নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বেড়াই-পড়ি-লিখি.....

সজল জাহিদ

সজল জাহিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছেলে বাছাইয়ের গল্প......!!

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:২৪

সেদিনের মেয়ে দেখার গল্পটা লেখার পরে মনে পড়লো যে, আরে আমার তো একটা ছেলে বাছাইয়েরও অভিজ্ঞতা আছে!
তো সেটা লিখে ফেলিনা কেন? সেই আগ্রহ থেকেই এই গল্পটা লেখার অভিপ্রায়।

আমার এক কাজিনের জন্য ছেলে দেখা বা খোঁজা হচ্ছে, বেশ কিছুদিন থেকেই, কিন্তু মনের মত পাচ্ছেনা।

তো ছেলে খোঁজা বা দেখার সেই যজ্ঞ আমার চারপাশেই ঘটছে, কিন্তু আমি যেহেতু ছাত্র মানুষ আমাকে কেউ তেমন পাত্তা দেয়না, ভাবটা এমন ও এই সবের কি বুঝবে, নিজের দিনকাল কিভাবে কাটবে সেটাই ঠিকঠাক বোঝেনা, সে আবার এই সবের আগা-মাথা বুঝবে নাকি?

সে ভালো তোরা খোঁজ তোদের মত আর কর যা খুশি, আমি একটু মজা দেখি, মুচকি-মুচকি হাসি আর নিজের ভবিষ্যতের জন্য অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করি।

আর বিশেষ যেটা জানি, টা হল আমার সেই কাজিনের পছন্দ হল অনেক লম্বা, হ্যান্ডসাম (এর মানে আমি আজও বুঝিনা!) মেদহীন পেটানো শরীর, দেখতে দারুণ একেবারে নায়ক হতে হবে, সাঁজ পোশাক হতে হবে সেই রকম!

এক কোথায় তার আসলে রিকতিক রোশন লাগবে! বা সেই রকম কেউ!

যা বাবা, “তাহলে তো তোর আর বিয়েই হবেনা রে!” আমার খোঁচা!

কেন বিয়ে হবেনা কেন, তুই বুঝি খুব জানিস?

আমি বলে রাখলাম, তুই দেখিস? বিয়ে যে একবারে হবেনা তা না, তবে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে কোন মতে একটা হলেই হল টাইপের!

আমাদের এই কথাগল্প শুনে তাহার মা-বাবা আর অন্যান এক-আধজন পরম আত্মীয় এবার আমাকে ধরলো মানে প্রায় টর্চারে নিল এই অপরাধে যে আমি তাদের মেয়ের শুভকাজে অশুভ কামনা করছি, যেটা খুব-খুব-খুব খারাপ। ভাবটা এমন এই সব পোলাপান যে কোত্থেকে আসে? জত্তসব।

তবুও একজন আরও বেশী খোঁচা মারার জন্য জিজ্ঞাসা করলেন, তা তোর মনে হয় কেমন ছেলে ওর জন্য ভালো হবে, বল দেখি, আমরা না হয় সে রকম-ই কাউকে খুঁজে তোর কাছে নিয়ে আসবো, তুই দেখে-শুনে হ্যাঁ বললে আমরা নাহয় সেই ছেলের সাথেই ওর বিয়ে দেব! জাস্ট হাত দিয়ে ছাড়া মুখ দিয়ে থাপ্পড় মারার মত অবস্থা।

তবুও বললাম, যে দেখেন আপনারা যেভাবে সব দিক থেকেই রাজপুত্র টাইপের ছেলে খুঁজছেন সেভাবে কোন কালেই পাবেন না! পেলে আমাকে গালি দিয়েন দুইটা। শোনেন, ছেলে বেশী লম্বা নিতে চাইলে হয়তো অন্য কোন দিকে ছাড় দিতে হবে, দিতেই হবে।

আবার ছেলে খুবই যোগ্যতা সম্পন্ন বা খুব ভালো চাকুরীজীবী নিতে চাইলে হয়তো ওই লম্বাতে ছাড় দিতে হবে, একটু খেয়াল করে দেখেন না, অধিকাংশ যোগ্যতা সম্পন্ন ছেলেরাই দেখতে অতটা সুপুরুষ কিন্তু নয়! দেখেন না, খেয়াল করে দেখেন।

প্রমান আপনার সামনেই আছে! দেব, বলেন? আমাকে কিন্তু মারতে পারবেন না!

হ্যাঁ বল, কি প্রমান দিবি?

দেব বলছেন? ঠিক আছে, পড়ে আমাকে কিন্তু কিছু বলতে পারবেনা না!

ঠিক আছে বল?

এই দেখেন যার জন্য আপনারা সার্বিক সুন্দর ও যোগ্যতা সম্পন্ন ছেলে খুঁজছেন তার বাবার কথাই যদি ধরেন, দেখতে কত সুন্দর, যে কেউ পাত্র হিসেবে ওনাকে এখনো লুফে নেবে! শুধু চেহারা দেখেই! কিন্তু নেকা-পড়া! সেই ম্যাট্রিকের একটু উপরে!

তাও নাহয় মানলাম সেকালের মানুষ, অতবেশি পড়াশুনা তখনকার মানুষরা করতোনা বা মা-বাবা করাতেন না। তাই সে ছা পোষা কেরানী, মাসের শেষ ১০ দিন শুধু শ্বশুরবাড়ি অথবা নিজের ঘরে ডাল-ভাত, এমনকি সবজিও না।

আর চরিত্র? সে কথা কি বলবো? বাইরের মহিলাদের কথা না হয় বাদ-ই দিলাম, ঘরের কাজের মানুষকেও তো ছেড়ে কথা কয়না!

এই তুই থামবি! না হলে ঝাঁটাপেটা করবো! জত্তসব, তোর সাথে কথা বলা মানেই দিনটা নষ্ট!

এই জন্যই তো বলতে চাইনি।

আচ্ছা এবার আপনি ওর মামার কথাই ধরেন, সে কেমন কালো-বিশেষ কোন চাকুরীও করেনা, এই চলে যায় আর কি? কিন্তু দেখেন তার চরিত্র নিয়ে আজ পর্যন্ত কেউ কোন কথা বলতে পেরেছেন, আর ওনারা দেখেন কত হাসি-আনন্দে আছে, অনেক কিছু না থেকেও!

সেতো ওর বউটা খুব ভালো দেখে!

ওহ এখন বৌ এর ভালো দেখলেন আর আমাদের মামার যে এতো ভালো মানুষ, সৎ চরিত্রের সেটা এখন আর চোখে পড়লো না, তাই না?

আচ্ছা এরপর ওর খালুর কথা চিন্তা করে দেখেন, টাকা-পয়সা, ব্যাবসা-বাণিজ্যের কোন অভাব নাই। কিন্তু মনে কোন সুখ নাই, কেন?

কারণ, তার আরও চাই আরও চাই! কোন কিছুতেই সে তৃপ্ত না, চাওয়ার কোন শেষ নাই, ছেলে-মেয়ে কে কি করলো আর না করলো তার কোন খোজ নাই, কতশত অপচয়, একে-একে যখন-তখন মারধর, চারদিকে অশান্তি আর অশান্তি তৈরি করে রেখেছে আর সেই অশান্তির আগুনে সবাই পুড়ছেন কম আর বেশী! বলেন পুড়ছেন না?

ওহ, তুই এতো বেশী বুঝিস আর ফালতু কথা বলিস না, তোকে দেখছি এখানে আর রাখা যাবেনা! অন্য কোথাও পাঠিয়ে দিতে হবে।

এই জন্যই তো বলেছিলাম যে কিছু বলবোনা!

আচ্ছা, এইবার আপনি ওর এক বন্ধুর কথাই ধরেন, দেখতে কত সুন্দর, একেবারে নায়ক, বাপের অনেক টাকা পয়সা, পোশাক-আশাকে তো মাশাল্লাহ! আর কত সুন্দর একটা বাইক চালায়, গাড়িও আছে জানি, কিন্তু শুধু ইন্টার পাশটাই করতে পারছেনা, বারে-বারে! তাতে কি-ই বা এমন এসে যায়! তো দেননা ওর সাথেই দিয়ে বিয়েটা!

তুই কিন্তু এবার আসলেই মার খাবি, যা এখান থেকে, তুই দেখছি অন্যের সাথে-সাথে আমার সংসারটাও ভাঙবি!

আরে আপনি আর সংসার করছেন কই? কোন মতে দুটা খেয়ে মুখ বুজে পড়ে আছেন, এটাকে কি সংসার করা বলে নাকি! আর আমি জানি, আপনার যদি কোন, এতটুকু উপায় থাকতো, তো আপনি কবে এই বালের সংসার! আর ওই “লুচ্চাকে” ছেড়ে চলে যেতেন! সে আপনি স্বীকার করেন আর নাই করেন।

খেলাম এক রাম থাপ্পড়! কালো গালও লাল হয়ে গেল! কি আর করার বড়রা অনেক কিছুই করতে পারেন!

আচ্ছা এবার আসেন ওর-ই এক বান্ধবী তার কথায়, দেখতে কত সুন্দরী, মা-বাবা কত ভালো মানুষ, দুজনেই চাকুরী করে, একটা ভাই, সব মিলে সুখের সংসার আর সেই সুখকে আরও বাড়িয়ে নিতে মেয়েকে ম্যাট্রিক পাশ করতে না করতে সুদর্শন আর্মি অফিসার দেখে দিয়ে দিল বিয়ে! কিছুদিন সুখ আর সুখ! মেয়ের বাপের পয়সায় হানিমুন, এদেশ-ওদেশ, কতশত ছবি-কথা-গল্প, আপনাদের ঈর্ষা!

আর এখন?

বছর ঘুরতে না ঘুরতেই একটা বাচ্চা, সেই সাথে মেয়েকে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে জামাই নতুন জীবনের সন্ধানে! তো কি দাঁড়ালো ফলাফল? নিজের চোখেই দেখেন না? দেখেন আর বোঝেন?

তুই, এতকিছু দেখিস, বুঝিস, চিন্তা করসি বুঝিনাই তো? সারাদিন তো দেখি বই পড়িস, পেপার পড়িস আর কি সব ম্যাগাজিন ওই সব সানন্দা-ফানন্দা পড়িস! আর টিভিতে খেলা দেখিস! এতোসব চিন্তা কখন করিস?

এই আর কি বই-পত্র পড়ে আর আপনাদের কেচ্ছা কাহিনী দেখে-শুনে আমার এই উপলব্ধি!

আবার দেখেন, ওই যে পাশের বাসার আঙ্কেল কে, পড়াশুনা শেষ করে মোটামুটি চাকুরী করে, শিক্ষিত আর সুন্দরী একজন আনটিও আছে, একটি বাচ্চা, কিন্তু কোন বিলাসিতা বা ফাউল গাল-গল্প নাই, অথচ সব কিছুই চলছে মোটামুটি ঠিকঠাক! এই মাঝে মাঝে একটু আধটু ঋণ-টিন বা ধার-বাকী করতে হয়, সে কার না লাগে?
অথচ “They are look like happy really HAPPY” অন্তত আমার তো তা-ই মনে হয়।

আর ওর কাজিন কে দেখেন, দেখে-শুনে, রয়ে-সয়ে যোগ্যতা সম্পন্ন ছেলে বাছতে বাছতে শেষ মেশ এক প্রায় বুড়াকে বিয়ে করতে হল! আর ওর কাজিন জানালায় বসে-বসে গান গায় “দিন যায়, কথা থাকে...” অথচ কত ছেলে এলো গেলো! শেষে কার গলায় মালা দিল! বলেন এবার কিছু বলেন?

তাহলে তুই বলতো ওর জন্য কেমন ছেলে ঠিক হবে!!

আহারে কি সমস্যা এখন আমাকেই কি ছেলে বাছতে হবে নাকি?

দেখেন ছেলে ভালো না মন্দ এটা নির্বাচন করা খুব-খুব-খুব-ই মুশকিল একটা কাজ, মেয়েদের খেত্রেও তাই। তবুও আমার মতে একটু সাধারন, মোটামুটি যোগ্যতা সম্পন্ন, দেখতে খুব বেশী সুদর্শণ হবার দরকার নাই, চরিত্রটা ভালো আর আপনার মেয়েকে আসলেই ফিল করবে বা ভালবাসবে সে রকম ছেলে হওয়া চাই।

কিন্তু এরকম ছেলে পাওয়া তো খুব কঠিন!

কি বলেন, মোটেও কঠিন না, চারদিকে এইসব ছেলেদের ছড়াছড়ি আপনারাই শুধু দেখতে পান না, কারণ খালি নায়ক আর পয়সা আলা খুঁজে বেড়ান।

তো একটু বলতো কিভাবে বুঝবো ভালো ছেলে কেমন আর কোনটা?

শোনেন সবচেয়ে ভালো হয় আপনার মেয়ে যদি নিজে থেকে কাউকে পছন্দ করে নেয়, তাতে করে আপনাদের দায়ভার কমে গেল, পরে ভালো বা খারাপের অভিযোগ করতে পারবেনা।

ওরে বাবা, আমিও মনে-মনে সেটাই চাইছিলাম, কিন্তু ওর বাপ শুনলে আমাকে আর মেয়েকে দুটোকেই কেটে কুটিকুটি করে ফেলবে!

ওই দেখে-শুনেই হবে বিয়ে, যেদিন আর যেভাবে হয়, তুই আমাকে কিছু উপায় বলে দে, যে কিভাবে বুঝবো ছেলেটা মোটামুটি ভালো।

দেখেন আমি আমার মত করে বলছি, পরে দোষ দেবেন না আমাকে, ভালো বা মনের মত না হলে।

হ্যাঁ বল......

শুনেন খুব ডিংডং মার্কা ছেলে দেখার দরকার নাই। ও ডিংডং করেই বেড়াবে।

আবার ভীষণ ফিটফাটও আসলে চলবেনা। ওরা শুধু ফিটফাটই থাকে, সহযোগিতা পরায়ণ হয়না।

আবার একেবারে আলাভোলা আর ক্যাবলা হলেও বাতিল, ওরা বেশী পুতুপুতু টাইপের হয়, আপনার মেয়ের হাতে মাইর খাবে শেষে।

খুব বেশী বড়লোক বা লোক দেখানো হলেও চলবেনা, ওরা ঘরের চেয়ে, বাইরের দিকে বেশী আকর্ষিত থাকে।

একদম পড়ুয়া আর চরম মেধাবীও বাতিল! ওরা খুব সহজেই নিজেদের হারিয়ে ফেলে আর প্রত্যাশার চাপ নিতে পারেনা।

আবার, একাবারে হ্যাংলা আর খুব সহজেই আপন করে খালা বা আম্মা ডেকে বসা টাইপও চলবেনা। কারণ ওদের মধ্যে সমস্যা আছে, তা নাহলে এতো সহজেই এতো আপণ বানাবে কেন?

তাহলে করবোটা কি, কাকে আর কিভাবে বানাবো আমার মেয়ের জামাই, তুই ও তো বুক হয়ে বসে আছিস আগে থেকেই?

অ্যায় বলে কি রে বাবা......!

শুনেন, ছেলের যে জিনিস গুলো দেখবেন তা হল......

শিক্ষিত, রেজাল্ট মোটামুটি, নিরহঙ্কার যেটা কথাবার্তা বললেই বোঝা যাবে, জীবনকে খুব সহজ আর স্বাভাবিক ভাবে দেখে, খুব উঁচুতে ওঠা নয়, ভালো থাকাটাই যার মূল দর্শন, সবাইকে খুশি রাখা না, নিজে ভালো থাকতে চায় এটাই আসল, আর নিজে যখন ভালো থাকবে তখন অন্যরা এমনিতেই ভালো থাকবে।

আপনার মেয়েকে সেটাতেই বাঁধা দেবে যেটা সে নিজে করেনা, আর সেটাতে নয় যেটা সে নিজে করে। বেশী বিনয়ীও নয় আবার একদম রুক্ষ রাশভারীও যেন না হয়। আর সবচেয়ে বড় কথা যেটা সেটা হল... আপনার নিজের আর্থিক-সামাজিক আর মানসিক অবস্থানের কাছাকাছি মানের যেন হয়।

এর চেয়ে কমও না আবার একেবারে বেশী উঁচুও না, তাতে করে এক সময় এসে সংঘাত বাঁধবেই। সেটা থেকে এড়িয়ে চলতে হবে।

এই যা......। এখন বাদ বাকী আপনাদের ইচ্ছা।

এইবার... তাহলে ছেলে দেখতে যাবার সময় বা মেয়েকে দেখতে আসার সময় তুই থাকবি সব সময় কিন্তু... বলে দিলাম মনে থাকে যেন......

কি সর্বনাশ, মেয়ে দেখার পরে এবার তবে ছেলেও বাছাই করতে হবে.........!!!

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:১০

মাঘের নীল আকাশ বলেছেন: ভালো থাকাটাই যার মূল দর্শন, সবাইকে খুশি রাখা না, নিজে ভালো থাকতে চায় এটাই আসল, আর নিজে যখন ভালো থাকবে তখন অন্যরা এমনিতেই ভালো থাকবে।

সহমত!

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:১১

সজল জাহিদ বলেছেন: ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.