নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বেড়াই-পড়ি-লিখি.....

সজল জাহিদ

সজল জাহিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

দ্বিধায়......!! (গল্প)

২৩ শে আগস্ট, ২০১৫ সকাল ৯:৫৭

Congrats দোস্ত, Many many congratulation!

Thanks দোস্ত, কি খবর তোর?

আরে ধুর আমার খবর পরে তোর খবর বল, অবশেষে পেয়েই গেলি তোর অনেক-অনেক কাঙ্ক্ষিত চাকুরী! ভীষণ কাঙ্ক্ষিত প্রতিষ্ঠানে?

হ্যাঁ দোস্ত, এই আর কি, তোরাতো অনেক উপরে উঠে গেছিস, আমি না হয় একটু ধীরে ধীরেই উঠছি!

ওসব বাদ দে খাওয়াবি কবে বল? আরে খাওয়াবো দোস্ত, আগে নতুন জায়গায় জয়েন করি, তারপর।

নাহ দোস্ত আগেই হোক একবার, পরে আরেক বার হবে, সেটা গ্র্যান্ড পার্টি হবে!

মুঠোফোনে কথা হচ্ছিল দুই বন্ধুর, অফিস যাবার সময় বাহনে বসে। অফিস যেতে না যেতে সেই খবর চড়িয়ে পড়লো পুরো অফিসেই, অথচ এটা গোপনই রাখতে চেয়েছিল! কারন এর আগেও বেশ কয়েকটা ভালো প্রস্তাবের চাকুরী পেয়েও যেতে পারেনি বর্তমান অফিসের চাপাচাপি বা কিছু বিশেষ কারনে, কিন্তু এবার আর এটা করতে চায়নি, একবারে ইস্তফা দিয়েই অন্যান্য বন্ধু ও সহকর্মীদের জানাতে চেয়েছিল, কিন্তু তা আর হলনা, ইস ফোনটা আর আসার সময় পেলনা! আবার না বস বা তার চেয়েও উপরের কেউ বাগড়া বাঁধায়? সেই সঙ্কা পেয়ে বসলো।

এবার আর বেশী স্যালারি বা পদায়ন চায়না, এক প্রতিষ্ঠানে হল অনেক দিন, একই প্রতিষ্ঠানে খুব বেশীদিন থাকা ঠিক নয়, তাতে বর্তমান প্রতিষ্ঠানেও মুল্য থাকেনা আবার বাইরের প্রতিষ্ঠানও নিতে চায় না! সেটা বেশ ভালো বোঝে সে, তাই এবার যাবেই যাবে!
অফিসে বসে বেশ আনন্দ নিয়েই আজকের কফিটা উপভোগ করছিল সাথে মনে-মনে ভাবছিল ইস অনেক দিন ফেসবুকে নতুন কোন স্ট্যাটাস দেয়া হয় না! আজ না হয় এটাই হোক তার স্ট্যাটাস! কি দেবে, কি লিখবে, আর কাকে কাকে ট্যাঁগাবে! এই-সেই ভাবছে আর কফিতে সুখের চুমুক দিচ্ছে সাথে চোখ বোলাচ্ছে তরতাজা ভোরের পত্রিকায়।

বস এলে বসকে কি আগে বলবে না সরাসরি ইস্তফা পত্র দিয়ে দেবে সেটা ভাবছে, কিন্তু নিজেই আবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করলো যে না আগে কোন আলোচনাও নয় আবার সরাসরি ইস্তফাও নয়, আগে নতুন প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ পত্র হাতে পাক তারপর না হয় চিন্তা করা যাবে যে কি করবে আর কিভাবে করবে? ওরা ফোনে কনফার্ম করেছে কিন্তু চিঠিতো এখনো হাতে পায়নি, সুতরাং এখন নয় আগে চিঠি পেয়ে নিক।

এভাবে দুই তিন দিন কেটে গেল, ওরাও আর যোগাযোগ করেনি আর অফিসের কেউও আর জিজ্ঞাস বা বিরক্ত করেনি যা মনে নতুন শঙ্কার দানা বাঁধল! বর্তমান অফিসে অনেক সময় খোঁজ খবর নেয় আজকাল, কেউ আবার উল্টা-পাল্টা কিছু বলেনি তো? বা বস আবার বলে বসেনিতো যে যেতে দেবেনা! যদি বসকে ফোন দিয়ে থাকে! নাহ বসের তো তা করার কথা না, বস তো তেমন না, যেতে না দিলে সরাসরি বলবে এমনটা কিছুতেই করবেনা, আর অফিসের অন্য কারো সাথে এমন কোন সম্পর্ক নেই যে সে বা তারা এমন কোন ক্ষতি করবে বা করতে চাইবে, তাহলে সমস্যা কোথায়? মনে একটা কাঁটা খচখচ করতে লাগলো।

যা কিছুটা বিষণ্ণ করে দিল, মেজাজ একটু খিটখিটে, কফির আগের সেই স্বাদ আর পাচ্ছেনা, পেপার দেখতে ভালো লাগছেনা, ফেসবুক খুলতেও ভয় লাগে, বন্ধুরা ছেঁকে ধরবে, ইস কেনো যে নিয়োগ পত্র হাতে না পেয়ে ওদের কে বলতে গেলাম! সেই লজ্জাতে এখন মরমে মরে যেতে ইচ্ছে করছে! অথচ ওরা পুরোপুরি কনফার্ম করেছিল! দুই একদিন পরেই নিয়োগ পত্র তৈরি হলে ফোন দেবে বলেছিল?

১৫ দিন পরে ফোন এলো সেই প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে, ওপার থেকে সরাসরি অভিনন্দন, আজকেই নিয়োগ পত্র নিয়ে যেতে পারে বলে নিশ্চিত করলো! ইস আনন্দে একটা লাফ দিতে ইচ্ছে করলো! ইস কি কাঙ্ক্ষিত ফোন, কি কাঙ্ক্ষিত খবর আর কিজে আবেশে ছেয়ে গেছে পুরো মন ও শরীর সে বোঝাবার নয়! সেই আনন্দ সবার সাথে শেয়ার করার জন্য আজই সবাইকে একচোট খাওয়া দেবে বলে মনস্থির করলো! বিকেলেই, অফিস ছুটির পরেই কাছের সহকর্মীদের নিয়ে, এভাবেই ভেবে রাখলো। আর ফেসবুক স্ট্যাটাস? সে আগামীকাল নিয়োগপত্র হাতে পেয়ে! লিখবে ফিলিং ইয়াহু.........!

বিকেলে জম্মেস একটা আড্ডা হল, হল বেশ কিছু খাওয়া-দাওয়া, কিছু সেলফি আর মাস্তি সাথে সবার সাথে সুখবরের শেয়ারিং, এবার অবশ্য সবাই যেতে উৎসাহিত করলো, কারন চাকুরীটা আসলেই বেশ কাঙ্ক্ষিত যে কারো জন্যই, তাই কেউ-কেউ একটু ঈর্ষান্বিত হলেও উপরে-উপরে বেশ ভাব দেখাল যে তারাও খুশি! বাসায় গিয়ে বেশ জোশ একটা গোসল দিল সাথে গলা ছেড়ে গান, কিছুটা উদ্দাম উদযাপন নিজের সাথে নিজেই! একা-একাই!

বেশ সকালে ঘুম থেকে উঠে বেশ যত্ন নিয়ে দাড়ি কাটলো আজ, যা সাধারনত করেনা, একেবারে পাট ভাঙা সবচেয়ে পছন্দের শার্ট-প্যান্ট বের করলো, জুতোটা বেশ যত্ন নিয়ে পরিস্কার করে সাইনার লাগালো বার-বার! অদ্ভুত যা সাধারনত কখনোই করেনা! খুব ধীরে-ধীরে কাপড় পড়লো, গায়ে বেশ গাদা খানেক বডি স্প্রেও ছুড়লো, এটাও তেমন একটা করেনা, আজ সেটাও করলো, মনের আনন্দে অজান্তেই! আরেব্বাস আবার টাইও লাগিয়েছে এই গরমে! কি পাগলামিতে পেয়েছে আজ! এক্কেবারে ফরমাল ফুলবাবু!
ইস ইচ্ছে হচ্ছিল একটা স্যুটও হাঁকাক! কিন্তু সেটা একেবারেই বেশী-বেশী হয়ে যাবে, লোকে পচাবে শেষে সেই ভেবে আর ওটা করলোনা।

ছুটছে অফিস পানে, আজ ইস্তফা পত্র দাখিল করবে, বসের সাথে কথা হয়ে গেছে, বসও খুশি এমন একটা চাকুরীর কথা শুনে, অভিনন্দনও জানিয়েছে! সুতরাং আর কোন সমস্যাই নেই! তাই আজ অধিক আনন্দ আর উদযাপনের জন্য এই বেশ! কিছুটা অবাক হবে অফিসের সবাই, এই গরমে, এই অস্বাভাবিক সহকর্মীর তার চেয়েও বেশী অস্বাভাবিক গেটআপ আর সেটআপ দেখে, সেই ভেবে একটু লজ্জিতও! হোক নাহয় পেলোই একদিন একটু-আধতু লজ্জা নিজেই, নিজের কাছে!

অফিসের গেটে পৌঁছে গেছে, ঢুকবে, মুখে মিটিমিটি হাসি, এমন সময় পাশ থেকে হেটে যেতে-যেতে একজন অতি পছন্দের, মুগ্ধতা ছড়ানো, অনেকটা অপার্থিব, অনেক-অনেক দূরের কিন্তু ভীষণ-ভীষণ প্রিয় মানুষ ডেকে নিয়ে খুবী ধীরে-ধীরে, চোখ দুটিকে একেবারে মাটির সাথে মিশিয়ে, মাথাটাকে নিজের নিজস্বতার কাছে বিলিয়ে দিয়ে, দু-চোখ ভরা জল আর একরাশ আকুলতা মেশানো নিখাদ আবেগ দিয়ে বলছে......

আপনি কি চাকুরীটা ছেড়ে দিয়েছেন? মানে রেজিগনেশন দিয়ে দিয়েছেন?

নাহ, দেয়নি, আজকে দেবে ভাবছে। দিয়েন না প্লিজ!

আপনি চলে যাবেননা প্লিজ! তাহলে আমি আর এখানে চাকুরী করতে পারবোনা!

মানে? কি বলছেন আমিতো ঠিক বুঝতে পারছিনা! আপনি বুঝবেন না, আপনার বোঝার দরকার নেই, আর কথাটা রাখবেন কিনা সেটাও আপনার ব্যাপার, আমি শুধু আমার কথা গুলো বলে যাচ্ছি...

দেখুন আমি জানি আপনাকে কোনোদিনও নিজের করে পাওয়া সম্ভব না, না আপনার দিক থেকে না আমার দিক থেকে, সেটা আমি চাইও না, সে ভাবে আমি ভাবিনি বা ভাবছিও না, শুধু জানি বা বুঝি আর ভেবে-ভেবে, মনে-মনে আনন্দিত হই যে আপনি এখানে আছেন, আশেপাশে বা কাছাকাছি, আছেন আমার মনের আঙিনা ছুঁয়ে-ছুঁয়ে, হৃদয়ের সবটুকু জুড়ে, সেই আমার পরম পাওয়া, সেই আমার সান্ত্বনা আমার একাকিত্তের আল্পনা......

এই বলেই চলে গেল, কোন দিকে না তাকিয়ে বা কোন কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে!

এবার কি করবে সে? এটা কি? কি হল, কিভাবে হল, কেন হল? এতো সব কেনোর উত্তর খুঁজবে কীভাবে?

দ্বিধান্বিত মন, দ্বিধান্বিত পৃথিবী আর দ্বিধান্বিত নিজেই, নিজের কাছে?

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.