![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
#পর্ব- ২
আয়ান অপেক্ষায় থাকে কবে আরোহী তার ভালোবাসায় সাড়া দেবে। আর অন্যদিকে আরোহী হন্য হয়ে খুঁজতে থাকে জিসানকে আয়ানকে তার উত্তরটা জানানোর জন্য।
আয়ান এখনও দূর থেকে আরোহীকে শুধু দেখেই যায়। আরোহী একদিন ব্যাপারটা খেয়াল করতে পারে। সেদিন থেকে সে-ও লুকিয়ে লুকিয়ে আয়ানকে দেখা শুরু করে। দুজনেই দুজনকে গোপনে ভালোবাসতে শুরু করে। আয়ানের ভালোবাসাটা প্রকাশিত হলেও আরোহীর ভালোবাসা অপ্রকাশিতই রয়ে যায়। লুকিয়ে লুকিয়ে চোখাচোখি করেই তাদের দিনানিপাত হতে লাগলো। কিন্তু এভাবে আর কতদিন,? গ্রামের অনেকের চোখেও ওদের ব্যাপারটা ধরা পড়েছে। সবার মধ্যে এক ধরনের কানাকানিও শুরু হয়ে যায়। এক কান দু'কান হতে হতে সারা গ্রাম ছড়িয়ে পড়তে থাকে ব্যাপারটা। কিন্তু কোনো কিছুর তোয়াক্কা করার সময় ওদের নেই। সব বাধা-বিপত্তি পেড়িয়েই চলছিলো ওদের চোখের প্রেম।
অনেকদিন পর আজ জিসানের সাথে আরোহীর দেখা হলো।
- কিরে, চিঠিটা পড়েছিল,?
- হুম। তুই কোথায় ছিলি এই কয়দিন,?
- কেন,? খুব খুঁজেছিস নাকি আমায়,?
- আয়ানকে একদিন আসতে বলিস তো।
- অবশ্যই। এখনই বলি,?
- না, না। এখন না। আগামীকাল আসতে বল।
- আচ্ছা, ঠিক আছে।
জিসান সাথে সাথে ফোনটা বের করে আয়ানকে ফোন দেয়।
- হ্যালো ভাই, একটা গুড নিউজ আছে।
- কী সেটা,?
- ভাই, আরোহী আগামীকাল আপনাকে দেখা করতে বলেছে।
খুশিতে আয়ানের চোখে জল এসে পড়ে। জিসানকে ফিরতি উত্তর দেওয়ার ভাষা ও হারিয়ে ফেলে। যে মেয়েটার এক বিন্দু ভালোবাসা পাওয়ার আশায় এতদিন ও অধীর প্রতীক্ষায় দিনযাপন করেছে, আজ সে মেয়েটা ওকে দেখা করতে বলেছে। নিজেকে যেন আজ পৃথিবীর সবচাইতে সুখী মানুষ মনে হচ্ছে ওর।
আগামীকাল আরোহীর সামনে গিয়ে দাঁড়াতে হবে। কথাগুলো ভাবতেই ওর পালস রেট হাই হয়ে যায়, বুকের ভিতর ধুকবুকানি শুরু হয়ে যায়। সারাটারাত অইদিন ওর চোখে কোনো ঘুম নেই। সারাটারাত শুধু অপেক্ষা, কখন সকাল হবে। কখন আরোহীর সাথে দেখা হবে। এসব ভাবতে ভাবতে রাত গড়িয়ে ভোর হয়। আয়ান সময়মতো আরোহীর সাথে দেখা করার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে।
আয়ান দাঁড়িয়ে আছে আরোহীর অপেক্ষায়। দূর থেকে আরোহী আয়ানকে দেখে ওর বান্ধবীদের ডেকে আয়ানকে দেখালো। ওর বান্ধবীরা আয়ানকে দেখে চিনে ফেলে।
- আরে, ও তো আয়ান না। ওর নাম তো রিহান। তুই না ওরে একসময় জুতা দিয়া বাইড়াইতে চাইছিলি,? আজ ওর প্রেমেই হাবুডাবু খাচ্ছিস,?
- কী বলছিস,? ওর নাম রিহান হবে কেন,? ওর নাম তো আয়ান। তাহলে ও কি আমায় মিথ্যা পরিচয় দিয়েছে,?
- হা হা হা। হতেই পারে।
আরোহী প্রচন্ড রাগ উঠতে লাগলো আয়ানের উপর।
এমন সময় জিসান সেখানে উপস্থিত হলো।
- কিরে, জিসাইন্না,? তুই মিথ্যা বললি কেন,?
- আমি আবার কী মিথ্যা বললাম তোর সাথে,?
- তুই না বলছস ওনার নাম আয়ান! ওনার নাম দেখি রিহান।
- হা হা হা... আরে বোকা, ওনার নামই রিহান আবার ওনার নামই আয়ান। একটা মানুষের দুইটা নাম থাকতে পারে না,?
আরোহী খুব আশ্চর্য হচ্ছে। একসময় যে ছেলেটার নামটা পর্যন্ত ও সহ্য করতে পারতো না, আজ সেই ছেলেটাকে ও কতটা ভালোবাসে।
সেদিনের মতো আরোহীর সাথে আয়ানের আর কথা হয় নি। তবে ওর বান্ধবীর মাধ্যমে উত্তরটা ঠিকই পেয়েছিলো ও। আয়ানের খুশি আর কে দেখে,? জীবনের সবচাইতে খুশির সংবাদটি যেন ও পেয়েছে। আরোহীও যে ওকে একদিন ভালোবাসবে সেটা এতদিন ছিলো ওর কাছেই শুধুই স্বপ্ন। আজ সে স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়েছে। আজ যে ওর খুশির কোনো সীমা নেই।
পরেরদিন নির্জন পথটার বাঁকে হঠাৎ মুখোমুখি দেখা হয়ে যায় দুজনের। দুজনেই নির্বাক। কারো মুখ থেকে কোনো শব্দ বেরুচ্ছে না। দুজনেই চাচ্ছিলো অন্যজন আগে কথা শুরু করুক। কিন্তু কেউ শুরু করছিলো না। অবশেষে আয়ান ভাবলো, ও নিজেই শুরু করবে। আয়ান কোনো কথা খুঁজে না পেয়ে আরোহীর সাথে সালাম দিয়ে কথা শুরু করতে চাইলো।
- আসসালামু আলাইকুম।
লজ্জায় মুখ ঘুরিয়ে দ্রুত হেটে চলে যেতে থাকলো আরোহী। কিছুদূর গিয়ে পিছন ফিরে উত্তর দিলো-
- ওয়া আলাইকুম আসসালাম।
এরপর অইদিন আর কথা হয়নি। একই গ্রামে থাকার সুবাদে ওদের সরাসরি কথার চেয়ে দূর থেকে চোখে চোখে কথাই হতো বেশি। হাটি হাটি পা পা করে বেড়ে চলছিলো ওদের মিষ্টি মধুর সম্পর্ক। একসময় শুরু হয় চিঠি লিখালিখি।
আয়ান প্রতিদিন বিশ-পঁচিশটা কাগজটা নষ্ট করতো মাত্র একটা চিঠি লিখতে। চিঠি লিখে বারবার পড়তো। সব ঠিক আছে তো,? এভাবে চিঠি পাঠিয়ে আবার ফিরতি চিঠির উত্তরের অপেক্ষায় সময় গুনতে থাকতো। মোটকথা চিঠি লিখে আর নতুন চিঠির অপেক্ষায় থেকেই ওর পুরোটা দিন কেটে যেতো। এভাবেই ওদের সুন্দর সময়গুলো এগুচ্ছিলো। ধীরে ধীরে ওদের সম্পর্কটা চিঠির খাম থেকে মোবাইল ফোনের স্ক্রিনে স্থান দখল করে নেয়। কিছুদিন মেসেজিং অতঃপর ৫ মিনিট ১০ মিনিট করে একসময় দীর্ঘ সময় ফোনালাপ ওদের সম্পর্কটাকে নিয়ে যায় চরম চূড়াস্তরে। গভীর থেকে গভীরতম রূপধারন করে ওদের ভালোবাসাটা।
যতই দিন যাচ্ছিলো, আয়ানের লন্ডন ফিরে যাওয়ার সময়টা ততই নিকটে চলে আসছিলো। আয়ান খুব চিন্তিত হয়ে পড়ে। লন্ডন চলে গেলে ওর আরোহীকে কে দেখে রাখবে,? এসব ভাবতে ভাবতেই চলে আসলো সে সময়। আয়ানের ভিসা চলে এসেছে। দু'দিন পরই ওর ফ্লাইট। খুব কষ্ট হচ্ছিলো দু'জনেরই। ভেবে পাচ্ছিলো না কিভাবে দুজন দুজনকে ছাড়া কিভাবে থাকবে,?
আজ আয়ানের ফ্লাইট। আয়ান সারাদিন আরোহীর একটা ফোনের অপেক্ষায় ছিলো। কিন্তু কোনো ফোন আসছিলো না। আয়ানও ফোন দিয়ে ওকে পাচ্ছিলো না। একটা সময় আরোহীর নাম্বার থেকে ফোন আসে। অই ফোন কলটাতে ডিউরেশন যদিও ৫ মিনিট ছাড়াতে পারেনি, কিন্তু আয়ান এবং আরোহী তাদের জীবনের সবচাইতে বেশি কষ্টের কান্নাটা কেঁদেছিলো। চোখের জলে ভেজা দুটি মোবাইলের স্ক্রিন সেদিন সাক্ষী ছিলো কতটা ভালোবাসলে মানুষ বৈরাগী হয়, কতটা ভালোবাসলে মানুষ কী পরিমান কান্নার জল চোখে ধারন করতে পারে।
লন্ডন যাবার পর দুজনের মধ্যে দৈহিক দূরত্বটা বেড়ে গেলেও মানসিক দূরত্বটা বিন্দু পরিমাণও বাড়ে নি। বরং দিন দিন ওদের সম্পর্কটা আরো গভীর হতে লাগলো। ওদের প্রেমে নতুন মাত্রা যোগ করতে একসময় প্রেমের ঝুলি কাঁধে নিয়ে আসলো হোয়াটসএ্যাপ। এই হোয়াসএ্যাপ ছিলো ওদের প্রেমের সম্পূর্ন ইতিহাসের রাজসাক্ষী। হোয়াটসএ্যাপের প্রতিটা মেসেজ আজও কথা বলে। আজও ওরা গল্প করে। আয়ান-আরোহীর প্রেমের গল্প, একমুঠো অনুরাগের গল্প।
সুখের কোনো অন্ত ছিলো না দুজনের। সম্পর্কের ভবিষৎটা খুব ভাবাতো আয়ানকে। তাই নিজেদের ভবিষ্যৎ গড়ার লক্ষ্যেই এগিয়ে যাচ্ছিলো আয়ান। মোদ্দাকথা, জীবনটাকে খুব সুন্দর করে সাজিয়ে নিয়েছিলো দুজনেই।
কিন্তু কে জানতো ওদের এতো সুন্দর সুখী জীবনেও একদিন ঝড় আসবে, যে ঝঞ্ঝার প্লাবনে তলিয়ে যাবে ওদের প্রতিটি সুন্দর মুহুর্ত।
একদিন হঠাৎ করেই আরোহী আয়ানের সাথে সম্পূর্ণ যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। দু'দিন যাবত আয়ান আরোহীর কোনো খোঁজ পায় না। আরোহীর সব বান্ধবীদেরকেও ফোন দিতে থাকে। কিন্তু কারো কাছ থেকেই কোনো খবর পায় না। কেউ আরোহীর খোঁজ দিতে পারে না। আরোহীর ফোনটা সুইচড অফ, হোয়াটসএ্যাপ ডিএক্টিভ। কী করবে কিছু ভেবে পায় না আয়ান। দুশ্চিন্তায় ছেলেটা একসময় অসুস্থ হয়ে পড়ে।
দু'দিন পর আয়ানের মা আয়ানকে ফোন করে বলে,
- আয়ান, বাবা আমার। আরোহীর সাথে তোর কি সম্পর্ক,?
- মা, আমি ওকে ভালোবাসি। খুব বেশি ভালোবাসি।
- শোন, বাবা। তুই ওকে ভুলে যা। কাজে মন দে। ওদের সাথে আমাদের ম্যাচ হয় না। তেলে জলে কখনো মিশ খায় না। তুই কোনো বৃথা চেষ্টা করিস না বাবা।
- কীসব বলছো মা,? হঠাৎ কী এমন হয়েছে,?
- আমি যা বলছি তোর ভালোর জন্যই বলছি।
- কিন্তু আমি তো মা কিছুই বুঝতে পারছি না। হঠাৎ কী এমন ঘটে গেলো,?
- সময় হোক, সব জানতে পারবি। যা বলছি সেটা শোন। বেশি বাড়িস না। মায়ের কথাটা রাখ বাবা।
- কিন্তু মা আমি তো......
- কোনো কিন্তু নয়, আমি যা বলেছি তা-ই করবি তুই।
- কি হয়েছে মা,? প্লিজ বলো না, মা। কেন তুমি এমন করছো,?
- বলছি তো- সময় হোক, সবই জানবি।
- না, মা। তোমার এখনই বলতে হবে। ওরা কি তোমায় কিছু বলেছে.?
- হ্যা, বলেছে। কিন্তু যা বলেছে তা শুনলে তুই ঠিক থাকতে পারবি না।
- কিন্তু তবুও তোমার বলতে হবে।
- আচ্ছা, তাহলে শোন....
চলবে....
২| ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:৫৪
সাইফ আরেফিন বিপুল বলেছেন: শখের বশে মাঝে মাঝে নোটপ্যাডে কলম বুলাই।
©somewhere in net ltd.
১|
১৬ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ৯:০২
মো: নিজাম উদ্দিন মন্ডল বলেছেন: এতো বড় গল্প লেখার পরও চলবে???


আপনি তো ক্ষুদ্র লেখক নন। প্রতিদিনই লেখেন।