![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছেলেটি তখন ক্লাস টু বা থ্রিতে পড়ে, থাকে মোটামুটি কাছের এক আত্মীয়র কাছে, কারণ বাবা-মায়ের ছেলেকে কাছে রেখে পড়াশুনা করাবার মত আর্থিক অবস্থা নেই। একদিন স্কুল থেকে ফেরার পরে শুনতে পায়, আগামীকাল তার কাজিনরা বেড়াতে আসবে, শুরু হল ব্যাপক প্রস্তুতি, অনেক অনেক বাজার, বাড়িঘর গোছানো, এসব ছাড়াও আরও অনেক আয়োজন। ছেলেটির মনে বেশ খানিকটা উত্তেজনা ছড়িয়েছে এই আয়োজন এবং কাজিনদের বেড়াতে আসাকে ঘিরে।
তো এলো সেই দিন, যে দিন তার কাজিনরা আসবে, সবায় প্রস্তুত, বাড়ির বড়রা গেলো রেল স্টেশনে, মেহমানদের এগিয়ে আনতে। সন্ধা নামার একটু আগে, গোধূলি বেলাতে সবাইকে নিয়ে, বাড়ির বড়রা ফিরে এলেন। ছেলেটির চোখ আঁটকে গেলো তারই সমবয়সী কাজিনের পায়ের দিকে! কারণ কাজিনের পায়ের সাদা কেডস! অন্য কোন দিগে তার মন নেই।
তখন ১৯৯০ বা ১৯৯১ সাল মফস্বল শহরে ৮-১০ বছর বছরের ছেলেদের কাছে এক বিস্ময় বলা যায়! ওই জুতা জোড়া তাকে সব কিছুথেকে আলাদা করে ফেলেছে, সারাদিন শুধু জুতোর কথাই ভাবে, আর চেয়ে চেয়ে জুতো জোড়া দেখে, এমনকি ছুঁয়ে দেখার সাহসও তার নেই। এমনকি, কাজিনদের নিয়ে অন্যান্য যে পরিকল্পনা তার ছিল, সব নিমিষেই ম্লান হয়ে গেছে ওই জুতোর কাছে।
এসবের কারণ, জুতোতো অনেক স্বপ্নের ব্যাপার তারতো তেমন এক জোড়া স্যান্ডেলই নেই, যাও আছে তা ওই জোড়াতালি দেয়া, সেলাই করা, বাহুবার বেল্ট পরিবর্তন করতে করতে, বেল্ট আঁটকে থাকার জায়গাটা এতো বড় হয়ে গেছে যে, বার বার বেল্টের বল্টু বেরিয়ে আসে! সুতরাং ওই বেল্টকে আঁটকে রাখার জন্য আবার সুতোর সাহায্য নিতে হয়। সুতো দিয়ে বেল্টএর সাথে স্যান্ডেল বেঁধে রাখতে হয়!
যাইহোক, এখন ছেলেটির মনে একটাই স্বপ্ন তারও একজোড়া ওই রকম সাদা কেডস চাই, শুরু হল স্বপ্ন দেখা এবং সেই স্বপ্নের পিছনে ছোটা। শুরু হল পয়সা জমানো। যখন যেখানে যাই পাকনা কেন, চারআনা, আটআনা সব, সব জমানো শুরু করল ছেলেটি। উন্মাদের মতো অপেক্ষা করে থাকে, কখন কোন মেহমান আসবে, আর এসে চলে যাবার সময় তাকে এক টাকার একটা নোট দিয়ে যাবে!কারণ ওই সময় মোটামুটি একটা সামাজিক রেওয়াজ ছিল, বাড়ি থেকে অতিথি চলে যাবার সময়, বাড়ির ছোটদের দুটি বা একটি টাকা দেওয়ার, যা ওইসময় ছোটদের কাছে অনেক বড় পাওয়া ছিল!
এভাবেই ছেলেটির কাছে কাছে কমবেশি টাকা জমতে শুরু করল। ছেলেটির টাকা পাবার আর একটি উপায় ছিল, বাজার করা। ওই বাসার ছোটখাট বাজার ছেলেটিই করতো, এই যেমনঃ আলু, পেয়াজ, ডিম, আটা, চিনি, মশলা, পান, বড়দের সিগারেট ইত্যাদি আরও অনেক কিছু। তো ছেলেটি সবসময় চেষ্টা করতো ওইসব কেনাকাটা থেকে, বেশী না মাত্র চার আনা বাঁচানোর, জাতে ওই পয়সাটা সে জমাতে পারে। এভাবে জমাতে জমাতে তিনমাস পরে সে তার জমানো টাকা গুনতে শুরু করল, অনেক আগ্রহ নিয়ে গুনে পাওয়া গেলো মাত্র বিশ টাকা!! তাতে তার ভালই লাগলো, কারণ ছেলেটি তখনও জানেনা যে জুতোর দাম কত?
এবার ছেলেটি বাজারে গিয়ে দোকানের আশেপাশে ঘোরাঘুরি শুরু করল, আর জুতো দেখা শুরু করল দূর থেকে, কারণ কাছে গেলে দোকান এর লোকজন বকা দিতেপারে এই ভয়ে! এ দোকান ও দোকান ঘোরাঘুরি করে দাম আর জিজ্ঞাসা করার সাহস করতে পারেনা! সেই সাহস সে করতেও পারলো না!
কয়েকদিন পরে ছেলেটি তার এক মামার কাছে গেলো সাহস করে, এটা ওটা মামার কাছে জিজ্ঞাসা করার পরেও সে ঠিক জুতোর দামের কথা জজ্ঞাসা করতে পারেনা! কিন্তু ছেলেটির মামার মনে হল, ছেলেটি অন্য কিছু বলতে চায়, তাই ছেলেটির মামা ছেলেটিকে জিজ্ঞাসা করল, আর কিছু বলবি কিনা? ছেলেটির অভিব্যাক্তি দেখে সে আশ্বস্ত করল, কোন ভয় নেই বল। অবশেষে, ছেলেটি বলতে গিয়েও থেমে গেলো এই ভেবে যে, ছেলেটির বাসাতে যদি একথা জানতে পারে, তো তাকে বাসা থেকে বেরও করে দিতে পারে, তখন স্কুলে যাবার পাশাপাশি ঠিক মত তিনবেলা খাবারও আর জুটবেনা!! এই ভয়!
মামা ছেলেটিকে বলল যে, তোর কোন ভয় নেই বল, আর আমি তোর কথা কাউকেই বলবনা, এবার ছেলেটি কিছুটা নির্ভয়, তবুও কিছুটা দুরুদুরু বুকে ছেলেটি তার মামাকে ওই জুতোর দাম কত জেনে দিতে বলল।
মামা বলল, তুই যা, আমি জেনে বিকেলে তোকে বলব। তো বিকেল বেলা ছেলেটি আবার তার মামার কাছে গেলো, এবং জানলো যে জুতোর দাম ৪৫০ টাকা!! ছেলেটির স্বপ্ন ভেঙে চুরচুর হবার মত অবস্থা হল। কিন্তু সে দমে নাগিয়ে, টাকা জমানোর নতুন উপায় খুজতে লাগলো। এবং একটি নতুন উপায় বেরও করে ফেলল।
উপায়টি হল, ছেলেটির এক খালু অনেক সিগারেট খায় আর খালা লেখা পরা জানেনা, তো খালু আবার একটা সিগারেট একসাথে খেতে পারেনা, একটা সিগারেট কে দুই ভাগে ভাগ করে, আলাদা আলাদা ভাবে খায়, আর ওই খালুর সব সিগারেট সব সময় ছেলেটিই এনে দেয়। তো প্রতিদিন দশটা সিগারেট ২০ ভাগ করে খায়, এখানে ছেলেটি একটা কৌশল প্রয়োগ করল, আর টা হল প্রতিদিন, সিগারেট আনত কিন্তু একটা বা দুটো করে কম! খালুর মুড বুঝে, আর সিগারেট এনে ছেলেটি নিজেই সিগারেট ভেঙে ভাগ করে রাখত, এতে করে, খালুও ধরতে পারছেনা যে সিগারেট কম আনছে, এভাগে প্রতিদিন প্রায় ৫০ পয়সা, কখনো কখনো এক টাকাও জমে যেত!
ছেলেটিতো ভীষণ খুশি তার এই পয়সা জমানোর উপায় আবিষ্কার করতে পেরে এবং তা সফল করতে পেরে। ছেলেটির টাকা জমানোর আর একটা উপায় ছিল, খালার কাছে থেকে। ছেলেটির খালা প্রতিদিন খালু অফিস থেকে এলে, খালুর পকেট থেকে টাকা চুরি করত (মারত), কারণ খালুর ছিল ঘুষের চাকুরী, প্রায় দিনই খালু বাসায় আসতেন উপরি পয়সা নিয়ে এবং না গুনে, কারণ এসব টাকা সাধারণত মানুষ অফিস বা বাজারে বসে হিসেব করেনা। এইটা জানত ছেলেটার খালা, তাই, যখনি খালু অফিস থেকে এসে গোসল করতে যেত, তক্ষুনি খালা খালুর পকেট থেকে কিছু থাকা রেখে দিত এবং টাকাটা নিয়ে প্রথমে রাখত ছেলেটার কাছে, কারণ খালা গুনতে জানেনা!
এটাই ছিল ছেলেটির জন্য আশীর্বাদ!! সুতরাং, ছেলেটি চোরের উপর বাটপাড়ির ১০০ ভাগ প্রয়োগ শুরু করল!
এবার ছেলেটির টাকা জমানোর বেগ বেড়ে গেল। কারণ খালু অফিস থেকে গোসলে গেলে, খালা টাকা মারে, আর যেহেতু খালা টাকা গুনতে পারেনা তাই সে টাকা গোনার জন্য দেয় ছেলেটিকে, এই ফাঁকে ছেলেটি কখন দুই, কখন পাঁচ এমনকি কখনও কখনও দশ টাকা পর্যন্ত রেখে দেয়া শুরু করল। এটা নির্ভর করতো খালু কত বেশী টাকা নিয়ে এসেছে আর খালা সাহস করে কত টাকা পকেট থেকে কত টাকা বের করতে পেরেছে তার উপর।
প্রায়ই, খালা আর খালুর ঝগড়া বাঁধত এই টাকা চুরি করা নিয়ে, কারণ টাকা যতই না গুনে আনুক একটা অনুমানতো আছে, যে কত টাকা আছে বা থাকতে পারে খালুর পকেটে। কিন্তু খালা কিছুতেই স্বীকার করেনা যে টাকা নিয়েছে। এসব নিয়ে এমনকি মারধর পর্যন্ত হতো কখন সখন! ঠিক একই অবস্থা হতো ছেলেটির আর খালার মাঝেও, কিন্তু পার্থক্য ছিল এই যে, খালা-খালুর ঝগড়ায় মার শুধু খালুই দিতনা, খালাও ধোলাই দিত খালুকে! কিন্তু ছেলেটির বেলাতে আর দু পক্ষের মারামারির কোন সুযোগই নাই, এখানে মার শুধু ছেলেটিই খেত, ভীষণ মার! প্রায় প্রতি সপ্তাহে দুবার!! তবুও ছেলেটির জুতো কেনার স্বপ্ন থেমে থাকেনি!
ছেলেটির টাকা জমানোর আর একটি উপায় ছিল, দোকানে বাকিতে ছোট খাট বাজার করা। বাসার অনেক ছোট-খাট বাজার সদায় করা হত, পাড়ার দোকান থেকে, কখন নগদ, কখন বাকি। এবং ওই দোকানের ব্যাপারটা ছেলেটির কাছেই ন্যস্ত ছিল। এতে করে, ছেলেটির লাভ হত, বাকিটা তো বাকি আনতই মাঝে মাঝে নগদ তাও সে বাঁকিতে আনতে শুরু করল, এবং বেশ টাকাও জমতে থাকলো, আর ক্ষতি হল এই যে, মাস শেষে দোকানদার যেদিন বাকির ফর্দ তুলে দিতেন খালুর হাতে, সেদিন আর রক্ষা হতনা ছেলেটির! সেদিন খালা-খালুর মারামারির পরিবর্তে খালা আর খালু একই সাথে ঝাঁপিয়ে পড়ত ছেলেটির উপর! মার খায়, স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়! এমনকি ওখানে থাকার ও তিন বেলা খাবার ব্যাপার টাও ঝুলতে থাকে, ছেলেটির মাফ চাওয়ার পরিধির উপর। এভাবেই যাচ্ছে দিন, চলছে জীবন, বাড়ছে জমানো টাকার পরিমান আর বড় হচ্ছে ছেলেটির স্বপ্ন।
দুই বছর পর, ছেলেটির কাছে ২৫০ টাকা জমে গেছে! স্বপ্ন পূরণ আর বেশী দূরে নয় তাহলে? ছেলেটি তার মামাকে জানালো তার জমানো টাকার কথা। তখন থেকে ঈদ আরও চারমাস পরে, ছেলেটির মামা বলল, আগামী চার মাস আরও যা পারিস জমা, বাঁকি যা লাগে, আমি দিয়ে তোকে এক জোড়া কেডস জুতা কিনে দেব! ছেলেটি অনেক খুশি, অনেক, অনেক খুশি। আবার জমানো শুরু করলো টাকা, আগের মত একই ভাবে। তিনমাসে আরও ২৫ টাকা জমে গেছে প্রায়। ২৭৫ টাকা। শুরু হল রমজান মাস। এসময় বাসার বাজার করা কমে গেল! সিগারেট আনা আপাতত বন্ধ!! ঘুষের টাকা আর বাসাতে আনেননা খালু, ওগুলো অফিসের ড্রয়ারে তালা মেরে রেখে আসেন!!!, দোকানের বাঁকি একদমই বন্ধ! বিশেষ করে ছেলেটি চাইলে! সুতরাং.........টাকা জমানোও বন্ধ।
১৫ই রমজান, বাসাতে অনেকেই এসেছেন, অনেক আত্মীয় অনাত্মীয়রা, আরও এক মামা, ছেলেটি আবার আশাবাদী হতে শুরু করল। সামান্য কিছু উপার্জনও শুরু হল, সন্ধার পরের তাসের আসর থেকে, ঈদ সামনে, এই উপলক্ষে ইফতারির পরে, তাসের আসর বসে টাকা দিয়ে। ছেলেটির কাজ সবাইকে সব রকম সাহায্য করা, চা, সিগারেট, পান, বাদাম, অন্যান্য খাবার পরিবেশন, খাওয়া শেষ হলে, জায়গা পরিষ্কার করা, তাস খেলার জন্য জায়গা বানিয়ে দেয়া, বিনিময়...প্রতি দানে যে জয়ী হবে, আমাকে এক টাকা দিবে। ছেলেটিতো মহা খুশি, কাজ যতই হোক টাকা তো জমবে! প্রিতিদিনই প্রায় ৫ টাকা পাওয়া যাচ্ছে, অনেক বড় ব্যাপার। দেখতে, দেখতে সব ধরনের রোজগার মিলিয়ে ২৫ তো রমজানে ৩৪০ টাকা জমে গেছে। ছেলেটির খুশিতো আর ধরেনা!
২৫ রমজান, ছেলেটির যে মামা এখানে ঈদ করতে এসেছে, সে ছেলেটির কাছে এসে বলল, ‘তোর কাছে টাকা আছে? থাকলে আমাকে দে, আমি তাস খেলে জিতলে তোকে ২০ টাকা দেব!’ ছেলেটি বুঝতে পারছেনা কি করবে? কিন্তু নতুন মামা চাপাচাপি করতে লাগলো। অবশেষে নতুন মামা তাকে ৫০ টাকা দেবে বলে কথা দিল! এবার ছেলেটি আর ৫০ টাকার লোভ উপেক্ষা করতে পারলনা। ৫০ টাকা বেশী পাবার জন্য ছেলেটি তার নতুন মামাকে ৩০০ টাকা দিয়ে দিল! আর তার জুতো কেনার কথা বলল। নতুন মামা ছেলেটিকে, নতুন জুতো এবং আরও ৫০ টাকা দিবে বলে আশ্বস্ত করলো। টাকা নিয়ে নতুন মামা বেরিয়ে গেল, তাস আর খেলতে বসেনি! এভাবে পুরোদিন তো গেলই, এমনকি রাতেও ফিরলনা! ছেলেটির না আছে ঘুম না আছে খাওয়া, ছেলেটির তিল তিল করে জুতো কেনার জন্য জমানো টাকা!
ছেলেটি পুরো ঘটনা তার পুরনো মামাকে বলল। মামা তাকে আশ্বস্ত করল যে টাকার জন্য চিন্তা না করতে, টাকা সে উদ্ধার করে দেবে। সারাদিন কেটেগেলো নতুন মামা আর আসেনা! অবশেষে শেষ বিকেলে নতুন মামা আসছেন সিগারেট টানতে, টানতে। ছেলেটার আর কোন খেয়াল নেই, চিৎকার করে তার সাথে বাঁটপারির কথা বলতে লাগলো এবং সিগারেট খাওয়ার কথা বলতে লাগলো, এতে করে নতুন মামা উল্টো ক্ষেপে গিয়ে ছেলেটিকে মার শুরু করল।
ছেলেটি কাঁদতে কাঁদতে তার মামার কাছে চলে গেল এবং বিচার দিল। ছেলেটির মামা তার বড় ভাই এর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল এবং বেদম প্রহার করল। এতে করে সবাই বিষয়টা জেনে গেল। কিন্তু আনন্দের বিষয় এই যে, তাতে ছেলেটার কোন ক্ষতি হলনা বরং নতুন মামার কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া টাকা (সব নয়) এবং অন্যরা মিলে বাঁকি টাকা ছেলেটির কাছে দিয়ে দিল। ছেলেটি এই প্রথম, এই পরিবারের কাছ থেকে কোন সহানুভূতি পেল! এই ঈদে আর জুতো কেনা হলনা। ছেলেটি ঠিক করল, কারো সাহায্যে নয়, সে নিজেই ঈদের কদিন পরে বাড়ি যাবে বেড়াতে তখন কিনবে। কারণ বাড়ি যাবার সময় ভাড়ার টাকা বাঁচিয়ে, নতুন জুতো কেনার টাকা বানিয়ে ফেলবে।
এবার বাড়ি ফেরার পালা, পকেটে বাড়ি যাবার ভাড়ার টাকা, আত্মীয়ের দেয়া ছেলেটির মা-বাবা দেবার জন্য কিছু টাকা আর ছেলেটির জমানো জুতো কেনার টাকা, বিশেষ জায়গায়, বিশেষ ভাবে সংরক্ষিত। সেটা হল, ছেলেটির একটি ছোট টর্চ লাইট আছে, যেটা পেনসিল ব্যাটারি দিয়ে চলে। ওই টর্চের ব্যাটারি খুলে, টাকা গুলোকে গোল করে পেঁচিয়ে, ব্যাটারির মতো করে, লাইটের ভিতরে ব্যাটারির পরিবর্তে রেখে দিল, যেন বাড়ির লোকেরাও যেন বুঝতে না পারে যে, তার কাছে টাকা অন্য টাকা আছে! ব্যাবস্থা বেশ ভাল। ছেলেটি বাড়ি গেল। বাজার থেকে বাড়িতে গিয়েছে, মা-বাবার টাকা পয়সা দিয়ে দিয়েছে, আর ছেলেটির টর্চ লাইট যক্ষের ধনের মত আগলে রেখেছে। কয়েকদিন পরেই তার বোনা প্রথম স্বপ্ন পূরণ হবে।
পরদিন ভোঁরে মানুষের চিৎকার, চ্যাঁচামেচিতে ছেলেটির ঘুম ভাঙে। তার ছোট বন কাঁদছে, মা মারছে আর আসেপাশে প্রতিবেশীরাও তার মা এবং বোনের উপর খুব ক্ষিপ্ত? ছেলেটি কিছুই বুঝতে পারছে না? কি হল হঠাৎ করে? একজন চিৎকার করে বলে উঠলো, চুরি করেছে চুরি! সোনার জিনিষ চুরি করেছে!! এবার বেঁধে রাখবো আর পেটাব। পাশ থেকে আর একজন বলে উঠলো, ‘বিকেলের মধ্যে, সোনার জিনিষ অথবা টাকা না দিলে, সন্ধায় সালিশ বসবে’ তখনকার দিনে এটাই গ্রামের রেওয়াজ ছিল। ছেলেটির মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। এই গ্রামে তাদের কিছুটা সুনাম আছে ভদ্র, সভ্য এবং নিঃস্বার্থ হিসেবে। কিন্তু এটা কি বলছে সবাই!
সবাই চলে গেল, সন্ধ্যায় সালিশ, যদিও ছেলেটি জানে, তার বন এ কাজ করেনি, কিন্তু কোননা কোন ভাবে বিষয়টা তাদের সাথে জড়িয়ে গেছে।
অবশেষে, ছেলেটি তার সকল স্বপ্ন জমান টর্চ লাইট বের করলো, যাদের সোনা চুরি গেছে, তাদের বাড়ি গেল এবং তাদের কাছে জানলো যে, যেটুকু সোনা চুরি গেছে তার দাম প্রায় ৮০০ টাকা! ছেলেটি তার স্বপ্নের স্তম্ভ গুলো বের করল, মা-বাবার জন্য দেয়া টাকা থেকে রাখা কিছু টাকা।
সব মিলিয়ে প্রায় ৪০০ টাকা তাদের দিয়ে দিল আর বলল সালিশ না করতে............
©somewhere in net ltd.