![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
২০০৩ সাল। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩য় বর্ষে পড়ি, মনে-প্রানে উথাল-পাতাল প্রেমের মাতাল হাওয়া, সামনে কয়েকটা বিশেষ দিন, কিছু উপহার-টুপহারের ব্যাপার-স্যাপার রয়েছে, একগুচ্ছ গোলাপ তো চাই-ই, চাই! কিন্তু কিভাবে? দিন-ই তো চলেনা, আজ এ বাসায়, তো কাল ও বাসায় করে রোজকার মিলের বাটপারি চালিয়ে যাচ্ছি, আর মেস ভাড়া? সেতো মেসের সিনিয়র ভাই! এই প্রভাবে খাতিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছি কোনক্রমে! কিন্তু মাথায় একটাই চিন্তা ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা আমার লাগবেই! কিন্তু কিভাবে? কোন উপায়ই খুঁজে পাচ্ছিনা... এভাবে, দুশ্চিন্তা আর অবস্থান হারানোর দুর্ভাবনা নিয়ে দিন কাটছে, আর অর্থের উৎস খুঁজে ফিরছি......
একদিন নানুর বাসায় ডাক পড়লো, কোথাও যেতে হবে, আমি কিছুটা আশার আলো পেলাম, এই ভেবে যে যাক, নানুর বাসায় গেলে, নানুকে ভুলিয়ে ভালিয়ে কিছু ম্যানেজ করতে পারবো! চলে গেলাম, নাচত-নাচতে, নির্ধারিত সময়ের বেশ আগেই। যেয়ে যা শুনলাম, তাতে খুশি আরো বেড়ে গেল, টাকার গন্ধ পেয়ে! নানাকে নিয়ে ঢাকায় যেতে হবে, ডাক্তার দেখাতে, বেশ তো কিছু হাত খরচ তো জুটবে!
উল্লেখ্য আমরা তিন খালাত ভাই, তিন জনই ঢাকায় যাবার উপযুক্ত, কিন্তু আমি কেন? একজন, যার বেশ ভালো ও নিয়মিত হাত টানের সুনিশ্চিত ও প্রমাণিত অতীত রয়েছে এবং এখনো বর্তমান!
অন্যজন একটু বেশী সৎ ও সহজসরল এবং সমস্যায় পড়লে মাথা খাটিয়ে সমাধানের সামরথের সামান্ন ঘাতটি আর প্রয়োজনের সময় প্রয়োজনীয় কাজ ও কথা ডেলিভারি দেবার অভাব!
রইলাম বাকি আমি, যেহেতু একটু বড়, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি, চুরির অভ্যাস নেই! (প্রমাণিত!!) কিন্তু কিছুটা বেপারোয়া স্বভাবের আর সমস্যা সমাধানের কিছুটা সামরথ নিজ থেকেই রয়েছে, তাই আমাকেই বেছে নেয়া!
আমি খুশি, কিছু হাত খরচ জুটবে, ঢাকায় গেলে মামার কাছ থেকে কিছু পাওয়া যেতে পারে, আর নানাকে ভুল-ভাল হিসেব দিয়ে যদি কিছু বাগানো যায় এইসব ভেবে-ভেবে, তখনও মাথায় এই চুরির প্ল্যান আসেনি….!
আমি প্রস্তুত, নানাও প্রস্তুতি নিচ্ছেন, আমি বসে আছি ড্রইং রুমে আর নানা তার রুমে, হঠাৎ চোখ চলে গেল নানার রুমে, তিনি তার কোমরের ছোট ব্যাগের বিভিন্ন জায়গায়, বিভিন্ন পরিমানের টাকা রাখছেন! দেখার সাথে-সাথে প্ল্যানটা আমার মাথায় এলো! ওখান থেকে একগুচ্ছ টাকা আমার চাইই, চাই! নিতেই হবে, নেয়াটা খুব একটা সমস্যা হবে না আর ধরা খাবার সম্ভাবনাও খুব একটা নেই!
কারণ? নানা প্রায়ই হিসেবে গরমিল করেন আর টাকা যেহেতু বিভিন্ন জায়গায় রেখেছেন, কখন-কোত্থেকে পড়েগেছে! সেইসব অজুহাত আগেই দাড়করিয়ে, ঢাল বানিয়ে রাখলাম! আর আমার যেহেতু পূর্বের চুরির কোন প্রমাণিত! রেকর্ড নাই, সেহেতু, সবার সমর্থনও পাওয়া যাবে! এইসব ভেবে-ভেবে ভবিষ্যতের কিছু সুন্দর, সাবলীল ও সচ্ছল! দিনের আশায় স্বপ্ন দেখা শুরু করলাম......
ঢাকার উদ্দেশ্যে নানার যাত্রা শুরু হল আর টাকার উদ্দেশ্যে আমার! সিল্কসিটি তখন নতুন ট্রেন, সব ঝকঝকে-তকতকে, নানা বেশ খুশি, কারণ তার ৩০ বছরের রেলে চাকুরী জীবনে এতো ভাল ট্রেন দেখেনি! আমিও খুশি তার খুশিতে, এই ভেবে যে, সেই খুশিতে কোমরের ব্যাগটা যদি দেয়, আমার হাতে! এটা দেয়, ওটা দেয় কিন্তু ব্যাগটা দেয়না! বাথরুমে যায় তাও ব্যাগ নিয়ে! কিছুতেই কিছু হচ্ছেনা, কিন্তু আশা ছাড়ছিনা!
এভাবে ব্যাগে নজর আর টাকায় শকুনি চোখ রেখে চলে এলাম জয়দেবপুর, কিন্তু কোন সুযোগই পেলাম না! সব ছাড়ে, ওই ব্যাগ ছাড়েনা, ওটা এক হাত দিয়ে ধরেই থাকে! মামার বাসাতে গিয়ে নানা আরও সাবধানী! ওখানে লোকজন বেশী, সুতরাং কে? কখন? কিভাবে? কি করে বসে? সেই দুশ্চিন্তায়! এখানেও বাথরুমে গেলেও ব্যাগ সাথে নিয়ে যায়! ৫ দিন কেটে গেলো! অনেক টোপ ফেলেছি, কৌশল অবলম্বন করেছি, কোনোই লাভ হয়নি, ফলাফল শূন্য! এখনো আশা ছাড়ি নাই! যাওয়া তো রয়েছেই! সেই আশাতে.........!
ফেরার দিন চলে এলো! এবার আমাকে কিছু একটা করে ব্যাগটা পেতেই হবে! শুরু হল ফেরা, বাসাথেকে বিমানবন্দর রেলস্টেশন, সেখান থেকে সাঁটল ট্রেনে জয়দেবপুর, ওহ, প্রতিটা ক্ষণ যেন, উল্কার বেগে চলে যাচ্ছে আর আমার প্ল্যানের ব্যর্থতার ক্রোধ চোখেমুখে!
এলো সেই মহেন্দক্ষণ! জয়দেবপুর স্টেশন অনেক নিচু আর ট্রেনের সিঁড়ি অনেক উঁচুতে, সুতরাং... ট্রেনে উঠতে হলে সবকিছু অন্যের হাতে দিয়েই উঠতে হবে, অনেকেই উঠে পড়েছে, বেশ ভিড়, আমি আগে উঠে পড়লাম, নানা একে-একে সব কিছু আমার হাতে দিলেন, ওই ব্যাগটা ছাড়া! কিন্তু উঠতে গিয়ে ওই ব্যাগের বেল্টে হাঁটু বেঁধে যাচ্ছে! ওটা দেখে আমার হৃদস্পন্দন বাড়ছে! কয়েকবার চেষ্টা করলো কিন্তু উঠতে পারছেনা!
ট্রেন হুইসাল দিল! নানা এবার কিছুটা নার্ভাস হয়ে ওঠার জন্য তার সেই যক্ষেরধন আমার হাতে দিলেন! আমি দুই উরুর ফাঁকে ব্যাগ রেখে, এক হাত দিয়ে ব্যাগের চেন খুলছি! আর এক হাতদিয়ে নানাকে তুলছি! এভাবে তিন-চার বারের ইচ্ছাকৃত অপচেষ্টায় নানাকে তুললাম, ততক্ষণে আমার বাঁ হাত যা করার করে নিয়েছে! একটা চেন খুলে ওখানে যা ছিল সব নিয়ে পকেটে পুরে ফেলেছি! কত তখনও জানিনা? কিন্তু ভালই হবে নিশ্চিত ছিলাম! কারণ? সব ৫০০ টাকার নোট! এবং বেশ কয়েকটা! উঠা মাত্র নানার ব্যাগ, নানার হাতে চরম সততার! সাথে তাৎক্ষনিক দিয়ে দিলাম! এবং নিজেকে আরও নিরাপদ করার জন্য টয়লেটে গেলাম!
ওই টাকা কিছুতেই আমার কাছে রাখা যাবেনা! কারণ ট্রেনে বসেই যদি টাকা হিসেব করে বাঁ গুণে তো আমাকেই আগে ধরবে এবং ওখানেই যে সার্চ করবেনা সেই মানবিকতা তার নেই! যদিও নিজের নিরাপত্তার স্বার্থেই সেটা করবেনা তবুও, সাবধানের মার নাই! টয়লেটে গিয়ে, মাথার উপরের হার্ডবোরড ফাঁকা করে, টাকাটা রেখে দিলাম, আর দেখে নিলাম বগি নাম্বার! কারণ বাসায় যাবার পরে এটার প্রতিক্রিয়ার কথা ভেবে! সম্ভব অসম্ভব সব রকম সার্চ হবে আমি জানি! বাসাতে টাকা পয়সা নয়-ছয় হলে, সেটাই রেওয়াজ এবং স্বাভাবিক!
বাসাতে পৌছালাম দুরুদুরু বুকে কিন্তু নিশ্চিন্ত মনে! আর যাইহোক আমাকে প্রমান তো করতে পারবে না! যেয়ে যেই সেই, প্রথমেই নানার টাকার হিসেব মেলাতে বসা! ফ্রেস হবার আগেই! কারণ যেভাবেই হোক ওনার মনে সন্দেহের দানা বেঁধেছে! এবং যথারীতি টাকার হিসেবে অনেক গড়মিল! প্রায় ৩০০০ টাকা!
সেই সময় অনেক টাকা! সবাই আমার পক্ষে কারণ আমার আগের প্রমাণিত কোন রেকর্ড নেই! কিন্তু নানা সার্চ করবেই! ঠিক আছে করেন সার্চ, যা ভেবেছি তাই হল, সম্ভব-অসম্ভব সবরকম ভাবে সার্চ হল! ফলাফল শূন্য! কিন্তু নানা আমাকে আর বাসায় উঠতে দেবেনা! আমি তো ওই তাই চাই! গালিটালি খায়ে চলে গেলাম।
তখন রাত ১১ টা, রাজশাহীতে ভীষণ শীত, সেই শীতের ভিতরেই আবার স্টেশনে গেলাম, কিন্তু প্লাটফর্মে কোনো ট্রেন নেই! অবশ্য চিন্তার কোনই কারণ নেই, ট্রেনের নাম্বার, বগি নাম্বার, লোকেশন জানা আছে, লোকও আছে পরিচিত যে ওই বগি খুঁজে দিতে পারবে, আর টাকা এমন জায়গায় রেখেছি, যে কেউই পাবেনা, কোনোদিন, আমি ছাড়া! সুতরাং নিশ্চিন্ত মনে চলে গেলাম হলে, একটা স্বপ্নময় রাত কাটিয়ে একটা স্বপ্নিল ভোরের কুয়াশা ঘেরা সকালে ফিরে এলাম স্টেশনে, ট্রেন এবার প্লাটফর্মেই দাড়িয়ে আছে, গতকালের জায়গায়! আমি আমার কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে গিয়ে, অনেক কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নকে গ্রহণ করলাম পরম তৃপ্তিতে আর আনন্দে।
এরপর কিছুদিন কেটেছে দুর্দান্ত প্রফুল্লতায়! উৎফুল্লতায়!! আর আভিজাত্যে!!! সেই সব রোমাঞ্চ আমাকে এখনো রোমাঞ্চিত করে আর আমি পালিয়ে বেড়াই প্রতিনিয়ত রোমাঞ্চের রোমাঞ্চকর নেশায়............
১৩ ই জুলাই, ২০১৫ দুপুর ১:০৫
সজল জাহিদ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ভাই...... আর টাকা? এই টাকা যাবে কোথায়? হা হা হা......
২| ৩১ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ৯:৩৫
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: ধুর, টাকাটা অন্য কেউ নিয়ে গেলে না মজা হত। পছা গফ
©somewhere in net ltd.
১|
১৩ ই জুলাই, ২০১৫ দুপুর ১২:৫২
সুমন কর বলেছেন: শেষ পর্যন্ত টাকা যথাস্থানে পেয়েছেন জেনে খুশি হলাম।
ভাবলাম, টাকা আবার অন্য কেউ নিয়ে গেছে !!
স্মৃতিচারণ ভাল লাগল।