নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বেড়াই-পড়ি-লিখি.....

সজল জাহিদ

সজল জাহিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

অবিবাহিত বৌ......!! (অনুভূতির গল্প)

১৪ ই জুলাই, ২০১৫ সকাল ১০:০০

ছেলেটি সদ্য এসএসসি পাশ করেছে। কলেজে ভর্তি হয়ে বাড়ি ফিরেছে। পুকুরে গোসল করতে যাবার সময়, তার চেয়ে সামান্য বড় এক আত্মীয়ার জিজ্ঞাসা? কেমন দেখলি রে? উনি মেয়েদের কে বোঝাতে চেয়েছেন!

দেখলাম তো ভালই, তবে একজনকে বিশেষ ভাবে দেখলাম? কাকে রে? ছেলেটির প্রতি জিজ্ঞাসা?

ঐযে, টিচার্স লাউঞ্জের সামনে দাঁড়ানো ছিল, নীল-সাদা ড্রেস পরে, কপালে একটা কালো টিপ, মাথায় দুটো ঝুটি আর পায়ে পায়েল, কিন্তু শব্দহীন...!

খবরদার ওই মেয়ের দিকে তাকাসনা, ভুলেও না! ছেলেটিকে সাবধান বানী!
কেন? কি হবে তাকালে? বা কথা বললে? ছেলেটির জিজ্ঞাসা?

ওদের বাড়িতে অনেক বিধিনিষেধ, এমন কি ওই মেয়ের কোন মেয়ে বন্ধু পর্যন্ত নেই! আর তুই! যদি কথা বলতে শোনে বা দ্যাখে, তোর খবর আছে? আর তা ছাড়া, ওই মেয়েরও অনেক দেমাগ! কারো সাথে কথা বলেনা! আমাদের স্কুলে পড়ত, তাই আমি জানি! ছেলেটির আত্মীয়ার উত্তর।

ঠিক আছে দেখিস, ওই মেয়েকে, আমি আমার বন্ধু বানাবই! তোর সাথে চ্যালেঞ্জ! তখন যেন আবার উল্টাপাল্টা মন্তব্য করবিনা। ছেলেটির প্রতি-উত্তর।

শুরুহল, ছেলেটির কলেজ জীবন, বাড়ি থেকে কলেজের দুরত্ত প্রায় দেড় কিলো! যাতায়াত, শুধু মাত্র হেটে! তখন এটাই স্বাভাবিক ছিল। গ্রামের মানুষজন তখন লেখাপড়ার প্রতি ততটা সচেতন নয়, মেয়েদের প্রতি তো আরও না।

মেয়েটির বাড়ি আর ছেলেটির বাড়ি পাশাপাশি দুটি গ্রামে, মাঝে একটি খাল (গ্রামের ভাষায়) যা, যে কোন, কিশোর এক ডুবে পার হয়ে যেতে পারবে। ছেলেটির বাড়ি আগে, মেয়েটির বাড়ি পরে, যদি ছেলেটি আগে বের হয়, তবে দেখা হবার সম্ভাবনা আছে, আর যদি মেয়েটি আগে বের হয়, তো দেখা হবার সম্ভাবনা শূন্য! তো যে কারনে, ছেলেটি প্রতিদিন একটু আগেই বেরহয়, কলেজের উদেশ্যে, যেন পথে মেয়েটির সাথে দেখা হয়!

এভাবে প্রতিদিনই দেখা হয়, আর ছেলেটি শুধু গুডমর্নিং বলে চলে যায়! এখানেই ছেলেটি, মেয়েটিকে আকর্ষণের জন্য ধীরে, ধীরে তৈরি করে নেয়! কিভাবে? ছেলেটি কখনই একই সম্বোধন করেনা, এক-একদিন, এক-একরকম... এই যেমন... কখন সুপ্রভাত, কখন শুভসকাল, কখন স্নিগ্ধ সকাল, কখন মুগ্ধ সকাল, কখন হিম সকাল, এভাবে...... আর কোন কথা না বলে সোজা চলে যায়, এমন কি উত্তরের জন্যও অপেক্ষা করেনা, কখন মেয়েটির দিকে ফিরেও তাকায় না! উল্লেখ্য, মেয়েটি ওই কলেজের সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে এবং অনেক রাজনৈতিক নেতারা তার জন্য পাগল, অনেকেই একটু কথা বলার জন্য কতনা বাহানা করে? কত শত উপায় খুঁজে বের করে? সেখানে এই ছেলেটি তেমন কোন আগ্রহই দেখায় না! শুধু সুপ্রভাত বলা ছাড়া!

এতে করেই মেয়েটির সামান্য আগ্রহ বেড়ে যায় ছেলেটির প্রতি, এবং একদিন......... জিজ্ঞাসা করে! তোমরা কি ইংরেজি প্রাইভেট পড়া শুরু করেছ?!

নাহ, তবে শুরু করবো খুব তাড়াতাড়ি, কেন? তুমি পড়বে? আমি!? মেয়েটি যেন আকাশ থেকে পড়লো......
কেন? সমস্যা কোথায়? এখানে প্রাইভেট না পড়লে তো পাশ করা খুবই মুশকিল, আর ভালো ফলাফল? সেতো অনেক দুরের পথ?

আমার আর ভালো ফল? পড়তেই (কলেজে) পারবো কিনা তার ঠিক নেই! তার উপর আবার প্রাইভেট!
কেন? এবার ছেলেটি সামান্ন আগ্রহ দেখায়। আমরা আগামী সপ্তাহে পড়া শুরু করবো, তুমি পড়লে জানিও? এই বলেই ছেলেটি চলে গেল... আর কোন কথা না বলে।

পরদিন... যথানিয়মে ছেলেটি কলেজের উদ্দেশ্যে যাচ্ছে এবং মেয়েটিকে শুভসকাল জানিয়ে ক্রস করবে... এমন সময় মেয়েটির জিজ্ঞাসা?! তোমাদের সাথে কোন মেয়ে আছে? আহ! এইতো পাওয়ার শুরু, ছেলেটির মনে আনন্দের একটা ঢেউ খেলে গেল......

হ্যাঁ আছে, আমরা পাঁচজন, তার চারজনই মেয়ে! আমিই একমাত্র ছেলে! ছেলেটির কপালে বরাবরই মেয়েদের আগমন বেশী, সেই প্রাইমারী থেকেই!

তুমি একটু সামনে গিয়ে দাড়াও, আমি আসছি, মেয়েটির আহ্বান! ছেলেটি তো পুলকিত! আমাকেই অপেক্ষা করতে বলছে? একি সত্যি......!

ছেলেটি কিন্তু দাঁড়ালো না! চলে গেল... মেয়েটির আকর্ষণ আরও একটু বাড়াতে......

তিনদিন পরে, আবার দেখা, কলেজের পথে... এবার আগেই মেয়েটির জিজ্ঞাসা? সেদিন দাঁড়ালেনা কেন? তোমার বাবা যে সামনে দাড়িয়ে ছিল! আমার সাথে তোমাকে দেখলে, আমাকে নয়, তোমারই কলেজে যাওয়া বন্ধ হয়ে যেত! এই কথা সোনার পরে, কৃতজ্ঞতায় মেয়েটি মরমে, মরছে আর চোখ ছলছল! এবার আবার মেয়েটির জিজ্ঞাসা? তুমি আমার বাবাকে চেন? আর যান-ও... যে আমার বাবা কেমন কড়া মানুষ?

হুম, খুবই সামান্ন, ছেলেটির উত্তর, কিভাবে? আবার জিজ্ঞাসা? তোমাকে দেখেই বোঝা যায়, কতটা বিধিনিষেধের ভিতর তুমি থাক! কারো সাথে কথা বলনা, কারো দিকে তাকাওনা, মাটির দিকে তাকিয়ে পথ চল, কিন্তু চোখেমুখে সব কিছুর জন্য ব্যাকুলতা, জানার আগ্রহ, জানানোর আগ্রহ, শুনতে চাওয়া ও শোনানোর ইচ্ছা।

মেয়েটি এবার অভিভূত, মুগ্ধ এবং বিস্ময় ভরা চোখে তাকাল, ছেলেটির দিকে। ছেলেটি এসব বিষয়ে আর আলোচনা না বাড়িয়ে, সোজা অন্য প্রসঙ্গ ধরল। প্রাইভেট! কারণ, ছেলেটি চায়, সে যে মেয়েটিকে সামান্ন বুঝেছে, তা নিয়ে আর আলোচনা না হোক! মেয়েটি আর একটু বিচলিত হোক...! তাকে বুঝতে পারার বিস্ময়ে...!

এবার ছেলেটি প্রাইভেটের ব্যাপারে, মেয়েটিকে কিছু টিপস দিল, আর বাবাকে বুঝিয়ে রাজী করানোর জন্য কিছু পরামর্শ দিল। এবং দুইদিন পরে জানানোর জন্য বলল।

পরদিন... মেয়েটি রাস্তাতে অপেক্ষা করছে ছেলেটির জন্য! এইজন্য যে, সে প্রাইভেট পড়ার অনুমতি পেয়ে গেছে! সেই কৃতজ্ঞতায় আগেই শুভসকাল জানাতে...!

এরপর...... শুরু হল একসাথে পথ চলা, বাড়ির মাঝ রাস্তা থেকে কলেজ, কলেজ থেকে স্যারের বাসা, স্যারের বাসা থেকে আবার বাড়ির ফেরার মাঝ রাস্তা পর্যন্ত......... হাটা আর কথা, মাঝে-মাঝে ঝগড়া! আর ক্লাসের প্রিয় সবাইকে নিয়ে মেয়েটির দারুন, দারুন সব ছবি আঁকা! (ছেলেটির ছবি ছাড়া) এবং সবকিছু নিয়ে সবসময় ছেলেটির সাথে আলোচনা! আর অদ্ভুদ সুন্দর হাতের লেখায়, বিভিন্ন মন বাসনার বর্ণনা! অতৃপ্ত জীবন কথা! ছেলেটির সাথে সবকিছুর শেয়ারিং!

এভাবে কেটেগেল এক বছরেরও বেশী সময়............ অদ্ভুত দ্রুততায়! পুরো কলেজে গুঞ্জন, আলোচনায় মুখর, বিষয় এক কুৎসিত ছেলের সাথে সেরা সুন্দরীর “প্রেম ও ভালোবাসা” নিয়ে!! এমনকি ছেলেটির সেই আত্মীয়াও! আসলে তেমন কিছুই ছিলনা... সত্যিই ছিলনা।

একদিন...... ভরা বর্ষায়, নদী পারাপারের পুল নষ্ট, নদী পার হতে হবে নৌকায়, তো ওঠা হল নৌকায়... নৌকা চলতে শুরু করতেই, সামান্ন দুলে উঠলো... ঢেউয়ে! মেয়েটি, ছেলেটির হাত চেপে ধরল... পড়ে যাবার ভয়ে! এবং বলল আরও ভালো করে ধরে থাকতে...! ছেলেটি এবার নির্বাক...! বোধহীন এবং অসাড়...!

আরও বিস্মিত, নৌকা থেকে নামার সময়, ছেলেটি নেমে গেছে, মেয়েটি নামার সময়... একহাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল... ধর.............!

এরপর, নেতাদের বিভিন্ন হুমকি-ধামকি, মার খাবার কাছাকাছি যাওয়া এবং আরও অনেক কিছু, উল্লেখ্য, যে ছেলেটির, একবার মেয়েটির বাড়িতে যাবার সৌভাগ্যও হয়েছে, অবশ্যই, যখন মেয়েটির বাবা বাড়িতে ছিলনা!

যাইহোক, এভাবে কেটেগেল আরও প্রায় একবছর। ফাইনাল পরীক্ষার কিছুকাল পরে...... এক মুশলধারে বৃষ্টি শেষের দুপুরে, ছেলেটি আর মেয়েটি বাড়ির দিকে যাচ্ছে তাদের এক বান্ধবীর বাড়ি থেকে... হঠাৎ, আবারো ঘন অন্ধকার ও বৃষ্টি! এবং মেয়েটির ছাতার নিচে, ছেলেটিকে আহ্বান! এতে আবারো ছেলেটির বোধহীন রোমাঞ্চ ও শিহরণ! ছেলেটির গায়ে, মেয়েটির সামন্য ছোঁয়া...! যেন বিদ্যুতের স্পর্শ...!

একপাশে ভরা পুকুর... একপাশে গ্রামীণ ঝোপঝাড়... সামনে দৃষ্টিহীন সীমা...! ছাতা মাথাতেও তারা ভিজে একাকার...!

হঠাৎ...... মেয়েটির কি হল কে জানে........?

মেয়েটি, ছেলেটির চোখের দিকে একবার তাকালো আবার চোখ নামিয়ে ছেলেটিকে বলল.........

“আমি তোমার, অবিবাহিত বৌ...!!!”

হ্যাঁ তাই-ই বলেছিল! আজও কানে বাজে...!!

এরপর...... আর দেখা হয়নি দুজনের, কখনো না! ছেলেটিই দেখা করেনি!

কেন? কারণ, সেটা সম্ভব ছিলনা!

থাক সেই সৃতিটুকু, থাক অমলিন! জীবনের প্রথম পাওয়া আর অনিঃশেষিত সুখ হয়ে...............

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৩:২১

রিফাত হোসেন বলেছেন: ভাল লাগল, তবে প্রেম কে বাস্তব এ ভুয়া মনে হয়। বিয়ে করলে খুশি হতাম

১৪ ই জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৩:৩০

সজল জাহিদ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ভাই, তবে সেই বয়সে কি কারো পক্ষে বিয়ে করা সম্ভব? আদৌ নয়। তবে ভাবছি এই গল্পটা আর একটু বড় করবো, ২য় অংশে, দেখাযাক......!

২| ১৪ ই জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৫:০৫

আজিজার বলেছেন: ভাল

৩| ৩১ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১০:০২

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: সুন্দর প্রেমময় গল্পে ভালোলাগা রইল। +++

ভালো থাকুন সবসময়, শুভকামনা।

৪| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ৮:৫৩

সজল জাহিদ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।

৫| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:১০

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: হুম| ইন্টারেস্টিং

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:২১

সজল জাহিদ বলেছেন: ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.