নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বেড়াই-পড়ি-লিখি.....

সজল জাহিদ

সজল জাহিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফোটা-ফোটা বৃষ্টির জল, দুঃখ-সুখের সাতকাহন

২০ শে আগস্ট, ২০১৫ সকাল ৯:৪৬

মা ভিজে যাচ্ছি তো! ঘুমোবো কিভাবে? গায়ে তো পানি পড়ছে!

তিন ভাই-বোন ঘুমিয়ে ছিল। বাইরে আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামাতে ওরা আর ঘুমোতে পারছেনা, পারবেও না যতক্ষণ না বৃষ্টি থামে! আর বৃষ্টির সময় ওরা কখনো ঘুমোতে কেন কোন কিছুই করতে পারেনা, সব ভাই-বোন আর মা কে কোন এক কোনে দাড়িয়ে বা বসে থাকতে হয় জড়সড় হয়ে! কারণ, সারা ঘরের প্রায় সব জায়গা থেকেই পানি পরে বৃষ্টি এলে! ঘরের চাল ছিল গোলপাতায় ছাওয়া, কিন্তু যে পরিমাণ গোলপাতা প্রয়োজন তার চার ভাগের এক ভাগ দিয়ে ঘর ছাইলে যা হয় আর কি?

যে কারণে, বৃষ্টি শুরু হলে ঘরের সবাই ব্যাস্ত হয়ে পরে ঘরে থাকা সমস্ত থালা-বাসন-হাড়ি-করাই বা গামলা নিয়ে, যখনই যেখানে পানি পরা শুরু করে, তখনই সেখানে কিছু না কিছু পেতে রাখতে হয় বৃষ্টি যেন ঘরের মেঝেতে পরে, কাঁচা ঘরে কাঁদার তৈরি করতে না পারে। আর সে ক্ষেত্রে হাটতেও পারবেনা কেউ।

তাই এই ব্যাবস্থা। কিন্তু, এক জায়গায় কোন একটা পাত্র দিতে না দিতেই অন্য জায়গা থেকে পানি পরা শুরু করে, দেয় ছুট কেউ একজন তার হাতে থাকা পাত্র নিয়ে পানির নিচে পেতে রাখার জন্য। এভাবে ঘরের মাঝ থেকে শুরু করে, ধীরে-ধীরে সমস্ত ঘর-বারান্দা-রান্নাঘর সেজে ওঠে পরিস্কার ও অপরিষ্কার সব পাত্রে, যেন পাত্র দিয়ে খেলা-ধুলা হচ্ছে, এ এক অদ্ভুত বেদনা সেই পরিবারের। যেসব জিনিষের ঘরের কোন এক কোনে গুছিয়ে রাখার বা থাকার কথা সেসবের সারা ঘরময় বিচরণ! আর যাদের ঘরজুড়ে বিচরণ করার কথা তারা থালা-বাসনের ন্যায় ষেটে থাকে এক কোনে জড়সড় হয়ে! কি এক অদ্ভুত আচরণ প্রকৃতি ও বাস্তবতার এই পরিবারটির সাথে, কি এক দৈন্যতা!

আর তাই বৃষ্টির সময়ের এই নিদারুণ বাস্তবতার জন্য এই পরিবারের কেউ কখনো বৃষ্টি ভালোবাসেনা! ওরা সবসময় রোদ ও ঝকঝকে পরিবেশের পক্ষে। সেটাই স্বাভাবিক। আর এই পরিবারের ছেলেটি এতসবের ধার ধারেনা, সে সরাসরি বৃষ্টিকে ঘৃণা করে! বৃষ্টি তার দুই চোখের বিষ! আকাশে মেঘ দেখলেই কান্না পায় আর কুঁকড়ে যায় স্বাভাবিকতা থেকে।

এরপর জীবন ও এগিয়ে যাবার তাড়নায় চলে যায় বাড়ি থেকে বেশ দূরে আর ধীরে-ধীরে বৃষ্টির প্রতি কমতে থাকে রাগ-অনুরাগ, ব্যাথা-বেদনা আর দুঃখ-কষ্টের ব্যাঞ্জনা। শেষ হয়, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসন্ন কিন্তু প্রতিক্ষিত অধ্যায়। শুরু হয় নতুন করে বৃষ্টি দেখা, বৃষ্টি ছোঁয়া আর বৃষ্টিকে আলতো ভালোলাগা!

কখনো-সখনো ভর করে মৃদু রোমান্টিকতাও! আজকাল বৃষ্টির শব্দ-রঙ-রূপ-গন্ধ লাগে নতুন-নতুন, বৃষ্টির ঝরে পড়ায় দেখতে পায় আগামীর আশীর্বাদ! চঞ্চল হতে শুরু করে মন-প্রান ও অন্তরাত্মা, ভালোলাগার মানুষের সাথে, পাশে বসে, রেখে হাতে-হাত! আহ, আর এক ছাতার তলে গায়ে-গায়ে ছোঁয়া-ছুয়ি! আহা বৃষ্টি, কিজে তোর সৃষ্টি! এই হল হালচাল, আজকাল আর বৃষ্টির পালা বদল! ফোঁটা কদমে মন মাতাল, উত্তাল দিনকাল! সব কিছুই বেশামাল!

এরপরও বৃষ্টি, আরও বৃষ্টি, অনেক বৃষ্টি, এবার শুরু সৃষ্টি, রঙ-বেরঙের কৃষ্টি! পড়াশুনা শেষ, শেষ বিষাক্ত বেকার জীবনেরও, পেয়ে এক খানা চাকুরী সেই সাথে প্রেয়সীকে প্রায় প্রাপ্তি! বিয়ে? অবশ্যই শত-সহস্র ঝড় ও ঝঞ্জার পরে। ঘর? কিছু আক্ষেপ আর আকস্মিক বজ্রপাতের শেষে। বাবা-মা, ছেলে-মেয়ে আর কলকাকলি সাথে বিরামহীন কোলাহল সঙ্গে সংসারের নিত্ত চাপে ভুলভাল সন্ধা-সকাল, টক-ঝাল দিনকাল কভু হয় টালমাটাল!

তারপরেও বৃষ্টি, কবিতার সৃষ্টি! আরও কতো গল্প-কথা-উপন্যাসের অনাসৃষ্টি! আজকাল ভালোলাগে বৃষ্টি! খুশি জাগে মেঘ দেখে, মনের মাঝে হাসি খেলে, এই এলো বৃষ্টি ভেবে! ভিজবে ওরা সবাই মিলে হাতে রেখে হাত, ছড়িয়ে দিয়ে দুঃখ টুকু, বিলিয়ে দিয়ে বিবর্ণতাকে, মুছে ফেলে তিক্ত অতীত। এর গায়ে ও ছেটায়, ওর গায়ে এ! বৃষ্টির জল, থকথকে কাঁদা, জবজবে ভিজে-টিজে! একাকার চারিদিক, উচ্ছ্বাসে দিক্বিদিক!

এই হল বৃষ্টি, তার সেকাল-একাল, চারিদিকে বৃষ্টি আর সেই সাথে সৃষ্টি...... মিষ্টি-মিষ্টি সুখের সৃষ্টি!

তাই বলি......

ফোটা-ফোটা বৃষ্টির জল, দুঃখ-সুখের সাতকাহন।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.