নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বেড়াই-পড়ি-লিখি.....

সজল জাহিদ

সজল জাহিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মামিরা সব বাইরে গেছে, মামারা তাই একসাথে......! (রম্য-১ ও ২)

১০ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১০:৩০

আরে মামা কি খবর? ক্যামন আছো?

অফিস থেকে বাসায় ফিরে ফ্রেস হয়ে একটু বসতেই মুঠোফোন বেজে উঠলো......

এইতো মামু আছি ভালো, তোর কি খবর?

মামা খবর নেতো, ওই ব্যাটায় দেশে ফিরছে কিনা? খালি, কয়দিন পরপর কই, কই যায়, মিটিং এর নাম কইরা......!

ক্যান বুঝলিনা...! কি বুঝলাম না? ওই ব্যাটায় কয় দিন পরপর তো মেসেজ করাইতে যায়...!
ক্যান আগে না হয় যাইত, এখন তো বিয়া করছে, এখন আবার মেসেজ কেন লাগবে? তাইলে বিয়া কইরা কি লাভ হইলো?

ক্যান বিয়া কি মেসেজ নেবার জন্য করছে নাকি? বিয়া তো করছে সংসার করার জন্য, একটু.........!

আরে ধুর তুই বুঝলিনা, পুরনো অভ্যাস তো...... এতো সহজে কি ছাড়া যায়...! তাই যায় মাঝে মাঝে আরকি?
ওহ...... তাও ঠিক... হইতেও পারে, আচ্ছা ঠিক আছে তুই ফোন দে? ওকে মামু দিতেছি...... তার আগে তুই বল তোর হঠাৎ বসার এতো আগ্রহ হল কেন?

অফিসে ব্যাস্ততা কম নাকি? আর তোর বউ? বেশী রাত হইলেই তো একটু পরপর ফোন দিয়া মুডটাই নষ্ট করে দিবে......!

নাহ, আসলে দোস্ত, আমি সাত দিনের জন্য স্বাধীন হচ্ছিতো তাই......! তোকে ফোন দিলাম।

মানে কি স্বাধীন মানে? তোর বউ কই?

নাহ, আছে এখনো বাসায়, কালকে বাপের বাড়ি যাবে, এক-সপ্তাহের জন্য...! তাই এই সাময়িক স্বাধীনতা! একটু রসিয়ে রসিয়ে উপভোগ করতে চাই...!

তাহলে কবে বসবো দোস্ত? কেন বৃহস্পতি বার?

নাহ দোস্ত বুধবার বস।
ক্যান, তোর তো কোন সমস্যা নাই, তাহলে বুধ কেন, বৃহস্পতি বারই তো ভালো, ছুটির আগের রাত্রে একটা চরম আড্ডা, রাতে গিয়ে শুধু ঘুম আর বেশ দেরী করে জাগা!

নাহ, দোস্ত বুধবার-ই কর, আমার বউও বাইরে যাবে, এইদিন থাকবে নাতো তাই......! একদম আরাম করে, রসিয়ে রসিয়ে আড্ডা মারা যাবে......!

ও তোমারও তাহলে এই অবস্থা...! নাহ দোস্ত এই অবস্থা ছিলনা, এই ইদানিং হালকা একটু মনিটরিং এর মধ্যে আছি...! তাই।

ঠিক আছে ওরে ফোন দে, ওতো এইসব পরাধীনতার জন্য বিয়া কইরাও, বউ গ্রামের বাড়িতে রেখেছে!

হুম... তাতে কি হইছে, এইভাবে রাখলে কিছুদিন পরে দেখা যাবে বউ আছে ঠিক-ই কিন্তু তা আর ওর নাই, অন্যের হইয়া গেছে......!

ঠিক আছে দে, ওকে ফোন দে......

একটু পরে...... দোস্ত ওরে ফোন দিছিলাম, ওর সময় আছে, এইটাই নাকি ওরও শেষ সুযোগ, এমন স্বাধীন থাকার!

ক্যান, ক্যান ওর আবার কি হইলো?

ও নাকি বাসা নিতেছে, বউ নিয়ে আসবে ঢাকাতে, এই ঈদের পরেই...!
কি কছ? একজন ছিল কিছুটা স্বাধীন সেইজনও গেল......!

তাইলে আজকে হোক পুরো রাত জুড়েই, মাস্তি আর হুল্লোড়...! সীমাহীন, বাধাহীন, ফোনহীন, প্রশ্নহীন...!

কি বলিস? হ্যাঁ ঠিক ঠিক দোস্ত, তাহলে ওই কথাই থাকলো...... বুধবার সন্ধা... অফিস শেষে......!

হ্যাঁ ঠিক আছে তাহলে শুরু হোক.........

...... 1…..2…..3……4……………..

(বিবাহিত বন্ধুদের একটি সন্ধা.........)

অফিস শেষ হবার আগেই, এক বন্ধুর ফোন... দোস্ত আমিতো ৭ টার আগে আসতে পারবোনা, তোরা একটু দেরী করে বের হইস।

ক্যান আবার দেরী ক্যান? তোর তো কথাছিল ৭ টায় বনানী থাকবি, আবার দেরী কেন? আচ্ছা ঠিক আছে, দেরির জন্য তোকে জরিমানা করা হবে!

আবার কিসের জরিমানা করবি, তোরা তো বললি আমি-ই নাকি আজকে খাওয়াবো, আবার আমারই জরিমানা! এইটা কি কস?

হ এই টাই! ওদের সাথে তোর দেরির ব্যাপারে কথা হইছে, ওরাও তোর জরিমানার ব্যাপারে একমত! আর তোর জরিমানা হইলো, আমরা একসাথে হবার পর থেকে, তুই এসে না পৌছানো পর্যন্ত যা-যা খাব, সেসবের বিলও তোর!

এইটা কি হইলো, আমি খামুনা অথচ বিল দিমু?

হ, দিবি তুই-ই দিবি, আর জরিমানা দিতে না চাইলে ৭ টার মধ্যে বনানী দেখতে চাই? এখন তুই-ই সিধান্ত নে কি করবি? বাই...... ফোন কেটে দেয়া হল।

৬:৩০ এই বাকি বন্ধুরা একসাথে হয়ে গেল। কোথায় বসে, কোথায় বসে? একজনের প্রস্তাব তাদের নিয়মিত আড্ডার জায়গা শরমা হাউজ। অন্য একজনের নতুন কোন জায়গা, কারণ শরমা হাউজে সব সময়ই বসা হয়, এবার অন্য কোন জায়গা। শেষমেশ ঠিক হল কিনা ম্যাড়মেড়ে আর ঘিঞ্জি স্টার কাবাব! ওহ অসহ্য, এতো মানুষ আর এতো আলো ঝলমলে জায়গায় কি আড্ডা জমে?

দেরীর বন্ধুতো খুব খুশী আর আনন্দিত খরচ কমে গেল বলে! ঠিক আছে তো যাই সেই স্টার কাবাবেই!

“ভাই কাঁচা আমের জুস দেন তো” একজনের চাওয়া। ভাই কাঁচা আমের জুস নিচে গিয়া খাইতে হবে। কেন? আমরা তো এখানে অনেকক্ষণ থাকবো, আরও অনেকেই আসবে, এখানেই নিয়ে আসেন জান, ম্যানেজারকে বলেন। এই সব ঝাড়ি দিয়ে বেয়ারাকে পাঠিয়ে দেয়া হল, আর অপেক্ষায় থাকা হল, কাঁচা আমের জুসের।

২০ মিনিট পেরিয়েও যখন আমের জুস এলনা, তখন ধরে নেয়া হল যে আসলেই উপরের তলায় আমের জুস আর আসবেনা। তাই এবার অর্ডার দেয়া হল কোমল পানীয়র, এক একজনের এক-এক রকম, খুব দ্রুতই চলে এলো কোমল পানীয়র বোতল! এক বা দুই চুমুক দিয়ে নতুন আলাপ শুরু করতে না করতেই চলে এলো, সেই কাঁচা আমের জুস!

এবার নেও ঠ্যালা, খাও এবার একই সাথে জুস আর সেভেন আপ! তারপর আর কিছু খাওয়া লাগবেনা! পেটে আর জায়গাই থাকবেনা! তার মানে ওই শালার কোন টাকাই খরচ হবেনা?

নাহ, তা হতে পারেনা, চল আমরা এগুলো শেষ করে ১০ করে বুকডন দেই! তাতে করে বেশ হালকা লাগবে আর একটু ক্ষুধাও পাবে! একজনের পরামর্শ, সেসব বাদ। অবশেষে স্পন্সরকারী এলেন। খাওয়া-দাওয়া শেষ, এবার চল আসল আড্ডা আর প্যাচালের পালা, সেই নিয়মিত আর পরিচিত জায়গা, বনানী ব্রিজ এর উপরে দাড়িয়ে বা বসে-বসে নতুন-পুরনো, অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যতের আত্ন সুখের সন্ধান! এর সমালোচনা, ওর সমালোচনা, একজন আর একজনকে পচানো, কার মাথায় কে কাঁঠাল ভাঙবে সেসব গবেষণা!

এর ভিতরেই একজনের ফোন বেজে উঠলো, সে ফোন দেখে কিন্তু ধরেনা! কারণ ফোন ধরার সাথে সাথে বন্ধুরা মিলে বউয়ের কাছে তাকে ফাঁসানোর সবরকম চেষ্টা করবে! আশপাশ থেকে জালিয়ে মারবে! সেই ভয়ে!

একজন বলে উঠলো...... “দোস্ত ধর, ফোন ধর, যদি তোর বউয়ের ফোন হয়, তো ফোন ধরেই সরাসরি বলবি, কে তুই বল...!” (একটি গানের কথা)।

“শালা পচাইতে চাও, পচা তা এই ভাবে কেন? কে তুই বল বললে, খবরই আছে!”

আরে শোন ব্যাপার না, এই কথা বলার পরে যদি দেখিস বা বুঝিস খুবই ক্ষেপে গেছে তাহলে পরে গেয়ে উঠবি

“তোর আঁচলের গন্ধে আছে, চিনতে পারার সুখ”
“টানলে কাছে লজ্জাতে তোর নেমেছে চিবুক!”

দেখবি সব ঠিক, সব স্বাভাবিক!

“শালা, গেলি, তরে এই লেকেই চুবামু”।

আবার ফোন, এবার অন্য আর একজনের, সে বীর পুরুষের মত ফোন ধরে কথা বলছে আর পাশ থেকে তাকে ছেকে ধরেছে অন্য বন্ধুরা! এবার যাবি কোথায় আজ তোর খবরই আছে! ব্যাস পাশ থেকে শুরু হল তুমুল উল্টাপাল্টা মন্তব্য!

একজন “এই তোর সিগারেট টা দেঁতো?”

“আরে ধুর শালা, আমি যে সিগারেট খাইনা সেটা আমার বউ ভালো করে জানে” ও তাই নাকি?

অন্য আর একজন, “আচ্ছা ঠিক আছে, গাজাটা একটু দে!”

শালা, যে সিগারেটই খায়না, সে যে গাঁজা খায়না, সেটা সবাই জানে বা বোঝে!”

মাঝখান থেকে আমার বউয়ের কাছে তোর ইমেজ নষ্ট হচ্ছে,!”

এরপর আরও কিছু বিশেষ ও চটুল গল্প-আড্ডা-গান, পরে আর একদিনের জন্য এক হবার বাসনা এবং পরিশেষে ক্লান্তি আর বাস্তবতার কাছে জীবনের পরম ও প্রার্থিত আত্ন-সমর্থন! একে-একে যে যার বাসার পথ ধরা, সেটাই শেষ-সঠিক ও সুখের গন্তব্য।

এসবই সুখের যদি ঘরেতে থাকে সুখ আর আনন্দ, নিজের ঘরে আনন্দ না থাকলে, বাইরের এই বন্ধু-বান্ধব-আড্ডা-গান-কবিতা-ফাজলামি-বাঁদরামি-চটুলতা কোন কিছুই ভালো লাগবেনা বা লাগেনা।

পরিশেষে, নিজের ঘর ও ঘরের মানুষজনই আসল এবং সব সময়ের সুখ-দুঃখের সঙ্গী, বাকি সব সাময়িক ও সংক্ষিপ্ততম সময়ের সুখ বা আনন্দ.........!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.