নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বেড়াই-পড়ি-লিখি.....

সজল জাহিদ

সজল জাহিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

পাসপোর্ট তোলার বিড়ম্বনা ও করণীয় কৌশল...।

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:০২

এক
গত বুধবার পাসপোর্ট প্রস্তুত আছে বলে মোবাইলে নিশ্চিতকরণ মেসেজ পেলাম। বৃহস্পতিবার তুলে আনবো। মনে খানিক উত্তেজনা আছে। যদিও নতুন পাসপোর্ট নয় আর দেশের বাইরেও যে যাইনি তেমন নয়। তবুও! কিন্তু বৃহস্পতিবার কোনভাবেই অফিসের কাজের ফাঁকে সময় করে উঠতে পারলামনা। মনে উসখুস, হাতে নতুন পাসপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত ক্ষীণ অস্থিরতা। রোববার যেতেই হবে। তাই অফিসে এসেই হাতের কাজ শেষ করেই বসকে বলতেই সম্মতি পেয়ে গেমাল। মনটা বেশ ফুরফুরে লাগলো। তখনও মনে ছিলনা যে এটা ডিজিটাল দেশ আর ডিজিটাল সব পদ্ধতি।

সকাল ১০:৩০ টায় অফিস থেকে বের হয়ে, জ্যাম ঠেলে আর ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়ে দুপুর ১০ টায় পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে পৌছালাম। অফিসে সময় নির্ধারণ করা ছিল ২ টার মধ্যে ফিরবো। যাক যেহেতু ১২ টায় পৌঁছে গেছি ১ টার মধ্যে কাজ শেষ করে ২ টার মধ্যে অফিস! ডিজিটাল পদ্ধতি তখন ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসছে আমার ভাবনা জেনে!

ভিতরে ঢুকলাম। ওরে বাবা, মানুষ মানুষ। জিগগিজ করছে! ভাই এটা কিসের লাইন? একজনকে জিজ্ঞাসা করতেই বলে কিনা, এটা পাসপোর্ট উত্তোলনের লাইন! মোট তিনটা লাইন, যে লাইন একেবেঁকে গোল হয়ে এক একটা হাফ কিলোর মত হবে কমপখ্যে! কি করি? ভাই শেষ কতক্ষণ আগে উপরে পাঠিয়েছে? আর একজনকে জিজ্ঞাসা? ভাই আমরা ১০:৩০ থেকে দাড়িয়ে আছি! সেই থেকে এখনো কাউকে উপরে যেতে দিচ্ছেনা! সর্বনাশ, আমার মাথায় বাজ। তবে কখন আর কোন লাইনে দাঁড়াবো, আর কখনই বা পাসপোর্ট হাতে পাবো? আর অফিস, তার কি হবে?

এদিক ওদিক তাকাই আর মাথা চুলকাই আর ভাবছি এখানে কি কোন কিছু করা যায় কিনা? মাথাটা একটু ঠাণ্ডা করলাম, পরিস্থিতি বুঝে উঠে কোন উপায় বের করার জন্য। কানে হেডফোন লাগিয়ে একটা হৃদয় ছোঁয়া গানে ডুব দিলাম, যেন একটু সতেজ হয়ে জেঁকে ধরা চাপ কিছুটা প্রশমিত হয়।

গান শুনছি আর খুব খুব করে লক্ষ্য রাখছি। খেয়াল করলাম, ছেলেরা দাড়িয়ে আছে তো আছেই, কিন্তু মেয়েরা আর দাড়িয়ে থাকছেনা! ধাই ধাই করে আসছে আর ক্ষীণ ফাঁক গলে সুড়সুড় করে উপরে চলে যাচ্ছে? ব্যাপার কি? একটু বুঝতে হয়। গান থামিয়ে আর কান খাড়া করে যেটা বুঝলাম, মেয়েদেরকে লাইনে দাড়াতে হবেনা! আসবে, একগাল হাসি দেবে আর সোজা উপরে গিয়ে রসিদ জমা দিয়ে পাসপোর্ট তুলে নেবে! বাহ, কি অস্থির অবস্থা! সাথে এটাও বোঝা গেল যে এখানে যুক্তি-তর্ক আর ফালতু হম্বি তম্বি করে কোন লাভ হবেনা। তাই অন্য উপায় খুঁজতে লাগলাম......

একটু পরে দেখলাম, মেয়েদের সাথে আসা ছেলে বা অন্য যে কেউ ওনাদের সাথে চলে যাচ্ছেন কোন প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই! ব্যাস আর যায় কোথায়? রুখবে আমায় কে? আর একটু অপেক্ষা করে একা একা গেটের দিকে এগিয়ে আসা একজনের কাছে জানতে চাইলাম তিনি একা কিনা? হ্যাঁ একা! তবে আপনার সাথে, মানে পিছে পিছে একটু যাই? মানে কি? না মানে উপরে যাবো কিনা, তো আপনি যদি গেটে ঢোকার সময় বলেন যে আমি আপনার সাথেই তবে যেতে দেবে। নয়তো সেই বিকেল গড়িয়ে সন্ধা লাগবে! এদিকে অফিস আছে? তিনি বুঝলেন এবং সম্মতি দিলেন! ব্যাস আমিও ঢুঁকে পড়লাম বীরের বেসে......!


দুই
দোতালায় উঠেই ভালো মনটা খারাপ হয়ে গেল! কেন? কারণ নিচের লাইনে যে পরিমাণ মানুষ অপেক্ষা করছে, উপরে তারচেয়ে কম নয় বরং বেশীই হবে। আরও যেটা বোঝা গেল যে এখানে আর তেমন কোন কৌশলে কাজ হবেনা। কারণ এখানে আর ছেলে বা মেয়ে বলে আলাদা করে সুবিধা নেয়ার কিছু নাই। ডেলিভারি স্লিপ জমা দিলে, ওরা জমা করে, পাসপোর্ট খুঁজে বের করে মাইক দিয়ে নাম ধরে ডেকে ডেকে হস্তান্তর করছে। আর ওখানকার অপেক্ষারত মানুষদের জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম যে, কেউ কেউ সেই ১১ টা থেকেই স্লিপ জমা দিয়ে বসে আছে। এখনো ডাকেনি? কি সর্বনাশ তবে!

এবার সেই আপুই জিজ্ঞাসা করলেন কিভাবে তাড়াতাড়ি নেয়া যায়? তিনি আবার পাসপোর্ট নিয়ে স্কুলে যাবেন। বললাম, একটুক্ষণ ভাবি... কিছু করা যায়কিনা? এরপর, একটু ব্যাক্তিগত বিষয় আর প্রচারণা হয়ে যায়, তবুও প্রাসঙ্গিকতার খাতিরে বলতেই হচ্ছে।
আজকাল আমরা কোথাও একটু সময় বা অবসর পেলেই প্রত্যেকে তাদের সংগ্রহে থাকা কোমল (স্মার্ট) ফোন বের করে সময় কাটাতে ব্যাস্ত হয়ে পরি। সেটাও প্রথম ফেসবুকে ঢুকে, ঘোরাঘুরি আর এটাসেটা। করি কিনা বলুন? তো সেই আপুও সেটাই করলেন।

এরপর একটু বিব্রত হবার পালা। কি রকম? তিনি ফেসবুক খুলতেই চোখে পড়লো আমার একখান ফালতু লেখা উনার নিউজফিডে দেখা যাচ্ছে! হয়তো ওনার মিউচুয়াল কেউ সেটাতে কোন লাইক বা কমেন্ট করেছে, তাই! কি সর্বনাশ উনি সেটা পড়ছেন আর হাসছেন... হয়তো লেখাতে কিছুটা মজা পেয়েছেন, যে কারণে তিনি আবার আমার প্রোফাইলেও গেলেন এবং আরও দুটো লেখা পড়লেন!!
ইহা দেখিয়া আমি লজ্জায় বেগুনী হইয়া গেলাম! প্রশ্ন আসতে পারে যে লজ্জায় মানুষ লাল হয়, আমি কিভাবে বেগুনী হইলাম? আসলে চেহারা এতো কালো যে লজ্জা, লাল হতেও লজ্জা পায়! তাই কালো মুখ বেগুনী হয়ে যায়! একটু আশ্বস্ত হলাম যে প্রোফাইলে আপাতত আমার কোন ছবি নাই, তাই একটু কম বিব্রত হব ভেবে। নাহ নিজেকে বিশেষ কিছু ভাবছিনা, সত্যিই বলছি। তবে মন্দ লাগেনি ব্যাপারটা, এটাও ঠিক।

এরপর তিনি মুখ তুলে জিজ্ঞাসা করলেন ভাইয়া কিছু কি হবে বলে হয়, নাকি জমা দিয়ে দেব? আমি বললাম একটা উপায় আছে, যেটা দুই দিন আগেই আমার এক ফেসবুকের ও টিওবির বড় আপুর কাছ থেকে জেনে এসেছি। তিনি আবার ভ্রমণের নিশ্চুপ কিংবদন্তী প্রায়! হ্যাঁ তাই-ই। যেহেতু আত্ন-প্রচার করেনা সেহেতু সবাই জানেনা। আমরা যারা একটু সৌভাগ্যবান যে তার সাথে কথা বলা বা বন্ধুত্তের সংযোগ হয়েছে, তারা মোটামুটি জানি। তিনি দুই দিন আগেই একটা অনন্য কৌশল অবলম্বন করে সবাই বসে থাকা অবস্থাতেই আগে ভাগে পাসপোর্ট তুলে নিয়ে গেছেন!

কি সেটা বলেনা না? হুম বলছি... শুনেন আপনি কি একটু মুখ কালো করতে পারবেন? মুখ কালো কেন, আমি কি কালো নাকি? (তিনি একটু রেগেই গেলেন!) আরে নাহ, আপনি কালো তা বলিনি তো? মানে আপনি একটু দুঃখ দুঃখ মুখ নিয়ে, বেদনাভরা দৃষ্টি আর আহত হৃদয়ের ভাণ করে দাড়াতে পারবেন, ওই গেটের কাছে? তবে কিছু হলেও হতে পারে। তিনি একটু ভাবলেন, এরপর আমাকে ঠিক করে দিতে বললেন যে কিভাবে, কোন এঙ্গেলে আর ক্যামন ভাব নিয়ে দাড়াতে হবে...!!

আমি, সেই আপুর বর্ণনা আর আমার ভাবনার মিলমিশ করে ওনাকে টিপস দিলাম আর ওনার ভীষণ কোন সমস্যার কথা বলতে বললাম। অবশ্যই যখন যেচে এসে কেউ জিজ্ঞাসা করবে যে কি সমস্যা, তার আগে নয় কিছুতেই! তিনি আমার পরামর্শ মত কাঁদো কাঁদো আর বেদনা ভারাক্রান্ত মুখ নিয়ে দাড়িয়ে আছেন বেশ কয়েক মিনিট। বেশ কিছুক্ষণ ওনাকে দেখে ভিতর থেকে এসে একজন জানতে চাইলেন ওনার সমস্যা কি? তিনি বেশ ভালো ভাবেই অভিনয়টা করলেন। ওনার অভিনয়ে আমি তো মুগ্ধ!

এরপর সেই পাসপোর্ট খুঁজে বের করার জন, ওনাকে স্লিপ বের করে রাখার জন্য বলে তিনি আবার ভিতরে গেলেন। এবার আমি আবারো সুযোগ নেবার চেষ্টা করলাম! আপু আমার স্লিপটাও একটু নেবেন কি? মানে, আমার নিজের টাই নেবে কিনা বা দেবে কিনা শেষ পর্যন্ত আবার আপনারটাও? আমি তো আমার একার কথাই বললাম! শুধু শুধু আপনারটা নিয়ে আবার ঝামেলায় পড়বো নাকি? না দেখেন না একটু যদি পারেন? যদি পারেন তো আজকেই আপনার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট টা একসেপ্ট করে নেব!

মানে কি, কিসের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট, কি বলতে চাচ্ছেন আপনি? বেশ ক্ষেপে গেলেন! এবার লজ্জার মাথা খেয়ে বলেই ফেললাম... ঐযে একটু আগে যে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠালেন না, গল্প পড়ে! এবার তিনি ভালো করে তাকিয়ে যেন লজ্জায় সত্যিকারের লাল হয়ে গেলেন...! আর কোন কথা না বলে স্লিপটা চাইলেন! আর তিনি যে আমাকে অনলাইনে চেনেন সেটাও জানালেন! হুম, মন্দ লাগেনি কিন্তু ব্যাপারটা!

এইসব কথা আর পরিচয়ের মাঝেই ভিতর থেকে সেই পাসপোর্ট খোঁজার লোক এসে স্লিপ চাইলেন। আর তিনি কিছু না বলেই দুটো স্লিপ দিয়ে দিলেন। সেই লোকও আর কিছু জিজ্ঞাসা না করে ভিতরে চলে গেলেন! আর আমি নিজের অজান্তেই গেয়ে উঠলাম...
“কোন অনেক দূরে, উদাস সুরে, আভাস যে কার পাইরে...!!”

জি আমি পাসপোর্ট এর কথাই বলছি, ভুল বোঝার কোন অবকাশ নাই।

কিছুক্ষণ পরেই সেই ভদ্রলোক এসে দুই নাম্বার কাউনটারে যেতে বললেন। গেলাম এবং অনেক কাঙ্ক্ষিত পাসপোর্ট পেয়ে গেলাম! অনেক অনেক ধন্যবাদ আর বিদায় জানিয়ে চলে এলাম।

নিচে নেমেই মনের আনন্দে গান ধরলাম......

“আজ চাই তোকে খোলাখুলি বলতে, কিছু পথ বাকি পাশাপাশি চলতে”

জি পাসপোর্ট পেয়ে, প্রকৃতি আর ভ্রমণের আকুলতাকেই বলছি।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৩০

সুমন কর বলেছেন: হাহাহা...আপনাদের কাহিনী পড়ে মজা পেলাম। আপনি দেখি...ফেমাস...

আহা, সবার যদি এমন ভাগ্য হতো !! ;)

+।

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৩৭

সজল জাহিদ বলেছেন: আরে নাহ, কিসের ফেমাস? তবে মজা পেয়ে থাকলে লেখাটা সার্থক, এটা লেখাটার প্রাপ্তি। ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.