নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বেড়াই-পড়ি-লিখি.....

সজল জাহিদ

সজল জাহিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

রুদ্র, রূপা ও একটি স্বপ্ন...! (গল্প)

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:৪৫

রুদ্র জুম্মার নামাজ পরে এসে, দুপুরের খাবার খাচ্ছিল... আজ এই ছুটির দিনেও অফিসের কাজে বাইরে যেতে হবে, এজন্য মনটা একটু খিটখিটে, তবুও একটু আনন্দের আয়োজন রুদ্রর নিজের জন্য নিজের, অধিকাংশ সময়ই রুদ্র এই কাজটা করে থাকে, নিজের জন্য নিজের আনন্দের সৃষ্টি! ভাবনায়-কল্পনায়-স্বপ্নে!

বেশ লাগে রুদ্রর, মন খারাপ টাও তাতে ভালো হয় আর সময় গুলোও সুন্দর কাটে, ক্ষতি কি তাতে, কাউকে ভেবে যদি কেউ সুখ পায়? আনন্দে ভাসে একা-একা,অভিলাষে... সেই অভিপ্রায়, সব সময়। আজও রুদ্র তাই-ই করলো, খাচ্ছে আর ভাবছে... যদি এমন হত খেয়ে বের হবে আর রূপা রাস্তায় দাড়িয়ে আছে! ওই দিগেই যাবে! রুদ্রর জন্যই অপেক্ষা! রুদ্র ভাবে আর একা একা হাসে, বেশ মজাই পায়, একটু সুখ-সুখ অনুভূতি, মন্দ কি?

খাওয়া শেষে, ১০ মিনিটের একটা অপর্যাপ্ত বিশ্রাম নিয়ে, ধীর লয়ে কাপড় পরে, চুল আঁচড়াতে, আঁচড়াতে রুদ্রর চোখ গেল কাঁচ দিয়ে ঘেরা ড্রেসিং টেবিলের ভিতরের বডি স্প্রের দিকে, ওসব স্প্রে-টেস্প্রে রুদ্রকে খুব একটা টানেনা, নিতান্ত উপায় না দেখলে, বা খুব বেশী ঘেমে উৎকট গন্ধ বেরহচ্ছে বুঝতে পারলেই কেবল দু-এক বার হয়তো গায়ে ছিটিয়ে নেয়, ওই অনিচ্ছাকৃত সৌরভ, রুদ্রর দর্শন হল, যে ওকে ভালোবাসবে বা কাছে ডাকবে, সে যেন ওর গন্ধকে ভালোবেসেই কাছে আসে বা কাছে টানে! সেটাই হবে সত্যিকারের ভালোবাসা, সত্যিকারের টান, অকিত্রিম আকর্ষণ! নিজেকে নিয়ে রুদ্রর আত্ন-গরিমা বা অহংকার!

চলে যাচ্ছিল, কিন্তু দরজার কাছে গিয়েও কেন যেন আবার ফিরে এলো, আর নিজের অজান্তেই বডি স্প্রে নিয়ে বগল উচিয়ে একটু ছুড়ে দিল ওই সুভ্রতা, মনে-মনে লজ্জা পেল, নিজের কাছেই, নিজের পরাজিত হওয়া দেখে! একটু বেগুনিও হল বোধয়! রুদ্রর কালো মুখ, এটাও ওর বানানো একটা উপমা, “কালোরা” লাজে নাকি “লাল” হতে পারেনা, তাই ও নাম দিয়েছে “বেগুনি” হয়ে যাওয়া! নিজের কাছে নিজের পরাজিত হওয়া নিয়ে মুচকি-মুচকি হাসে আর ভাবে ইস রূপা কি যাবে ওদিগে? কিছুতেই না, অবাস্তব কল্পনা!

আচ্ছা অন্তত বেলকনিতে দাড়িয়ে থাকতে পারেনা, একটু ক্ষণের জন্য, শুধু একটি পলকের দৃষ্টি বিনিময়ের জন্য! ওতেই রুদ্র বর্তে যেত, ওতেই ওর এই ছুটির দিনের ভর দুপুরের অফিস যাওয়ার অবসন্নতা ফিকে হয়ে আবেশ ছড়াত সুখের, আবিলুপ্ত হত মন, রুদ্র হয়ে উঠতো দুর্বার, খুঁজে পেত অফিস এ যাবার বাহন! হয়ে ওঠতো এক পশলা বৃষ্টি এই ভর দুপুরেই, রুপার এক ঝলক দৃষ্টি! হাঁয়, সেকি আর হবে? এতো শুধু কল্পনা, মিথ্যের জালবোনা, আত্ম-সুখের আলপনা!

এইসব ভেবে-ভেবে রুদ্র একা-একা হাসে আর বাসার গলি গুলো একে একে পেরিয়ে যায়, রুপাদের বাসার সামনে প্রায়, রুদ্র ঠিক করেছে ও, রুপাদের বেলকনিতে তাকাবেনা! রূপাকে দেখতে না পারলে, রুদ্রর কষ্ট হবে! তার চেয়ে থাক না তাকানোই ভালো, রুদ্র ভেবে নেবে রূপা দাড়িয়েই ছিল, ওকে দেখেছে! রূপা, রুদ্রকে দেখা মানেই রুদ্রর ও রুপাকে দেখা! থাক নিজের মনের কাছে, নিজের সুখ হয়েই থাক, রুপাকে দেখার বাসনা! রুদ্রর চোখ যেন বিদ্রোহ করছে, রুদ্রর সাথে, রূপার জন্য! রুদ্র কিছুতেই তাকাবেনা, কিন্তু রুদ্রর চোখ বারবার উপরের দিকে চলে যেতে চাইছে!

কিজে এক কলহ চোখ আর মনের, সুখ আর বেদনার সে বোঝবার নয়। চোখের সাথে পেরে উঠতে না পেরে রুদ্র কপালে হাত দিল, যেন চোখ উপরের দিকে তাকাবার বিদ্রোহ করলেও, ওর হাত যেন বাঁধা দেয়! রুদ্র কিছুতেই পারবেনা, রূপাহীন ওই বেলকনিতে তাকাতে! আর রূপারই বা কি এমন দায় ঠেকেছে, এই তপ্ত দুপুরে ঘুম বাদ দিয়ে গনগনে রোদে এসে দাঁড়াবে? রূপার তো কোনোই কাজ নেই, কেন হতে পারেনা, কাপড় মেলতে, চুল শুকাতে, খাবার পরে দু-কদম হাঁটতে?

আহা, কি ভাবনা দেখ! রূপাদের বাড়িতে কি আর মানুষ নেই যে, কাপড় রূপাকেই মেলে দিতে হবে? রূপা কখনই এই কাজ করেনা সেটা রুদ্র জানে! আর চল শুকানো? কেন রুপার নিজের জানালা আছেনা? এই খোলা জায়গায় কেন? রুদ্রও কি পারবে সেই জ্বালা সইতে! রূপা এই খোলা বারান্দায় দাড়িয়ে, সবাইকে দেখিয়ে-দেখিয়ে চুল শুকাক! ওর চুলের ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়ুক পুরো পাড়ায়! না, না সে কখনো হতে পারেনা! কখনও না! রূপা এখন নিশ্চিত ঘুমোচ্ছে, হয়তো কানে হেডফোন লাগিয়ে রবীন্দ্রনাথ শুনছে, কিসব ভাবছে রুদ্র! আবোল-তাবোল, নিজের মাথায় নিজেই একটা আলতো থাপ্পর লাগালো রুদ্র!

হেটে চলছে, পেরিয়ে এলো রূপাদের গলি, সামনে আর একটা গলি পেরুলেই মূল রাস্তা, গাড়ি পাওয়া যাবে। রুদ্র এগিয়ে যায়, মোড়ের গাছ ধরে বাঁক নিতেই, মুহূর্তের জন্য থমকে যায় রুদ্র! যেন রূপা কোথাও দাড়িয়ে আছে! যেন ওকে ডাকলো! আবার মুচকি হাসি, আবার নিজের মাথায় নিজের আলতো টোকা! পাগলামি পেয়ে বসেছে বোধয়! আবার চলা শুরু, একটু এগোতেই থমকে গেল রুদ্র! এযে রূপা! রিক্সা নিয়ে তার সামনে! তাকে পাশ কাটিয়েই থেমে গেল!

চল, আজ রিক্সায় যাবে! রুদ্রকে রূপার আহ্বান! রুদ্র স্তব্দ হয়ে গেছে, বোধ লুপ্ত, মাথা অকার্যকর, হাত-পা অবশ, অনুভূতি শূন্যের কোঠায়! রুদ্র জড় পদার্থ হয়ে গেছে! আবার রূপার আহ্বান, “রিক্সায় ওঠো রুদ্র” সম্বিৎ ফিরে পেয়ে, রুদ্র চোখ ফেরালো, রূপার দিকে! এ কে রূপা? হ্যাঁ রুপাই তো!

নিজের অজান্তেই সম্মোহনের মত উঠে পড়লো রিক্সায়, রূপার পাশে! কোনোদিন কি ভেবেছিল রুদ্র যে রূপার সাথে একই রিক্সায় উঠবে? কোথাও যাবে? তাও রূপারই আহবানে! রুদ্র নিথর হয়ে বসে আছে রূপার পাশে। পথ চলতে, চলতে রুদ্র আর রূপার কথা হয় ঠিকই কিন্তু রুদ্র ঠিক বুঝে উঠতে পারেনা, এটা সত্যি না স্বপ্ন! কারণ দুপুরে খাবার সময় রুদ্র তো এমনটাই ভাবছিল! সেই ভাবনা কি এভাবে সত্যি হতে পারে? ভাবতে সময় লেগেছে, কিন্তু ঘটতে সময় লাগলো না! এমনও হয় নাকি? রুদ্রর নিজের সাথেই নিজের কথা বলা!

রিক্সা চলছে... পাশাপাশি বসে কিন্তু যথেষ্ট ফাঁকা রেখে বসেছে রুদ্র! পাছে রূপা আবার ভুল বোঝে, যে রুদ্র ওর গাঁ ঘেঁসে বসার সুযোগ পেয়েছে! কথা হচ্ছে ঠিকই কিন্তু ঠিক কানে লাগছেনা! রূপা এমনিতেই কথা কম বলে, আর এখন তো আরও কম বলছে। রূপা কেন রুদ্রকে ডাকলো? কি ভেবে রিক্সা নিল, রুদ্রকে কেন ডাকলো? এসব জিজ্ঞাসা করতে ইচ্ছে করছিল, কিন্তু ঠিক সাহস পাচ্ছিলনা! শুধু সাথে চলেই আনন্দিত! এমনকি ঠিক ভাবে তাকাতেই পারছিলোনা রূপার দিকে!

একসময় রিক্সা থামল একটি পার্ক আর লেকের সমন্বয়ে ছায়া ঘেরা নির্জনতায়, হেটে চলছে লেকের গাঁ ঘেঁসে, এদিকে শেষ চৈত্রের শেষে পশ্চিম আকাশে মেঘ জমতে শুরু করলো সাথে দমকা হাওয়া যেন কাল বৈশাখির পূর্ব লক্ষণ! আচমকা ধুলোসহ বাতাস ঘিরে ধরলও ওদের, আবার বাতাস থামলো, ওরা দাড়িয়েই আছে, পথ চলতে শুরু করলো রুদ্র, কিন্তু রূপা থেমে আছে, রুদ্র রূপার কাছে গেল, রূপা একহাত দিয়ে ওর চোখ চেপে রেখেছে, রুদ্র জিজ্ঞাসা করলো কি হয়েছে? চোখে বালু ঢুকেছে রূপার, চোখ খুলতে পারছেনা, আর ভয়ে অন্য চোখও আর খুলছেনা!

কি করবে রুদ্র ঠিক বুঝে উঠতে পারছেনা? হতভম্ব হয়ে এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে, এমন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হবে ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেনি ওরা কেউই, কিন্তু এখন কি করবে? এবার রুপাই পরামর্শ দিল, “আমার ওড়না জড় করে, মুখের ভাপ দিয়ে চোখে চাপ দাও ধীরে-ধীরে” রুদ্র তাই করতে শুরু করলো, কিন্তু ঠিক মত হচ্ছেনা, কয়েকবার করে রুদ্র, রূপার ওড়না গুটিয়ে মুখের ভাপ দিয়ে গরম করে, রূপার চোখে চেপে ধরছে, কিন্তু রূপার চোখ বেঁয়ে অশ্রু বেয়েই চলেছে! থামছেনা কিছুতেই!

শেষে রুদ্র অন্য কোনো উপায় না দেখে, সরাসরি ওর মুখের ভাপ চোখে দিতে লাগলো, চোখের উপরে মুখ নিয়ে, মাথাটা কাছে টেনে নিয়ে ধীরে-ধীরে!

এতে বোধয় রূপার একটু সস্থি হলো, সেটা বুঝতে পেরে রুদ্র আরও একটু বেশী ভাপ দিতে লাগলো, রূপার চোখে।

কিন্তু রূপার কি হল কে জানে......?

ওর দু হাত দিয়ে রুদ্রকে বেঁধে ফেলল আলিঙ্গনে......!

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৬

আজিজার বলেছেন: আরও লম্বা হতে পারতো

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৭

সজল জাহিদ বলেছেন: হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন, এটা অনেক লম্বাই, শেষ করিনি, আরও লিখছি......... ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.