঁজো হলো তখনই আবার একটা শব্দ হয়। ও চিরকুটটা হাতে নিয়ে শব্দের উৎপত্তিস্থলটা খুজতে থাকে। কিন্তু কিছুই বুঝে উঠতে পারে না। তাই হাশফাশ কিছু না ভেবে রুমের দিকে হাটতে থাকে। রুমের লাইট জ্বালিয়ে চিরকুটটা পড়ার জন্য ওটার ভাঁজ খুলতে থাকে।

"আয়ান,
নিশ্চয়ই আজ তুমি ভালো নেই। আমি জানি, তোমার মনের মাঝে এক অদ্ভুত রকমের ভয় কাজ করছে। নিশ্চয়ই আমি কে সেটা জানার কৌতুহলটা তোমার আরো বেড়ে গেছে। কৌতুহল বাড়িয়ে লাভ নেই। বলেছি তো, একদিন না একদিন দেখা হবেই আমাদের। সেই দিন পর্যন্ত যে তোমাকে অপেক্ষা করতে হবে। আরো ভয় পাচ্ছো এই ভেবে যে, আজ আমি আবার কোন দুঃসংবাদের চিরকুট পাঠালাম। তাই না,?
হ্যা, অবশ্যই তোমার জন্য রয়েছে নতুন এক দুঃসংবাদ। আগামীকাল তোমার বাবার কারখানায় আগুন লাগবে। এবং এতে তোমাদের পরিবার আর্থিকভাবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হবে। শুধু তা-ই নয়। তোমার বাবার শরীরেও আগুন লাগবে। কিন্তু অল্পের জন্য এ যাত্রায় তিনি বেঁচে যাবেন। তুমি তোমার বাবাকে হাসপাতাল ভর্তি করিয়ে সাথে সাথে আবার এখানে ফিরে আসবে। আমি আগামীকাল আবার আসবো।"

পরদিন সকাল থেকেই আয়ান খুব ছটফট করতে শুরু করলো। খুব ভয় কাজ করছিলো। ওর সাথে কেন এমন হচ্ছে,? কে এই দুঃসংবাদদাতা,? কোনো মনুষ্যকুলের পক্ষে কি এরকম ভবিষ্যৎবাণী আদৌ সম্ভব,?
ভাবতে ভাবতেই মায়ের ফোন আসলো। আয়ানের আর বুঝতে বাকি রইলো না যে মা কেন ফোন করেছে। নিশ্চয়ই দুর্ঘটনাটা ঘটে গেছে। কম্পিত হাতে ফোনটা রিসিভ করলো।
- হ্যালো, মা।
- হ্যালো। বাবা, তুই তারাতারি বাসায় চলে আয়। তোর বাবার কারখানায় আগুন লেগেছে।
- বাবা কোথায়, মা,,?
- তোর বাবার তো কারখানায়ই থাকার কথা ছিলো। কিন্তু অগ্নিকর্মীরা বললো, সকল অগ্নিদগ্ধদের উদ্ধার করা হয়ে গিয়েছে। ভিতরে নাকি আর কেউ নেই। এদিকে তোর বাবার ফোনটাও বন্ধ।
- মা, তুমি অগ্নিকর্মীদের বলো, ভালো করে খুজতে। বাবা ভিতরেই আছে। আমি এখনই আসছি।

অগ্নিকর্মীরা পুরো কারখানা খুজলেন। কিন্তু আয়ানের বাবার কোনো সন্ধান পেলেন না। আয়ানও এসে পড়েছে এরই মধ্যে। এসেই জ্বলন্ত আগুনের মধ্যে ঝাপিয়ে পড়লো বাবাকে খুজার জন্য। অবশেষে আশঙ্কাজনক অবস্থায় বাবাকে উদ্ধার করলো ও। দ্রুত হাসপাতাল নিয়ে গেলো। হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করিয়ে চিরকুটের শর্তানুযায়ী আবার হোস্টেলে ফিরে গেলো।

এ অবস্থায় আয়ানের ভয় কেটে বরং চিরকুটদাতার প্রতি প্রচন্ড রাগ ও ক্ষোভ তৈরি হলো। ওর সাথে কেন এমন হচ্ছে,? কী অপরাধ ওর,? যেভাবেই হোক, ওর সাথে ওর দেখা করতেই হবে। জিজ্ঞেস করতেই হবে, ওর সাথে কেন এমনটা করছে সে,?

সন্ধ্যার পর থেকেই আয়ান নিজের ভিতর শক্তি ও সাহস তৈরি করার জন্য রিহার্সাল শুরু করলো। কিন্তু ভেবে পাচ্ছিলো না, কিভাবে দেখা করবে অই অশরীরিটার সাথে। ভাবতে ভাবতে মাথায় একটা বুদ্ধি আঁটলো। অশরীরিটার উদ্দেশ্যে আয়ানও আজ চিরকুট লিখবে। যেই ভাবা সেই কাজ। একটা নীল কাগজ নিয়ে আয়ান লিখা শুরু করলো:

"হে, অশরীরি। আমি জানিনা, তুমি কে,? হয়তো মানবজাতির কেউ নও। কিন্তু তুমি যে-ই হও না কেন,? আমার সাথে কেন তুমি এমন করছো,? প্লিজ, একটিবার আমার সামনে এসে আমায় দর্শন দাও। আমাকে এরকম আতঙ্কে রেখে তোমার কি লাভ,? আমি তোমার কি এমন ক্ষতি করেছি,? আজ তোমাকে দর্শন দিতেই হবে। হ্যা, দিতেই হবে।"

রাত গভীর হলো। আবারো সেই সময় আসলো। সেই রাত ২টা। সেই শব্দ। কিন্তু আজ অই শব্দটার সাথে কেমন যেন নূপুরের বাজনারও একটা আওয়াজ ভেসে আসছে। নূপুরের বাজনাটা খুব পরিচিত লাগছে। কোথায় যেন এই আওয়াজটা এর আগে ও শুনেছিলো মনে হচ্ছে। কিন্তু এটাও ঠিক ধরতে পারছিলো। আয়ানের মাথাটা কেমন যেন ঝিম ধরে আসছিলো। মাতালের মতো লাগছিলো নিজেকে। যে চিরকুটটা ও লিখেছিলো সেটা হাতে নিয়েই ঘুমিয়েছিলো ও। কিন্তু এ-কি চিরকুটটা এখন কোথায়,? লাইট জ্বালালো। খুজতে লাগলো। কিন্তু কোথাও খুজে পেলো না। খুব অবাক হলো ও।

আজ শব্দের মাত্রাটাও যেন অন্যদিনের চেয়ে কয়েকশগুন। কুশল নিশ্চুপে ঘুমিয়ে আছে। এত পরিমাণ শব্দের মাঝেও কারো ঘুমিয়ে থাকার কথা নয়। তবুও ছেলেটা ঘুমাচ্ছে। হলের বাকিরাও ঘুমাচ্ছে। কেউ তো জাগেনি। তাহলে এই তীব্র শব্দ কি শুধু ওর কানেই আসছে। ওর রুমের দরজা হঠাৎ করেই এক ঝাপটে খুলে গেলো। কিন্তু কে খুললো দরজাটা,? দরজা তো লক করাই ছিলো। আয়ান ধীরে ধীরে দরজার দিকে এগিয়ে গেলো। চারদিকটা প্রচন্ড ধোয়াটে ও খানিক পরপর বিজলির মতো তীব্র আলোর ঝলকানি খেলছিলো। দরজা দিয়ে বের হয়ে আয়ান প্রথমেই পাশের সেই দেয়ালটার দিকে তাকাতে চাইলো। কিন্তু চারদিকে প্রচন্ড ধোয়াশার কারনে ও কিছুই স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলো না। ও আস্তে আস্তে এগিয়ে আসলো। ধোয়া ভেদ করে এগুতে লাগলো। শুভ্র ধোয়ার মাঝে হঠাৎ একটা কালো ধোয়ার কুন্ডলীর মতো দেখতে পেলো ও। ওটার দিকে এগিয়ে যেতে থাকলো। কিন্তু কালো ধোয়াটাও ওখান থেকে সরে যাচ্ছিলো। আয়ান ধোয়াটার পিছু নিলো। পিছু নিতে নিতে ও ছাদ পর্যন্ত উঠলো। কিন্তু ছাদে উঠার পর ধোয়াটা আর দেখতে পেলো না। এদিক ওদিক খুজে দেখতে লাগলো। নাহ্, কোথাও কিচ্ছু দেখা যাচ্ছে না। আয়ান ছাদ থেকে নেমে পড়লো।

বেলকনির সেই দেয়ালের আশেপাশের শুভ্র ধোয়াটাও এখন আর নেই। সবই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। দেয়ালের সেই রক্তিম লেখাটা আবারো আয়ানের দৃষ্টিগোচর হলো। দেয়ালের দিকে ও এগিয়ে গেলো। পরে থাকা চিরকুটটা হাতে নিলো। তারপর রুমে প্রবেশ করলো। কম্পিত হস্তে চিরকুটটা খুলে পড়তে শুরু করলো:

"তুমি আমার দর্শন চাও,! এজন্য আমায় চিরকুট লিখেছো,! তাই না,? হ্যা, যদিও তুমি আমায় দিতে পারো নি, তবুও তোমার চিরকুট আমি পেয়েছি। আচ্ছা বলোতো, তোমার দুঃসংবাদগুলোর জন্য তুমি আমায় কেন দোষারোপ করছো,? যা করার তো ঈশ্বরই তোমার সাথে করছেন। হয়তো তোমার কৃতকর্ম ও পাপের প্রতিফলনস্বরূপ ঈশ্বর এরূপ আচরণ করছেন। আমি তো তোমায় আগাম জানিয়ে দিচ্ছি মাত্র। তাহলে আমার উপর এতো ক্ষোভ কিসের,? আমি তো তোমায় সাবধান করে দিচ্ছি। আমাকে তো তোমার ধন্যবাদ দেওয়া উচিৎ। আর তুমি কিনা...
যাই হোক, শর্তানুযায়ী তোমাকে দেওয়া আজকের দুঃসংবাদ টা হচ্ছে, চিরকুটটা পড়া শেষ হওয়ার সাথে সাথেই তুমি ঘুমিয়ে পড়বে। আর এই ঘুম ভাঙবে আগামীকাল ঠিক সকাল ১১টায় তোমার বাবার মৃত্যুসংবাদে। আর হ্যা, তোমার জন্য আরো একটি দুঃসংবাদ আছে, যদিও তুমি সেটাকে সুসংবাদ হিসেবে গ্রহণ করবে। এবং সেটা হচ্ছে, আমাকে সামনে থেকে সরাসরি দেখতে চাও। তাই তো,? আচ্ছা, আমি তোমার সামনেই আসবো। কিন্তু তুমি আমায় দেখে নিজেকে ঠিক রাখতে পারবে তো.?
যাক, সেটা তোমার ব্যাপার,! আমি আগামীকাল আসবো, তোমার সামনেই আসবো। আমার দর্শন পেতে চাইলে বাবার দাফন সেরে আবার চলে এসো। আমি তোমার অপেক্ষায় থাকবো। রাত ঘনিয়ে এলে তুমিও আমার অপেক্ষায় থেকো।"

চলবে....

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.