নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বেড়াই-পড়ি-লিখি.....

সজল জাহিদ

সজল জাহিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

টুকটুকে লাল ক্যাপ ও কয়েকটি চুলের গল্প!

০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৩৫

ছেলেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসের জন্য দাড়িয়ে ছিল, দুই রাস্তার মোড়ের এক পাশে। একটু পরে রাস্তার ওপাশ থেকে একটি জলজ্যন্ত সম্মোহনও এসে দাঁড়ালো, ছেলেটির পাশে। সেও যাবে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে। উহ ছেলেটি সইতে পারেনা মেয়েটির আকর্ষণ, সম্মোহন আর মন-প্রান মাতাল করা তার ঘ্রাণ! ছেলেটিকে বিলীন করে দেয় যেন এক নিমিষে পুরো পৃথিবী থেকেই! যেন ছিনিয়ে নেয়, সমস্ত চেতনা-বোধ-বুদ্ধি আর উপলব্ধিও! করে দেয় নিথর, নিস্তব্ধ আর নির্বাক। মেয়েটির উপস্থিতি, তার এক চিলতে হাসি, ক্ষীণ চাহুনি আর একটু অভিব্যাক্তি।

বাসা থেকে বেরোতেই আজ ঝিরঝির বৃষ্টি ঝরছে। ছাতাটাও সাথে নেয়নি সে। আকাশ যে কখন মুখ ভার করেছে বুঝতেই পারেনি। তবে খুব বেশী সমস্যা নেই, মাথায় তার ক্যাপ আছে। মাথাটা অন্তত ভিজবেনা। বাস থামার জায়গায় গিয়ে দাঁড়ালো একটি ঘন আর মিহি পাতায় আচ্ছাদিত সবুজ কৃষ্ণচুড়ার তলায়। ছেলেটি একটু দূরে দাড়িয়ে দেখছিল মেয়েটির দীঘর কালো আর রেশমি চুলগুলোকে। আর ভাবছিল... ইস যদি ছুঁয়ে দেখা যেত ঐ চুল গুলো! ইস নেয়া যেত যদি একটু গন্ধ ঐ চুলের! যদি গালে ছোঁয়ানো যেত তার চুলে ঝরে পরা বৃষ্টির ফোঁটা!! ভাবতে ভাবতেই যেন হারিয়ে গেল, কোন এক সুখের অতলে...

বৃষ্টিটা যেন বাড়িয়ে দিল একটু, তার গুনগুন গান! মেয়েটি মাথায় ওড়না দিল। কিন্তু জর্জেটের ওড়নায় কি আর বৃষ্টি মানে? মানেনা! ছেলেটি দূর থেকে দেখে একা একাই ভীষণ অসস্থিতে ভুগছে। কিন্তু কিছু করারও নেই। ছাতা সাথে থাকলে না হয় দিয়েই দিত। ক্যাপ দিলে কি আর নেবে? নেবেনা নিশ্চিত। কি করে, কি ভাবে দূর করা যায় নিজের অসস্থি আর মেয়েটিকে দেয়া যায় বৃষ্টি ভেজা থেকে একটু সস্থি, সেই ভাবনায় বিভোর সে। ব্যাগ খুলল, দেখতে আছে কিনা কোন কিছু সাহায্য করার। ব্যাগ খুলতেই যেন ঝলমল করে উঠলো চোখ-মুখ আর চারিদিক। যেন বৃষ্টি থেমে ঝকঝকে রোদ আর সেই সাথে সাত রঙা রংধনু!

আসলে ব্যাগের ভিতরে রাখা আছে আর একটি লাল টুকটুকে ক্যাপ! যেটা সেদিন কিনেছিল অনেক খোঁজাখুজির পরে। কেন যে রাখা হয়নি তুলে আলমারিতে? বোধয় বিধাতার চাওয়াই ছিল এমন, সে মাথায় দেবে তার কেনা খুব খুব পছন্দের লাল টুকটুকে ক্যাপ! অনেক অনেক দ্বিধা আর শঙ্কা ঝেড়েই মেয়েটির কাছে গেল, আর টুকটুকে লাল ক্যাপটি বের করে মেয়েটির দিকে বাড়িয়ে দিল, দুরুদুরু বুকে। আর বলল নিন, নতুবা ভিজে যাবেন, শেষে সর্দি আর ঠাণ্ডা জ্বর বাঁধাবেন!

মেয়েটি কোন কথা বললনা। হাত বাড়িয়ে ক্যাপটি নিল, বিনিময়ে এক টুকরো হৃদয়ে ঝড় তোলা হাসি, আর খুবই ক্ষীণ কণ্ঠের মায়ামাখা থ্যাংকস! চোখ নামালো তার অতিব লাজুক দৃষ্টি, রেখে ছেলেটির চোখে চোখ, এক পলক।

বাস এলো। ওরা বাসে উঠে পড়লো। হলনা আর কোন কথা। চলে গেল যার যার ক্লাসে, পৌঁছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। পরদিন আবার সেই বাস স্ট্যান্ডেই দেখা ছেলেটি আর মেয়েটিতে। মেয়েটির মুখে যেন লেগেছে রাজ্যের লাজুকতা, ঘিরে ধরেছে অজানা কোন আবরণ, চোখ নামালো নিচের দিকে। ব্যাগ খুলে বের করলো গতকালের বৃষ্টিতে বন্ধু হওয়া লাল ক্যাপটি। ছেলেটির দিকে বাড়িয়ে দিল...। দিয়ে চোখ আর ইশারায় দিয়ে কোন বানী।

ছেলেটিও কোন কথা না বলে নিয়ে নিল আর রেখে দিল ক্যাপটি তার ব্যাগে। সারাদিন অনেক অনেক ব্যাস্ততা শেষে রাতে ঘরে ফিরলো। ক্লান্তি আর অবসন্নতায় ঘিরে ধরা শরীরটাকে আরাম দিতে, চলে গেল ফ্রেস হতে। ফ্রেস হয়ে, একটু খেয়েই হারিয়ে গেল ঘুমের রাজ্য। কাল আবার খুব ভোর ভোর বেরুতে হবে। ঘুমোতে ঘুমোতেই ঠিক করে নিল মনে মনে কাল সে কি পরবে? কি?

কালো জুতা, নীল জিন্স, হলুদ টি শার্ট আর সদ্য কেনা টুকটুকে লাল ক্যাপ, চোখে সানগ্লাস, ব্যাস। সকাল হল, ফ্রেস হল, নাস্তা করলো। জিন্স-টি শার্ট-জুতা-মোজা আর সানগ্লাস পরা শেষ। এবার গতকাল সকালে ব্যাগে রাখা লালা টুকটুকে ক্যাপটি ব্যাগ থেকে বের করলো। মাথায় দেবে, এমন সময় চোখে পড়লো, ক্যাপের ভেতরের অংশে বেশ কয়েকটি লম্বা লম্বা কালো আর বাদামী রঙের চুল!

বিস্ময়-ঘোর আর আকস্মিকতা ঘিরে ধরলও ছেলেটিকে! খুব খুব আর খুব আলতো করে ক্যাপটির ভিতরের অংশ নিল মুখের কাছে। মন-প্রান আর বুক ভরে নিল নিঃশ্বাস, নিল গন্ধ তার চুলের। লাগালো চুলের স্পর্শ তার গালে। হাত দিয়ে আলতো করে ছুঁয়ে দেখলো তার রেশমি কোমল আর দীঘর কালো চুল!

ইস ভাবনা আর কল্পনাও যে এভাবে সত্য হতে পারে ভাবেনি কোন সুদুরতম কল্পনাতেও। জেগে জেগে দেখা অসম্ভব আর অবাস্তব স্বপ্নও যে কভু রূপ নিতে পারে এমন বাস্তবতায়, আঁকেনি কোন কল্পনাতেই। এমন ভাবে ধরা দিতে পারে কোন অপার্থিবতাও নেমে পার্থিবতায়, আসেনি কোন ভাবনায়। এই ক্যাপ কি আর সে মাথায় দেবে, না দিতে পারে? যেখানে জাপটে ধরে আছে তার দীঘর কালো রেশমি চুল, যেখানে ছেয়ে আছে তার অমোঘ গন্ধর মোহময়তা, যেখানে মিশে আর ছুঁয়ে ছুঁয়ে আছে সে!

তাই ছেলেটি আর পরেনি সেই ক্যাপ, কখনো আর কোনদিনই!

রেখে দিয়েছে অনেক যত্ন আর মায়ার বাঁধনে, নিখাদ ভালোবাসা আর গভীর প্রেমের ফ্রেমে বন্দী করে।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:১০

অতঃপর হৃদয় বলেছেন: লেখক যদি কিছু মনে না করেন তাহলে আমি এই গল্প টা শেষ করব, আসলে শুরু থেকে এ পর্যন্ত অনেক ভাল হয়েছে তবে শেষ টা আরো রোমান্টিক হতে পারত।

০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:১৭

সজল জাহিদ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ভাইজান আপনার মন্ত্যব্যের জন্য। ভাইজান এটি একটি ধারাবাহিক ভালোবাসার গল্প, এটি যার ১৫তম কিস্তি...!!! তবে প্রতিটাই আলাদা আলাদা করে লেখা, যেন যদি কখনো ভুল বসত বিখ্যাত হয়ে যাই তখন যেন উপন্যাসে রূপান্তরিত করে বিশাল কলেবরে বের করতে পারি!! আর এটি শেষ এখানেই নয় আরও লেখা আছে এবং লিখবো! হা হা হা......। আপনি দেখতে পারেন এখানেই অনেক গুলো লেখা আছে যেগুলো পড়লে এই লেখার সাথে ভীষণ যোগসূত্র খুঁজে পাবেন! তবে হ্যাঁ আপনিও শেষ করুন আপনার মত করে। অনেক অনেক ধন্যবাদ।

২| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:২৮

অতঃপর হৃদয় বলেছেন: ও আমার জানা ছিল না তাই বুজতে পারি নি। আমি মনে করছিলাম এখানেই শেষ.!! তবে হ্যা লেখা টা অনেক ভাল লেগেছে আমার আর চালিয়ে যান। আশা করি সামনের গুলো আরো ভাল হবে।

০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৮

সজল জাহিদ বলেছেন: ইনশাল্লাহ দেখাজাক। তবে আপনি কিভাবে আর কতটা রোম্যান্টিকভাবে শেষ করতে পারেন সেটাও দেখতে চাই। আপনি আপনার মত করে শেষ করুন তো দেখি? সেটা এই লেখাটার একটি প্রাপ্তি হবে! ধন্যবাদ।

৩| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৫৪

অভ্রনীল হৃদয় বলেছেন: সাবলীল, স্বচ্ছ, সুন্দর লেখনী...ভাল লাগা জানবেন...!!

০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:০৫

সজল জাহিদ বলেছেন: অনেক অনেক এবং অনেক ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.