নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লিখালিখির ভুবনে আমি এক ক্ষুদ্র লেখক।

সাইফ আরেফিন বিপুল

সাইফ আরেফিন বিপুল › বিস্তারিত পোস্টঃ

চিরকুট

১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৩৩

#পর্ব- ৩ (শেষ পর্ব)

চিরকুটটা পড়তে পড়তে আয়ান ঘুমিয়ে পড়ে। সকাল হলে কুশল খেয়াল করলো আয়ানের সুপ্ত দেহটা মেঝেতেই পরে আছে। অনেক ডাকাডাকি করেও ওকে জাগানো গেলো না। তাই মেঝে থেকে তুলে ওকে খাটে শুইয়ে দিলো। ঠিক যখন ১১টা বাজলো,  ছোটো চাচার ফোনে ওর ঘুম ভাঙলো। ফোন পেয়েই ও অবাক হলো। রিসিভ করার সাহস পাচ্ছিলো না। কারন ও আগেই বুঝে গিয়েছে কেন ফোনটা এসেছে। এক মুহুর্তের জন্য ও একেবারে স্তব্ধ হয়ে গেলো। বিড়বিড় করে ঈশ্বরের প্রতি ক্ষোভ ঝাড়তে শুরু করলো। ঈশ্বর কেন ওর প্রতি এতটা নিষ্ঠুর হলেন। কী অপরাধ ও করেছে যার কারনে ওর প্রতি ঈশ্বর এতোটা অবিচার করছে। এদিকে ফোন বেজেই চলছে। অবশেষে আয়ান ফোনটা ধরলো। হ্যা, যা হওয়ার তা-ই হলো। চাচা ওর বাবার মৃত্যুসংবাদটাই শুনালেন। আরো এক মুহুর্তের জন্য আয়ান স্তব্ধ হয়ে গেলো।

তাড়াহুরো হরে বাবাকে শেষবারের মতো দেখার জন্য ছুটে গেলো। ততক্ষণে লাশও বাড়িতে নিয়ে গেছে। আয়ান বাড়িতে পৌছেই বাবার লাশের সামনে লুটিয়ে পড়লো। নিজেকে সবচেয়ে বড় অসহায় মনে হচ্ছে ওর। জীবনের সবচাইতে প্রিয় মানুষটাকে হারানোর যন্ত্রণা যে কতটা হৃদবিদারক, তা হারে হারে আজ ও টের পাচ্ছে। নিজেকে খুব বেশি অপরাধী মনে হচ্ছিলো। জীবনে অনেক পাপ করেছে। সে পাপের শাস্তি আজ ওকে ভোগ করতে হচ্ছে। ভোগ করতে হচ্ছে স্বামী হারানোর ব্যাথায় জর্জরিত সদ্যবিধবা হওয়া ওর মায়ের। খুব চিৎকার করে কান্না করতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু বাকশক্তিটাও যেন আজ হারিয়ে গেছে ওর।

আছরের নামাজের পর বাবার জানাজা সম্পন্ন হলো। জানাজা শেষে দাফনের জন্য বাবার লাশ কাঁধে তুলে কবরস্থানের দিকে যাচ্ছিলো। হঠাৎ কী যেন একটা অনুভব করে ও চমকে গেলো। ওর কেন যেন মনে হচ্ছিলো খাটিয়ার মধ্যে ওর বাবার লাশটা নেই। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখার চেষ্টা করলো। এ-কী,? সত্যিই তো। খাটিয়াতে তো লাশ নেই। লাশ গেলো কোথায়,,? ও আবারো চমকে গেলো। নিজের চোখের ভুল ভেবে ব্যাপারটাকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলো। কিন্তু এড়াতে পারলো না। বারবার ঘাড় ফিরে খাটিয়ার দিকেই ওর চোখ যাচ্ছিলো। অবশেষে গোরটার সামনে নিয়া আসা হলো লাশকে। ঢেকে দেওয়ার জন্য রাখা উপরের কাপড়টা সরাতেই আয়ান চিৎকার মেরে উঠলো। আশেপাশের সবাই ভাবলো হয়তো বাবার শোকের দরূন ছেলেটা ভেঙ্গে পড়েছে। কিন্তু ব্যাপারটাকে সবাই এরকম স্বাভাবিকভাবে নিলেও অই মুহুর্তে আয়ানের সাথে যা ঘটছিলো তা মোটেও স্বাভাবিক ছিলো না। কাপড়টা সরানোর পরই আয়ান যা দেখেছিলো তা ওর পক্ষে সহ্য করার মতো ছিলো না। কাফন ভেদ করে ওর বাবার মুখটা ভেসে উঠেছিলো। কিন্তু তাও স্বাভাবিক ছিলো না। কিম্ভূতকিমাকার এক চেহারা ওর দৃষ্টিগোচর হলো। মুখে অনেক ক্ষতের চিহ্ন। আগুনে পোড়া দাগের সাথে আরো অদ্ভুত কিছু অস্বাভাবিক পর্যায়ের দাগ-ছোপ ভেসে উঠলো মুখের মাঝে। নিজেকে ঠিক রাখতে পারছিলো না আয়ান। পরমুহুর্তেই আরো আশ্চর্য হলো ও। লাশটাকে যখন সবাই মিলে গোরে নামচ্ছিলো তখন যা দেখলো তা দেখে ওর জ্ঞান হারানোর উপক্রম। ও দেখলো ওর বাবার সারা শরীরে আগুনের ফুলকি। দাউদাউ করে জ্বলছিলো। আগুনের তাপটাও যেন ও কিছুটা অনুভব করছিলো। ওর সারা শরীর ঘেমে আসছিলো।

দাফন সম্পন্ন করে সকলে বাসায় ফিরে গেলেও আয়ান কিছুক্ষণের জন্য দাঁড়িয়ে রইলো। শেষবারের মতো বাবার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিলো। বিরবির করে আরো অনেককিছু বলতে লাগলো। আর চোখ দিয়ে অঝোরে পানি ঝরছিলো।

ধীরে ধীরে ও বাসার দিকে পা এগুতে লাগলো। চিরকুটের কথা মনে পড়লো ওর। চিরকুটের শর্তানুযায়ী ওর হোস্টেলে ফিরে যাওয়ার কথা ছিলো। তাই বাসায় পৌছে মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিতে গেলো। মা অনেক বারণ করা সত্ত্বেও ও নাছোড়বান্দা। বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে হোস্টেলে ফিরে যাওয়ার কথা জানালো। আর বললো,
- মা, আমি কালই আবার ফিরে আসবো। অন্তত আজকের জন্য হলেও আমার যেতেই হবে। তুমি কোনো টেনশন করো না।
- ঠিক আছে, বাবা। তাহলে কাল তারাতারি ফিরে আসিস।
- আচ্ছা, মা। আল্লাহ্ হাফেজ।
- আল্লাহ্ হাফেজ।

আয়ান হোস্টেলে ফিরে গেলো। এদিকে বাবার মৃত্যুর সংবাদটা পর্যন্ত কুশলকে ও জানায় নি। তাই কুশলও কিছু জানতে পারেনি। আয়ানকে ডিপ্রেশড দেখে কুশল জিজ্ঞেস করলো:
- কিরে, তোকে এমন ডিপ্রেশড দেখাচ্ছে কেন,? কি হয়েছে,? আর সকালে কিছু না বলেই কোথায় চলে গেলি,?
- না, কিছুই না।
- অবশ্যই কিছু একটা ঘটেছে। আমার কাছে লুকানোর চেষ্টা করিস না।
- আরে বললাম তো। কিছুই হয় নি।

রাত যখন ১০টা আয়ান ও কুশল ঘুমোতে গেলো। কুশল কিছুক্ষণ পরেই ঘুমিয়ে পড়লেও আয়ানের চোখে কোনো ঘুম নেই। বাবার মৃত্যু, দাফনের সময়ের ভয়ার্ত সেই মুহুর্ত, চিরকুটের ভবিষ্যৎবানী ও অশরীরির সাক্ষাত এসব ভাবতে ভাবতেই রাত পার হয়ে যাচ্ছে। প্রচন্ড রকমের ভয়ও কাজ করছে।

যথাসময়ে আবারো সেই ২টা বাজলো। আয়ান অপেক্ষায় আছে কখন সেই শব্দটা হবে। কখন ও অশরীরির সাথে দেখা করবে। ২টা বেজে গেলো। কিন্তু কোনো শব্দ আজ নেই। আয়ান অবাক হলো। কী ব্যাপার,? আজ শব্দ নেই কেনো,? ও ভাবলো, হয়তো আজ একটু পরে আসবে। ভেবেই ও ডান কাত থেকে বাম কাত হলো। খাটের পাশে রাখা বুক শেলফটার পাশে ও কিছু একটা দেখতে পেলো। অদৃশ্য একটা ছায়ার মতো মনে হলো যেন এক মুহুর্তের জন্য দৃশ্যমান হয়ে নিমিষেই আবার উধাও হয়ে গেলো। আয়ান বেশ কৌতুহলী হয়ে পড়লো। ও ধীরে ধীরে খাট থেকে নেমে পড়লো। বুক শেলফটার পাশে খুজতে লাগলো। কিন্তু কিছুই পেলো না। এমতাবস্থায় হঠাৎ-ই একটা মেয়েলী কণ্ঠে উচ্চশব্দে হাসির আওয়াজ পেলো। হাসিটাও আজ ওর খুব পরিচিত মনে হচ্ছে। আয়ান বুঝে উঠতে পারছিলো না, কে এই অশরীরি,? ওর সবকিছু ওর কাছে কেন খুব চেনা চেনা লাগে,? ওর হাতের লেখা, নূপূরের শব্দ, এখন আবার হাসির শব্দ সবকিছুই কেন এতো পরিচিত লাগে,? কেন,?

এসব ভাবতে ভাবতে যেদিক থেকে হাসির শব্দটা আসছিলো আয়ান সেদিক বরাবর হাটা শুরু করলো। দরজার কাছে গিয়ে যখন দরজাটার লক খুলতে গেলো, তখনই আরেক বিপত্তি ঘটলো। দরজা তো খুলছে না। অনেক চেষ্টা করেও ও দরজাটা খুলতে পারছিলো না। এদিকে হাসির আওয়াজটাও ক্রমশ বেড়েই চলছে। আয়ানের কাছে মনে হলো, হাসির আওয়াজটা যেন ধীরে ধীরে দরজাটার এদিকেই আসছিলো। হ্যা, সত্যিই। অবশেষে তা-ই হলো। হাসির শব্দটা যখন দরজার একেবারে নিকটে চলে আসলো, তখন এমনিতেই দরজাটা খুলে গেলো। প্রচন্ড ধোয়ায় আয়ান কিছুই দেখতে পাচ্ছিলো না। ধোয়া কেটে ও বের হওয়ার চেষ্টা করলো। বের হতেই কারো উষ্ণ ছোয়া অনুভব করলো ও। ছোয়াটাও ওর খুব পরিচিত মনে হচ্ছে। সত্যিই এবার ওর কাছে খুব আজব লাগছে। আয়ান চিৎকার করতে লাগলো :
- হে, অশরীরি, কে তুমি,? দেখা দাও। হে অশরীরি, তুমি কি আমার শুনতে পাও না,? জলদি দেখা দাও আমায়।

চিৎকার করতে করতে ওর চোখ পড়লো বেলকনিটার শেষ কর্ণারে। কে যেন দাঁড়িয়ে আছে ওখানে। হ্যা, তাই-তো মনে হচ্ছে। ওটাই কি তাহলে সেই অশরীরিটা,? ভাবতে ভাবতে ওদিকটায় এগিয়ে গেলো ও। সেখানে একটা মেয়েকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো। চুলগুলো অনেক বড়, কোমর বেয়ে উরুর নিচ অবধি পৌছেছে। মুখ ঘুরিয়ে পিছন ফিরে দাঁড়িয়ে আছে বলে আয়ান তার চেহারাটা দেখতে পারছে না।
- কে তুমি,? দয়া করে ঘুরে তাকাও।
- ঘুরে দাঁড়ানোর পর আমায় দেখে ঠিক থাকতে পারবে তো,?
- অবশ্যই পারবো। তুমি ঘুরে তাকাও। আমি তোমাকে দেখতে চাই।

মেয়েটা ঘুরে তাকালো। আয়ান মেয়েটির মুখের দিকে তাকানোর পর সত্যিই নিজেকে ঠিক রাখতে পারছিলো না। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলো না। এ তো আরোহী। হ্যা, আরোহী। যাকে ও কিছুদিন আগে খুব বড় একটা ধোঁকা দিয়েছিলো। ভালোবাসার দোহাই দিয়ে বিভিন্নভাবে মেয়েটাকে ব্যবহার করেছে। এমনকি ওর অপবিত্র ভালোবাসার ফসল হিসেবে একটা অবৈধ সন্তান মেয়েটার পেটে ধারন করিয়েছিলো। মেয়েটা যখন বুঝতে পারলো ও চারমাসের অন্তসত্ত্বা, তখন আয়ানের কাছে সব খুলে বলে এবং ওকে বিয়ে করার জন্য প্রচন্ড রকম চাপ দিতে থাকে। কিন্তু আয়ান অইদিন অনেক অপমান করে ওকে তাড়িয়ে দেয় এবং কোনোদিন ওর সামনে যেতে মানা করে। এরপরই মেয়েটা ওর দেওয়া কষ্টটা সইতে না পেরে সুইসাইড করেছিলো। কিন্তু আজ আবার ও এখানে,!! কিভাবে,? কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না আয়ান।
- আমায় দেখে খুব আশ্চর্য হচ্ছো। তাই না,? ( হা হা হা হা হা)
- কিন্তু আরোহী,!!! তুমি এখানে কিভাবে,? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।
- হ্যা, আমি। আমি এসেছি প্রতিশোধ নিতে। তোমার জন্য ঠিক যেভাবে আমার শত-সহস্র রাতগুলো নির্ঘুম কেটেছে, ঠিক সেভাবেই তোমার ঘুম কেড়ে নিতে আমি প্রতিদিন আসি। বেঁচে থাকতে তো আমায় কোনোদিন ভালোবাস নি। তাই মরার পর আশায় আছি, তুমি যেদিন মারা যাবে সেদিন থেকে তোমার সাথে এপাড়ে আমি আবার তোমার সাথে প্রেম করবো। তাইতো প্রতিদিন তোমার মৃত্যুকামনা করি। আমি ইচ্ছে করলেই তোমাকে খুন করে আমার কাছে নিয়ে আসতে পারি। কিন্তু এখনো খুব ভালবাসি তো, তাই নিজ হাতে মারতে পারিনি কোনোদিন। আর তোমাকে না দেখে যে আমি থাকতে পারি না। তাই তো প্রতিরাতেই ছুটে আসি তোমার কাছে।
- আমি তোমার সাথে যা করেছি, খুব বড় ভুল করেছি। ক্ষমা করো আমায়, প্লিজ। আরোহী, প্লিজ, ক্ষমা করো। আমি আর কোনোদিন কোনো মেয়ের সাথে এরকম করবো না। কোনোদিনও না।
- তাহলে, আজই আমার কাছে ফিরে আসো। চলে আসো এপাড়ে।
- কিন্তু আমি যে আমার মায়ের জন্য বাঁচতে চাই।
- কিন্তু আমি তোমাকে এখনই কাছে পেতে চাই। আমি আজই তোমাকে হত্যা করে আমার জগতে নিয়ে আসবো। (হা হা হা হা)..
- না, আরোহী। না, তুমি এমনটা করতে পারো না। প্লিজ, আমায় মেরো না, প্লিজ।

আরোহী আরো বিকট শব্দে হাসতে লাগলো। আয়ানও আরো জোরে চিৎকার করতে লাগলো। কিন্তু আয়ানের মুখ দিয়ে এবার শব্দ বেরুচ্ছিলো না। অনেক চেষ্টা করে কোনো শব্দ করতে পারছিলো না। দম বন্ধ হয়ে আসছিলো। হাত-পা ছটফট করতে শুরু করলো।

আয়ান শরীরে অনুভূতি ফিরে পেলো। চোখ মেলে তাকালো। নিজেকে হাসপাতালের আইসিউর বেডে আবিষ্কৃত করলো। হ্যা, দীর্ঘ দুইমাস পর আজ আয়ানের জ্ঞান ফিরলো। আরোহীর বিষ খাওয়ার ঘটনা শুনে ও যখন আরোহীর কাছে ছুটে যাচ্ছিলো তখন আয়ান মারাত্মক ভাবে রোড এক্সিডেন্ট করে। এবং এতে মাথায় প্রচন্ড আঘাত পাওয়ায় ও এতোদিন আইসিউতে ভর্তি ছিলো। কোমায় ছিলো প্রায় দুই মাস। আজ ও ওর স্মৃতি ফিরে পেলো। ও বুঝতে পারলো, এ কয়েকদিন অই অশরীরিটার সাথে যা যা ঘটেছিলো, ওর মামা ও বাবার মৃত্যু, মৃত আরোহীর সাথে সাক্ষাত এগুলোর কোনোকিছুই বাস্তবে ঘটেনি। কোমায় থাকা অবস্থায় ওর ব্রেইন ওকে অন্য একটা জগতে নিয়ে গিয়েছিলো। সবই ছিলো কল্পনামাত্র।

হঠাৎ একজন নার্স আইসিউতে প্রবেশ করলেন। তিনি দেখতে পেলেন, আয়ান হাত-পা নড়াচড়া করছে। চোখ মেলে তাকিয়ে আছে। কিছু একটা বলতে চাচ্ছে। কিন্তু মুখে অক্সিজেন মাস্ক লাগানোর কারনে কিছু বলতে পারছে না। নার্স দৌড়ে ডাক্তারের কাছে গেলো। ডাক্তার এসে ওর মাস্কটা খুলে দিলেন। আয়ান ডাক্তারের সাথে কথা বললো। ডাক্তার ওর পরিবারকে খবর দিলেন। আয়ানের মা, বাবা ও আরোহী ছুটে এলো ওর কাছে।
- আয়ান, বাবা আমার। আল্লাহর কাছে লক্ষ কোটি শুকরিয়া আল্লাহ্ তোকে আবার আমাদের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন। (মা)
- (আরোহীকে দেখে অবাক হয়ে) কী ব্যপার মা,? আরোহী এখানে,,!! ও না সেদিন,,!!
- না, বাবা। ও সেদিন মরে নি। ও বিষ খাওয়ার পর ওকে হাসপাতাল নেওয়া হলে দু'দিন পরই ও সম্পূর্ণ সুস্থ্য হয়ে ফিরে আসে। আর রোড এক্সিডেন্টে তুই পড়ে গেলি কোমায়। সবাই তোর বেঁচে থাকার আশা ছাড়লেও এই আরোহী আজও তোর চোখ মেলার অপেক্ষায় ছিলো।

আয়ান আরোহীকে কি বলবে ভেবে পাচ্ছিলো না। আরোহীর দিকে তাকিয়ে শুধু দেখলো, চোখের জলগুলো ওর টলটলিয়ে পড়ছে। এগিয়ে এসে চোখের জলটা মুছে দিলো। শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরলো ওকে।
-- আমার মতো বাজে চরিত্রের ছেলেকে কেউ এতোটা ভালোবাসে রে, পাগলি,? আমি কি এতোটা ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য,,?
-- আমি তোমাকে আমার জীবনের চেয়ে বেশি ভালোবেসেছিলাম, তোমাকে বিশ্বাস করেছিলাম। কিন্তু যখন তোমার আসল চেহারাটা উন্মোচিত হয়েছিলো, তখন তোমার প্রতি ঘৃণা জন্মাতে লাগলো। কিন্তু তোমায় ঘৃনা করে থাকতে পারছিলাম না। তাই আত্মহত্যার পথটাই বেছে নিয়েছিলাম। কিন্তু নতুন করে যখন জীবনটাকে ফিরে পেলাম। তখন থেকেই তোমায় নতুন করে আবার ভালোবাসতে শুরু করলাম। আর ভাবলাম নিজের সর্বোচ্চ ভালোবাসা দিয়ে তোমায় ভালো করে তুলবো। আমাকে কি এবারও সত্যিকারের ভালোবাসাটা দিবে না,? নাকি,?
-- নিজেকে আজ খুব ধন্য মনে হচ্ছে। এরকম মেয়েকে কি আবার ভালো না বেসে থাকা যায়,? খুব ভালোবাসি তোমায়। কোমা থেকেই খুব ভালোবাসি।
-- কোমা থেকেই ভালোবাসো মানে,?
-- কোমায় থাকতে খুব জ্বালিয়েছো আমায়,!
-- কিসব বলছো,?
-- কোমায় এসে অশরীরি সেজে খুব শিক্ষা দিয়েছো আমায়। আমার খুব শিক্ষা হয়ে গেছে।
-- মানে,,? এগুলো কি বলছো,? তোমার কথা তো আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।
-- থাক, বাদ দাও এসব কথা। পরে একদিন সব বলবো। এখন চলো, ভালোবাসাবাসি করি।
-- চলো।

(সমাপ্ত)....

>>[সম্মানিত পাঠক-পাঠিকাবৃন্দ অত্যন্ত ধৈর্য সহকারে গল্পের প্রতিটি পর্ব পড়ার জন্য সকলের প্রতি রইলো অশেষ কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা। ধন্যবাদ সবাইকে।]

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.