![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মেয়েটি একটি সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছে সবে মাত্র। দেখতে শুধু সুন্দর নয় এক কথায় সুন্দরী-ই বলা যায়। দারুণ গাঁয়ের রঙ, চুল-চোখ-নাক-মুখ-হাত-পা সব কিছুতেই একটা আকর্ষণের বিচ্ছুরণ। যে কারণে প্রথম ক্লাসের দিন থেকেই সব ছেলেদের উৎসুক নজরে পরে গেল স্বাভাবিক ভাবেই।
সপ্তাহ ঘুরতে না ঘুরতেই মেয়েটি ডিপার্টমেনট এরই সবচেয়ে আকর্ষণীয় আর কাঙ্ক্ষিত জনে পরিণত হল! শুধু তার বাহ্যিক সৌন্দর্য, কথা বার্তার রঙ-ঢং আর আন্তরিকতায়। আর দুই-এক ক্লাস উপরের বড় ভাইয়েরা তো কেউ প্রেমে, কেউ জলে, কেউ অতলে আর কেউ-কেউ আবার তার রূপের গাড্ডায় নিমজ্জিত হয়ে গেল!
কিন্তু সমস্যা হল, মেয়েটি যতটা সুন্দরী ঠিক ততটাই বোকা! বা বলা যায় সহজ-সরল, একটু আলাভোলা টাইপের! সুন্দরী মেয়েদের ক্ষেত্রে যেটা সাধারণত কম হয়। যেমন যে কেউ ছেলে বা মেয়ে ক্লাসের বন্ধু বা উপর ক্লাসের বড় ভাই, তার সাথে একটু ভদ্রভাবে, সুন্দর করে হেসে, মিষ্টি করে কথা বললেই তাকে বা তাদেরকে খুব আপন ভাবে বা আপন করে নেয়! তেমন কোন দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ছাড়াই! বা ভালো-মন্দের বিবেচনা আর আগামীর নিশ্চিত সমস্যার কথা চিন্তা না করেই।
যে কারণে, বেশ কয়েকদিন যেতে না যেতেই বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন জায়গায় দেখা যেত লাগলো ক্যাম্পাসের বিভিন্ন ক্লাসমেট, বড়ভাই বা অন্য কোন ছেলের সাথে আর খুব-খুব এবং খুব স্বাভাবিক ভাবেই এটা ক্লাস বা অন্য পরিচিতদের নজর এড়ায়নি। যে কারণে কথার খোঁচা, ফালতু মন্ত্যব্য, চটুল উটকো বাক্য ভেসে আসতে লাগলো মেয়েটির চারপাশ থেকে। এতে স্বভাবতই সে বেশ বিরক্ত আর কিছুটা বিষণ্ণও বটে। স্বাভাবিক ভাবেই।
কিন্তু মেয়েটির ক্লাসের যে দুই বা তিন জনের সাথে তার একটু বেশী বন্ধুত্ত ছিল তারা জানতো বা বুঝতো যে মেয়েটি কোন ভাবেই কারো সাথে তেমন ভাবে জড়িত না মানে। এই প্রেম-ভালোবাসা টাইপের কোন কিছুর সাথে নিজেকে এলিয়ে দেয়নি। কিন্তু তবুও মেয়েটির সেই দুই-তিনজন ক্লাসমেট তাকে এই সমাজের বাস্তব চিত্রের সাথে পরিচিত করে দিতে বা তাকে নিয়ে ওঠা কথার পরবর্তী প্রভাবের সাথে পরিচিত করতে পরামর্শ দিল।
কিন্তু ক্লাসমেটদের এইসব পরামর্শ শুনে একটু আধটু মন খারাপ করলেও তেমন গাঁয়ে লাগালো না। সে তার মতই বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জনের সাথে ঘুরে-বেড়াতে লাগলো তার ইচ্ছে মতই! যে কারণে ক্লাসমেটরাও আর তেমন নাক গলালো না মেয়েটির এই ব্যাক্তিগত ব্যাপার-স্যাপারে।
এভাবে চলতে-চলতে বেশ কিছুদিন পরে মেয়েটিকে দেখা গেল, কোন একজনের সাথেই বেশী সময় কাটাচ্ছে আর বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে-বেড়াচ্ছে। আগের মত যখন-তখন বিভিন্ন জনের সাথে আর ঘুরে বেড়াতে দেখা যাচ্ছেনা। যে কারণে আগের কানাকানি এখন রসালো আলোচনা আর মুখরুচক গল্পে রূপ নিল। এতে অবশ্য মেয়েটির তেমন কিছুই যায় বা এসেনা।
তবে মেয়েটির সেই একটু কাছের ক্লাসমেটরা তার কাছ থেকে জানতে পেরেছে যে মেয়েটি এবার সত্যি-সত্যি-ই কারো মনের বাঁধনে বাঁধা পড়েছে বা এই তথা কথিত প্রেম-ভালোবাসার মায়া জালে আটকে গেছে! বেশ ভালো, স্বাভাবিক, কোন সমস্যাই নেই। সমস্যা থাকবে কেন, একটি সুন্দরী মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে কারো প্রেমে পড়তেই পারে। ভালো কাউকে বাসতেই পারে, এটাই স্বাভাবিক।
এভাবে চলছিল বেশ ভালো ভাবেই। পরে সেই মেয়েটির ছেলে বন্ধুর সাথেও ক্লাসমেটদের বেশ ভালো-সহজ-সরল ও স্বাভাবিক বন্ধুত্তপূর্ণ একটি সম্পর্ক হয়ে গেল বেশ দ্রুতই! এতে করে ক্লাসের অন্য ছেলেরা যারা মেয়েটিকে মনে-মনে একটু-আধটু মন দেয়া-নেয়ার কথা ভেবেছিল বা এঁকেছিল কিছু স্বপ্ন তাদের নিজস্ব কল্পনার রঙে তাদের চক্ষুশূলে পরিণত হল! সেটাই স্বাভাবিক। এটা ঘটেই থাকে। এবং মেয়েটির সম্বন্ধে অনেক উল্টা-পাল্টা আর আজে-বাজে কথা ছড়াতে লাগলো চারদিকে। এটাও অবশ্য আমাদের সমাজের স্বাভাবিক ও নিয়মিত চারিত্রিক বৈশিষ্ট!
তো এভাবে-সেভাবে, হেলেদুলে আর হেসে-খেলে বেশ ভালোই দিন যাপন চলছিল মেয়েটির। এদিকে ক্লাসে আর আগের মত আসেনা। বাইরেই বেশী সময় কাটায়, পরীক্ষা গুলোও দেয়না ঠিকঠাক মত! ছেলেটিতেই তার সব কিছু খুঁজে পায়। হাসি-কান্না-আনন্দ আর মান-অভিমান। সবাই দেখে কত ঘোরাঘুরি আর হাসি-আনন্দে আছে মেয়েটি আর ছেলেটি। অনেকে স্বাভাবিক ভাবেই এটা দেখে বেশ ঈর্ষান্বিত!
এভাবে কেটে গেল বেশ বেশ কিছুদিন। ক্লাসমেটদের কারো সাথেই মেয়েটির আগের মত স্বাভাবিক আর আন্তরিক সম্পর্ক নেই। কারণ মেয়েটি নিজেই নিজেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছিল সবার কাছ থেকে। রেখেছিল নিজেকে আড়াল করে। তবে এতো কিছুর পরেও মেয়েটির সরলতা আর স্বাভাবিকতার কারণে সেই দুই তিনজন ক্লাসমেটের সামান্য দুর্বলতা থেকেই গিয়েছিল। তাই ওদের সাথেই যা দু-একটা কথা বলতো মাঝে মাঝে।
বেশ শীত নেমেছে। চারিদিকে কুয়াশার চাদরে ঢাকা। আবারও বেশ কয়েকদিন মেয়েটি ক্লাসে অনুপস্থিত। এদিকে দুই-একটি ক্লাস টেস্টও হয়ে গেল! হঠাৎ একদিন এক হাড় কাঁপানো শীতের সকালে খুব খুব অবাক করে দিয়ে মেয়েটি ক্লাসে এসে হাজির। এতো করে চক্ষুশূল ছেলে গুলোর শীত পালিয়ে গেল মুহূর্তেই মেয়েটিকে দেখতে পারার উষ্ণতায়! কিন্তু কেন যেন মেয়েটি আগের মত স্বাভাবিক নয়। তার আচার-আচরণ আর অস্বাভাবিকতা সবারই নজরে পড়লো।
সবাই ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে মেয়েটিকে বেশ ভালো ভাবে লক্ষ্য করছে আর কি যেন একে ওকে বলছে ফিসফিস করে, যা মেয়েটির কাছের সেই দুই একজন বুঝতে পারলো। তারাও বিষয়টা জানার বা বোঝার চেষ্টা করলো এবং অন্যদের কথা মত মেয়েটিকে ভালো করে লক্ষ্য করে দেখলো যে মেয়েটি কেন যেন নিজের অজান্তেই তার গলার কাছে চাঁদর বা ওড়না বেশী বেশী করে দিতে চাইছে? খুবই অস্বাভাবিক আর ঘনঘন এই কাজটি সে করেই যাচ্ছে।
এটা তার কাছের দুই একজনকে আরও বেশী কৌতূহলী করে তুলল। এবং তারা দুইজন মেয়েটির কাছ ঘেঁসে বুঝতে বা দেখতে চেষ্টা করলো আসল ব্যাপার কি? হ্যাঁ দেখতে পেল, খুব স্পষ্ট করেই দেখতে পেল যে মেয়েটির গলার অনেক জায়গায় লাল লাল দাগ! যা আগে কখনোই ছিলনা বা দেখা যায়নি। যে দাগ ঢাকার জন্য তার অব্যারথ প্রয়াস। কিন্তু কিছুতেই সে তার সেই দাগকে আর ঘটে যাওয়া ঘটনাকে কারো কাছেই লুকোতে পারলোনা। সবার যা বোঝার বুঝে নিয়েছে!
ক্লাস শেষে কিছু অনিচ্ছা সত্ত্বেও মেয়েটির একটু কাছের দুই বন্ধু জিজ্ঞাসা করলো সব ঠিক আছে তো? কোন সমস্যা নেই তো? আজকালকার প্রেম-ভালোবাসায় এমন দুই-একটু দাগ-টাগ হতেই পারে, এটা তেমন কিছুনা। সুতরাং এতো অস্বাভাবিক আচরণ করে সবার কাছে নিজেকে আরও খেলো করার কিছু নাই।
উত্তরে মেয়েটি শুধু এতুকুই বলল......
“সে কাছে এসেছিল, কভু ভালোবাসেনি!”
০৯ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:০৫
সজল জাহিদ বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ।
“সে ভালোবেসেছিল, কভু কাছে আসেনি!” পরের গল্প।
২| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫৬
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: সংবাদপত্রের ফিচার পড়লাম, এমনটা মনে হল
১০ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৮:৫৪
সজল জাহিদ বলেছেন: অরন্যক ভাই, আসলে এই লেখা বা গল্পটা একটা অনেক বড় প্লাটফর্ম নিয়ে লিখতে শুরু করেছিলাম, কিন্তু পরে আজকালকার অস্থির আর অল্প সময়ের পাঠকের কথা ভেবে মধ্যখানে এসে শেষ করে দিয়েছি। আসলে শেষ নয়, এটাকে চাইলেই আমি অনেক অনেক বড় করে লিখতে পারি। যদি কোনদিন খ্যাত হয়ে যাই!!! তাই লেখার যায়গাটা ফাঁকা রেখে দিয়েছি।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
০৯ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৫৮
হোসাইন আল মামুন বলেছেন: বর্তমান সময়ের ভালবাসার ধরন খুব সুন্দরভাবে ফুটে ঊঠেছে আপনার লেখায়। বর্তমানে প্রেম এমনই, তাই সবাই সাবধান !!!!