![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
উফ্, অবশেষে আপদটাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসলাম। অনেক জ্বালিয়েছে এতদিন আমার লক্ষী বউটাকে। কাশির বিশ্রী আওয়াজে ঠিকমতো ঘুমাতেও পারিনি একটা দিন। আর নিত্যমৈত্যিক বিভিন্ন বায়না তো আছেই। একটা মানুষের কি এত বায়না থাকতে পারে,? উফ, আমি ক্লান্ত। পাঁচ বছর হয়নি দুটো কাপড় কিনে দিয়েছি, তারমধ্যেই তার আবার কাপড়ের প্রয়োজন হয়ে গেলো,? এখনই আবার তাকে কাপড় কিনে দাও,,!! দুঃসাহস দেখলে বাঁচি না। আসলে আমার বউ নাদিয়াকে প্রতি সপ্তাহে নতুন নতুন ড্রেস কিনে দেই তো। সেটা তার সহ্য হয় না। যত্তসব আবর্জনা। এতদিন বাড়িতে জায়গা দিয়েছি, আমরা স্বামী-স্ত্রী তার যন্ত্রণা সহ্য করে গেছি, এইতো অনেক। কিন্তু আর কত সহ্য করা যায়,? তাই তো বুড়ো মা টাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসলাম।
যাক, অবশেষে তো মুক্ত হলাম। খুব খুশি লাগছে আমার। নাদিয়াও আজ খুব খুশি। অবশ্য এই খুশির পেছনে বেশি অবদান নাদিয়ার। কারন মাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানোর আইডিটা তো ও-ই আমাকে দিয়েছে। তাই এই খুশিতে ভাবলাম, ওকে নিয়ে আজ সারাদিন ঘুরতে বের হবো।
বিকেল পাঁচটার সময় আমরা বের হলাম। ওর ইচ্ছে ছিলো রিক্সায় চড়ে শহরটাকে দেখবে। আমি এক রিক্সাওয়ালা ডাকলাম।
- অই, খালি। এইদিকে আয় তো।
- জ্বি, স্যার। কই যাবেন,?
- কোথাও যাবো না। তবে ঘন্টাখানেক ঘুরাঘুরি করবো।
- আইচ্ছা, ওডেন।
- ভাড়া কত দিতে হবে,?
- স্যার, আপনের ইনসাফ মতই দিয়েন।
আমি বউকে হাতে ধরে রিক্সায় উঠালাম। হঠাৎ বউয়ের ইচ্ছা হলো আইসক্রিম খাবে। আমি রিক্সাওয়ালাটারে থামাতে বললাম। তারপর ওর হাতে ১০০ টাকার একটা নোট ধরিয়ে দিয়ে পাশের দোকান থেকে একটা আইস্ক্রিম নিয়ে আসতে। তখন আমার বউ বললো,
- ছি, ছি। তুমি কী করছো,? দেখছো না এই ছোটলোকটার শরীরে কত্ত ময়লা। তুমি ওকে কেন আনতে বলছো,? তুমি ভাবলে কী করে, এই ছোটলোকটার হাতের আইস্ক্রিম আমি খাবো,? যাও, তুমি গিয়ে নিয়ে আসো।
- আচ্ছা। যাচ্ছি।
অতঃপর ছোটলোকটার হাত থেকে টাকাটা নিয়ে আমিই গেলাম দোকানে। একটা আইস্ক্রিম নিলাম। রিক্সায় ফিরে আসার সময় দেখলাম, একটা ছোট পিচ্চি বয়স চার-পাঁচ হবে আমার প্যান্ট ধরে টানছে।
- এই এই, ছোটলোকের বাচ্চা.!! ছাড়, ছাড় আমায়। দিলি তো আমার প্যান্টটাকে ময়লা করে,!
- ভাই, দুইডা ট্যাকা দেন না, ভাই। হারাদিন কিচ্ছু খাই নাই। অনেক খিদা লাগজে, ভাই।
- যাহ্, সর এখান থেকে। ফকিন্নির বাচ্চা কোথাকার,!!
- দেন না, ভাই। দেন। (বলেই আবার পা জড়িয়ে ধরলো)
আমি লাথি মেরে বাচ্চাটাকে সরিয়ে বললাম,
- যাহ্, যত্তসব ফকিন্নির বাচ্চা,,!!
আমি আইস্ক্রিম হাতে রিক্সায় উঠলাম।
-- কী ব্যাপার,? সামান্য একটা আইস্ক্রিম আনতে তুমি এতো দেরি করলে,.!
-- আর বলো না। একটা ফকিরের বাচ্চার পাল্লায় পড়েছিলাম। এইসব ছোটলোক ফকিন্নির বাচ্চাগুলার জন্য রাস্তাঘাটে চলা যায় না। যখন তখন হামলা করে বসে। ফকিন্নির বাচ্চা হয়ে জন্মাবে, আবার প্রতিবেলা খাওয়ার ইচ্ছেও করবে,!! আরে ব্যাটা, তোদের জন্মই হয়েছে না খেয়ে থাকার জন্য। না খেয়ে থাকতে না পারলে মরে যা। আমাদের মতো ভদ্রলোকদের কেন জ্বালাতে আসিস,?
যত্তসব,!
আমরা বাসার কাছাকাছি চলে আসলাম। বৃদ্ধ রিক্সাচালকটার খুব কষ্ট হচ্ছিলো রিক্সাটা টানতে। শরীর দিয়ে দরদরে ঘাম ঝড়ছিলো। ইছ,! কী যে বিশ্রী দেখতে। হঠাৎ কপালের ঘামটা মুছার জন্য গামছাটা নিতে গেলো। আর তখনই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রিক্সাটা পাশের একটা গাছের সাথে ধাক্কা খায়। অল্পের জন্য বেঁচে যাই আমরা। কিন্তু রিক্সার হুডিটার সাথে প্যাঁচ খেয়ে নাদিয়ার জামাটা একটু ছিড়ে যায়। নাদিয়া চিৎকার দিয়ে উঠলো,
- আমার এতো দামের জামা,!! ফকিরের বাচ্চাটা ছিড়ে ফেললো,!!
আমি সাথে সাথে রিক্সা থেকে নেমে বুড়ো শালাটাকে নামিয়ে ঠাস ঠাস দুইটা চড় মেরে দিলাম।
- শালা, ছোটলোকের জাত। দেখে চালাতে পারিস না। তুই জানিস এই ড্রেসটার দাম কতো,?
- স্যার, আমি বুড়া মানুষ। বুজদে পারি নাই। মাফ কইরা দেন। আর আপনাদের এক ঘন্টা তো শেষ। এহন, আমার ভাড়াডা দেন।
- তোর, সাহস তো কম না। তুই আবার ভাড়া চাস,? চড় কি আরো একটা খেতে চাস,?
- বিশ্বাস করেন, স্যার। অনেক হরান হয়ে গেছিলাম, শইলডা গামাইয়া দিছিলো। হেইল্লেগা গামছাডা লইতে লইছিলাম, কপালটা মুছোনের লেগা। কিন্তু কপালে একটা থাবড় জুটবো, হেইডা বুজি নাই। আসলে স্যার, আমরা গরীব মানুষ। মাইর খাওনের লেগাই জন্ম হইছে। এইল্লেগা মারছেন। তাই কিছু মনে করি নাই। তয় একটা কথা স্যার, আমরা কাম কইরা খাই। অনেক খাটনি কইরা খাই। আমাগো খাটনির দামডা দিয়েন। আপনের বউর জামার দাম দেওয়ার সামর্থ্য হয়তো আমার নাই। কিন্তু আমার খাটনির মজুরি দেওয়ার সামর্থ্য আপনার ঠিকই আছে।
- নীতিবাক্য চু**তে আইছো,? যত্তসব ফকিন্নির দল। যাহ্, এখান থেকে।
- স্যার, আমার বউডা অসুস্থ্য। ওর জন্য অষুদ লইয়া বাইত যাইতে হইবো। ওর অষুদের লেগাই আমি এই বুড়া বয়সেও রিসকা চালাই স্যার। টাকাডা আমার অনেক দরকার, স্যার। আমার গালে থাবড় দিছেন। সমস্যা নাই। লাগলে আরো দুইডা দেন। কিন্তু পেডে লাত্তি দিয়েন না। আমার ভালোবাসায় লাত্তি দিয়েন না।
- শালা, ফকিন্নিদের আবার কিসের ভালোবাসা রে,? ধুর হ, এখান থেকে,!
এইসব ছোটলোকদের মনে এতো ভালোবাসা কইত্থেকে যে আসে,,!! যত্তসব আবর্জনা।
নাদিয়াকে নিয়ে বাসায় ঢুকলাম। আজ বাড়িটা বেশ সুন্দর লাগছে। খুব শান্তি শান্তি লাগছে। কোনো আপদ নেই। একদম জঞ্জালমুক্ত। শান্তিমতো ঘুমানো যাবে আজ থেকে।
নাদিয়া আমাদের ডিনারের জন্য হালকা রান্না করতে গেলো। ডিনার শেষে রাতে দুজন ঘুমাতে গেলাম।
গভীর ঘুমেই ছিলাম দুজন। কিন্তু এই ঘুমই যে আমাদের দুজনের শেষ ঘুম হবে, তা বুঝতে পারি নি। ঘুমের মধ্যে হঠাৎ পোড়া গন্ধে আমার ঘুম ভেঙে যায়। গুটি গুটি পায়ে গন্ধটার দিকে এগিয়ে গেলাম। খুজতে লাগলাম গন্ধটা কোথা থেকে আসছে। যতই এগুচ্ছি উষ্ণতাটাও ততই বেড়ে চলছে। হঠাৎ চোখ পড়লো রান্নাঘরটার দিকে। দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। কিছু একটা ভাবার আগেই আচমকা একটা আগুনের গোলা আমার দিকে ছুড়ে আসলো। আমার শরীরে আগুন ধরে গেলো। আমি চিৎকার দিয়ে উঠলাম। আগুনটাকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু ব্যর্থ হচ্ছিলাম। আমার চিৎকার শুনে নাদিয়ারও ঘুম ভেঙে গেলো। ছুটে আসলো আমার দিকে। আমার শরীরের আগুন ছাড়ানোর চেষ্টা করতে গিয়ে ওর শরীরেও আগুন লেগে গেলো। আমার সারাটা দেহ পুড়ে যাচ্ছিলো।এভাবে ধীরে ধীরে আমার দেহ নিস্তেজ হয়ে পড়লো। নাদিয়ার দিকে তাকানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু পারলাম না। ততক্ষণে আমার সম্পূর্ন দেহটাই পুড়ে নিঃশেষ হয়ে গেছে। প্রাণপাখিটাও দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
পরদিন সকালে ফায়ার সার্ভিসের অগ্নিকর্মীরা আমাদের লাশটা পর্যন্তও খুজে পায় নি। আমরা দুজনেই পুরো ছাই হয়ে গিয়েছিলাম।
কেউ একজন তখন বলে উঠলো, সব অহংকারের আজ পতন ঘটলো। "অহংকার পতনের মূল" -তা আজ আবারো প্রমাণিত হলো।
#সাইফ_আরেফিন_বিপুল (ক্ষুদ্র লেখক)
©somewhere in net ltd.