নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বেড়াই-পড়ি-লিখি.....

সজল জাহিদ

সজল জাহিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আবীরের আল্পনা- (এক)

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১১:১১

দোস্ত সেই মেয়েটা না দ্যাখ দ্যাখ!

কোন মেয়েটা?

ওই যে ক্যাম্পাসের আইসক্রিমটা! ইংরেজি বিভাগের সেই ড্যাসিং, ফ্যাসনিং এন্ড ক্রিমিং! তুই তো জানিসই আরও কত কি!

কই দেখি? তুই তো শালা সব জায়গায় ওকেই দেখিস? ফালতু, ওই মেয়ে এখানে কোত্থেকে আসবে?

আরে তুই দ্যাখনা একবার, রাখতো চায়ের কাপ, তাকা ওদিকে, দ্যাখ কেমন উদভ্রান্তর মত এদিক-সেদিক ঘুরছে। মনে হয় টিকেট পায়নি দোস্ত... আমার টিকেটটা ওকে দিয়ে দেব, দরকার হলে আমি পেপার বিছিয়ে ওর পাশে মেঝেতে যাব!

এবার অন্য বন্ধু ফিরে তাকালো... আর তাকিয়েই হা হয়ে গেল, আরে সেই মেয়েটিই তো! যাকে দেখলেই মন নিজের অজান্তেই ওড়াউড়ি শুরু করে, পা থমকে যায়, দম বন্ধ হয়ে যেতে চায়, দৃষ্টি হয়ে যায় স্থবির!

দোস্ত এতো মনেহয় আমাদের বাসেই যাবেরে, কি করি বলতো...... মনে তো গান বাজতে শুরু করলো

“মন আমার তোর কিনারে, হারালো দিন দাহারে, সেতো আর মানছে নারে, এবার............”

আরে দোস্ত আমাদের বাসেই যে উঠছে সুন্দরী, এখন আমি কি করি.........

“আজ চাই তোকে, খোলাখুলি বলতে, কিছু পথ বাকী, পাশাপাশি চলতে.........”

দোস্ত আমি একটু উপরে যাচ্ছি, দেখি কোথায় বসে?

ঠিক আছে দোস্ত যা, শোন দেখিস পাশের সিটটা ফাঁকা আছে কিনা? থাকলে তোর ব্যাগটা রেখে আসবি।

কেন রে? ব্যাগ রেখে এসে কি লাভ, পাশের যাত্রী এসে তো ব্যাগ সরিয়ে বসে পড়বে।
সে আগে আসুক তখন দেখা যাবে, আগে দ্যাখ যেখানে বসে তার পাশের সিট ফাঁকা পাশ কিনা?

মেয়েটির পিছে পিছে এক বন্ধু বাসে উঠলো, এবং মেয়েটি একটি জানালার পাশের সিটে বসলো, যার পাশের সিটটা এখনো খালি। মেয়েটি পাশ ফিরে তাকাতেই ছেলেটির চোখে চোখ পড়লো। আর ছেলেটিকে অবাক করে দিয়ে জিজ্ঞাসা করলো...

ভাইয়া আপনি আমাদের ক্যাম্পাসের না? এই বাসেই যাবেন নাকি? যাক ভালোই হল, পাশের সিটে একদম অপরিচিত জনের সাথে যাওয়াটা খুবই অসস্থিকর, ভ্রমনটা একটুও উপভোগ্য হয়না। বসুন।

মেয়েটির এই অস্বাভাবিক, অযাচিত কিন্তু আন্তরিক ব্যবহারে ছেলেটি বেশ অবাক হল কিছুটা অসস্থিও। বলল, আপনি চেনেনে আমাদের মানে আমাকে?

হ্যাঁ চিনবোনা কেন? আমাদের পাশের রুমেই তো আপনারা ক্লাস করেন, দেখেছি তো আপনাদের মানে আপনাকে আর আপনার বন্ধুকে, আপনারাও আমাকে চেনেন জানি, কিন্তু কথা হয়নি কখনো বা তেমন উপলখ্য আসেনি তাই। তবে চিনিতো বটেই।

যাক ছেলেটি এবার বেশ সস্থি বোধ করলো, আর সেই সাথে মনে-মনে সুর তুলল......

“আগার তুম মিল যাও, জামানা ছোড় দেঙ্গে হাম.........”

আর বন্ধুকে বাদ দিয়ে নিজেই এই সিটে যাবার জন্য মনস্থির করে ফেলল!

পাশের সিটে ব্যাগ রেখে নিচে নেমে গেল, আমি একটু আসছি আপনি বসুন। জি ঠিক আছে আসুন।

নিচে নেমেই বন্ধুকে বলল দোস্ত সব ফিট, কোন চিন্তা নাই, ওই সিটের অন্য যাত্রী আসলে সেটা ম্যানেজ করে ফেলবো তুই চিন্তা করিস না। ঠিক আছে তাহলে আমি গিয়ে বসি অন্য যাত্রী আবার এসে না পরে।

তোকে আর যেতে হবেনা আর গেলেও তুই তোর সিটেই বস আমিই ওই সিটে বসবো সেই রকম ব্যবস্থা করে এসেছি। আর কোন রকম যদি উল্টাপাল্টা করিস বা চেষ্টাও করিস তো............!

তো...? তো কি? কি বলছিস এই সব!

তো কিছুই না, তুই বসবিনা ব্যাস! তোর কি যেন লাগবে বলছিলি ওই মেয়ের নাম্বারটা না? সে আমি তোকে দেব।

তুই দিবি, তুই! শালা পছন্দ করি আমি আর পাশে যাবি তুই? এটা কিছু হইলো বল?

আরে শোন দোস্ত, তুই তো অনেককেই পছন্দ করিস, তোকেও করে অনেকে সে তুই জানিস। তোর চেহারা ভালো, অনেকেই তোকে দেখেই পছন্দ করে, আমাকেতো কেউ সেভাবে পছন্দ করেনা, আর আমিও সেই সাহস পাইনা, তা যদি একটু কারো পাশে বসে দীর্ঘ পথ যাবার সুযোগ হয়, আর সেই সুযোগে দুই-চারটি কথা, তাতে তোর সমস্যা কি বল?

আচ্ছা ঠিক আছে তুই যা পাশে তবে যদি নাম্বারটা দিতে পারিস তো তোর আসার টিকেট আমি কাটবো! আরে নাহ, টিকেট তো কাটাই আছে, তুই টাকাটা দিয়ে দিস, তবে আসার না এই যে যাচ্ছি সেটাও!

আচ্ছা যা তুই যদি সত্যিই ওর নাম্বারটা নিতে পারিস আর আমাকে দিস তো তোর যাওয়া-আসা দুটোর ভাড়াই আমি দেব। প্রমিজ।

মৌখিক চুক্তি শেষে ফিরে এলো দুই বন্ধু, বাসের সুপারভাইজার আর নির্ধারিত যাত্রীকে বলে, বুঝিয়ে ম্যানেজ করা হল মেয়েটির পাশের সিট। এবার যাবার পালা।
মেয়েটি উসখুস করছে, চোখে-মুখে কিছুটা বিরক্তি আর খিটখিটে অভিব্যাক্তি।

ছেলেটি জিজ্ঞাসা করলো, কিছু যদি মনে না করেন কোন সমস্যা কি? দেখে মনে হচ্ছে তাই বললাম, অযাচিত হলে দুঃখিত।

আরে না, তেমন কিছু না, আমি সাধারণত ভ্রমণে সারাক্ষণ গান শুনি, কিন্তু গতরাতে বিদ্যুৎ না থাকাতে মোবাইলে চার্জ দিতে পারিনি, কোন রকম প্রয়োজনীয় ফোন করতে পারবো। কিন্তু এই লম্বা যাত্রা খুব বোরিং লাগবে তাই একটু মেজাজ খারাপ।

ওহ আচ্ছা, এটা স্বাভাবিক, এতো দীর্ঘ রাস্তা গান ছাড়া অনেক একঘেয়েমি তবে আপনার খুব বেশী অসস্থি না হলে আর আপত্তি না থাকলে আমারটা শেয়ার করতে পারেন, যদিও আপনার রুচির সাথে আমার মিলবে কিনা আমি নিশ্চিত না, কারণ আমি একটু আধুনিক আর সিনেমার গানই বেশী শুনিতো, সেগুলিই আছে আমার সংগ্রহে। আপনার সাথে সেসব যাবেনা আমি নিশ্চিত।

নাহ ঠিক আছে একদম নিরামিষ বসে থাকার চেয়ে সেই চলবে আর বাইরে তাকানোর ও কোন উপায় নেই, যে ধুলা-বালি।

জি ঠিক আছে আপনার ইচ্ছে হলে বলবেন, এই বলেই ছেলেটি আবার নেমে গেল বাস থেকে মাথায় শয়তানি বুদ্ধি এসেছে, নিচে নেমেই ছেলেটি ভীষণ রোমান্টিক কিছু হিন্দি, কিছু রবীন্দ্র-নজরুল, কিছু ভারতীয় বাংলা সিনেমার গান সাজিয়ে নিতে লাগলো যা ছেলেটিরতো পছন্দ আর যেন মেয়েটিরও একদম বাজে না লাগে, যেন মাঝে মাঝে তাকে ছুঁয়ে যায়, যেন টোকা লাগে মনের জানালায়, তেমন নরম সুরের কিছু গান।

আর মনে মনে ঠিক করলো, এই সুযোগ কিছুতেই হেলায় হারানো যাবেনা...... ব্যাস মনে মনে বেজে চলল এই গান......

“এইদিন সেইদিন কোনদিন, তোমায় ভুলবো না, চলতে চলতে পাবো দুজন, স্বপ্নের ঠিকানা” ওয়াও...

উঠে পড়লো বাসে, শুরু হল পথ চলা।

গানে গানে ভালোবাসা আর সুরে সুরে কাছে টানা...!

(চলবে......)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.